ঢাকার পত্রিকার ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে ভারতে হুলস্থুল
বাংলাদেশের
বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ওয়ানডে সিরিজে ভারতের পরাজয় নিয়ে ব্যঙ্গ করে তৈরি
একটি গ্রাফিক্স ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও ক্রিকেট-মহলে হুলস্থুল ফেলে দিয়েছে।
ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোর একটি সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গ্রাফিক্সের নিন্দায়
সরব হয়েছে ভারতের প্রায় সব প্রথম সারির চ্যানেল ও খবরের কাগজ। কেউ বলছে,
ব্যঙ্গচিত্রটি শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং এটি ভারতীয় ক্রিকেটের
প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান। দুই দেশের ক্রিকেট রেষারেষিকে ঘিরে বিজ্ঞাপনী
যুদ্ধ অবশ্য চলছে সেই বিশ্বকাপের সময় থেকেই। কিন্তু তা এত তাড়াতাড়ি এতটা
তলানিতে এসে ঠেকবে, তা প্রায় অভাবনীয় ছিল। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে
বিশ্বকাপের সময় ‘মওকা মওকা’ সিরিজের বিজ্ঞাপনগুলো ঘিরেই ভারত ও বাংলাদেশের
ক্রিকেটভক্তদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছিল। স্টার স্পোর্টসের
বানানো মওকা মওকা-র জবাবে বাংলাদেশেও তৈরি হয়েছিলো অনেক পাল্টা ভিডিও।
এরপর জুনে ভারতের বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশকে ‘ক্রিকেটের বাচ্চা’ বলে
কটাক্ষ কিংবা তার পাল্টা হিসেবে মোটা বাঁশের ডান্ডা দিয়ে ‘ব্যাম্বু ইজ অন’
সিরিজের বিজ্ঞাপন নিয়েও জলঘোলা কম হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি প্রথম আলোর
সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপন রুচি ও শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে
মনে করে ভারতীয় অনেক সংবাদমাধ্যম। যে গ্রাফিক্স নিয়ে এই তোলপাড়, সেটিতে
দেখা যাচ্ছে বোলার মুস্তাফিজ কাটারে ঘায়েল ভারতীয় ক্রিকেটাররা অর্ধেক
মাথা কামিয়ে বিষণ্ণ মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের হাতে পোস্টার ‘আমরা
ব্যবহার করেছি, আপনারাও করুন’। মুস্তাফিজের যে স্লোয়ার ডেলিভারি বা কাটারে
ধয়াশায়ী হয়েছিলেন বিরাট কোহলি বা এম এস ধোনিরা, সেটাকেই দ্বৈত অর্থে
ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে। কিন্তু ভারতের নানা চ্যানেলে ক্রিকেট পন্ডিতরা
মন্তব্য করেছেন, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হারার রাগ
থেকেই বাংলাদেশ এমন গ্রাফিক্স তৈরি করেছে। তবে ক্রিকেট-ভাষ্যকার গৌতম
ভট্টাচার্যর মতে, এখানে যদি রুচিহীনতা থেকেও থাকে, তাহলে তার শেকড় আসলে
অনেক গভীরে। তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “শুধু ক্রিকেটকে এখানে দায়ী করা ঠিক
হবে না। ফারাক্কা বা তিস্তার জল থেকে শুরু করে কূটনীতির অনেক বিষয়েই
বাংলাদেশে একটা ধারণা আছে যে ভারত তাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো আচরণ করে
থাকে। এখন ক্রিকেটটাই সে দেশের সবচেয়ে বড় ইউনিফায়িং স্পোর্ট, তাই
ক্রিকেটকে কেন্দ্র করেই সেই মনোভাবের প্রতিফলন বেরিয়ে এসেছে।” যে দৈনিকে
এই গ্রাফিক্সটি প্রকাশিত হয়, সেই প্রথম আলো অবশ্য মনে করছে তাদের ব্যঙ্গ
সাময়িকী রস-আলোতে প্রকাশিত এই গ্রাফিক্সের রসিকতার দিকটি বা হালকা দিকটি
দেখতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ব্যর্থ হচ্ছে। প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল
শুভ্র বলছেন, “আমার মনে হয় ভারতে অনেকেই এটার ভুল ব্যাখ্যা করছেন। এই
ব্যঙ্গ-সাময়িকীতে আমরা দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশের ক্রিকেটার
– প্রায় সবাইকে নিয়েই হাসিঠাট্টা করে থাকি। এখানেও স্রেফ রসিকতাও করাই
হয়েছে।” তার এই বক্তব্যের সঙ্গে আবার অনেকটাই একমত ভারতের অ্যাডভার্টাইজিং
জগতের দিকপাল প্রহ্লাদ কক্কর। অ্যাড-গুরু কক্করের স্বীকার করতে দ্বিধা
নেই, এই গ্রাফিক্সটা বেশ মজার এবং তাতে সৃষ্টিশীলতারও ছাপ আছে। কক্করের
যুক্তি, “এটা যদি ভারতীয় ক্রিকেটারদের বদলে অন্য কাউকে নিয়ে, ধরা যাক
অস্ট্রেলিয়ানদের নিয়ে বানানো হতো, তাহলে কিন্তু ভারতের এটা উপভোগ করায়
কোনো অসুবিধা থাকত না। কিংবা পাকিস্তানিদের নিয়ে বানানো হলে ভারতীয়রা তো
বোধহয় আরো বেশি খুশি হতো!” তবে ভারতে জাতীয় ক্রিকেটাররা যে প্রায়
ডেমি-গড বা দেবতার মতো সম্মান পান, সেখানে তাদের নিয়ে হাসাহাসি করাটাও
বোধহয় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে – এবং প্রথম আলোর গ্রাফিক্সটিকে ভারত এখন সেই
অপরাধেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে।- বিবিসি।
No comments