রাজনীতিতে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানো by এবনে গোলাম সামাদ
রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে হলে বিএনপিকে করতে হবে কিছুটা আত্ম বিশ্লেষণ। প্রকাশ্যে না হলেও দলের মধ্যে আলোচিত হতে হবে নিজেদের ভুল-ভ্রান্তির কথা। যদিও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার মূলে আছে বিদেশি শক্তির আনুকূল্য। কিন্তু কেবল বিদেশি শক্তির আনুকূল্যেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পেরেছে এরকম সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না।
দেশের রাজনীতিতে বিএনপির আবির্ভাব ঘটেছিল জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষ নিয়ে। কিন্তু বিএনপি তার এ জাতীয়তাবাদী চরিত্র বজায় রাখতে পারেনি। আর এ কারণে সে বহুলভাবে হারিয়েছে জনসমর্থন। বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে আঁকড়ে ধরতে হবে প্রকৃত জাতীয়তাবাদকে। দেশবাসীকে বোঝাতে হবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দল হিসেবে বিএনপির হাতে যতটা নিরাপদ, অন্য দলের হাতে তা নয়। এটা বোঝাতে পারার ওপরে বিশেষভাবে নির্ভর করবে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানো। নীতি, নেতা, কর্মীবাহিনী নিয়ে গঠিত হয় একটি রাজনৈতিক দল। একটি রাজনৈতিক দলের সাফল্য নির্ভর করে এ তিনেরই ওপর। বিএনপিকে করতে হবে জনকল্যাণের রাজনীতি। কেবলই ক্ষমতার রাজনীতি নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেখা যাচ্ছে, যেসব দল জনকল্যাণের রাজনীতি করছে তারা পাচ্ছে জনপ্রিয়তা। জনকল্যাণের রাজনীতি বলতে বোঝাচ্ছে সাধারণ মানুষের বিপদাপদে তাদের সঙ্গে থাকা। তাদের বাঁচাতে সাহায্য করা। তাদের জীবিকার উপায় করে দিতে পারা। সামাজিক কাজকর্মে সম্পৃক্ত হওয়ার উপরে যা বহুলভাবে নির্ভরশীল। ইউরোপের রাজনৈতিক দল গড়ে উঠতে থাকে বাজার ক্ষমতা কমিয়ে প্রজার ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টাকে নির্ভর করে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক দল ইংরেজ আমলে গড়ে ওঠে বিদেশি শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু এখন রাজনৈতিক দলকে হতে হবে জনকল্যাণমুখী। তা না হলে একটা রাজনৈতিক দল পেতে পারবে না জনসমর্থন। মানুষ চাচ্ছে কল্যাণব্রতী রাষ্ট্র। আর কল্যাণব্রতী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় হলো কল্যাণব্রতী দল। এটাই হতে পারে এখনকার রাজনীতির ধারা। রাজনীতির চেয়ে এখন একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নির্ধারণে অর্থনীতি পাচ্ছে বিশেষ বিবেচনা। প্রেসিডেন্ট জিয়া তাই বলতেন, উত্পাদনের রাজনীতির কথা। বিএনপির কর্মসূচি নির্ধারণে এ উত্পাদনের রাজনীতি থাকতে হবে প্রধান লক্ষ্য হয়ে। তা না হলে বিএনপি পারবে না ঘুরে দাঁড়াতে। বর্তমান যুগে প্রতিটি জাতির অর্থনৈতিক সমস্যার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হতে দেখা যায় মতপার্থক্য। আর এ মতপার্থক্যকে নির্ভর করে সৃষ্টি হতে দেখা যায় রাজনৈতিক দলের। বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একটা অর্থনৈতিক কর্মসূচি থাকে। কারণ অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উপায় সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয় তার ওপর নির্ভর করেই দলীয় রাজনীতি গড়ে উঠতে চায়। বিএনপির থাকতে হবে বর্তমান সময়ের উপযোগী সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক কার্যসূচি। অর্থনৈতিক দিক থেকে পৃথিবী এখন এসে পড়েছে এক নতুন সঙ্কটের মধ্যে। উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে চলছে বিরাট মন্দা। আমরা এখন এসব দেশে রফতানি করে ব্যবসা-বাণিজ্যে সচ্ছল হওয়ার কথা আর ভাবতে পারি না। আমাদের ভাবতে হবে নিজেদের দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার পুনর্গঠনের কথা। আমাদের নিজেদের অভাব মোচনের জন্য হতে হবে আমাদের অর্থনীতি। অন্যভাবে অর্থনীতিকে গড়ে তোলা যাবে না। এটা মনে রাখতে হবে। বিদেশ থেকে কোম্পানি এসে আমাদের দেশে অর্থ বিনিয়োগ করবে আর আমরা তার দ্বারা হবো উপকৃত—এরকম চিন্তাকে আর প্রশ্রয় দেয়া উচিত হবে নয়। বিএনপির জাতীয়তাবাদকে হতে হবে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ। তা না হলে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। বিএনপির কর্মী বাহিনীকে হতে হবে মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী। তা না হলে তারা পারবে না জনপ্রিয় হতে। বিএনপিকে সংগঠিত হতে হবে সেভাবেই। আমার মনে পড়ছে, একজন বিএনপির ভূতপূর্ব এমপির কথা। যিনি এমপি হওয়ার পর নানাভাবেই করেছিলেন বিত্ত সঞ্চয়। কিন্তু বিগত নির্বাচনে তাকে বরণ করতে হয় শোচনীয় পরাজয়। তিনি যদি আত্মস্বার্থপর না হতেন, তবে হয়তো তাকে ওইভাবে পরাজয় বরণ করতে হতো না। এরকম দৃষ্টান্ত আরও অনেক আছে। মুখে নীতির কথা বলে কাজে অন্যরূপ ধারণা করলে জনগণ তাদের ভোট দিতে চায় না। ভাবে না তাদের আপনজন হিসেবে। বিএনপিকে শিক্ষা নিতে হবে এই ভুল থেকে। তা না হলে দল হিসেবে পারবে না ঘুরে দাঁড়াতে। বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল সম্মেলন হতে পেরেছে, যথেষ্ট সফলভাবে। কিন্তু এ সম্মেলনই যে তাকে এনে দিতে পারবে তাকে জনসমর্থন এরকম কথা ভাববার কোনো কারণ নেই। এ সম্মেলনে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন না খেটেখাওয়া মানুষ। বিএনপিকে শক্তিশালী হতে হলে, খেটেখাওয়া মানুষকে পক্ষে পেতে হবে। তাদের অবহেলা করে দল হিসেবে বিএনপি শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে না। জেনারেল জিয়াউর রহমান চাইতেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে। যার নেতৃত্বে দলকে গড়ে তুলতে হলে নেতাদের ঘুরতে হবে গ্রামে-গঞ্জে, বাড়াতে হবে জনসংযোগ। কেবল ঢাকায় সম্মেলন করলে দল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
