জন্মদিনের শুভেচ্ছা-রামেন্দু মজুমদার নেপথ্যের প্রাণপুরুষ by মামুনুর রশীদ
রামেন্দু মজুমদারকে আমি দেখি ১৯৬৪ সালে। খুবই দূর থেকে দেখা। তাঁর বড় ভাই রণেন্দু মজুমদার ছিলেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক। আমি তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। নাটক হবে। নাটকে শিক্ষক-ছাত্রদের একসঙ্গে অংশগ্রহণ করার রীতি ছিল। নির্দেশক ছিলেন আরেকজন শিক্ষক-ভ্রাতা রাকিবুদ্দিন আহমেদ।
পরবর্তীকালে তিনি বিখ্যাত চিত্রপরিচালকও হয়েছিলেন। অসাধারণ ছিল তাঁর নাট্যজ্ঞান ও সৌন্দর্যবোধ। অধীর কৌতূহল নিয়ে আমরা অবাক বিস্ময়ে তাঁর নির্দেশনার কাজ দেখতাম। একটি নাটক বাছাই করা হলো, 'ফিঙ্গারপ্রিন্ট'। সেখানে যমজ ভাইয়ের অভিনয় ছিল। সে জন্যই রামেন্দু মজুমদার অংশ নিয়েছিলেন মহড়ায়। দুই ভাইয়ের একই রকম চেহারা। সিনেমায় যমজ ভাইয়ের অভিনয় দেখেছি। মঞ্চে কেমন হয়, তা দেখার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে ছিলাম। কিন্তু পরে আর নাটকটি মঞ্চস্থ হয়নি। কিন্তু রণেন্দু স্যারের চেহারার সঙ্গে সাদৃশ্যের কারণে রামেন্দু মজুমদারের চেহারাটাও আমার চোখে লেগে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে অবশ্য দেখেছি স্বভাবটাও একই রকম। সেই স্বভাবটা আবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক টানাপড়েনে রক্ষা করা কঠিন হয়ে গেছে। রূঢ়, নিষ্ঠুর বাস্তবতায় শান্তশিষ্ট-শান্তিপ্রিয় নিভৃতচারী রণেন্দু স্যার চলে যান কলকাতায়। রামেন্দু মজুমদার এ ব্যবস্থাকে মেনে এখানেই থেকে গেলেন। বিরুদ্ধ রাজনৈতিক পরিবেশ, বিকাশমান সাম্প্রদায়িক প্রতিবেশকে মেনে নিয়েই থেকে গেলেন স্বাধীন বাংলাদেশে। শুধু থাকলেনই না, স্বাধীনতার সোনালি সকালকে যাঁরা এ দেশে বপন করলেন তিনি হয়ে গেলেন তাঁদেরই একজন। একেবারে শূন্য থেকে একটি আন্দোলন রচনার অগ্রভাগেই থাকলেন তিনি। এর মধ্যে অবশ্য ষাটের দশকে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যে নাট্যচর্চা তার মধ্যেও রইলেন তিনি। কার্জন হলে মঞ্চস্থ মুনীর চৌধুরীর অনূদিত 'গলফওয়ার্দীর রুপোর কৌটা' নাটকে তাঁর অভিনয় এখনো আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। এ সময় বেতারে-টেলিভিশনে-মঞ্চেও তাঁর পদচারণ ছিল লক্ষ করার মতো। এ সময়ই শওকত ওসমানের উপন্যাস 'ক্রীতদাসের হাসি'র নাট্যরূপও দেন তিনি। নাটকটি সে সময় আমাদের ভীষণভাবে আলোড়িত করেছিল।
বাংলাদেশের নবনাট্য চর্চায় 'থিয়েটার' দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। আবদুল্লাহ আল মামুনের টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবে সুনাম তখন গগনচুম্বী। তিনি ও তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সেই মঞ্চের রূপদান ভুলতে পারেননি। যোগ দিলেন থিয়েটারে। ষাটের দশকের টেলিভিশনের সেই স্বনামধন্য অভিনেত্রী ফেরদৌসী আরাও (এত দিনে তিনি ফেরদৌসী মজুমদার) এলেন। এই ত্রয়ীর আহ্বানে থিয়েটারে যোগ দিলেন অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী-ডিজাইনার ও সংগঠক। যাঁরা নাটক করেন তাঁরা জানেন নাটক একটা যুদ্ধাভিযানের মতো। পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে মানুষকে। এই যুদ্ধাভিযানের মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেও তিনি অন্য একটি কাজে নীরবে হাত দিলেন। কষ্টসাধ্য, অর্থসাধ্য ও নিভৃতের এই কাজটি 'থিয়েটার'। থিয়েটার একটি প্রকাশনা। শুধু প্রকাশনা নয়, একটি চলমান থিয়েটারের ইতিহাস। যে নাটকটি মঞ্চে সফল হচ্ছে সেটিই থিয়েটারের পরের সংখ্যায় প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। থিয়েটার ত্রৈমাসিক পত্রিকা। দেশের তাবৎ নাট্যকর্মীদের তিন মাসের প্রতীক্ষার অবসান হয় থিয়েটার প্রকাশের মাধ্যমে। দেশে তখন নাট্যচর্চা একটা আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করেছে। নাটক চাই, নাটকের ওপর লেখা চাই। নাটক লেখক কোথায়? এই লেখক তৈরিতেও থিয়েটার একটা বিশাল ভূমিকা পালন করল। আজকে বেশ কিছু লেখকই নাটকের ওপর লিখে থাকেন। যার জন্য 'থিয়েটারওয়ালা' নামে আরেকটি পত্রিকাও প্রায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে। ওই সময় রামেন্দু মজুমদার যদি 'থিয়েটার' পত্রিকার কথা না ভাবতেন, তাহলে আমাদের নাটক প্রকাশনা ও নাট্যসংস্কৃতির খাত হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অধরাই থেকে যেত।
