প্রমাণ হলো পুরো সরকারই দুর্নীতিগ্রস্ত : বিএনপি

শুধু রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নন, গোটা সরকারেরই পদত্যাগ দাবি করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তাদের মতে, গুপ্তের পদত্যাগে প্রমাণিত হলো শুধু রেল মন্ত্রণালয়ই নয়, পুরো সরকারই দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।


এই সরকার যত তাড়াতাড়ি যাবে, জাতির ততই মঙ্গল হবে বলেও দাবি এই দলটির। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঘটনার পরপরই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ করা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর সাপোর্ট পাবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিডিয়ার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কাছে পরাজিত হয়ে পদত্যাগে বাধ্য হলেন তিনি।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, অনেক ঘটনার পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু এই পদত্যাগই যথেষ্ট নয়, তিনিসহ যারাই এই অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতির কাছে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে।
গতকাল সোমবার দুপুরে ব্যক্তিগত সহকারীর 'অর্থ কেলেঙ্কারির' দায় নিজের কাঁধে নিয়ে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তাঁর পদত্যাগের পর বিএনপিসহ দলের শরিক ও সমমনা দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন। গতকাল বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, বড় রকমের যে দুর্নীতি হয়েছে, এটা প্রমাণিত। এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এখন গল্প খুঁজে বের করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার ও সুরঞ্জিত বাবুর রাজনীতি এক পথে চলছে না বলেই তাঁকে হয়ত পদত্যাগ করতে হয়েছে। কারণ এর আগে সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তাঁকে প্রধানমন্ত্রী রক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, 'কেবল আমরাই নই, টিআইবি, দেশের জনসাধারণ, সুশীলসমাজ, বিশিষ্ট নাগরিকরা ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনার জন্য রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। গণমাধ্যম রেল মন্ত্রণালয় ও রেলমন্ত্রীর এপিএসের গাড়িতে ঘুষের টাকা পাওয়ার ঘটনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে জনমত তৈরি করেছে। এ ঘটনা তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এই পদত্যাগের ফলে তদন্ত সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই গাড়ির চালক এখনো নিখোঁজ। এপিএস উধাও। মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ মৃৃধা তদন্ত কমিটির সামনে চা খেতে খেতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা দুর্নীতির অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। তাই তদন্তের ফলাফল কী হবে, তা আমাদের জানা আছে।'
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ নতুন কোনো নজির নয় দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী, সাবেক শিল্পমন্ত্রী শামসুল ইসলাম খান, এম জহির উদ্দিন খান, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন পদত্যাগ করেছেন। তাই এটা নতুন কিছু নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, রেল মন্ত্রণালয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। এখন তা হাতেনাতে ধরা পড়ে গেছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়েও একই কাজ হচ্ছে। এখন এমন হতে পারে-সুরঞ্জিত বাবু একটি উপলক্ষ মাত্র। সরকার তাঁকে 'বলির পাঠা' বানিয়ে এখন বাঁচার চেষ্টা করতে পারে। এরপরও সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।
ঢাকা সিটি করর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিত প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই নির্বাচন নিয়ে আমরা এই আশঙ্কা আগেই করেছিলাম। সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার সময় যখন হয়েছিল তখন সরকার নির্বাচন করেনি। কারণ তারা হেরে যাবে বুঝতে পেরেছিল। এজন্য তারা কৌশল করে ডিসিসিকে দুই ভাগ করেছে। ভেবেছিল, এবার আমরা নির্বাচনে যাব না। কিন্তু যেই আমরা বললাম নির্বাচনে চমক আছে, তখন কৌশলে আদালতের মাধ্যমে নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।'
প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় বিরোধীদলীয় নেতার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান উপস্থিত ছিলেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগে সাধুবাদ নয়, ক্ষমা চাইতে হবে : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, সুরঞ্জিত বাবুর পদত্যাগকে শুধু সাধুবাদ জানালেই চলবে না। বরং জনগণের কাছে এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে দেশনেত্রী ফোরাম আয়োজিত 'অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা এবং ৭০ লাখ টাকার ঘুষ-দুর্নীতি কেলেঙ্কারি ও সরকারের ভূমিকা' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, 'একই দিনে ডিসিসি নির্বাচনের স্থগিতাদেশ ও রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনের পদত্যাগ এটাই প্রমাণ করে, এ সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। এটা সরকারের পরাজয়। আমাদের প্রাথমিক বিজয়। জনগণের চাপের মুখে সুরঞ্জিত বাবু পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। এ পদত্যাগই যথেষ্ট নয়। সরকারকে সবকিছুর জবাব দিতে হবে।' অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শহীদ চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন আলম, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কৃদ্দুছ তালুকদার দুলু, এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ।
মন্ত্রিসভায় আরো কালো বিড়াল আছে : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় অনেক কালো বিড়াল আছে। তাই শুধু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করলেই হবে না। মন্ত্রিসভার দুর্নীতিবাজদেরও পদত্যাগ করতে হবে। তিনি নিষ্কলুষ মন্ত্রিসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দুর্নীতির টাকা হাতে ধরা পড়ার পরও সুরঞ্জিত সেন সত্য ঘটনা আড়াল করতে চেয়েছেন। তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। জনগণের ধিক্কার সইতে না পেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। সাবেক এই মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
গণতন্ত্রের বিজয় : সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগকে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া। তাঁরা গতকাল এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এই পদত্যাগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন একটি নজির সৃষ্টি করবে।
সরকার বড় দুর্নীতিতে নিমজ্জিত : ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মাওলানা এ টি এম হেমায়েত উদ্দিন বলেছেন, আওয়ামী লীগের ক্লিনম্যান সুরঞ্জিত বাবুর কালো টাকাই বলে দিচ্ছে সরকারের টপ টু বটম কত বড় দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। মহাসমাবেশ সফল করতে গতকাল সোমবার রাজধানীর ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ইসলামী আন্দোলনের কোতোয়ালি থানা শাখার সভাপতি ডা, দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, সফিক মৃধা, মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবুল কাশেম, ডা. শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.