সার্ক অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক-অর্থনৈতিক ইউনিয়ন গঠন জরুরি
২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়াকে পর্যায়ক্রমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো সংস্থায় রূপান্তরের লক্ষ্যে 'দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক ইউনিয়ন' গঠনের কথা উঠেছিল। কিন্তু এরপর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বরং সার্ক সদস্য দেশগুলো, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিরোধ এবং বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে ভারতের বিরাজমান বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় সমস্যার কারণে এই উদ্যোগ বেশিদূর এগোতে পারেনি। সম্প্র্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্রুত সম্পর্কোন্নয়নের প্রচেষ্টা, পাকিস্তান-ভারত অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ এবং নেপালের সঙ্গে ভারতের বিরাজমান সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক ইউনিয়ন গঠনের সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে। এখন এই অঞ্চলের দেশগুলো তাদের পারস্পরিক নির্ভরশীলতার দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বাধ্যবাধকতার বিষয়গুলোকে নিজস্ব ও সামগ্রিক লাভের নিক্তিতে বিচার করতে পারছে। সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত সার্ক অর্থমন্ত্রী ও অর্থসচিবদের আলাদা বৈঠক শেষে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিতের বক্তব্য ও আহ্বান থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক ইউনিয়ন গঠনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদের মধ্যে এর আগ্রহের প্রমাণ পাওয়া। কিন্তু এখনই ভারতীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী আঞ্চলিক ব্যাংক গঠনের যৌক্তিকতা রয়েছে কি-না তা নিয়ে আরও ভাবনা-চিন্তা করা উচিত। তবে সার্ক উন্নয়ন তহবিলকে আরও সমৃদ্ধ করা এবং এটি যাতে সার্ক দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানাবিধ উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। দ্রুত ব্যবসা-বাণিজ্য উন্মুক্ত করা এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ ও জ্বালানি নেটওয়ার্কসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে প্রতিটি সদস্য দেশ, বিশেষ করে এ অঞ্চলের জনগণ উপকৃত হতে পারে বহুভাবে। এতে দক্ষিণ এশিয়া ইউনিয়ন গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে পুঁজি ও প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ নাগরিকরা যেন বিনা বাধায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে পারে, এমনকি কাজ করার সুবিধা পায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই একসময় দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক ইউনিয়ন গঠন প্রতিটি সদস্য দেশ ও এই অঞ্চলের সব মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হবে। এ লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
No comments