সত্তরের দশকের শেষদিকে নাট্যচর্চাকে সংহত করার জন্য একটা প্রতিষ্ঠানের তাগিদ অনুভব করা গিয়েছিল। কিন্তু সেটা কী রকম হবে আমরা তখন বুঝতে পারছিলাম না। এ সময়ই রামেন্দু মজুমদার একটি ফেডারেশন গড়ার কথা ভাবলেন। ভেবে একটি সভাও ডাকলেন টিএসসিতে। সেই সভায় সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব দিলেন আমাকেই। পরে জেনেছি, আমি আপত্তি করতে পারি বলেই নাকি আমাকে সভাপতি করা হয়েছিল। আমি আপত্তি করেওছিলাম। কারণটি এখনো আমার কাছে যৌক্তিক। আমার মনে হয়েছিল সাংগঠনিকতা কখনো সৃজনশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। দেখা যাবে এই সাংগঠনিকতা বা সৃজনহীন নেতৃত্ব সৃজনশীল মানুষের বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। সে সমস্যা আজও আছে।
তবে ফেডারেশন অনেক ইতিবাচক কাজও করেছে। বারবার অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন, প্রমোদকর এসব আমাদের বিরক্ত ও নির্যাতন করত। সংঘবদ্ধ শক্তির কারণে সেসব কার্যকর হয়নি। ২০০২ সালে তা অবলুপ্ত হয়ে যায়। এর পেছনে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের একক ভূমিকা রয়েছে। জাতীয় নাট্যশালা নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নাট্যকলা বিভাগ খোলা, প্রচুর কর্মশালা, নাট্যোৎসব, নাট্যদলগুলোর বিদেশ গমনের ব্যবস্থাসহ নানা কাজ করেছে ফেডারেশন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের থিয়েটারকে পরিচিত করালেন আর বাংলাদেশে নিয়ে এলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাট্যপরিচালক, তাত্তি্বক সংগঠক, অভিনেতা-অভিনেত্রীকে। এখানেও বাংলাদেশ কেন্দ্র থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয় 'ঞযব ডড়ৎষফ ড়ভ ঞযবধঃৎব' নামে একটি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা। ২৭ মার্চ বিশ্ব নাট্যদিবস বাংলাদেশের মতো এত প্রাণবন্তভাবে কোথাও উদ্যাপিত হয় না। আন্তর্জাতিকভাবে রামেন্দু মজুমদারের গ্রহণযোগ্যতার জন্যই তিনি বিশ্ব আইটিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
কেমন মানুষ তিনি? তিনি কি রণেন্দু স্যারের মতো শান্তিপ্রিয় মানুষ? হয়তো ছিলেন তাই, কিন্তু রণেন্দু স্যার যে সমাজে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন, সেখানে হয়তো ইচ্ছে করলে জীবিকা নির্বাহ করে নিজের দক্ষতাটুকু কাজে লাগিয়ে শান্তিতে থাকা যায়। কিন্তু এখানে অশান্তি তো ঘরে ঢুকে পড়ে। রাজনীতি প্রায়ই ডাকাতের মতো দুয়ারে দাঁড়িয়ে। সে রাজনীতিতে সেনাশাসন আছে, সাম্প্রদায়িকতা আছে, যুদ্ধাপরাধীরা আছে। সেখানে রামেন্দু মজুমদার কী করবেন? তাঁকে রাস্তায় দাঁড়াতেই হয়। শহীদ মিনারে গিয়ে প্রতিবাদ জানাতে হয়। আবার স্বৈরাচারী শাসনামলে গঠিত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও তিনি নেতা। তাঁর পরিচয় গোপন করার কোনো সুযোগ নেই। আবার স্বগৃহেই তাঁর অসাম্প্রদায়িক সংসার। যে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে। যে দলকে আমরা ভাবি সংস্কৃতিবান্ধব সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধের দল, সেই দলই যদি সংবিধান সংশোধনের কালে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহকে বহাল রাখে, তখন রামেন্দু মজুমদারের জন্য বিব্রতকর নয় কি?
অনেক কাজ করেছেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর মধ্যে মৌলিক কিছু কাজ করার দিকে আগ্রহ লক্ষ করছি। কিন্তু চারদিকে যে প্রতিদিনকার নিত্য নিষ্ঠুরতা, বিক্ষোভ তার মধ্যে কোনো মৌলিক কাজ কি বহুদূর গড়ায়? তাও গড়ায়। যেমন_থিয়েটার স্কুল, এটিও একটি মৌলিক কাজ। অনেক বছর হলো। সেটাও তাঁর একক উদ্যোগেই চলছে। যাকে বলা হতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ। এই যে একক অভিযাত্রী তার সুফল অন্যরা পায়। পদে আসীন থাকেন; কিন্তু কাজ করেন নেপথ্যে একা। এই নেপথ্য সৈনিক কি আগামীদিনেও নেপথ্যের কাজগুলো করে যাবেন? নাকি কাউকে না করতে পারবেন? রামেন্দু মজুমদার এখন বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় একজন বিবেকের পর্যায়ে। এটাও তাঁর জন্য একটা জটিল সময়। নির্মোহ, নিরপেক্ষ থেকেই তাঁর ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই লক্ষ করেছি।
সত্তরের বটবৃক্ষ রামেন্দু মজুমদার আরো বিকশিত হয়ে আমাদের ছায়া দেবেন_সেই কামনায়।
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
বাংলাদেশের নবনাট্য চর্চায় 'থিয়েটার' দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। আবদুল্লাহ আল মামুনের টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবে সুনাম তখন গগনচুম্বী। তিনি ও তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সেই মঞ্চের রূপদান ভুলতে পারেননি। যোগ দিলেন থিয়েটারে। ষাটের দশকের টেলিভিশনের সেই স্বনামধন্য অভিনেত্রী ফেরদৌসী আরাও (এত দিনে তিনি ফেরদৌসী মজুমদার) এলেন। এই ত্রয়ীর আহ্বানে থিয়েটারে যোগ দিলেন অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী-ডিজাইনার ও সংগঠক। যাঁরা নাটক করেন তাঁরা জানেন নাটক একটা যুদ্ধাভিযানের মতো। পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে মানুষকে। এই যুদ্ধাভিযানের মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেও তিনি অন্য একটি কাজে নীরবে হাত দিলেন। কষ্টসাধ্য, অর্থসাধ্য ও নিভৃতের এই কাজটি 'থিয়েটার'। থিয়েটার একটি প্রকাশনা। শুধু প্রকাশনা নয়, একটি চলমান থিয়েটারের ইতিহাস। যে নাটকটি মঞ্চে সফল হচ্ছে সেটিই থিয়েটারের পরের সংখ্যায় প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। থিয়েটার ত্রৈমাসিক পত্রিকা। দেশের তাবৎ নাট্যকর্মীদের তিন মাসের প্রতীক্ষার অবসান হয় থিয়েটার প্রকাশের মাধ্যমে। দেশে তখন নাট্যচর্চা একটা আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করেছে। নাটক চাই, নাটকের ওপর লেখা চাই। নাটক লেখক কোথায়? এই লেখক তৈরিতেও থিয়েটার একটা বিশাল ভূমিকা পালন করল। আজকে বেশ কিছু লেখকই নাটকের ওপর লিখে থাকেন। যার জন্য 'থিয়েটারওয়ালা' নামে আরেকটি পত্রিকাও প্রায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে। ওই সময় রামেন্দু মজুমদার যদি 'থিয়েটার' পত্রিকার কথা না ভাবতেন, তাহলে আমাদের নাটক প্রকাশনা ও নাট্যসংস্কৃতির খাত হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অধরাই থেকে যেত।
সত্তরের দশকের শেষদিকে নাট্যচর্চাকে সংহত করার জন্য একটা প্রতিষ্ঠানের তাগিদ অনুভব করা গিয়েছিল। কিন্তু সেটা কী রকম হবে আমরা তখন বুঝতে পারছিলাম না। এ সময়ই রামেন্দু মজুমদার একটি ফেডারেশন গড়ার কথা ভাবলেন। ভেবে একটি সভাও ডাকলেন টিএসসিতে। সেই সভায় সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব দিলেন আমাকেই। পরে জেনেছি, আমি আপত্তি করতে পারি বলেই নাকি আমাকে সভাপতি করা হয়েছিল। আমি আপত্তি করেওছিলাম। কারণটি এখনো আমার কাছে যৌক্তিক। আমার মনে হয়েছিল সাংগঠনিকতা কখনো সৃজনশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। দেখা যাবে এই সাংগঠনিকতা বা সৃজনহীন নেতৃত্ব সৃজনশীল মানুষের বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। সে সমস্যা আজও আছে।
