চারদিক-মুক্তিযুদ্ধের সেই সব তথ্যচিত্র by অমর সাহা
সেই ১৯৭১ সাল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলছে। পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর হাতে মানুষ বলি হচ্ছে। লাখো মানুষ জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসছে। শত শত আবালবৃদ্ধবনিতা মাঠে নেমেছে শত্রুর মোকাবিলা করতে। বাংলাদেশের চারদিকে শুধু যুদ্ধ আর যুদ্ধ। মৃত্যুর আর্তনাদ আর বাঁচার আহাজারি।
সে সময় তো আর আজকের মতো মানুষ সেসব দিনের ছবি টেলিভিশনের পর্দায় দেখার সুযোগ পেত না। শুধু কান দিয়ে শুনেছে রেডিওতে। তাও বাংলাদেশের রেডিওতে নয়, সেই আকাশবাণী, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা বা রেডিও অস্ট্রেলিয়ায়।
কিন্তু সেদিন ভারত সরকার মুক্তিযুদ্ধের সেই সব দিনের কিছু ছবি দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছিল ভারতের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের চলচ্চিত্র বিভাগ এই উদ্যোগ গ্রহণ করে। চলচ্চিত্র বিভাগের বেশ কজন পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক সেদিন ছুটে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে। তুলে এনেছিলেন অনেক ছবি। নারকীয় হত্যাযজ্ঞের নানা চিত্র, উদ্বাস্তুদের সুখ-দুঃখের পাঁচালি আর সীমান্ত পার হওয়ার দুঃসাহসিক অভিযাত্রার নানা খণ্ডচিত্র এবং মুক্তিযোদ্ধাদের রণাঙ্গনের নানা চিত্র। সেসব চিত্রের একটা ক্ষুদ্র অংশ সেদিন ভারতের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হলেও অধিকাংশ ছবি ছিল বাক্সবন্দী। তারপর ধীরে ধীরে ভারতের চলচ্চিত্র বিভাগ সেই সব খণ্ডচিত্র নিয়ে তৈরি করে ফেলে ১২টি তথ্যচিত্র। এই ১২টি তথ্যচিত্রের মধ্যে ইতিমধ্যে দুটি তথ্যচিত্র দেখানো হলেও বাকি নয়টি তথ্যচিত্র প্রায় বাক্সবন্দীই ছিল চলচ্চিত্র বিভাগের গুদামে।
১৮ মার্চ কলকাতার একটি দৈনিকে ছোট্ট একটি বিজ্ঞাপন দৃষ্টি কেড়ে নেয় অনেকের। ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ভারত সরকারের চলচ্চিত্র বিভাগ এবং পশ্চিমবঙ্গ চলচ্চিত্র কেন্দ্র নন্দন যৌথভাবে নন্দন প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করছে বাংলাদেশ: নাইন মান্থস টু ফ্রিডমসহ আরও চারটি তথ্যচিত্র। এগুলো হলো: রিফিউজিস-১৯৭১, হোম কামিং, হিউম্যান ট্র্যাজেডি ও দুর্বারগতি পদ্মা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর স্মরণে এই তথ্যচিত্রগুলো প্রদর্শনের উদ্যোগ নেয় ভারত ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার। শুধু তা-ই নয়, এই পাঁচটি তথ্যচিত্রের মধ্যে নাইন মান্থস টু ফ্রিডম ও দুর্বারগতি পদ্মা ছাড়া বাকি তিনটি তথ্যচিত্র এই প্রথম দেখানো হয়।