দেশে একটা নির্বাচন হয়েছে, যেমনই হোক দেশে একটা পার্লামেন্ট আছে। এ পার্লামেন্টে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিকে পালন করতে হবে বিশেষ ভূমিকা। পার্লামেন্টের ভেতরে বাইরে গড়তে হবে আন্দোলন। আমাদের দেশের রুগ্ণ গণতন্ত্রকে আরও রুগ্ণ করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া উচিত হবে না। কারণ, তার ফলে সৃষ্টি হতে পারে আরও ক্ষতিকর স্বৈরশাসন। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অনেক ভুল করছে। বিএনপি পারে এই ভুলের সুযোগ নিতে। বিশেষ করে বিএনপি পারে আওয়ামী লীগের ভারতঘেঁষা নীতির সমালোচনা করতে। কিন্তু সেটা এখনও যথেষ্ট জোরেশোরে করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। তবু যাই হোক, একটা সাফল্যজনক জাতীয় কাউন্সিল গঠনের জন্য একটা সফল সম্মেলন হতে পারল। এটা তার জন্য এক শুভ লক্ষণ। বর্তমান বিশ্বে রাজনীতির ধারা বিশেষভাবে বদলে গেছে। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন অবস্থান করছে একই অক্ষে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশেষ সাহায্য-সহানুভূতি বর্তমান সময় বিএনপির অনুকূল হতে পারে না। এটা মনে রেখেই দল হিসেবে বিএনপিকে করতে হবে তার রাজনীতি। বিএনপির পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে এ দেশের ইসলামপন্থী দলগুলো। তাদের অবহেলা না করে বিএনপির উচিত হবে তাদের কাছে টানা। বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর সমর্থন নিজ পক্ষে আনা। যেটা বিশ্ব রাজনীতিতে এখন একটা নগণ্য শক্তি নয়।
আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে গিয়ে আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছে অতীতকে। তার রাজনীতি থেকে বাদ পড়ছে দেশের বর্তমান সমস্যাগুলো। কোনো রাজনৈতিক দল কেবল অতীতকে আঁকড়ে থেকে রাজনীতি করতে পারে না। তাকে মনোযোগী হতে হয় সমকালীন সমস্যা নিয়ে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ চেয়েছে স্বাধীন হতে অর্থাত্ সাবেক পাকিস্তান ভেঙে একটা পৃথক রাষ্ট্র গড়তে। কিন্তু আজকের সমস্যা হয়ে উঠেছে এ পৃথক রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভারত-মার্কিনঘেঁষা নীতি আমাদের জাতীয় স্বার্থের মোটেও অনুকূল নয়। যেটাকে বিশেষভাবে তুলে ধরতে হবে দেশের মানুষের কাছে। বিএনপির পক্ষ হয়ে কথা বলার উপযোগী পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের অভাব আছে যথেষ্ট। বিএনপিকে গড়ে তুলতে হবে শক্তিশালী প্রচার যন্ত্র। যেটাকে বিএনপি এযাবত্ এসেছে যথেষ্ট অবহেলা করে। বেগম জিয়া ছিলেন একজন গৃহবধূ। যতদূর জানি, রাজনীতির সঙ্গে তার ছিল না সুদূর যোগাযোগ। তিনি এক সঙ্কট মুহূর্তে এগিয়ে এসেছিলেন বিএনপির হাল ধরতে। তিনি না এলে দল হিসেবে বিএনপি হয়তো নানাভাবেই বিভক্ত হয়ে পড়ত। দল হিসেবে বিএনপিকে ধরে রাখার কৃতিত্বও তার। বিএনপিতে তিনি এখনও সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব। তার নেতৃত্বের ওপর দল হিসেবে বিএনপির সাফল্য বিশেষভাবেই নির্ভর করছে। তাকে হতে হবে আরও সক্রিয়। বেছে নিতে হবে এমনসব লোককে যারা তাকে প্রকৃতভাবে সাহায্য করতে পারে। আমাদের দেশের রাজনীতিতে বিশেষভাবে বিরাজ করছে মোসাহেব সমস্যা। এ ক্ষেত্রে তাকে সজাগ হতেই হবে। তাকে গড়ে তুলতে হবে একটা চিন্তন পরিষদ , যারা তাকে চিন্তাভাবনা দিয়ে সাহায্য করতে পারে।
দেশে একটা নির্বাচন হয়েছে, যেমনই হোক দেশে একটা পার্লামেন্ট আছে। এ পার্লামেন্টে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিকে পালন করতে হবে বিশেষ ভূমিকা। পার্লামেন্টের ভেতরে বাইরে গড়তে হবে আন্দোলন। আমাদের দেশের রুগ্ণ গণতন্ত্রকে আরও রুগ্ণ করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া উচিত হবে না। কারণ, তার ফলে সৃষ্টি হতে পারে আরও ক্ষতিকর স্বৈরশাসন। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অনেক ভুল করছে। বিএনপি পারে এই ভুলের সুযোগ নিতে। বিশেষ করে বিএনপি পারে আওয়ামী লীগের ভারতঘেঁষা নীতির সমালোচনা করতে। কিন্তু সেটা এখনও যথেষ্ট জোরেশোরে করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। তবু যাই হোক, একটা সাফল্যজনক জাতীয় কাউন্সিল গঠনের জন্য একটা সফল সম্মেলন হতে পারল। এটা তার জন্য এক শুভ লক্ষণ। বর্তমান বিশ্বে রাজনীতির ধারা বিশেষভাবে বদলে গেছে। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন অবস্থান করছে একই অক্ষে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশেষ সাহায্য-সহানুভূতি বর্তমান সময় বিএনপির অনুকূল হতে পারে না। এটা মনে রেখেই দল হিসেবে বিএনপিকে করতে হবে তার রাজনীতি। বিএনপির পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে এ দেশের ইসলামপন্থী দলগুলো। তাদের অবহেলা না করে বিএনপির উচিত হবে তাদের কাছে টানা। বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর সমর্থন নিজ পক্ষে আনা। যেটা বিশ্ব রাজনীতিতে এখন একটা নগণ্য শক্তি নয়।
আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে গিয়ে আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছে অতীতকে। তার রাজনীতি থেকে বাদ পড়ছে দেশের বর্তমান সমস্যাগুলো। কোনো রাজনৈতিক দল কেবল অতীতকে আঁকড়ে থেকে রাজনীতি করতে পারে না। তাকে মনোযোগী হতে হয় সমকালীন সমস্যা নিয়ে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ চেয়েছে স্বাধীন হতে অর্থাত্ সাবেক পাকিস্তান ভেঙে একটা পৃথক রাষ্ট্র গড়তে। কিন্তু আজকের সমস্যা হয়ে উঠেছে এ পৃথক রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভারত-মার্কিনঘেঁষা নীতি আমাদের জাতীয় স্বার্থের মোটেও অনুকূল নয়। যেটাকে বিশেষভাবে তুলে ধরতে হবে দেশের মানুষের কাছে। বিএনপির পক্ষ হয়ে কথা বলার উপযোগী পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের অভাব আছে যথেষ্ট। বিএনপিকে গড়ে তুলতে হবে শক্তিশালী প্রচার যন্ত্র। যেটাকে বিএনপি এযাবত্ এসেছে যথেষ্ট অবহেলা করে। বেগম জিয়া ছিলেন একজন গৃহবধূ। যতদূর জানি, রাজনীতির সঙ্গে তার ছিল না সুদূর যোগাযোগ। তিনি এক সঙ্কট মুহূর্তে এগিয়ে এসেছিলেন বিএনপির হাল ধরতে। তিনি না এলে দল হিসেবে বিএনপি হয়তো নানাভাবেই বিভক্ত হয়ে পড়ত। দল হিসেবে বিএনপিকে ধরে রাখার কৃতিত্বও তার। বিএনপিতে তিনি এখনও সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব। তার নেতৃত্বের ওপর দল হিসেবে বিএনপির সাফল্য বিশেষভাবেই নির্ভর করছে। তাকে হতে হবে আরও সক্রিয়। বেছে নিতে হবে এমনসব লোককে যারা তাকে প্রকৃতভাবে সাহায্য করতে পারে। আমাদের দেশের রাজনীতিতে বিশেষভাবে বিরাজ করছে মোসাহেব সমস্যা। এ ক্ষেত্রে তাকে সজাগ হতেই হবে। তাকে গড়ে তুলতে হবে একটা চিন্তন পরিষদ , যারা তাকে চিন্তাভাবনা দিয়ে সাহায্য করতে পারে।
No comments