হাইকোর্টের রায়ের খণ্ডিত বাস্তবায়ন অগ্রহণযোগ্য-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

হাইকোর্টের রায়ের খণ্ডিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্ধকার ভবিষ্যতেরই ইঙ্গিত তুলে ধরছে। হাইকোর্ট সম্প্রতি এক রায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার ১৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে চাকরিচ্যুতির নির্দেশ দেন।


সিন্ডিকেট সেই রায় বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চাকরিচ্যুত করল এক হাজার পাঁচজনকে। বাকি যে ১২৭ জনকে এখনো চাকরিচ্যুত করা হয়নি, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া। এ ক্ষেত্রে উদ্ভট এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার আগে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। বোঝা যায়, দলীয় রাজনীতির নোংরা খপ্পর থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি বের হয়ে আসতে পারেনি।
এরই মধ্যে একটি অথর্ব ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ ঘটনার মধ্য দিয়ে নিজেদের আরও নিচে নামিয়ে আনল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট কেন আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়াদের আদালতের রায় মেনে পদচ্যুত করতে পারেনি, তা স্পষ্ট। এসব প্রতিষ্ঠানে উপাচার্য বা এ ধরনের পদে নিয়োগের মূল যোগ্যতা হচ্ছে, নীতি-নৈতিকতা ও চক্ষুলজ্জা উপেক্ষা করে দলের পক্ষে কাজ করে যাওয়ার যোগ্যতা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সম্ভবত সে কাজটিই করেছেন! এ ছাড়া এসব ক্ষেত্রে আরও যে বিষয়টি কাজ করে তা হচ্ছে দুর্নীতি। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে মতামত চেয়ে পাঠানোর মধ্যে দুর্নীতির আশঙ্কার বিষয়টি জোরদার হয়ে উঠেছে।
এখন দুর্নীতি বা আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া ১২৭ জনের তদবির বা অন্য যেকোনো বিবেচনায় যদি আইন মন্ত্রণালয় তাদের পদচ্যুত না করার পরামর্শ দেয়, তবে হাইকোর্টের রায়কে উপেক্ষা করা হবে। অন্যদিকে এ নিয়োগ নিয়ে আট বছর ধরে যে টানাপোড়েন চলছে, তা টিকেই থাকবে। দলীয়করণের বৃত্তেই ঘুরপাক খেতে থাকবে প্রতিষ্ঠানটি।
আমরা মনে করি, হাইকোর্টের রায় খণ্ডিতভাবে কার্যকর করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অসততার পরিচয় দিয়েছে। আমরা হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দেখতে চাই। এর মধ্য দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত করার একটি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.