এর পরেই আমরা ছুটে যাই কলকাতায় ভারতের ফিল্ম ডিভিশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে। কথা বলি শাখা প্রবন্ধক সুময় মুখার্জির সঙ্গে। তিনি বললেন, নাইন মান্থস টু ফ্রিডম ও দুর্বারগতি পদ্মা—তথ্যচিত্র দুটি পরিচালনা করেছেন যথাক্রমে এস সুখদেব ও ঋত্বিক ঘটক। প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটক অবশ্য ফিল্ম ডিভিশনের আর্থিক সহযোগিতায় তৈরি করেছিলেন ওই তথ্যচিত্র। আর রিফিউজিস-১৯৭১ এবং হিউম্যান ট্র্যাজেডি নির্মাণ করেছেন বিনয় রায় এবং হোম কামিং নির্মাণ করেছেন প্রেম বৈদ্য। সুময় মুখার্জি আরও বললেন, নাইন মান্থস টু ফ্রিডম ও দুর্বারগতি পদ্মা দু-একবার দেখানো হলেও রিফিউজিস-১৯৭১, হোম কামিং ও হিউম্যান ট্র্যাজেডি দেখানো হলো এই প্রথম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর স্মরণে ভারতের চলচ্চিত্র বিভাগ এই উদ্যোগ নেয়। তিনি আরও বলেছেন, এস সুখদেব, বিনয় রায় ও ঋত্বিক ঘটক আর আজ আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই। শুধু বেঁচে আছেন প্রেম বৈদ্য। চিরকুমার এই প্রেম বৈদ্য এখন জীবনের শেষ প্রহর গুনছেন ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনেতে। জন্ম ১৯২৭ সালে। এস সুখদেব প্রয়াত হলেও বেঁচে আছেন তাঁর মেয়ে শবনম সুখদেব। শবনম একসময় চলচ্চিত্র পরিচালনার কাজ করতেন, এখন করেন শিক্ষকতা। সুখদেবের জন্ম ১৯৩৩ সালে। পেয়েছেন তিনি ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘পদ্মশ্রী’। আর বিনয় রায় বাঙালি হলেও কাজ করেছেন মুম্বাইতে। সেখানেই তিনি মারা গেছেন। তিনি আরও বললেন, সুখদেব ও প্রেম বৈদ্য ছিলেন চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক আর বিনয় রায় ছিলেন চিত্রগ্রাহক। ঋত্বিক ঘটক অবশ্য চলচ্চিত্র বিভাগের কোনো কর্তাব্যক্তি না হলেও বিভাগের অনুরোধে তৈরি করেছিলেন ওই তথ্যচিত্রটি। সুখদেব বাংলাদেশের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ছবি তুলে সেই ছবি সম্পাদনা করতে গিয়ে ওসব ছবির দৃশ্য দেখে গুরুতরভাবে হার্টঅ্যাটাক হয়ে মারা যান ১৯৭৯ সালের ১ মার্চ।
সুময় মুখার্জি আরও বললেন, এখন আমাদের ফিল্ম ডিভিশনে সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ১২টি ছবি আছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি তথ্যচিত্রের প্রদর্শন হয়েছে আগে। আর ১৮ মার্চ প্রথম প্রদর্শিত হয়েছে অন্য তিনটি ছবি। আর সাতটি ছবির প্রদর্শন এখনো হয়নি। এই ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিচালক ওমপ্রকাশ শর্মার ইন্ডিয়া-পাকিস্তান কনফ্লিকট-১৯৭১, শান্তি এস ভার্মার দ্য শ্লথার অব এ পিপল, পরিচালক এন এস থাপার এবার ঘরে ফেরার পালা, বিনয় রায়ের জন্ম নিল বাংলাদেশ এবং ঢাকা, শান্তি এস ভার্মার সোনার বাংলা এবং গীতা মেহতার ডেটলাইন বাংলাদেশ। সুময় মুখার্জি আরও জানান, একসময় এই তথ্যচিত্র না দেখানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে অনুরোধ আসায় মূলত এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শন করার উদ্যোগ নেয়নি ভারত সরকার। এখন কেন্দ্রীয় সরকার এই তথ্যচিত্রগুলো দেখানোর উদ্যোগ নেওয়ায় প্রথম পর্যায়ে ১৮ মার্চ দেখানো হলো পাঁচটি তথ্যচিত্র। সময় মুখার্জি বলেছেন, এসব তথ্যচিত্রের এমন সব ছবি রয়েছে, যা দেখলে মানুষ শিউরে উঠবে। লোমহর্ষক নানা ছবি রয়েছে এই তথ্যচিত্রে। পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার এমন সব ছবি রয়েছে, যা দেখলে মানুষের রক্ত হিম হয়ে যায়।
