সরকারের উচিত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া-র্যাবে রাজনৈতিক প্রভাব

র্যাবের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে র্যাবের কর্মকর্তারাই র্যাবকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ঘটনা না ঘটলে এমন আওয়াজ ওঠার কথা নয়। র্যাবকে ধন্যবাদ যে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক আছরমুক্ত রাখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে।


অনুমিত হয়, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না চললে প্রকাশ্য সভায় প্রভাবমুক্ত রাখার দাবি উঠবে কেন?
দৃশ্যত, সরকারি দল দুইভাবে প্রভাব খাটাচ্ছে—মিছিল, সভা-সমাবেশসহ কিছু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে র্যাবকে সম্পৃক্ত করা এবং ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের গ্রেপ্তারের পর ছাড়িয়ে নিতে তদবির করা। সব দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে পুলিশের ভূমিকাই সর্বজনীন। রুটিন কাজে এলিট ফোর্স সম্পৃক্ত করা হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও ভারতের সিবিআইয়ের সঙ্গে র্যাবের সনদের অনেক মিল রয়েছে, কিন্তু র্যাবকে পুলিশে পরিণত করা হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসার প্রেক্ষাপটে র্যাবের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ধারণা দেওয়া হয়, পুলিশের ব্যর্থতা কিংবা অকার্যকরতায় যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ করে দেবে র্যাব। কিন্তু সোনার পাথরবাটি তো হয় না।
র্যাব গঠনের আগ পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীর ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা নিয়ে সমাজে একটা আওয়াজ ছিল। বলা হতো, পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর বিকল্প নেই। র্যাব গঠনের অব্যবহিত পর আমরা কিছুটা সুফলও পেয়েছিলাম। গোড়াতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কথা কম ছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগই বড় ছিল।
পুলিশকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তার নিজের মতো করে ব্যবহার করে যাবে, সেটাই যেন ভবিতব্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু র্যাবের বিকল্প পুলিশ বা পুলিশের বিকল্প র্যাব হওয়ার কথা নয়। দুটি সংস্থারই চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন না এলে এদের চরিত্রেও পরিবর্তন আশা করা যায় না। আজ র্যাব তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দূষণ লক্ষ করা যাচ্ছে, সে জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব অনেকাংশে দায়ী।
২৭ মার্চ র্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী উভয়ই র্যাবের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, র্যাবের ব্যাপারে আস্থা ভোট নিলে ৯৯ শতাংশ মানুষ র্যাবের ‘সব কার্যক্রম’ সমর্থন করবে। র্যাবকে আইজিপির নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব বিবেচনাধীন আছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা দলীয় উদ্দেশ্যে র্যাবের কাজে হস্তক্ষেপ বন্ধের অঙ্গীকার করেননি। যাঁরাই অবাঞ্ছিত প্রভাব খাটাবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও তাঁরা দেননি। আমরা আশা করব, সরকার এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যাখ্যা দেবে।
র্যাবের মতো সংস্থা তার পেশাদারি নিয়ে টিকে থাকবে, বিকশিত হবে, সেটা জনপ্রত্যাশা। এ প্রশ্নে ভোট নেওয়া হলে হয়তো ১০০ শতাংশ ভোট পড়বে। কিন্তু মন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রশ্নে ভোটাভুটি হলে চিত্রটি অবশ্যই বদলে যাবে। যে সংস্থাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাতে রাষ্ট্র ছাড়পত্র দেয়, তাদের কার্যক্রমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ অত্যন্ত বিপজ্জনক। আরও অপ্রিয় সত্য হলো, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অধিকার নিজেই একটি রাজনৈতিক বিষয়, মোটেই আইনগত নয়। র্যাবকে এটা বুঝতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.