আশুরাঃ ঐতিহাসিক তাৎপর্য by ড. আফম খালিদ হোসেন
মহরম মাসের ১০ তারিখ ইতিহাসে ‘আশুরা’ নামে অভিহিত। প্রাচীনকালের নানা জনগোষ্ঠীর কাছে ‘আশুরা’ ছিল পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ। ইহুদিদের কাছে ‘আশুরা’ জাতীয় মুক্তি দিবস হিসেবে পরিচিত। ‘আশুরা’র মর্যাদা ইসলামে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। মুসলমানরা রোজা পালনের মাধ্যমে ‘আশুরা’র মাহাত্ম্য স্মরণ করে থাকে।
আশুরার দিনে পৃথিবীর বহু চাঞ্চল্যকর ঘটনা সংঘটিত হয়। আসমান-জমিন, আরশ-কুরসি ও আদি পিতা আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, ধরাপৃষ্ঠে প্রথম বারিবর্ষণ, হজরত নুহ (আ.)-এর জাহাজ মহাপ্লাবন শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরণ, ফেরাউনের নির্যাতন থেকে হজরত মুসা (আ.) কর্তৃক ইহুদিদের উদ্ধার, দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে হজরত আয়ুব (আ.)-এর সুস্থতা লাভ, মত্স্য উদর থেকে হজরত ইউনুস (আ.)-এর নির্গমন, হজরত সুলায়মান (আ.)-কে পৃথিবীর একচ্ছত্র রাজত্ব প্রদান, নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর নিষ্কৃতি, হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর চক্ষুজ্যোতি পুনঃপ্রাপ্তি, কূপ থেকে হজরত ইউসুফ (আ.)-কে উদ্ধার, হজরত ইদ্রিস (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.)-কে আসমানে উত্তোলন, কারবালায় হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদতসহ বিপুল ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব সাক্ষী ‘আশুরা’ (মুফতি আশফাক আলম কাসেমি, ফাজায়েলে মুহররম, পৃ. ৩৫-৩৬)।
মদিনায় হিজরতের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) লক্ষ করেন, ইহুদিরা ‘আশুরা’ দিবসে রোজা রাখছে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কোন দিন যাতে তোমরা রোজা রেখেছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস, যেদিন আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার সমপ্রদায়কে মুক্তি প্রদান করেছিলেন, ফেরাউনকে তার সমপ্রদায়সহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তাই হজরত মুসা (আ.) কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এদিন রোজা রাখেন, এ জন্য আমরাও রোজা রাখি। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আ.)-এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দেন’ (মুসলিম, ১/৩৫৯)।
হজরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর সব রোজার (নফল) মধ্যে আশুরার রোজা সর্বশ্রেষ্ঠ’ (তিরমিযী ১/১৫৬)। পবিত্র আশুরার দিন রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি যে ব্যক্তি ‘আশুরা’ দিবসে রোজা রাখবে তার এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা (ক্ষমা) হয়ে যাবে’ (মুসলিম, ১/৩৬৭)। আশুরার দিন রোজা রাখলে ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে যায় বিধায় রাসুলুল্লাহ (সা.) তার আগের দিন বা পরের দিন আরেকটি রোজা রাখার পরামর্শ দেন (মুসনাদ আহমদ)।
৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর (৬০ হিজরির ১০ মহরম) কারবালা প্রান্তরে মহানবীর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) মর্মান্তিক শাহাদত ‘আশুরা’কে তাত্পর্যমণ্ডিত করে। রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে খিলাফত ব্যবস্থার পুনর্জীবন ছিল হজরত হোসাইন (রা.)-এর সংগ্রামের মূল লক্ষ্য। মুসলিম জাহানের বিপুল মানুষের সমর্থন ছিল তাঁর পক্ষে। তত্কালীন শাসক ইয়াজিদের বিরুদ্ধে হজরত হোসাইন (রা.)-এর গৃহীত পদক্ষেপ ছিল যথার্থ, আইনানুগ ও বীরত্বপূর্ণ। মদিনার পরিবর্তে দামেস্কে রাজধানী স্থানান্তর, উমাইয়াদের অনৈসলামিক কার্যকলাপ, ইয়াজিদের দুরভিসন্ধি, কুফাবাসীর বিশ্বাসঘাতকতা সর্বোপরি ইহুদি আবদুল্লাহ ইবন সাবার ষড়যন্ত্র কারবালা হত্যাকাণ্ডের জন্ম দেয়। ইয়াজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কুফাবাসীর আনুগত্যও সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে হজরত হোসাইন (রা.) স্ত্রী, পুত্র, বোন ও ঘনিষ্ঠ ২০০ অনুচর সহকারে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কুফার উদ্দেশে রওনা হন। ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা নামক স্থানে পৌঁছলে কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবন জিয়াদ তাঁকে বাধা প্রদান করে। রক্তপাত বন্ধের উদ্দেশ্যে ইমাম হোসাইন (রা.) তিনটি প্রস্তাব পেশ করেন, প্রথমত তাঁকে মদিনায় ফিরে যেতে দেয়া হোক নতুবা দ্বিতীয়ত, তুর্কি সীমান্তের দুর্গে অবস্থান করতে দেয়া হোক; তৃতীয়ত ইয়াজিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দামেস্কে প্রেরণ করা হোক। কিন্তু ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করে তার হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে আদেশ দেন। হজরত হোসাইন (রা.) ঘৃণাভরে তার এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন। ঐতিহাসিক উইলিয়াম মুইর ইমাম হোসাইন (রা.)-এর প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন, ‘এ অনুরোধ যদি মেনে নেয়া হতো, উমাইয়াদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনত’।
