স্বাস্থ্যসেবা বনাম ডাক্তারদের দলবাজি by ড. মুহাম্মদ আশকার ইবনে শাইখ
গত ৬ আগস্ট কালের কণ্ঠে 'ডাক্তারদের দলবাজিতে বেতাল হাসপাতাল' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নতুন করে দেশের স্বাস্থ্যসেবাসংক্রান্ত আরো কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সচেতন মানুষ মাত্রেরই জানা আছে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে 'ড্যাব' নামক চিকিৎসকদের সংগঠনটির কারো কারো নেতিবাচক কর্মকাণ্ড কী পরস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলেও এর কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে? না, হয়নি।
কারণ 'স্বাচিপ' নামক চিকিৎসকদের সংগঠনের কারো কারো অনৈতিক, স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ড এখন আরো বেশি দৃষ্টিকটুভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। দারিদ্র্যপীড়িত এ দেশের চিকিৎসাসেবা নিয়ে এমনিতেই রয়েছে অন্তহীন প্রশ্ন। রাষ্ট্র কিংবা সরকার মানুষের অন্যতম এই মৌলিক অধিকার ভোগ করার রাস্তা প্রশস্ত তো করতে পারেইনি, কণ্টকমুক্তও করতে পারেনি। এ দেশের স্বাস্থ্যসেবার চিত্র বড় বেশি বিবর্ণ। দেশের মানুষের কাছে এ এক চরম তিক্ত অভিজ্ঞতা। বেসরকারি পর্যায়ে দেশের চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত ও উন্নত হয়েছে সত্য; কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে তাদের মাধ্যমে এই সেবা গ্রহণ করা দুরূহ। তা ছাড়া দুঃখজনক হলেও সত্য, এ দেশে চিকিৎসাসেবার নামে অনেক ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হচ্ছে রমরমা বাণিজ্য এবং অধিকাংশ মানুষ খুব অসহায়ভাবে এর শিকার। আমরা বিশ্বাস করি, চিকিৎসাক্ষেত্রে মানবতাবোধসম্পন্ন অনেক চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন, যাঁরা এটিকে সেবামূলক পেশা হিসেবেই গ্রহণ করেছেন এবং যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অনেক নিষ্ঠাবান। কিন্তু সেই সঙ্গে এ প্রশ্নও ওঠে, তাঁদের সংখ্যা কত? জবাব খুবই পীড়াদায়ক।
কালের কণ্ঠের এই প্রতিবেদনে চিত্রিত হয়েছে কিভাবে 'স্বাচিপ' নামক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অনেক চিকিৎসক নিজেদের দায়বদ্ধতার পাট চুকিয়ে দলবাজি করে হীনস্বার্থ চরিতার্থকরণের জন্য উন্মত্ত। তাঁদের দলবাজির কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র ক্রমবিবর্ণ হচ্ছে এবং এর চরম বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। মানুষ খুব সংগত কারণেই দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। অসংখ্য মানুষ বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে চিকিৎসার জন্য। এমনটি কোনোভাবেই শুভপ্রদ চিত্র নয় এবং দেশের মানুষ ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকরও বটে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ইতিমধ্যে বহুবার চিকিৎসকদের তাঁদের মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব-কর্তব্যবোধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কারোরই হেলাফেলা কিংবা স্বেচ্ছাচারিতা সহ্য করা হবে না। তার পরও হেলাফেলা কিংবা স্বেচ্ছাচারিতা যে বন্ধ হয়নি, কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনই এর বড় প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তা তাঁরা আমলে নিচ্ছেন না। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়_এও নতুন করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। সরকার সাংবিধানিকভাবে তা নিশ্চিত করতে বাধ্য। বর্তমান সরকার সে প্রচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে বটে; কিন্তু দলীয় কিছু ক্ষমতাবান ও স্বেচ্ছাচারী চিকিৎসকের কারণে এর সুফল মিলছে না।
নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারকে বিদ্যমান চিত্র আমলে নিয়ে অবশ্যই দ্রুততার সঙ্গে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যে দেশের সিংহভাগ মানুষের নুন আনতে পান্থা ফুরায় সে দেশের চিত্র যদি এই হয়, তাহলে সামগ্রিক চিত্র কতটা বিবর্ণ, উদ্বেগজনক ও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে এরও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। চিকিৎসকদের দলবাজি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা যে মন্তব্য (কালের কণ্ঠের ওই প্রতিবেদনেই প্রকাশ) করেছেন তাও অনভিপ্রেত। এই সরকার গণতান্ত্রিকভাবে বিপুল জনরায়ে নির্বাচিত একটি সরকার। আর এ জন্যই এ সরকারের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা আরো বেশি। যে নেতিবাচক বাস্তবতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, দেশ জাতির বৃহৎ স্বার্থে এর সমূলে উৎপাটন প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারকে সবকিছু করতে হবে অনেক কিছুর উধর্ে্ব ওঠে। এ জন্য কঠোর হওয়ার কোনোই বিকল্প নেই। শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্র নয়, সরকারের কোনো স্তরেই কারোরই দলবাজির কোনো অবকাশ নেই। সরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার মানও উন্নত করতে হবে সার্বিক প্রয়োজনেই। মানুষের অধিকার নিয়ে কারোরই হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই এবং কোনোভাবে তা উচিতও নয়। এ দেশের বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ বিষয়গুলো আরো বেশি জরুরি।
লেখক : লন্ডনপ্রবাসী গবেষক
কালের কণ্ঠের এই প্রতিবেদনে চিত্রিত হয়েছে কিভাবে 'স্বাচিপ' নামক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অনেক চিকিৎসক নিজেদের দায়বদ্ধতার পাট চুকিয়ে দলবাজি করে হীনস্বার্থ চরিতার্থকরণের জন্য উন্মত্ত। তাঁদের দলবাজির কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র ক্রমবিবর্ণ হচ্ছে এবং এর চরম বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। মানুষ খুব সংগত কারণেই দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। অসংখ্য মানুষ বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে চিকিৎসার জন্য। এমনটি কোনোভাবেই শুভপ্রদ চিত্র নয় এবং দেশের মানুষ ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকরও বটে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ইতিমধ্যে বহুবার চিকিৎসকদের তাঁদের মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব-কর্তব্যবোধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কারোরই হেলাফেলা কিংবা স্বেচ্ছাচারিতা সহ্য করা হবে না। তার পরও হেলাফেলা কিংবা স্বেচ্ছাচারিতা যে বন্ধ হয়নি, কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনই এর বড় প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তা তাঁরা আমলে নিচ্ছেন না। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়_এও নতুন করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। সরকার সাংবিধানিকভাবে তা নিশ্চিত করতে বাধ্য। বর্তমান সরকার সে প্রচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে বটে; কিন্তু দলীয় কিছু ক্ষমতাবান ও স্বেচ্ছাচারী চিকিৎসকের কারণে এর সুফল মিলছে না।
নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারকে বিদ্যমান চিত্র আমলে নিয়ে অবশ্যই দ্রুততার সঙ্গে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যে দেশের সিংহভাগ মানুষের নুন আনতে পান্থা ফুরায় সে দেশের চিত্র যদি এই হয়, তাহলে সামগ্রিক চিত্র কতটা বিবর্ণ, উদ্বেগজনক ও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে এরও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। চিকিৎসকদের দলবাজি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা যে মন্তব্য (কালের কণ্ঠের ওই প্রতিবেদনেই প্রকাশ) করেছেন তাও অনভিপ্রেত। এই সরকার গণতান্ত্রিকভাবে বিপুল জনরায়ে নির্বাচিত একটি সরকার। আর এ জন্যই এ সরকারের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা আরো বেশি। যে নেতিবাচক বাস্তবতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, দেশ জাতির বৃহৎ স্বার্থে এর সমূলে উৎপাটন প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারকে সবকিছু করতে হবে অনেক কিছুর উধর্ে্ব ওঠে। এ জন্য কঠোর হওয়ার কোনোই বিকল্প নেই। শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্র নয়, সরকারের কোনো স্তরেই কারোরই দলবাজির কোনো অবকাশ নেই। সরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার মানও উন্নত করতে হবে সার্বিক প্রয়োজনেই। মানুষের অধিকার নিয়ে কারোরই হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই এবং কোনোভাবে তা উচিতও নয়। এ দেশের বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ বিষয়গুলো আরো বেশি জরুরি।
লেখক : লন্ডনপ্রবাসী গবেষক
No comments