কিন্তু সেদিন ভারত সরকার মুক্তিযুদ্ধের সেই সব দিনের কিছু ছবি দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছিল ভারতের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের চলচ্চিত্র বিভাগ এই উদ্যোগ গ্রহণ করে। চলচ্চিত্র বিভাগের বেশ কজন পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক সেদিন ছুটে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে। তুলে এনেছিলেন অনেক ছবি। নারকীয় হত্যাযজ্ঞের নানা চিত্র, উদ্বাস্তুদের সুখ-দুঃখের পাঁচালি আর সীমান্ত পার হওয়ার দুঃসাহসিক অভিযাত্রার নানা খণ্ডচিত্র এবং মুক্তিযোদ্ধাদের রণাঙ্গনের নানা চিত্র। সেসব চিত্রের একটা ক্ষুদ্র অংশ সেদিন ভারতের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হলেও অধিকাংশ ছবি ছিল বাক্সবন্দী। তারপর ধীরে ধীরে ভারতের চলচ্চিত্র বিভাগ সেই সব খণ্ডচিত্র নিয়ে তৈরি করে ফেলে ১২টি তথ্যচিত্র। এই ১২টি তথ্যচিত্রের মধ্যে ইতিমধ্যে দুটি তথ্যচিত্র দেখানো হলেও বাকি নয়টি তথ্যচিত্র প্রায় বাক্সবন্দীই ছিল চলচ্চিত্র বিভাগের গুদামে।
১৮ মার্চ কলকাতার একটি দৈনিকে ছোট্ট একটি বিজ্ঞাপন দৃষ্টি কেড়ে নেয় অনেকের। ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ভারত সরকারের চলচ্চিত্র বিভাগ এবং পশ্চিমবঙ্গ চলচ্চিত্র কেন্দ্র নন্দন যৌথভাবে নন্দন প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করছে বাংলাদেশ: নাইন মান্থস টু ফ্রিডমসহ আরও চারটি তথ্যচিত্র। এগুলো হলো: রিফিউজিস-১৯৭১, হোম কামিং, হিউম্যান ট্র্যাজেডি ও দুর্বারগতি পদ্মা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর স্মরণে এই তথ্যচিত্রগুলো প্রদর্শনের উদ্যোগ নেয় ভারত ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার। শুধু তা-ই নয়, এই পাঁচটি তথ্যচিত্রের মধ্যে নাইন মান্থস টু ফ্রিডম ও দুর্বারগতি পদ্মা ছাড়া বাকি তিনটি তথ্যচিত্র এই প্রথম দেখানো হয়।
এর পরেই আমরা ছুটে যাই কলকাতায় ভারতের ফিল্ম ডিভিশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে। কথা বলি শাখা প্রবন্ধক সুময় মুখার্জির সঙ্গে। তিনি বললেন, নাইন মান্থস টু ফ্রিডম ও দুর্বারগতি পদ্মা—তথ্যচিত্র দুটি পরিচালনা করেছেন যথাক্রমে এস সুখদেব ও ঋত্বিক ঘটক। প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটক অবশ্য ফিল্ম ডিভিশনের আর্থিক সহযোগিতায় তৈরি করেছিলেন ওই তথ্যচিত্র। আর রিফিউজিস-১৯৭১ এবং হিউম্যান ট্র্যাজেডি নির্মাণ করেছেন বিনয় রায় এবং হোম কামিং নির্মাণ করেছেন প্রেম বৈদ্য। সুময় মুখার্জি আরও বললেন, নাইন মান্থস টু ফ্রিডম ও দুর্বারগতি পদ্মা দু-একবার দেখানো হলেও রিফিউজিস-১৯৭১, হোম কামিং ও হিউম্যান ট্র্যাজেডি দেখানো হলো এই প্রথম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর স্মরণে ভারতের চলচ্চিত্র বিভাগ এই উদ্যোগ নেয়। তিনি আরও বলেছেন, এস সুখদেব, বিনয় রায় ও ঋত্বিক ঘটক আর আজ আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই। শুধু বেঁচে আছেন প্রেম বৈদ্য। চিরকুমার এই প্রেম বৈদ্য এখন জীবনের শেষ প্রহর গুনছেন ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনেতে। জন্ম ১৯২৭ সালে। এস সুখদেব প্রয়াত হলেও বেঁচে আছেন তাঁর মেয়ে শবনম সুখদেব। শবনম একসময় চলচ্চিত্র পরিচালনার কাজ করতেন, এখন করেন শিক্ষকতা। সুখদেবের জন্ম ১৯৩৩ সালে। পেয়েছেন তিনি ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘পদ্মশ্রী’। আর বিনয় রায় বাঙালি হলেও কাজ করেছেন মুম্বাইতে। সেখানেই তিনি মারা গেছেন। তিনি আরও বললেন, সুখদেব ও প্রেম বৈদ্য ছিলেন চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক আর বিনয় রায় ছিলেন চিত্রগ্রাহক। ঋত্বিক ঘটক অবশ্য চলচ্চিত্র বিভাগের কোনো কর্তাব্যক্তি না হলেও বিভাগের অনুরোধে তৈরি করেছিলেন ওই তথ্যচিত্রটি। সুখদেব বাংলাদেশের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ছবি তুলে সেই ছবি সম্পাদনা করতে গিয়ে ওসব ছবির দৃশ্য দেখে গুরুতরভাবে হার্টঅ্যাটাক হয়ে মারা যান ১৯৭৯ সালের ১ মার্চ।
সুময় মুখার্জি আরও বললেন, এখন আমাদের ফিল্ম ডিভিশনে সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ১২টি ছবি আছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি তথ্যচিত্রের প্রদর্শন হয়েছে আগে। আর ১৮ মার্চ প্রথম প্রদর্শিত হয়েছে অন্য তিনটি ছবি। আর সাতটি ছবির প্রদর্শন এখনো হয়নি। এই ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিচালক ওমপ্রকাশ শর্মার ইন্ডিয়া-পাকিস্তান কনফ্লিকট-১৯৭১, শান্তি এস ভার্মার দ্য শ্লথার অব এ পিপল, পরিচালক এন এস থাপার এবার ঘরে ফেরার পালা, বিনয় রায়ের জন্ম নিল বাংলাদেশ এবং ঢাকা, শান্তি এস ভার্মার সোনার বাংলা এবং গীতা মেহতার ডেটলাইন বাংলাদেশ। সুময় মুখার্জি আরও জানান, একসময় এই তথ্যচিত্র না দেখানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে অনুরোধ আসায় মূলত এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শন করার উদ্যোগ নেয়নি ভারত সরকার। এখন কেন্দ্রীয় সরকার এই তথ্যচিত্রগুলো দেখানোর উদ্যোগ নেওয়ায় প্রথম পর্যায়ে ১৮ মার্চ দেখানো হলো পাঁচটি তথ্যচিত্র। সময় মুখার্জি বলেছেন, এসব তথ্যচিত্রের এমন সব ছবি রয়েছে, যা দেখলে মানুষ শিউরে উঠবে। লোমহর্ষক নানা ছবি রয়েছে এই তথ্যচিত্রে। পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার এমন সব ছবি রয়েছে, যা দেখলে মানুষের রক্ত হিম হয়ে যায়।
No comments