অবশেষে ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের ৪ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী ইমাম হোসাইন (রা.)-কে অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং ফোরাত নদীতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। হজরত হোসাইন (রা.)-এর শিবিরে পানির হাহাকার ওঠে। তিনি ইয়াজিদ বাহিনীর উদ্দেশে প্রদত্ত এক ভাষণে বলেন, আমি যুদ্ধ করতে আসিনি, এমনকি নিছক ক্ষমতা দখল আমার উদ্দেশ্য নয়; খিলাফতের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার আমার কাম্য। ১০ মহরম ইয়াজিদ বাহিনী তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সংঘটিত এ অসম যুদ্ধে একমাত্র পুত্র ইমাম যায়নুল আবেদীন ব্যতীত ৭০ জন পুরুষ শহীদ হন।
ইমাম হোসাইন (রা.) শাহাদাতের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যান; অবশেষে তিনি শাহাদত বরণ করেন। ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ছিন্ন মস্তক বর্ষা ফলকে বিদ্ধ করে দামেস্কে প্রেরিত হয়। ইয়াজিদ ভীত ও শঙ্কিত হয়ে ছিন্ন মস্তক প্রত্যর্পণ করলে কারবালায় পবিত্র দেহসহ তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। ইতিহাসবিদ গিবন বলেন, ‘সেই দুরবর্তী যুগে ও পরিবেশে হজরত হোসাইনের মৃত্যুর শোকাবহ দৃশ্য কঠিনতম পাঠকের হৃদয়ে সমবেদনার সঞ্চার করবে’ ইতিহাস সাক্ষী ইমাম হোসাইন (রা.)-কে কারবালা প্রান্তরে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল বিভিন্ন সময়ে মাত্র ৫০ বছরের মধ্যেই তাদের প্রত্যেকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে করুণপন্থায়।
কারবালার যুদ্ধে জয়লাভ ইয়াজিদ তথা উমাইয়া বংশের জন্য ছিল পরাজয়ের নামান্তর। এ বিয়োগান্তক ঘটনা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমপ্রদায়ের জন্ম দেয়, পারস্যে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটায় এবং সর্বোপরি ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য সমূহ বিপর্যয় ডেকে আনে। কারবালার শোকাবহ হত্যাকাণ্ড মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। শিহরণ জাগিয়ে তোলে। অপরদিকে ইমাম হোসাইন (রা.) শাহাদত ছিল ন্যায়, সত্য ও ধর্মনিষ্ঠার জন্য। তিনি অন্যায় ও অসাধুতার সঙ্গে আপস করেননি। তাঁর এ আত্মাহুতি সর্বকালে গৌরবোজ্জ্বল আদর্শরূপে পরিগণিত হয়। তাই ‘আশুরা’ মুসলমানদের আত্মোপলব্ধিকে জাগ্রত করে এবং সংগ্রামী চেতনাকে করে শানিত ।
লেখক : অধ্যাপক, গবেষক, প্রাবন্ধিক
মদিনায় হিজরতের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) লক্ষ করেন, ইহুদিরা ‘আশুরা’ দিবসে রোজা রাখছে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কোন দিন যাতে তোমরা রোজা রেখেছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস, যেদিন আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার সমপ্রদায়কে মুক্তি প্রদান করেছিলেন, ফেরাউনকে তার সমপ্রদায়সহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তাই হজরত মুসা (আ.) কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এদিন রোজা রাখেন, এ জন্য আমরাও রোজা রাখি। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আ.)-এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দেন’ (মুসলিম, ১/৩৫৯)।
হজরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর সব রোজার (নফল) মধ্যে আশুরার রোজা সর্বশ্রেষ্ঠ’ (তিরমিযী ১/১৫৬)। পবিত্র আশুরার দিন রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি যে ব্যক্তি ‘আশুরা’ দিবসে রোজা রাখবে তার এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা (ক্ষমা) হয়ে যাবে’ (মুসলিম, ১/৩৬৭)। আশুরার দিন রোজা রাখলে ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে যায় বিধায় রাসুলুল্লাহ (সা.) তার আগের দিন বা পরের দিন আরেকটি রোজা রাখার পরামর্শ দেন (মুসনাদ আহমদ)।
৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর (৬০ হিজরির ১০ মহরম) কারবালা প্রান্তরে মহানবীর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) মর্মান্তিক শাহাদত ‘আশুরা’কে তাত্পর্যমণ্ডিত করে। রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে খিলাফত ব্যবস্থার পুনর্জীবন ছিল হজরত হোসাইন (রা.)-এর সংগ্রামের মূল লক্ষ্য। মুসলিম জাহানের বিপুল মানুষের সমর্থন ছিল তাঁর পক্ষে। তত্কালীন শাসক ইয়াজিদের বিরুদ্ধে হজরত হোসাইন (রা.)-এর গৃহীত পদক্ষেপ ছিল যথার্থ, আইনানুগ ও বীরত্বপূর্ণ। মদিনার পরিবর্তে দামেস্কে রাজধানী স্থানান্তর, উমাইয়াদের অনৈসলামিক কার্যকলাপ, ইয়াজিদের দুরভিসন্ধি, কুফাবাসীর বিশ্বাসঘাতকতা সর্বোপরি ইহুদি আবদুল্লাহ ইবন সাবার ষড়যন্ত্র কারবালা হত্যাকাণ্ডের জন্ম দেয়। ইয়াজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কুফাবাসীর আনুগত্যও সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে হজরত হোসাইন (রা.) স্ত্রী, পুত্র, বোন ও ঘনিষ্ঠ ২০০ অনুচর সহকারে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কুফার উদ্দেশে রওনা হন। ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা নামক স্থানে পৌঁছলে কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবন জিয়াদ তাঁকে বাধা প্রদান করে। রক্তপাত বন্ধের উদ্দেশ্যে ইমাম হোসাইন (রা.) তিনটি প্রস্তাব পেশ করেন, প্রথমত তাঁকে মদিনায় ফিরে যেতে দেয়া হোক নতুবা দ্বিতীয়ত, তুর্কি সীমান্তের দুর্গে অবস্থান করতে দেয়া হোক; তৃতীয়ত ইয়াজিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দামেস্কে প্রেরণ করা হোক। কিন্তু ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করে তার হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে আদেশ দেন। হজরত হোসাইন (রা.) ঘৃণাভরে তার এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন। ঐতিহাসিক উইলিয়াম মুইর ইমাম হোসাইন (রা.)-এর প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন, ‘এ অনুরোধ যদি মেনে নেয়া হতো, উমাইয়াদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনত’।
অবশেষে ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের ৪ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী ইমাম হোসাইন (রা.)-কে অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং ফোরাত নদীতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। হজরত হোসাইন (রা.)-এর শিবিরে পানির হাহাকার ওঠে। তিনি ইয়াজিদ বাহিনীর উদ্দেশে প্রদত্ত এক ভাষণে বলেন, আমি যুদ্ধ করতে আসিনি, এমনকি নিছক ক্ষমতা দখল আমার উদ্দেশ্য নয়; খিলাফতের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার আমার কাম্য। ১০ মহরম ইয়াজিদ বাহিনী তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সংঘটিত এ অসম যুদ্ধে একমাত্র পুত্র ইমাম যায়নুল আবেদীন ব্যতীত ৭০ জন পুরুষ শহীদ হন।
ইমাম হোসাইন (রা.) শাহাদাতের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যান; অবশেষে তিনি শাহাদত বরণ করেন। ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ছিন্ন মস্তক বর্ষা ফলকে বিদ্ধ করে দামেস্কে প্রেরিত হয়। ইয়াজিদ ভীত ও শঙ্কিত হয়ে ছিন্ন মস্তক প্রত্যর্পণ করলে কারবালায় পবিত্র দেহসহ তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। ইতিহাসবিদ গিবন বলেন, ‘সেই দুরবর্তী যুগে ও পরিবেশে হজরত হোসাইনের মৃত্যুর শোকাবহ দৃশ্য কঠিনতম পাঠকের হৃদয়ে সমবেদনার সঞ্চার করবে’ ইতিহাস সাক্ষী ইমাম হোসাইন (রা.)-কে কারবালা প্রান্তরে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল বিভিন্ন সময়ে মাত্র ৫০ বছরের মধ্যেই তাদের প্রত্যেকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে করুণপন্থায়।
কারবালার যুদ্ধে জয়লাভ ইয়াজিদ তথা উমাইয়া বংশের জন্য ছিল পরাজয়ের নামান্তর। এ বিয়োগান্তক ঘটনা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমপ্রদায়ের জন্ম দেয়, পারস্যে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটায় এবং সর্বোপরি ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য সমূহ বিপর্যয় ডেকে আনে। কারবালার শোকাবহ হত্যাকাণ্ড মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। শিহরণ জাগিয়ে তোলে। অপরদিকে ইমাম হোসাইন (রা.) শাহাদত ছিল ন্যায়, সত্য ও ধর্মনিষ্ঠার জন্য। তিনি অন্যায় ও অসাধুতার সঙ্গে আপস করেননি। তাঁর এ আত্মাহুতি সর্বকালে গৌরবোজ্জ্বল আদর্শরূপে পরিগণিত হয়। তাই ‘আশুরা’ মুসলমানদের আত্মোপলব্ধিকে জাগ্রত করে এবং সংগ্রামী চেতনাকে করে শানিত ।
লেখক : অধ্যাপক, গবেষক, প্রাবন্ধিক
No comments