জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নেই-মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ

দেশের মানুষ মন্ত্রিসভার উপযুক্ত রদবদল আশা করেছিল। কিন্তু এ পর্বেও তা হলো না। বরং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মন্ত্রীরা ভালোভাবেই কাজ করছেন। কেউ ব্যর্থ নন। মন্ত্রিত্ব কোনো মেয়াদি চাকরি নয়। কিন্তু চারদিকে এত সমালোচনা সত্ত্বেও মন্ত্রিসভা থেকে অভিযুক্তরা বাদ না পড়ায় মানুষ আশাহত হয়েছে।


কারণ দুর্নীতি, সন্ত্রাস, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি-সংকট ইত্যাদিতে জেরবার সাধারণ মানুষ সরকারের কাছ থেকে সংকট মোচনে কার্যকর উদ্যোগ আশা করেছিল। দুই বছর ধরে মন্ত্রিসভাসংক্রান্ত যেকোনো গুজব-গুঞ্জনে তারা কান খাড়া করে রেখেছিল, যাতে অযোগ্যদের বাদ পড়ারই কথা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারপ্রধানের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যায়ন এবং সাধারণ মানুষের বাস্তব আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর তিন দফায় মন্ত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। কারও বাদ পড়া দূরে থাকুক, দফতর রদবদলের দৃষ্টান্তও কম। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের বার্তা হলো, গত আড়াই বছরে মন্ত্রীদের কার্যক্রমে প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট। প্রত্যেকেই তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যেন সুচারুরূপে পালন করেছেন। অথচ নাগরিক সমাজের ও উন্নয়ন অংশীদারদের সাম্প্রতিক আলাপ-আলোচনায় স্পষ্ট যে সরকার নানা ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। দু-চারটি মন্ত্রণালয় ছাড়া প্রায় সর্বত্র অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিই জেকে বসেছে। যোগাযোগ, নৌপরিবহন ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতো বেশ কিছু ক্ষেত্রে শোচনীয় ব্যর্থতা এবং অস্বচ্ছতা মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। এ পটভূমিতে মন্ত্রিসভায় দুই নতুন মুখ জনগণের মধ্যে কোনো আশা জাগায়নি। তবে এটা ঠিক যে প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং ওবায়দুল কাদেরের পূর্ণ মন্ত্রিত্ব লাভ উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
আমরা লক্ষ করি, দলের ভেতরে থেকে এ দুই জ্যেষ্ঠ নেতা সরকারের নানা কাজের একটা সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে চলছিলেন। কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের সমালোচনার সঙ্গে গণমাধ্যমের সমালোচনামূলক বক্তব্যেরও মিল লক্ষ করা গেছে। সুতরাং এখন তাঁদের মন্ত্রিত্বলাভে প্রমাণ হয়, গণমাধ্যমের সমালোচনা একেবারে অমূলক নয়। মন্ত্রিসভায় তাঁদের যোগদানকে আমরা স্বাগত জানিয়ে আশা প্রকাশ করব যে এত দিন বাইরে থেকে যেভাবে সমালোচনা করার মানসিকতা দেখিয়েছেন, তার যেন ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। অন্ধ গুণকীর্তন যে প্রকারান্তরে সরকারেরই সর্বনাশ ডেকে আনে, সেটা তাঁরা তাঁদের সতীর্থদের বোঝাতে সচেষ্ট হবেন।
মন্ত্রিসভার কলেবর ছোট করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরা অতীতে অভিন্ন মতামত দিয়েছেন। কিন্তু সে বিষয়ে দলীয় সরকারগুলো সচেতনতার পরিচয় দিতে পারেনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন মন্ত্রীদের স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এ ওষুধে সরকারকে বাঁচানো যাবে না। কিন্তু মন্ত্রিসভার কলেবর বৃদ্ধি নিয়ে তাঁর কোনো শিরঃপীড়া নেই। এমনকি দলের স্বার্থে কোনো প্রকারের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই একটি নতুন মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা হলো। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে যেভাবে দুই টুকরা করা হলো, তা স্বচ্ছ ও জবাবদিহির পরিচায়ক নয়।

No comments

Powered by Blogger.