'ঠেলায়' পড়েই বিদায় by পাভেল হায়দার চৌধুরী

অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাইরের চেয়ে দলের ভেতরের একটি বড় অংশের চাপে দিশাহারা হয়েই শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। অনেক দেনদরবার করেও শেষ রক্ষা হয়নি। মন্ত্রিসভা ও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বন্ধু কাউকেই নিজের এ বিপদের দিনে কাছে পাননি তিনি।


কার্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাপেই গতকাল সোমবার রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেন। পদত্যাগ না করালে সরকার নানা রকম চাপে পড়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কাই ছিল ক্ষমতাসীন দলের ভেতর। তাই সুরঞ্জিতকে পদত্যাগে বাধ্য করেন মন্ত্রিসভা ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। পদত্যাগের নেপথ্য কারণ সম্পর্কে জানতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এসব কথা জানা গেছে। পদত্যাগ করে রেলমন্ত্রী রাজনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে সুরঞ্জিতকে ছাড় দিতে নারাজ ছিল দলের ভেতরের বড় একটি অংশ। এর মধ্যে তরুণ নেতৃত্ব ছিল বেশি সরব। তাদের এ অবস্থানের সঙ্গে একমত ছিলেন মন্ত্রিসভার সিনিয়র ও দলের কয়েকজন নেতা। এ অবস্থায় তাঁরা ওয়ান-ইলেভেনে (জরুরি অবস্থার সরকার) সুরঞ্জিতের ভূমিকার কথাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনাকে।
জানা গেছে, গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবভনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে গেলে সেখানে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য সুরঞ্জিতের বিষয়ে তাঁকে বিস্তারিত অবহিত করেন। বঙ্গভবনেই সুরঞ্জিতকে পদত্যাগ করতে বলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা। বিষয়টি ঘনিষ্ঠদের কাছে জানান প্রধানমন্ত্রী।
আরো জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য সময় প্রার্থনা ও সরকারের সহযোগিতা চেয়েও পাননি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ। মন্ত্রিসভা ও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীদের সহযোগিতা না পেয়ে একপর্যায়ে মুষড়ে পড়েন অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত এ নেতা।
গণভবন-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সুরঞ্জিত সেন গত রবিবার গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই তাঁকে মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন। ওই সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন সুরঞ্জিত। কিন্তু নিজের পক্ষে দলীয় প্রধানের 'গ্রিন সিগন্যাল' না পেয়ে ওই দিন রাতেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অব্যাহতির সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। সোমবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে অব্যাহতির ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী।
এর আগে বিদায়ী রেলমন্ত্রী দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে বিষয়টি সুরাহার ব্যাপারে বৈঠক করেও সমাধানে আসতে পারেননি। অধিকাংশ নেতার মতামত ছিল পদত্যাগের পক্ষে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহর সঙ্গে তিনি একটি বৈঠক করেন গত শুক্রবার সন্ধ্যায়। ওই বৈঠকে সুরঞ্জিত পরামর্শ চান, এ পরিস্থিতিতে তিনি কী করবেন। জানা যায়, কাজী জাফরুল্লাহ তাঁকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন।
সরে গিয়ে বেঁচে গেলেন
সুরঞ্জিতের রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা মনে করেন, 'সরে গিয়ে বেঁচে গেছেন' সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সভাপতিমণ্ডলীর কয়েক সদস্য ও সম্পাদকমণ্ডলীর নেতার সঙ্গে সুরঞ্জিতের পদত্যাগের প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তাঁরা এ মন্তব্য করেন। তাঁরা সুরঞ্জিতকে 'চালাক' রাজনীতিক আখ্যা দিয়ে বলেন, পদ আঁকড়ে থাকতে গেলে আরো কিছু বেরিয়ে আসতে পারত বলেই দাদা মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এখন বরং কেলেঙ্কারির ঘটনাটি চাপা পড়ে যাবে।
প্রতিক্রিয়া : এদিকে সুরঞ্জিত সেনের পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, 'সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কোনো রকম অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। আমরা বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিনি পদ থেকে সরে গেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।' পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রাজনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বলেও মনে করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.