দাঙ্গাক্ষুব্ধ লন্ডন-প্রশমিত হোক ক্ষোভের আগুন

সেরা গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে দাবিদার যুক্তরাজ্য এখন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। টোটেনহামে ডুগান নামের ২৯ বছরের এক তরুণ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর লন্ডন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। টোটেনহাম এলাকায় ঘটে যাওয়ার ঘটনার সূত্র ধরে গোটা লন্ডনেই এ উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।


তেমনি পরিস্থিতিতে শান্তির অপেক্ষায় সেখানকার লাখ লাখ মানুষ। ঘটনা যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে না পরিস্থিতির শেষ কোথায়। সাধারণ ক্ষোভ থেকে এভাবে সন্ত্রাস দানা বেঁধে উঠবে_এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার পরও সত্যি হচ্ছে, দুনিয়ার মানুষকে অবাক করে দিয়ে টোটেনহাম থেকে ধীরে ধীরে ব্রিস্টল, লিভারপুল, নটিংহাম, বার্মিহামের মতো শহরগুলোতেও দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। গোটা যুক্তরাজ্যকেই গ্রাস করেছে এই ঘটনা। কিন্তু এই অঘটনের পর পুলিশের প্রায় নির্লিপ্ত থাকার অভিযোগকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ডুগান নিহত হয়েছেন এ কথা জানার পরও ডুগানের পরিবারের লোকজনকে মরদেহ পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩৬ ঘণ্টা। পুলিশ এ সময়টা তাদের কর্তব্য নির্ধারণ করতেই ব্যস্ত ছিল_এটা প্রতীয়মান হয়। আর এই সময়ক্ষেপণ যে মানুষকে সংক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে, সেই হিসাব হয়তো সেখানকার পুলিশ কর্তৃপক্ষ করেইনি। অথচ পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পুলিশকে সর্বপ্রথমেই এলাকার সাধারণ মানুষকে বোঝানো দরকার ছিল। সেখানে তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বানও জানাতে পারত। এর বাইরেও যে মুহূর্তে জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে, তখনো তাদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করার চেয়ে তারা দোকানপাট ও বাড়িঘর রক্ষা করার দিকেই নজর দিয়েছে। জানমালের নিরাপত্তার পাশাপাশি উদ্ভূত পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে দ্রুত।
অথচ লন্ডন শহরে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনার পেছনে কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ কাজ করেনি। সেখানে সংঘবদ্ধ আন্দোলনও হয়নি। যদিও কোথাও কোথাও দোকান লুট করার সময় কিছু মুখোশধারী যুবককে একসঙ্গে দোকানে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ফলে এ ঘটনা যে সমাজবিরোধীদের কিছুসংখ্যক চালিয়ে যাচ্ছে, তা অনুমান করা যায়। আরেকটি বিষয়ও এখানে লক্ষণীয়। ক্ষোভকে জাগিয়ে তোলার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষ করে ফেসবুক কিংবা টুইটার যে ভূমিকা রাখে, সেখানে এই দিকটিও তেমন লক্ষণীয় নয়। জাতিগত দাঙ্গা বা বর্ণবৈষম্যবাদের হোতাদেরও এই সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত দেখা যাচ্ছে না। যে কারণে এ ঘটনাকে কোনোভাবেই বর্ণবাদজনিত কোনো ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না।
তবে লন্ডনের যুবসমাজকে অসংগঠিতভাবেই ক্ষুব্ধ করে দিয়েছে সেখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। ওখানকার তরুণদের একটি অংশ দেখতে পাচ্ছে লন্ডনের চাকচিক্য কেমন দুনিয়া মাতানো। সেই চাকচিক্যের অংশীদার হতে পারছে না তারা। অথচ তারাও লন্ডনেরই সন্তান। এ হতাশা থেকেই আইন ভঙ্গ করার প্রবণতা দেখা দিতে পারে সেখানে। লন্ডনের এই অস্থিরতা দেখার পর মনে হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য, নরওয়েতে ঘটে যাওয়া অস্থিরতার সঙ্গে যেন এরও সাযুজ্য আছে। সবখানেই কেমন অসহিষ্ণুতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। লন্ডনের লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ব্যাপক আকার ধারণ করার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইতালিতে অবকাশযাপন সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেছেন। পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশন ডেকেছেন তিনি। যদিও কোনো কোনো মহল থেকে কারফিউ জারি করার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। তার পরও আমরা আশা করছি, ক্যামেরন বিপর্যয় ঠেকাতে সক্ষম হবেন। আবারও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে লন্ডনে।

No comments

Powered by Blogger.