ছাত্র আন্দোলন ও সংগঠন-ইতিবাচক ধারা সৃষ্টির তাগিদ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা সব ছাত্রসংগঠনের জন্যই দিকনির্দেশনাপূর্ণ হতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সাড়ে তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি_ এ দুটি দলের প্রাধান্য। আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো ছাত্রসংগঠন থাকার
কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে এ দুটি দলের অনুসারী দুটি ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রয়েছে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছাত্রসংগঠন চলে উইনার্স টেকস অল মনোভাব নিয়ে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপের ঘটনা তো থাকেই, টেন্ডার-চাঁদাবাজিতেও তারা হয়ে ওঠে বেপরোয়া। কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী পড়াশোনা বাদ দিয়ে সরাসরি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এ সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, যারা সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে, বিপথে গিয়ে অপকর্ম করবে, আদর্শচ্যুত হবে_ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রসংগঠনের কর্মীদের ক্ষেত্রে নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুতিও অগ্রহণযোগ্য বলে তিনি জানান। তার এ নীতিনিষ্ঠ অবস্থানকে আমরা স্বাগত জানাই। ছাত্রলীগ ছয় দশকের পুরনো সংগঠন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে পটভূমি সৃষ্টিতে এ সংগঠনের অগণিত নেতাকর্মীর অনন্য অবদান রয়েছে। কিন্তু মূল দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্তদের একটি অংশকে দেখা যায় ভ্রান্ত পথে চলতে। একই ঘটনা বারবার ঘটেছে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ক্ষেত্রেও। এতে জনমনে তাদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হয়। এমনকি ছাত্রসংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধেরও দাবি উঠছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এখন কোনো ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রমেই যুক্ত হতে চায় না। তারা এর মধ্যে ইতিবাচক তেমন কিছু দেখতে পায় না। বছরের পর বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রসংগঠন নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও এ নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা তেমন উদ্বিগ্ন হয় না। দুর্ভাগ্যজনক যে, ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল নেতৃত্ব এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আন্তরিক চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও প্রতীয়মান হয় না। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ছাত্রলীগের লাখ লাখ নেতাকর্মীর রয়েছে গভীর আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ। নীতি ও আদর্শভিত্তিক একটি গর্বিত সংগঠন গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে তারা আন্তরিক সাড়া দেবে_ এটাই প্রত্যাশা থাকবে। বাংলায় 'আপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখাও' জনপ্রিয় প্রবাদ। ছাত্রলীগ যদি ছাত্রসংগঠন ও আন্দোলনে নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারে, তার প্রভাব ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনেও পড়তে পারে। 'অন্যরা না বদলালে আমরা বদলাব কেন'_ এমন মনোভাব কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বর্তমান মহাজোট সরকারের নির্বাচনী স্লোগানে দিনবদলের বিষয়টি তরুণ প্রজন্মকে বিপুলভাবে আলোড়িত করেছিল। আর ছাত্রলীগের কাজই হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে। তাদের স্বপ্ন আছে, অসীম প্রত্যাশা আছে। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড তাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ী হলে তারা ফের এ সংগঠনের পতাকাতলে সমবেত হতে উৎসাহবোধ করবে। আর এটা ঘটলে অন্যান্য সংগঠনের মধ্যেও নিজেদের ইতিবাচকভাবে বদলে ফেলায় সৃষ্টি হবে আগ্রহ।
No comments