সিরিয়া-অশনিসংকেত by রবার্ট ফিস্ক

এই সপ্তাহে তাহলে ‘আরব বসন্ত’ আরব লিগকেও আক্রান্ত করল? নাকি তা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কায়দায় ধনী ও খুদে রাষ্ট্র কাতারের দিকে ঝুঁকে পড়েছে? আরব দুনিয়ার ইতিহাসে আরব লিগের মতো নির্বোধ, অক্ষম ও উদ্ভট সংস্থা আর দেখা যায়নি। হঠাৎ সংস্থাটি ইঁদুর থেকে সিংহ হয়ে সিরিয়াকে আরব লিগ থেকে বহিষ্কারের হুংকার দিচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার আরব লিগ সিরিয়ার সদস্যপদ রহিত করার ঘোষণা দেয়।


সিরিয়া যদি বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ না করে, শহরগুলো থেকে সাঁজানো যান সরানো, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়া এবং বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু না করে তাহলে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে হুমকি দিয়েছেন আরব লিগের নেতারা।
দামেস্কও পাল্টা গর্জন দিয়েছে যে সিরিয়া তো ইতিমধ্যে আরব লিগের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। সুতরাং আরব লিগের সিদ্ধান্তটি বেআইনি এবং লিগের সনদের বরখেলাপ। সিরিয়ার অভিযোগ, এসব আসলে ‘লিবিয়ার মতো করে সিরিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপের পাঁয়তারা’। সম্ভবত অভিযোগটা সঠিক।
কিন্তু সিরিয়ার বাশার আল আসাদের সরকারের জন্য আরব লিগের ভোটাভুটিটা ছিল নৈরাশ্যজনক। ২২টি রাষ্ট্রের মধ্যে কেবল শিয়া ইরাকই (প্রেসিডেন্ট বুশের কল্যাণে) অনুপস্থিত ছিল, আর ইয়েমেন ও লেবানন ভোট দিয়েছে সিরিয়ার পক্ষে। এই দেশ দুটি এখনো সিরিয়ার সঙ্গে ভগ্নিসুলভ সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ।
কাতারই এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে সিরিয়ার নিয়তির শত্রু, এর সঙ্গে আছে আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেল। কাতার ও আল জাজিরাই ছিল সিরিয়াকে বিপাকে ফেলার এই ভোটাভুটির পেছনে। কাউকে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে, কাউকে অনুনয়-বিনয় করে আর যাদের দ্বিমত ছিল তাদের গ্যাসের মুনাফার বিরাট একটা অংশ ঘুষ দিয়ে সমর্থন আদায় করা হয়েছে।
আরব দুনিয়ায় কাতারের শক্তি-সামর্থ্য দিনকে দিন স্পষ্টভাবে সাম্রাজ্যবাদী হয়ে ওঠা শুরু করেছে। অর্থবল আর নিয়মিত বিমান হামলার মাধ্যমে তারা লিবিয়ায় গাদ্দাফির শাসন উচ্ছেদে সহায়তা করেছিল। এখন আরব লিগের নেতা হয়ে সিরিয়াকে তারা নিশানা করেছে।
সিরিয়ার ওপর ন্যাটোর ‘বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ’ সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে না। ইসরায়েলিরাও চাইতে পারে যে আসাদের শাসন সেখানে টিকে থাক। কারণ, বাস্তবে কেউ জানে না, আসাদের পরে কাদের শাসন আসবে। সন্দেহ নেই, ন্যাটো সিরিয়াকে আক্রমণ করলে ইরানও লেবাননের হিজবুল্লাহকে দিয়ে উত্তর ইসরায়েলে বোমাবর্ষণ চালাবে। ইরানও পারস্য উপসাগরে মার্কিন নৌবহরের সঙ্গে সংঘাতে জড়াবে। কোনো আরব চায় না, সিরিয়াতেও লিবিয়ার মতো গৃহযুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠুক। তা ছাড়া, সিআই প্রধান লিওন পানেট্টাও ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে জড়ানোকে নাকচ করে দিয়েছেন।
এসব সত্ত্বেও, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সামনে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হাজির হয়েছে। তিনি এবং তাঁর পিতা হাফেজ আল আসাদ সিরিয়াকে ‘আরবের জননী’র স্তরে উন্নীত করেছিলেন। আর এখন সেই ‘আরব জাতি’ তাদের সেই জননীকে অপদস্থ করতে নেমেছে। যে দেশটি ইতিমধ্যে মার্কিন ও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অবরোধে ভুগছে, তার সত্যিকার দুশ্চিন্তা হলো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিকূলতা।
ব্রিটেনের দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট থেকে অনূদিত।
রবার্ট ফিস্ক: ব্রিটিশ সাংবাদিক, মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ।

No comments

Powered by Blogger.