প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টি করতে হবে-শ্রমবাজারে সংকট
বহির্বিশ্বে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে চলেছে। গত তিন দশকের মধ্যে এমন সংকট আর কখনো আসেনি। নিম্ন আয়ের বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত ছোট্ট এই দেশের জন্য এটি সত্যিই এক বড় উদ্বেগের বিষয়।
রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত পৌঁনে তিন বছরে সৌদি আরবে কাজ করতে গেছেন মাত্র ৩০ হাজার বাংলাদেশি, আর ফিরে এসেছেন ৫০ হাজার। সৌদি আরব বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার। ১৯৯৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ কাজ করতে গেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জনশক্তি রপ্তানির বাজারটিতেই বড় ধস নেমেছে। আর দ্বিতীয় বড় বাজার মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে গত দুই বছর ধরে। শ্রমিক নিচ্ছে না মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েতও, যে দেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হতো। এসবের সঙ্গে যোগ করতে হয় ইরাক ও লিবিয়ার কথা: যুদ্ধের কারণে দেশ দুটিতে নতুন করে জনশক্তি রপ্তানি করা শুধু বন্ধই হয়নি, উল্টো প্রচুরসংখ্যক বাংলাদেশি কাজ হারিয়ে স্বদেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। সব মিলিয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সবচেয়ে বড় পথটি আশঙ্কাজনকভাবে সংকুচিত হয়ে এসেছে। একদিকে জাতীয় অর্থনীতির ওপর এর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, অন্যদিকে দেশের ভেতরে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি আরও নাজুক হচ্ছে; বেকারত্ব বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা।
আমাদের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। দেশটি ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা চালু করেছে বলে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বেশ কমে গিয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ কাজের অনুমতিপত্র বা আকামা পরিবর্তনের সুযোগ দিচ্ছে না বলে ছয়-সাত লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকের সে দেশে চাকরি অব্যাহত রাখাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিকভাবে কিছু করার রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া; গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশটি সফরকালে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সে আলোচনার সুফল কেন পাওয়া যাচ্ছে না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়া, যে দেশ থেকে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে ফিরে আসতে হয়েছে, সেখানে আবার লোক পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত।
সরকারের পক্ষ থেকে বহির্বিশ্বের নতুন শ্রমবাজার অন্বেষণের ফল আশাব্যঞ্জক নয়; কিন্তু বিষয়টি এমন নয় যে কোথাও কোনো বাজার আর নেই। কী ধরনের জনবল কোন কোন বাজারে প্রয়োজন সে বিষয়ে আরও খোঁজখবর নিতে হবে। যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিয়ে লোকবল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিপুল জনগোষ্ঠীকে রপ্তানিযোগ্য জনশক্তিতে পরিণত করা দরকার।
No comments