তবে ফেডারেশন অনেক ইতিবাচক কাজও করেছে। বারবার অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন, প্রমোদকর এসব আমাদের বিরক্ত ও নির্যাতন করত। সংঘবদ্ধ শক্তির কারণে সেসব কার্যকর হয়নি। ২০০২ সালে তা অবলুপ্ত হয়ে যায়। এর পেছনে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের একক ভূমিকা রয়েছে। জাতীয় নাট্যশালা নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নাট্যকলা বিভাগ খোলা, প্রচুর কর্মশালা, নাট্যোৎসব, নাট্যদলগুলোর বিদেশ গমনের ব্যবস্থাসহ নানা কাজ করেছে ফেডারেশন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের থিয়েটারকে পরিচিত করালেন আর বাংলাদেশে নিয়ে এলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাট্যপরিচালক, তাত্তি্বক সংগঠক, অভিনেতা-অভিনেত্রীকে। এখানেও বাংলাদেশ কেন্দ্র থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয় 'ঞযব ডড়ৎষফ ড়ভ ঞযবধঃৎব' নামে একটি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা। ২৭ মার্চ বিশ্ব নাট্যদিবস বাংলাদেশের মতো এত প্রাণবন্তভাবে কোথাও উদ্যাপিত হয় না। আন্তর্জাতিকভাবে রামেন্দু মজুমদারের গ্রহণযোগ্যতার জন্যই তিনি বিশ্ব আইটিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
কেমন মানুষ তিনি? তিনি কি রণেন্দু স্যারের মতো শান্তিপ্রিয় মানুষ? হয়তো ছিলেন তাই, কিন্তু রণেন্দু স্যার যে সমাজে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন, সেখানে হয়তো ইচ্ছে করলে জীবিকা নির্বাহ করে নিজের দক্ষতাটুকু কাজে লাগিয়ে শান্তিতে থাকা যায়। কিন্তু এখানে অশান্তি তো ঘরে ঢুকে পড়ে। রাজনীতি প্রায়ই ডাকাতের মতো দুয়ারে দাঁড়িয়ে। সে রাজনীতিতে সেনাশাসন আছে, সাম্প্রদায়িকতা আছে, যুদ্ধাপরাধীরা আছে। সেখানে রামেন্দু মজুমদার কী করবেন? তাঁকে রাস্তায় দাঁড়াতেই হয়। শহীদ মিনারে গিয়ে প্রতিবাদ জানাতে হয়। আবার স্বৈরাচারী শাসনামলে গঠিত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও তিনি নেতা। তাঁর পরিচয় গোপন করার কোনো সুযোগ নেই। আবার স্বগৃহেই তাঁর অসাম্প্রদায়িক সংসার। যে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে। যে দলকে আমরা ভাবি সংস্কৃতিবান্ধব সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধের দল, সেই দলই যদি সংবিধান সংশোধনের কালে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহকে বহাল রাখে, তখন রামেন্দু মজুমদারের জন্য বিব্রতকর নয় কি?
অনেক কাজ করেছেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর মধ্যে মৌলিক কিছু কাজ করার দিকে আগ্রহ লক্ষ করছি। কিন্তু চারদিকে যে প্রতিদিনকার নিত্য নিষ্ঠুরতা, বিক্ষোভ তার মধ্যে কোনো মৌলিক কাজ কি বহুদূর গড়ায়? তাও গড়ায়। যেমন_থিয়েটার স্কুল, এটিও একটি মৌলিক কাজ। অনেক বছর হলো। সেটাও তাঁর একক উদ্যোগেই চলছে। যাকে বলা হতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ। এই যে একক অভিযাত্রী তার সুফল অন্যরা পায়। পদে আসীন থাকেন; কিন্তু কাজ করেন নেপথ্যে একা। এই নেপথ্য সৈনিক কি আগামীদিনেও নেপথ্যের কাজগুলো করে যাবেন? নাকি কাউকে না করতে পারবেন? রামেন্দু মজুমদার এখন বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় একজন বিবেকের পর্যায়ে। এটাও তাঁর জন্য একটা জটিল সময়। নির্মোহ, নিরপেক্ষ থেকেই তাঁর ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই লক্ষ করেছি।
সত্তরের বটবৃক্ষ রামেন্দু মজুমদার আরো বিকশিত হয়ে আমাদের ছায়া দেবেন_সেই কামনায়।
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
No comments