ছাত্রলীগের তাণ্ডব-এই অপতৎপরতা আর কতকাল চলবে

'সন্ত্রাসী' ও 'ছাত্রলীগ' কি শেষ পর্যন্ত সমার্থক শব্দ হিসেবে অভিধানে ঠঁাঁই পেতে যাচ্ছে? বর্তমান মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে ছাত্রলীগ অর্থই সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীরাই ছাত্রলীগে নাম লেখায় অথবা যে ছাত্রলীগে নাম লেখায় সে-ই সন্ত্রাসী হয়ে যায়_এমনটিও অনেকে মনে করতে পারেন। 'যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ।' ঠিক যেন সে রকমই, যে ছাত্রলীগে যোগ দেয় সে-ই যেন সন্ত্রাসী হয়ে যায়।


বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নামে এমন অনেক অপকর্ম হয়েছে। সন্ত্রাসের সমার্থক শব্দ হয়ে গিয়েছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন। মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর আশা করা গিয়েছিল, অন্তত সন্ত্রাসের পথ থেকে সরে আসবে ছাত্রলীগ। ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠনের সাবেক নেতারা মিলে ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। ছাত্রলীগের অপকর্ম নিয়ে এর আগেও কালের কণ্ঠের সম্পাদকীয় স্তম্ভে উল্লেখ করা হয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কথা। সারা দেশে ভর্তি-বাণিজ্যে ছাত্রলীগের জড়িত হওয়ার খবর বরাবরই এসেছে পত্রপত্রিকায়। 'সব পেয়েছি'র দেশে 'সব খেয়েছি' হিসেবে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ_এমন কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগ যেন অপ্রতিরোধ্য। দেশজুড়ে অধিকার প্রতিষ্ঠাই যেন ছাত্রলীগের লক্ষ্য। সব কিছু যেন নিজেদের দখলে নিতে চায় ওরা। সব কিছু পেতে চায়। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অপকর্ম শুরু হয়েছিল। ধারণা করা গিয়েছিল, মহাজোট ক্ষমতা গ্রহণের পর তা কমবে। শান্তি ফিরে আসবে। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ফিরে পাবে শিক্ষার পরিবেশ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ২০০১ সালের পর ছাত্রদল, যুবদল যে পথে গিয়েছিল, সেই পথেই পা বাড়িয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের অপতৎপরতা কোনোভাবেই আর ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। শুরু থেকেই ছাত্রলীগ মরিয়া। গত সোমবার ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যে তাণ্ডব ঘটিয়েছেন, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। এক অপরাধ ঢাকতে গিয়ে সেখানে একাধিক অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। দলের নেতা-কর্মীরা শিক্ষকদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, সেটাকে এককথায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গেই তুলনা করা চলে। ছিনতাইয়ে অংশ নিতে যাওয়া ছাত্রলীগকর্মীদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে গাড়ি ভাঙচুর, শিক্ষকদের মৌন মিছিলে হামলা করা, রামদা নিয়ে ধাওয়া করে শিক্ষকদের আহত করা_সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়া কিছু নয়। একই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতারা যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তারও উদাহরণ নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকে না চেনা নাকি বেয়াদবির পর্যায়ে পড়ে। অন্যদিকে ছাত্রলীগ নেতা পরীক্ষা দিতে চান না বলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন বা করতে বাধ্য হন।
ছাত্রলীগের নামে এই সন্ত্রাস আর কতকাল চলবে, চলতে দেওয়া হবে? এ সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে তাদের এই বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের উৎস কোথায়? ছাত্রলীগের অপকর্ম সরকারের জনপ্রিয়তা নষ্ট করছে। যে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে মহাজোট ক্ষমতায় এসেছিল, তার অনেকটাই নষ্ট করে দিয়েছে ছাত্রলীগের নষ্ট রাজনীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী পরিচয় মুছে ফেলতে হবে। ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা না গেলে ভবিষ্যতে তার মাসুল গুনতে হবে। কাজেই বন্ধ করতে হবে ছাত্রলীগের সব অপতৎপরতা।

No comments

Powered by Blogger.