লিবিয়াবাসীর হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন গাদ্দাফি
আফ্রিকার লৌহমানব কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করে নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও তিনি লিবিয়ার জনগণের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। প্রজাদরদি এই শাসককে তার জনগণের মন থেকে মুছে ফেলতে অনেক কিছুই করা হয়েছে। গাদ্দাফির মৃতদেহকে রাতের আঁধারে মরুভূমির অজ্ঞাত স্থানে দাফন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ঘৃণার জন্ম দিতে দেশের ভিতরে পেশিশক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার চরিত্রের ওপর কালিমা লেপন করে অনেক প্রচারণাই চালানো হয়েছে। কিন্তু কোন কিছুই যেন হালে পানি পাচ্ছে না। গাদ্দাফি মহানুভবতা ও প্রজা তোষণ নীতির মাধ্যমে জনগণের যে ভালবাসা কুড়িয়ে ছিলেন তা যেন সবকিছুকেই ছাপিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে লিবিয়ায় ক্ষমতাসীন পশ্চিমা মদতপুষ্ট এনটিসি যোদ্ধাদের দেখানো মৃত্যু ভয়কে তুচ্ছ করে অনেক লিবিয়ানই গাদ্দাফি বন্দনায় মেতে উঠছেন। দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে লিবিয়াবাসী ততই গাদ্দাফির প্রতি তাদের ভালবাসা প্রকটভাবে প্রকাশ করছে। কোন ভয় বা ক্ষতির আশঙ্কাই যেন তাদের ভালবাসার অভিব্যক্তি প্রতিহত করতে পারছে না। সুযোগ পেলেই পাথরচাপা আগুনের মতো বেরিয়ে আসছে। কিছু লিবিয়াবাসী প্রাণভয়ে এনটিসি’র বিপ্লবকে মুখে সমর্থন করলেও মন দিয়ে এখনও তারা প্রয়াত নেতা গাদ্দাফিকেই ভালবাসেন। আর এনটিসিকে তারা পশ্চিমাদের দালাল এবং লিবিয়া সমাজের উচ্চাবিলাসী, ক্ষমতালিপ্সু ও বিশ্বাসঘাতক অংশ বলেই মনে করেন। এক্ষেত্রে এনটিসি’র দেশ শাসনে ব্যর্থতা ও নিপীড়কের ভূমিকা লিবিয়াবাসীকে বার বার গাদ্দাফির শাসনামলের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এ জন্য বেশির ভাগ লিবিয়াবাসীই তাদের মোবাইল ফোনে প্রিয় নেতা গাদ্দাফির ছবি ধারণ করে বেড়ান। সুযোগ পেলেই তারা গাদ্দাফির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় মাথা এলিয়ে দেন। সমপ্রতি বনি ওয়ালিদে গাদ্দাফি সমর্থকদের পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে সাধারণ লিবিয়াবাসীর মনের কথাই বেরিয়ে এসেছে। রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে বিস্তীর্ণ মরুভূমির এই শহরটি গাদ্দাফি সরকারের সর্বশেষ শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। সেখানকার প্রায় সব বাসিন্দাই এখনও গাদ্দাফিকে জীবন দিয়ে ভালবাসেন। তারা বর্তমান সরকারের নেতৃত্ব মেনে নিলেও তাদের হৃদয় জুড়ে গাদ্দাফি অমর হয়ে আছেন। এই শহরের কয়েকজন বাসিন্দার বক্তব্যে তেমনটিই ফুটে উঠেছে। সালাহউদ্দিন আল ওয়ারকেলি (১৯) মুয়াম্মার গাদ্দাফি তাদের হৃদয়ে রয়েছেন বলে জানান। কেউ যদি অন্য কথা বলে সে মিথ্যা বলেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এই টগবগে যুবক লিবিয়া বিপ্লবের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘বিপ্লব কি? নতুন সরকার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি ও কিছু ইউরোপীয় দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। লিবিয়াবাসীর নয়।’ প্রকাশ্যে এই শহরের বাসিন্দারা ১৭ই ফেব্রুয়ারির বিপ্লবকে সমর্থন করলেও একান্তে তারা ঠিকই গাদ্দাফির শাসনকে স্মরণ করেন। কারণ সে সময়ে এই শহরের যুবকদের সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়াসহ বাসিন্দাদের বসবাসের জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছিল। এছাড়াও তারা অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেন। এক কথায় বনিওয়ালিদের বাসিন্দারা গাদ্দাফির শাসনামলে রাজার হালেই ছিলেন। বোবকর (২৪) নামের এক আইনের ছাত্র বলেন, ‘আমরা বিপ্লব গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি। তবে এখনও ৯৯ ভাগ মানুষ গাদ্দাফিকে ভালবাসেন। লিবিয়া অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাউজি আবদেলানি বানওয়ালিদে গাদ্দাফি বাহিনীর পুনরুত্থানের খবর নাকচ করে দিলেও সেখানে গাদ্দাফির প্রতি জনগণের ভালবাসার বিষয়টি যেমন উপেক্ষা করতে পারেন নি তেমনি বিশ্ব মিডিয়ার চোখকেও অন্যদিকে প্রবাহিত করতে পারেন নি। ফলে গাদ্দাফি যে লিবিয়ানদের হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন তা প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
No comments