বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩৬৮ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। আবুল হাশেম, বীর প্রতীক বিপর্যয়েও সাহস হারাননি মুখোমুখি মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। মধ্যরাতে শুরু হলো প্রচণ্ড রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা এক কোম্পানি। তাঁরা কয়েকটি দলে (প্লাটুন) বিভক্ত। ৯ নম্বর প্লাটুনে আছেন আবুল হাশেম।
তাঁর দলনেতা সুবেদার আশরাফ আলী খান (বীর বিক্রম)। পাকিস্তানি সেনাদের প্রবল প্রতিরোধ উপেক্ষা করে তাঁরা ভোরবেলায় দখল করলেন বিরাট এক এলাকা। পরদিন রাতে সেখানে শুরু হলো আবার প্রচণ্ড যুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অতর্কিতে পাল্টা আক্রমণ করেছে। এ ঘটনা আজমপুরে। ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর শেষ রাতে।
নভেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সর্বত্র শুরু হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। তখন মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়। সীমান্ত এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল সমবেত হয় আখাউড়ার চারদিকে। আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত। ভৌগোলিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সেখানে আছে রেল জংশন। আখাউড়ার পার্শ্ববর্তী আজমপুরে অবস্থান নেয় নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের চার্লি (সি) কোম্পানি। এর ৯ নম্বর প্লাটুনে ছিলেন আবুল হাশেম।
আজমপুর রেলস্টেশনে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ নভেম্বর মধ্যরাতে সেখানে আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সেনারা প্রবল প্রতিরোধ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা সব বাধা বীরত্বের সঙ্গে উপেক্ষা করে আজমপুর রেলস্টেশন ও আশপাশ এলাকা ভোর হওয়ার আগেই দখল করেন। পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটে যায়।
১ ডিসেম্বর শেষ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে পাল্টা আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণ এতটা অপ্রত্যাশিত ছিল যে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ নাজুক অবস্থায় পড়েন। আবুল হাশেমসহ তাঁর সহযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেও দখল করা এলাকা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। এ সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে তাঁর প্লাটুন কমান্ডার শহীদ হলে তাঁরা প্রায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হন। তখন আবুল হাশেম সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে প্লাটুনের হাল ধরেন। তাঁর নেতৃত্বে সহযোদ্ধারা পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ এত প্রচণ্ড ছিল যে তাঁরা কৌশলগত কারণে পিছু হটে যান। পরদিন তাঁরা আরও কয়েকটি দল মিলে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে চূড়ান্তভাবে আজমপুর রেলস্টেশন এলাকা পুনর্দখল করেন।
আবুল হাশেম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের (বর্তমানে পাকিস্তান) শিয়ালকোটে। ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটিতে বাড়িতে এসে তিনি আর চাকরিতে যোগ দেননি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। এ পর্যায়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য অপারেশন কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত জাঙ্গালিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস। পরে যুদ্ধ করেন নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য আবুল হাশেমকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৩০।
আবুল হাশেমের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে। বর্তমানে বাস করেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সিটি করপোরেশন এলাকাভুক্ত ফতুল্লার সস্তাপুরে। ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তাঁর বাবার নাম সুরুজ মিয়া। মা রূপভাননেছা। স্ত্রী লাইলি বেগম। তাঁদের এক ছেলে, তিন মেয়ে।
সূত্র: আবুল হাশেম বীর প্রতীক ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর-৩।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
নভেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সর্বত্র শুরু হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। তখন মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়। সীমান্ত এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল সমবেত হয় আখাউড়ার চারদিকে। আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত। ভৌগোলিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সেখানে আছে রেল জংশন। আখাউড়ার পার্শ্ববর্তী আজমপুরে অবস্থান নেয় নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের চার্লি (সি) কোম্পানি। এর ৯ নম্বর প্লাটুনে ছিলেন আবুল হাশেম।
আজমপুর রেলস্টেশনে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ নভেম্বর মধ্যরাতে সেখানে আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সেনারা প্রবল প্রতিরোধ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা সব বাধা বীরত্বের সঙ্গে উপেক্ষা করে আজমপুর রেলস্টেশন ও আশপাশ এলাকা ভোর হওয়ার আগেই দখল করেন। পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটে যায়।
১ ডিসেম্বর শেষ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে পাল্টা আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণ এতটা অপ্রত্যাশিত ছিল যে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ নাজুক অবস্থায় পড়েন। আবুল হাশেমসহ তাঁর সহযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেও দখল করা এলাকা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। এ সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে তাঁর প্লাটুন কমান্ডার শহীদ হলে তাঁরা প্রায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হন। তখন আবুল হাশেম সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে প্লাটুনের হাল ধরেন। তাঁর নেতৃত্বে সহযোদ্ধারা পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ এত প্রচণ্ড ছিল যে তাঁরা কৌশলগত কারণে পিছু হটে যান। পরদিন তাঁরা আরও কয়েকটি দল মিলে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে চূড়ান্তভাবে আজমপুর রেলস্টেশন এলাকা পুনর্দখল করেন।
আবুল হাশেম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের (বর্তমানে পাকিস্তান) শিয়ালকোটে। ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটিতে বাড়িতে এসে তিনি আর চাকরিতে যোগ দেননি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। এ পর্যায়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য অপারেশন কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত জাঙ্গালিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস। পরে যুদ্ধ করেন নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য আবুল হাশেমকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৩০।
আবুল হাশেমের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে। বর্তমানে বাস করেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সিটি করপোরেশন এলাকাভুক্ত ফতুল্লার সস্তাপুরে। ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তাঁর বাবার নাম সুরুজ মিয়া। মা রূপভাননেছা। স্ত্রী লাইলি বেগম। তাঁদের এক ছেলে, তিন মেয়ে।
সূত্র: আবুল হাশেম বীর প্রতীক ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর-৩।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments