বর্ণিল বর্ষবরণ-বাঙালি নব আনন্দেই জেগেছিল
নববর্ষের প্রথম প্রভাত থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত রাজধানীর রমনা বটমূল থেকে প্রকৃতপক্ষে গোটা দেশ_ শহর, বন্দর, গ্রাম সর্বত্র প্রাণোচ্ছল নারী-পুরুষ-শিশুদের আনন্দ-উৎসব আমরা দেখেছি। এত মানুষের ভিড়! এত কোলাহল ও আনন্দ! এত অনুষ্ঠান!
নতুন পোশাক, গৃহসজ্জা ও উপহার সামগ্রী কেনায় দোকানে দোকানে প্রচণ্ড ভিড় অর্থনীতির জন্য চমকপ্রদ সম্ভাবনার প্রকাশ_ এ যেন ঈদের মতোই বিশাল বিপণন মৌসুম। এর অনন্য বৈশিষ্ট্য_ দেশি পণ্যে প্রবল আকর্ষণ। স্বতঃস্ফূর্ত এমন সমাবেশ আগে কখনও হয়নি, এমন অভিমত ইতিমধ্যে ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ। আমাদের দেশ এখনও অর্থনীতিতে তেমন উন্নত নয়। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু থাকলেও মাঝে মধ্যে হোঁচট খেতে হচ্ছে। সুশাসনের প্রত্যাশা থেকে যাচ্ছে অপূর্ণ। কিন্তু তারপরও বৈশাখের প্রথম দিনে হাজার বছরের আপন সংস্কৃতির গৌরব বুকে ধারণ করে শ্রেণী-পেশা-আর্থিক অবস্থান নির্বিশেষে সবাই মেতে ওঠে উৎসবে। জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশা তাদের সবার। এ অনুষ্ঠানকে সর্বজনীন রূপ প্রদানে গণমাধ্যমের অবদান রয়েছে, বিশেষ করে টেলিভিশনের। বেসরকারি খাতের অনেক টিভি চ্যানেলকে লাইসেন্স প্রদানের সমালোচনা যে নেই সেটা বলা যাবে না; কিন্তু এর ইতিবাচক দিকও আমরা লক্ষ্য করছি_ একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস, রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী এবং বাংলা নববর্ষ এ ধরনের সর্বজনীন দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে তারা সুন্দর-মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠান উপহার দিতে সচেষ্ট হয়। এবারের বৈশাখেও দেখা গেল ছায়ানটের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করছে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে চ্যানেল আই-সুরের ধারার অনুপম আয়োজন হাজারো কণ্ঠে কোটি বাঙালির বর্ষবরণ দীর্ঘ সময় ধরে সরাসরি প্রচার করেছে চ্যানেল আই। চারুকলার ছাত্র-শিক্ষকদের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার চিত্র ধারণ করে রাখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল দেশ-বিদেশের হাজারো আলোকচিত্রী। ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি ও মল এলাকা মানুষে ছয়লাব। রাজধানীজুড়েই ছিল বৈশাখের অনুষ্ঠান এবং তার মধ্যে কয়েকটি সরাসরি প্রচার করা হয়েছে টিভি চ্যানেলগুলোতে। ঢাকার বাইরেও চট্টগ্রাম, বরিশাল, পাবনা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, খুলনার মতো বিভাগীয় শহরে এবং আরও ছোট-বড় সব শহরে বের হয়েছিল বর্ণাঢ্য মিছিল_ স্বাগতম ১৪১৯। এ যেন এক অন্য বাংলাদেশ, স্বপ্নের স্বদেশ। সোমবারের সমকালের লোকালয় পৃষ্ঠায় 'মাওয়ায় পদ্মাপারে পর্যটকের ঢল' শিরোনামের খবরে জানা যায়, লৌহজংয়ের পদ্মার চরে ও আশপাশে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে ছিল সপরিবারে আসা নারী-পুরুষ-শিশুদের আনন্দের মেলা। আগামীতে এ ধরনের আরও আয়োজন ঘটতে থাকবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। যারা ঘরে বসেই সারাদেশের বৈশাখের বর্ণিল আয়োজন উপভোগ করতে চাইবে, তাদের জন্য রয়েছে টিভি চ্যানেলগুলো। সবকিছুই ধরে রাখছে তারা_ কোনোটা সরাসরি অন এয়ার, কোনোটা বা পরে প্রচার। বিপুল এ আয়োজনে কোথাও কোথাও হয়তো কিছু বাড়াবাড়ি ঘটে যায়। ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ মৌসুমে 'পান্তা-ইলিশ' বিরক্তি জাগায়। সংস্কৃতি থেকে অর্থনীতি_ বিচিত্র বিষয়ের সংযুক্তিতে বহুমাত্রিক হয়ে ওঠা বাঙালির প্রধান উৎসবকে হেয়, এমনকি নস্যাৎ করার জন্য ধর্মান্ধদের তরফে থাকে হুমকি, যা শঙ্কিত ও ম্লান করে দিতে চায় বর্ষবরণের চমকপ্রদ সব অনুষ্ঠান। নববর্ষে প্রত্যাশা থাকে ব্যর্থতা ও গ্গ্নানি পেছনে ফেলে সুন্দরের পথে এগিয়ে যাওয়ার। একইভাবে পিছু হটে যাক অসুন্দর ও অনাকাঙ্ক্ষিত সবকিছু।
No comments