আত্মরক্ষার সব চেষ্টাই বৃথা by পার্থ সারথি দাস
গত ৯ এপ্রিল এপিএস ফারুকের গাড়িতে বিপুল অঙ্কের অর্থসহ রেলের অন্য দুই কর্মকর্তা ধরা পড়ার ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি একেক সময় একেক বক্তব্য দিয়ে নিজের দুর্বল অবস্থা প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত নিজের পদই হারাতে হয়েছে তাঁকে।
জানা গেছে, ঘটনার রাতেই সুরঞ্জিত বিষয়টি মিটমাট করতে উদ্যোগী হন। বিভিন্ন স্থানে ফোনে কথা বলেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরদিন ১০ এপ্রিল হঠাৎ করেই সুরঞ্জিত সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন রেল ভবনে। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি রেলের উন্নয়নের জন্য গ্রহণ করা তাঁর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা তাঁর এপিএস ফারুকের অর্থসহ ধরা পড়ার ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে সুরঞ্জিত বিরক্ত হন। তিনি অবশ্য 'এটি একটি অনভিপ্রেত ঘটনা' বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি তাঁর এপিএস ফারুককে রক্ষার জন্য বলেন, গাড়িচালক ব্ল্যাকমেইল করেছেন। একই দিন কালের কণ্ঠকে একই বক্তব্য দিয়েছিলেন ফারুক। সংবাদ সম্মেলনে তাঁর এপিএসের ঘটনার বিষয়ে নিজে থেকে কোনো কথা বলতে চাননি সুরঞ্জিত। তিনি সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল। কিন্তু টাকাসহ এপিএসের ধরা পড়ার ঘটনা সাংবাদিকরা তুলতেই তাঁর মুখ থেকে হাসি হারিয়ে যায়। এপিএস প্রসঙ্গ উঠতেই তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন মন্ত্রী। এপিএসের টাকার উৎস কী, তা তিনি জানেন না ও বস্তায় কত টাকা ছিল, তাও জানেন না বলে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন। অবশ্য এই সুরঞ্জিতই তাঁর এপিএসকে চাকরি থেকে বাদ দেন গত রবিবার।
প্রথম দিন সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত বলেছিলেন, এপিএস ওমর ফারুককে তাঁর গাড়ির চালক ব্ল্যাকমেইল করেছেন। বিজিবিতে যাওয়ার পর তাঁরা প্রটেক্টেড অবস্থায় আছেন। গাড়িচালক ব্ল্যাকমেইল করতে চাইলে কেন বিজিবি সদর দপ্তরে যাবেন- এমন প্রশ্ন করলে সুরঞ্জিত কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
উল্টো ফারুকের পক্ষ নিয়ে সুরঞ্জিত সেন বলেন, টাকা নিয়ে চলাফেরা করা ব্যক্তিগত অধিকার, এটি কোনো অপরাধ নয়। ব্যক্তিগত সম্পদ নিয়ে চলার অধিকার সবারই রয়েছে।
ঘটনার পর তিনি গেছেন কি না বা আটককৃতদের সঙ্গে দেখা হয়েছে কি না জানতে চাইলে সুরঞ্জিত বলেন, 'না, তাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।' এপিএস কোথায় আছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, 'সর্বশেষ খবর জানি না।' ওই দিন রেল ভবনে সংবাদ সম্মেলনের পরপরই উপস্থিত হন ফারুক। অবস্থান নেন মন্ত্রীর পাশের কক্ষে। কিন্তু সুরঞ্জিত তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করেননি। এ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
৯ এপ্রিলের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সুরঞ্জিত ১২ এপ্রিল আবার সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। ওই দিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি সুরঞ্জিত। প্রথমেই ৯ এপ্রিল রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি আবারও বলেন, ঘটনাটি অনভিপ্রেত। এটি ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করেন তিনি। তবুও তাঁর এপিএস ও রেল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তিনি কিছু বলেননি।
ওই দিন মন্ত্রী বলেছিলেন, 'রেল নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন। এর প্রতিপক্ষ আছে। রেল ভালোভাবে চললে অনেকের লালবাতি জ্বলবে। শত্রুচক্র লেগেই আছে। একজন মন্ত্রীর একাধারে লড়াই করা কষ্টকর। আপনারা সাহায্য করুন। রেলকে পৃথক সত্তা হিসেবে দাঁড় করানো কঠিন। ষড়যন্ত্রের নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কঠিন কাজ। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই তা বুঝেছি। রেলে পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ও দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে রেলকে সচল করতে চাই। ঐক্যবদ্ধ ষড়যন্ত্র কাজ করছে, যেন রেল ইমেজ ফিরে না পায়। এরই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে এপিএস ও জিএমের ঘটনাটি ঘটেছে।'
সোমবার রাতে এপিএস ওমর ফারুক অন্যদের নিয়ে রেলমন্ত্রীর বাসার দিকেই যাচ্ছিলেন- এ অভিযোগের বিষয়ে সুরঞ্জিত বলেন, 'আমি থাকি জিগাতলায়। রাত ১০টার পর মন্ত্রীর বাড়ি খোলা থাকে না। আমার রেলে ৪০ হাজার কর্মী কাজ করেন। এর বাইরেও অনেকে কাজ করেন। বিপদে পড়লে কেউ সাহায্য নেবেনই।'
সুরঞ্জিত আরো বলেছিলেন, 'আমি তদবিরের লোক না। এপিএস ও জিএম ব্যক্তি জীবনে কী করে, এর দায়িত্ব আমার নয়। এনবিআর তাদের বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে পারে। মধ্যরাতের ঘটনার পর পদত্যাগ দাবি- এসব ষড়যন্ত্র।' ষড়যন্ত্র দাবি করলেও গতকাল এই সুরঞ্জিতই বলেছেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে তিনি পদত্যাগ করছেন।
১২ এপ্রিলের সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত বলেছিলেন, 'আমার শত্রুও আছে। শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ও দুর্নীতিবাজরা। আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলি। আমার বন্ধু সৎ সাংবাদিকরা। সত্যের জয় হবেই।'
গাড়িচালক কোথায় আছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেছিলেন, বিজিবি বলতে পারবে। একজন মন্ত্রী হয়েও তিনি কি গাড়িচালকের বিষয়টি জানতেন না? তিনি কি দায়িত্বশীল নন? তবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি সব দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন।
৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সুরঞ্জিত সেন বহুবার সংসদ সদস্য হলেও প্রথম মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন এই সরকারের আমলে। সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে দলে এখনো বিতর্কিত এই বর্ষীয়ান নেতা মন্ত্রীর পদটিও শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারলেন না। গত ৯ এপ্রিল বিজিবি সদর দপ্তরে ৭০ লাখ টাকাসহ তাঁর এপিএস আটকের পর থেকে সুরঞ্জিত বিতর্কিত হতে থাকেন। শেষে নিজের মান বাঁচাতে পদত্যাগের আশ্রয় নেন।
জানা গেছে, সুরঞ্জিত রেলমন্ত্রীর পদটি ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'রাজনীতিতে এটা আমার যাত্রাবিরতি। আমি তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আবার ফিরে আসব।'
প্রথম দিন সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত বলেছিলেন, এপিএস ওমর ফারুককে তাঁর গাড়ির চালক ব্ল্যাকমেইল করেছেন। বিজিবিতে যাওয়ার পর তাঁরা প্রটেক্টেড অবস্থায় আছেন। গাড়িচালক ব্ল্যাকমেইল করতে চাইলে কেন বিজিবি সদর দপ্তরে যাবেন- এমন প্রশ্ন করলে সুরঞ্জিত কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
উল্টো ফারুকের পক্ষ নিয়ে সুরঞ্জিত সেন বলেন, টাকা নিয়ে চলাফেরা করা ব্যক্তিগত অধিকার, এটি কোনো অপরাধ নয়। ব্যক্তিগত সম্পদ নিয়ে চলার অধিকার সবারই রয়েছে।
ঘটনার পর তিনি গেছেন কি না বা আটককৃতদের সঙ্গে দেখা হয়েছে কি না জানতে চাইলে সুরঞ্জিত বলেন, 'না, তাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।' এপিএস কোথায় আছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, 'সর্বশেষ খবর জানি না।' ওই দিন রেল ভবনে সংবাদ সম্মেলনের পরপরই উপস্থিত হন ফারুক। অবস্থান নেন মন্ত্রীর পাশের কক্ষে। কিন্তু সুরঞ্জিত তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করেননি। এ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
৯ এপ্রিলের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সুরঞ্জিত ১২ এপ্রিল আবার সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। ওই দিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি সুরঞ্জিত। প্রথমেই ৯ এপ্রিল রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি আবারও বলেন, ঘটনাটি অনভিপ্রেত। এটি ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করেন তিনি। তবুও তাঁর এপিএস ও রেল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তিনি কিছু বলেননি।
ওই দিন মন্ত্রী বলেছিলেন, 'রেল নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন। এর প্রতিপক্ষ আছে। রেল ভালোভাবে চললে অনেকের লালবাতি জ্বলবে। শত্রুচক্র লেগেই আছে। একজন মন্ত্রীর একাধারে লড়াই করা কষ্টকর। আপনারা সাহায্য করুন। রেলকে পৃথক সত্তা হিসেবে দাঁড় করানো কঠিন। ষড়যন্ত্রের নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কঠিন কাজ। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই তা বুঝেছি। রেলে পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ও দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে রেলকে সচল করতে চাই। ঐক্যবদ্ধ ষড়যন্ত্র কাজ করছে, যেন রেল ইমেজ ফিরে না পায়। এরই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে এপিএস ও জিএমের ঘটনাটি ঘটেছে।'
সোমবার রাতে এপিএস ওমর ফারুক অন্যদের নিয়ে রেলমন্ত্রীর বাসার দিকেই যাচ্ছিলেন- এ অভিযোগের বিষয়ে সুরঞ্জিত বলেন, 'আমি থাকি জিগাতলায়। রাত ১০টার পর মন্ত্রীর বাড়ি খোলা থাকে না। আমার রেলে ৪০ হাজার কর্মী কাজ করেন। এর বাইরেও অনেকে কাজ করেন। বিপদে পড়লে কেউ সাহায্য নেবেনই।'
সুরঞ্জিত আরো বলেছিলেন, 'আমি তদবিরের লোক না। এপিএস ও জিএম ব্যক্তি জীবনে কী করে, এর দায়িত্ব আমার নয়। এনবিআর তাদের বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে পারে। মধ্যরাতের ঘটনার পর পদত্যাগ দাবি- এসব ষড়যন্ত্র।' ষড়যন্ত্র দাবি করলেও গতকাল এই সুরঞ্জিতই বলেছেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে তিনি পদত্যাগ করছেন।
১২ এপ্রিলের সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত বলেছিলেন, 'আমার শত্রুও আছে। শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ও দুর্নীতিবাজরা। আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলি। আমার বন্ধু সৎ সাংবাদিকরা। সত্যের জয় হবেই।'
গাড়িচালক কোথায় আছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেছিলেন, বিজিবি বলতে পারবে। একজন মন্ত্রী হয়েও তিনি কি গাড়িচালকের বিষয়টি জানতেন না? তিনি কি দায়িত্বশীল নন? তবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি সব দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন।
৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সুরঞ্জিত সেন বহুবার সংসদ সদস্য হলেও প্রথম মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন এই সরকারের আমলে। সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে দলে এখনো বিতর্কিত এই বর্ষীয়ান নেতা মন্ত্রীর পদটিও শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারলেন না। গত ৯ এপ্রিল বিজিবি সদর দপ্তরে ৭০ লাখ টাকাসহ তাঁর এপিএস আটকের পর থেকে সুরঞ্জিত বিতর্কিত হতে থাকেন। শেষে নিজের মান বাঁচাতে পদত্যাগের আশ্রয় নেন।
জানা গেছে, সুরঞ্জিত রেলমন্ত্রীর পদটি ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'রাজনীতিতে এটা আমার যাত্রাবিরতি। আমি তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আবার ফিরে আসব।'
No comments