এলপিজি সরবরাহ নিশ্চিত করুন

গ্যাস নিয়ে চরম অস্বস্তিকর অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই। একদিকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ, অন্যদিকে সরবরাহ লাইনে গ্যাস সংকট। বাসাবাড়িতে দিনে চুলা জ্বলে না। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শুরু করে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় গ্যাস সরবরাহ ও উৎপাদন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হয়েছে।


সমস্যা শুধু তিতাস গ্যাস বা পেট্রোবাংলার নয়। এর প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যেও। গ্যাস সংযোগ না পাওয়ার বড় প্রভাব পড়েছে আবাসন শিল্পে। একদিকে নতুন গ্যাস সংযোগ নেই, অন্যদিকে সরবরাহ লাইনে গ্যাস সংকট। সরবরাহ লাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকলেও পেট্রোবাংলা তো আর গ্রাহকদের চাপ এড়িয়ে যেতে পারে না। সিদ্ধান্ত একটা নিতেই হবে। অবশেষে বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহের ব্যাপারে একটি নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছে পেট্রোবাংলা। জানিয়ে দিয়েছে, বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না। বর্তমান সরকারের আমলে প্রতিদিন গ্যাস উত্তোলন ২৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়লেও চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের পরও প্রতিদিনের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে। চলতি বছরের শেষার্ধে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে দুই হাজার ৮০০ ঘনফুটে। ২০১২ সালের শেষ নাগাদ গ্যাসের এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে তিন হাজার ৩২৮ মিলিয়ন ঘনফুটে। এ অবস্থায় এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যই যে পেট্রোবাংলা নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি অভিযোগ সব সময় শোনা যায়। অভিযোগটি হচ্ছে অপচয়ের। এ অভিযোগ একেবারে যে ভিত্তিহীন তা নয়। অনেক বাসাবাড়িতেই গ্যাসের অপচয় হয়। এ ছাড়া রয়েছে অনেক অবৈধ সংযোগ। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে শিল্পে যে অবৈধ সংযোগ দেওয়া নেই, তা নয়। অন্যদিকে বাসাবাড়িতে ম্যাচের কাঠি বাঁচাতে দিনের পর দিন গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখার প্রবণতাও লক্ষণীয়। এ ছাড়াও সরবরাহ লাইনে ত্রুটির কারণে গ্যাস অপচয়ের ঘটনা তো আছেই। আছে 'সিস্টেম লস' নামের বৈধ অপচয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একটা সহজ পথ বের করা অত্যাবশ্যক। সেই সহজ পথটিই খুঁজে বের করেছে পেট্রোবাংলা।
নতুন গ্যাস সংযোগের পরিবর্তে সিলিন্ডার ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি গ্যাসের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হলেও ব্যবহারকারীদের জন্য সাশ্রয়ী নয়। এলপিজি বা সিলিন্ডারের গ্যাসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার একেবারেই বাইরে। খুব স্বাভাবিক কারণে বিকল্পের সন্ধান করবে মানুষ। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ওপর বাড়তি একটা চাপ চলে আসতে পারে। এ ছাড়াও রয়েছে এলপিজির দুষ্প্রাপ্যতা। সারা দেশেই চাহিদার তুলনায় এলপিজির সরবরাহ অপ্রতুল। সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হওয়ার আগেই আরেকটি সিলিন্ডার সংগ্রহ করে রাখতে হয়। আর দামের বিষয়টি তো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এখন একটি ডাবল বার্নারের জন্য মাসপ্রতি যে টাকা দিতে হয়, সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে সেটা হয়ে যায় কয়েকগুণ। এই বাড়তি টাকার চাপ শুধু সাধারণ মানুষ নয়, মধ্যবিত্তের জন্য কতটা যৌক্তিক হবে, সেটা ভেবে দেখতে হবে। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেছেন, এলপিজির দাম কমিয়ে এবং পাইপলাইনে দাম বাড়িয়ে এর সমন্বয় করা হবে। দাম না কমালে মানুষ এলপিজি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হবে না। অন্যদিকে এলপিজি সবার কাছে সহজে পেঁৗছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে এলপিজি সব সময় পাওয়া যাবে, কোনো সংকট সৃষ্টি হবে না_এটা নিশ্চিত না করে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করাটা সমীচীন হবে না। কাজেই বাজারে এলপিজি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে।

No comments

Powered by Blogger.