পবিত্র কোরআনের আলো-মুনাফিকদের সমালোচনা ও জাকাত বিতরণের আটটি খাতের বিবরণ
৫৭. লাও ইয়াজিদূনা মাল্জাআন আও মাগা-রা-তিন আও মুদ্দাখালান লাওয়াল্লাও ইলাইহি ওয়া হুম ইয়াজমাহূন।
৫৮. ওয়া মিনহুম্ মান ইয়্যাল্মিযুকা ফিস-সাদাক্বাতি; ফাইন উ'ত্বূ মিনহা, রাদ্বূ ওয়া ইন লাম ইউ'ত্বাও মিনহা ইযা হুম ইয়াছ্খাত্বূন।
৫৮. ওয়া মিনহুম্ মান ইয়্যাল্মিযুকা ফিস-সাদাক্বাতি; ফাইন উ'ত্বূ মিনহা, রাদ্বূ ওয়া ইন লাম ইউ'ত্বাও মিনহা ইযা হুম ইয়াছ্খাত্বূন।
৫৯. ওয়া লাও আন্নাহুম রাদ্বূ মা আ-তা-হুমুল্লা-হু ওয়া রাসূলুহূ ওয়া ক্বা-লূ হাছ্বুনা ল্লা-হু ছাইউ'তীনাল্লা-হু মিন্ ফাদ্বলিহি ওয়া রাসূলুহূ ইন্না ইলাল্লা-হি রা-গিবূন।
৬০. ইন্নামাস সাদাক্বা-তু লিলফুক্বারা-য়ি ওয়ালমাছা-কীনি ওয়ালআ'-মিলীনা আ'লাইহা- ওয়ালমুআল্লাফাতি ক্বুলূবুহুম ওয়া ফির্রিক্বা-বি ওয়ালগা-রিমীনা ওয়া ফী ছাবীলিল্লা-হি ওয়াব্নিচ্ছাবীলি; ফারীদ্বাতাম্ মিনাল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আ'লীমুন হাকীম।
[সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ৫৭-৬০]
অনুবাদ : ৫৭. তারা এমন অবস্থায় আছে যে যদি কোনো আশ্রয়স্থল পেয়ে যায় অথবা কোনো গুহা বা প্রবেশ করে লুকাতে পারে এমন কোনো স্থান পায়, তবে এমনভাবে পালাবে যেন দড়ি ছিঁড়ে পালাচ্ছে।
৫৮. তাদের মধ্যে অর্থাৎ মুনাফিকদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা সদকা (জাকাত) বণ্টন সম্পর্কে আপনাকে দোষারোপ করে। এ থেকে তাদের যদি তাদের মনের মতো অংশ দেওয়া হয়, তবে খুশি হয় আর যদি না দেওয়া হয় অমনি তারা ক্ষুব্ধ হয়ে যায়।
৫৯. কত ভালো হতো আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তাদের যা দিয়েছেন তাতে যদি তারা সন্তুষ্ট থাকত এবং বলত আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, ভবিষ্যতে আল্লাহ আমাদের নিজ অনুগ্রহে আরো দান করবেন এবং তাঁর রাসুলও তা অনুসরণ করবেন। আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকেই তাকিয়ে আছি।
৬০. প্রকৃতপক্ষে সদকা (জাকাত) ফকির ও মিসকিনদের হক। তা ছাড়া সেসব কর্মচারী যারা জাকাত আদায় ও বিতরণে নিয়োজিত রয়েছে আর 'মুয়াআল্লাফাতুল কুলুব', তথা সেসব নওমুসলিমকে পুনর্বাসিত করা প্রয়োজন তাদের দেওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া দাস-দাসী মুক্তির কাজে ও অপারগ ঋণগ্রস্থদের ঋণ পরিশোধের কাজে এবং আল্লাহর পথে (জিহাদকারীদের সহায়তায়) ও বিপন্ন মুসাফিরদের সাহায্যে ব্যয় করা যাবে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত বিধান। আল্লাহ জ্ঞান ও কৌশলের সর্বময় অধিকারী।
ব্যাখ্যা : ৫৭ নম্বর আয়াতে মুনাফিকদের করুণ অবস্থার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। মুনাফিকরা নিজেদের মুসলিম বলে পরিচয় দিত কেবল তাদের নাজুক অবস্থার কারণে। আসলে তাদের ইমান বা সত্য ও ন্যায়ের প্রতি আনুগত্য বলতে কিছু ছিল না। আসলে তারা যদি অন্য কোথাও আশ্রয় পেত বা পালিয়ে যাওয়া তাদের জন্য লাভজনক হতো, তবে তারা তাই-ই করত।
৫৮ নম্বর আয়াতটিও মুনাফিকদের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে। ইবনে জারির (রহ.) তাঁর তাফসির গ্রন্থে কয়েকটি রিওয়ায়াত উল্লেখ করেছেন, নবী (সা.) যখন জাকাত বণ্টন করেন তখন কিছু মুনাফিক তাতে প্রশ্ন তোলে। তারা বলে, এ বণ্টন ইনসাফ মোতাবেক হয়নি। এর কারণ ছিল মুনাফিকদের তাদের পছন্দমতো অংশ দেওয়া হয়নি। তারা নিজেদের স্বার্থ দিয়েই ন্যায়-অন্যায় বিচার করত এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর আস্থা রাখত না। ৫৯ নম্বর আয়াতে বলে দেওয়া হয়েছে, এ ব্যাপারে মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত।
৬০ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, সদকা বা জাকাতের পাওনাদার কারা এবং কাদের মধ্যে তা বণ্টন করতে হবে। এখানে আট ধরনের মানুষ বা আটটি খাতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং এ আয়াতের মাধ্যমেই শরিয়তের এ-সংক্রান্ত বিধান সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়ে গেছে। এ আটটি খাত হচ্ছে _১. ফকির বা দরিদ্র মানুষ। ২. মিসকিন বা নিঃস্ব মানুষ। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ফকির ও মিসকিন কাছাকাছি অর্থের দুটি শব্দ। সাধারণত মিসকিন বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝায়, যার কিছুই নেই। অর্থাৎ নিঃস্ব। আর ফকির বলতে বোঝায় যার কিছু সম্পদ আছে, তবে তার অবস্থা দারিদ্র্যসীমার নিচে।
শরিয়তের সংজ্ঞা অনুযায়ী দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ দিয়ে। যার সম্পদের পরিমাণ এর চেয়ে কম, তার পক্ষে জাকাত গ্রহণ জায়েজ। ৩. মুসলিম রাষ্ট্রে জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের কাজ যে প্রশাসনযন্ত্রের ওপর নিয়োজিত এর সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা জাকাত ফান্ড থেকে ব্যয় করা যাবে। ৪. মুআল্লাফাতুল কুলুব বা এসব অভাবগ্রস্ত নওমুসলিম, যাঁদের পুনর্বাসন প্রয়োজন তাদের আর্থিক সহায়তা করা। ৫. যখন দান প্রথা প্রচলিত ছিল তখন এই প্রথা বিলোপের লক্ষ্যে দাস-দাসী মুক্ত করার কাজের জাকাত ব্যবহার করার সুযোগ ছিল। ৬. বিপন্ন ঋণগ্রস্ত, যার ঋণ পরিশোধ করার মতো সম্পদ আর নেই। ৭. আল্লাহর পথে জিহাদ করার কাজে জাকাত ব্যবহার করা যায়। ৮. বিপন্ন মুসাফির, যার বাড়িতে সম্পদ থাকলেও সফর থেকে ফিরে আসার পথ-খরচ নেই।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
৬০. ইন্নামাস সাদাক্বা-তু লিলফুক্বারা-য়ি ওয়ালমাছা-কীনি ওয়ালআ'-মিলীনা আ'লাইহা- ওয়ালমুআল্লাফাতি ক্বুলূবুহুম ওয়া ফির্রিক্বা-বি ওয়ালগা-রিমীনা ওয়া ফী ছাবীলিল্লা-হি ওয়াব্নিচ্ছাবীলি; ফারীদ্বাতাম্ মিনাল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আ'লীমুন হাকীম।
[সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ৫৭-৬০]
অনুবাদ : ৫৭. তারা এমন অবস্থায় আছে যে যদি কোনো আশ্রয়স্থল পেয়ে যায় অথবা কোনো গুহা বা প্রবেশ করে লুকাতে পারে এমন কোনো স্থান পায়, তবে এমনভাবে পালাবে যেন দড়ি ছিঁড়ে পালাচ্ছে।
৫৮. তাদের মধ্যে অর্থাৎ মুনাফিকদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা সদকা (জাকাত) বণ্টন সম্পর্কে আপনাকে দোষারোপ করে। এ থেকে তাদের যদি তাদের মনের মতো অংশ দেওয়া হয়, তবে খুশি হয় আর যদি না দেওয়া হয় অমনি তারা ক্ষুব্ধ হয়ে যায়।
৫৯. কত ভালো হতো আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তাদের যা দিয়েছেন তাতে যদি তারা সন্তুষ্ট থাকত এবং বলত আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, ভবিষ্যতে আল্লাহ আমাদের নিজ অনুগ্রহে আরো দান করবেন এবং তাঁর রাসুলও তা অনুসরণ করবেন। আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকেই তাকিয়ে আছি।
৬০. প্রকৃতপক্ষে সদকা (জাকাত) ফকির ও মিসকিনদের হক। তা ছাড়া সেসব কর্মচারী যারা জাকাত আদায় ও বিতরণে নিয়োজিত রয়েছে আর 'মুয়াআল্লাফাতুল কুলুব', তথা সেসব নওমুসলিমকে পুনর্বাসিত করা প্রয়োজন তাদের দেওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া দাস-দাসী মুক্তির কাজে ও অপারগ ঋণগ্রস্থদের ঋণ পরিশোধের কাজে এবং আল্লাহর পথে (জিহাদকারীদের সহায়তায়) ও বিপন্ন মুসাফিরদের সাহায্যে ব্যয় করা যাবে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত বিধান। আল্লাহ জ্ঞান ও কৌশলের সর্বময় অধিকারী।
ব্যাখ্যা : ৫৭ নম্বর আয়াতে মুনাফিকদের করুণ অবস্থার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। মুনাফিকরা নিজেদের মুসলিম বলে পরিচয় দিত কেবল তাদের নাজুক অবস্থার কারণে। আসলে তাদের ইমান বা সত্য ও ন্যায়ের প্রতি আনুগত্য বলতে কিছু ছিল না। আসলে তারা যদি অন্য কোথাও আশ্রয় পেত বা পালিয়ে যাওয়া তাদের জন্য লাভজনক হতো, তবে তারা তাই-ই করত।
৫৮ নম্বর আয়াতটিও মুনাফিকদের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে। ইবনে জারির (রহ.) তাঁর তাফসির গ্রন্থে কয়েকটি রিওয়ায়াত উল্লেখ করেছেন, নবী (সা.) যখন জাকাত বণ্টন করেন তখন কিছু মুনাফিক তাতে প্রশ্ন তোলে। তারা বলে, এ বণ্টন ইনসাফ মোতাবেক হয়নি। এর কারণ ছিল মুনাফিকদের তাদের পছন্দমতো অংশ দেওয়া হয়নি। তারা নিজেদের স্বার্থ দিয়েই ন্যায়-অন্যায় বিচার করত এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর আস্থা রাখত না। ৫৯ নম্বর আয়াতে বলে দেওয়া হয়েছে, এ ব্যাপারে মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত।
৬০ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, সদকা বা জাকাতের পাওনাদার কারা এবং কাদের মধ্যে তা বণ্টন করতে হবে। এখানে আট ধরনের মানুষ বা আটটি খাতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং এ আয়াতের মাধ্যমেই শরিয়তের এ-সংক্রান্ত বিধান সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়ে গেছে। এ আটটি খাত হচ্ছে _১. ফকির বা দরিদ্র মানুষ। ২. মিসকিন বা নিঃস্ব মানুষ। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ফকির ও মিসকিন কাছাকাছি অর্থের দুটি শব্দ। সাধারণত মিসকিন বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝায়, যার কিছুই নেই। অর্থাৎ নিঃস্ব। আর ফকির বলতে বোঝায় যার কিছু সম্পদ আছে, তবে তার অবস্থা দারিদ্র্যসীমার নিচে।
শরিয়তের সংজ্ঞা অনুযায়ী দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ দিয়ে। যার সম্পদের পরিমাণ এর চেয়ে কম, তার পক্ষে জাকাত গ্রহণ জায়েজ। ৩. মুসলিম রাষ্ট্রে জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের কাজ যে প্রশাসনযন্ত্রের ওপর নিয়োজিত এর সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা জাকাত ফান্ড থেকে ব্যয় করা যাবে। ৪. মুআল্লাফাতুল কুলুব বা এসব অভাবগ্রস্ত নওমুসলিম, যাঁদের পুনর্বাসন প্রয়োজন তাদের আর্থিক সহায়তা করা। ৫. যখন দান প্রথা প্রচলিত ছিল তখন এই প্রথা বিলোপের লক্ষ্যে দাস-দাসী মুক্ত করার কাজের জাকাত ব্যবহার করার সুযোগ ছিল। ৬. বিপন্ন ঋণগ্রস্ত, যার ঋণ পরিশোধ করার মতো সম্পদ আর নেই। ৭. আল্লাহর পথে জিহাদ করার কাজে জাকাত ব্যবহার করা যায়। ৮. বিপন্ন মুসাফির, যার বাড়িতে সম্পদ থাকলেও সফর থেকে ফিরে আসার পথ-খরচ নেই।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments