কানেক্টিভিটি ধাঁধার পাঠোদ্ধার by এস.এন.এম আবদি
তিন
সার্কভুক্ত দেশ- বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সড়ক কানেক্টিভিটি
(সংযোগ) চুক্তি করে উল্লসিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। এ
চুক্তি সমপাদিত হয়েছে সীমান্ত অতিক্রম করে অবাধে পরস্পরের গাড়ি, বাস ও কার
যাতায়াতের জন্য, যাতে করে জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ ও বাণিজ্যে ব্যাপক
অগ্রগতি সাধিত হয়। কিন্তু নয়াদিল্লি এটি খুব ভাল করেই জানে, বিবিআইএন
(বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) মোটরযান চুক্তি কোনভাবেই পাকিস্তান হয়ে
আফগানিস্তানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে ইসলামাবাদের সাড়া পাওয়ার আশা
ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়। পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ
স্থাপনের বিষয়টি ভারতের জন্য অত্যন্ত সুখকর একটি বিষয় হতো। বিবিআইএন
মোটরযান চুক্তির বাস্তবায়ন এখনও ‘বহুদূরের স্বপ্ন’। এমনটিই বলেছে একটি
নিরপেক্ষ অর্থনৈতিক পত্রিকা। সেখানে বলা হয়েছে, বেশ কিছু স্ববিরোধী বিষয়
সপষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়ে উঠছে। অর্থনৈতিক ও কৌশলগত কারণে নিজের আশপাশের
দেশগুলোর সঙ্গে অবাধ সড়ক যোগাযোগ চায় ভারত। এর মধ্যে আফগানিস্তানও রয়েছে।
কিন্তু দেশটির সঙ্গে ভারতের কোন সীমান্ত নেই। অপরদিকে সিকিম হয়ে চীনের
সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে ভারতের আপত্তি রয়েছে। সিকিমের সঙ্গে তিব্বতের
সীমান্ত রয়েছে। আবার উত্তরপূর্বাঞ্চল দিয়েও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে
আগ্রহী নয় ভারত। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশ ও
মিয়ানমারের। মিয়ানমারের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান
প্রদেশের রাজধানী কুনমিং-এর। চীনের প্রস্তাবিত নিউ সিল্ক রোডে ভারতের
তীব্র অনাগ্রহও জানা কথা। কিন্তু যেটা তেমন জানা কথা নয়, তা হলো,
প্রস্তাবিত বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার মহাসড়কের ভিত দুর্বল করার ব্যাপারে
ভারত ধারাবাহিকভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। চীনের কুনমিং থেকে ভারতের কলকাতা
পর্যন্ত ওই মহাসড়ক হবে মিয়ানমারের মান্দালয়, বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রাম
এবং ভারতের আসামের সিলচরের মধ্য দিয়ে। চার দেশের মধ্যে পর্যটন ও বাণিজ্য
বৃদ্ধির জন্য এটি সুপারিশও করেছে অনেকে। কথায় আছে, এক মানুষের মাংস
আরেকজনের জন্য বিষ। তাই যেটা এক দেশের জন্য ভাল হয়, আরেক দেশের জন্য সেটাই
খারাপ হতে পারে। যে বিষয় এক দেশের জন্য অনেক সুখকর, আরেক দেশের জন্য সেটা
খুবই অপ্রীতিকর একটি বিষয়। অন্য কথায়, নীতি নয়, জাতীয় স্বার্থই সর্বাগ্রে
আসে। তিন পারমাণবিক শক্তিসমপন্ন দেশ ভারত, পাকিস্তান ও চীনের একসঙ্গে বসে
আপসে নিজেদের মধ্যকার সংযোগ ইস্যুগুলো সমাধান করা প্রয়োজন। পরসপরকে হটানোর
নীতি থেকে সরে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত বিশ্বের অন্যতম পরিবর্তনশীল
ও ঘনবসতিপূর্ণ এ অঞ্চলটির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য।
সিকিম হয়ে তিব্বতের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের বিরোধী ভারত। এ ছাড়া ভারত নিরাপত্তাগত কারণ তুলে ধরে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডরের বিরোধিতা করছে। কিন্তু বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতাও বিবেচনা করা উচিত। সর্বশেষ প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ সালে, ভারতে প্রায় ৫১০৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে চীন। অপরদিকে ভারত থেকে চীন আমদানি করেছে ১২৮৩ কোটি ডলারের পণ্য। ভারতের ভয়, সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলে এ ঘাটটি আরও বড় হতে পারে।
ভাল কথা। ভারত চায় না, তার বাজার চীনা পণ্যে সয়লাব হয়ে উঠুক। কিন্তু যদি বিবিআইএন চুক্তি কার্যকর হয়, তাহলে কি ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালে নিজেদের পণ্যের বন্যা বইয়ে দেবে না? নিরাপত্তাগত দিক যদি বিবেচনা করা হয়, পাকিস্তান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে নিয়ে উদ্বিগ্ন, ঠিক যেমন ভারত চীনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই ভারতের কার, বাস ও ট্রাকের বহরের জন্য নিজের দরজা খুলে দেবার বেলায় পাকিস্তান সতর্ক। সত্যিকার অর্থে, আমি মনে করি না, নিজেদের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে সংযোগ স্থাপনে ভারতকে অনুমতি দেবে পাকিস্তান। বিশেষ করে যখন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পররাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ ভারতের বিরুদ্ধে ‘আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে হামলা’র অভিযোগ উত্থাপন অব্যাহত রেখেছেন।
অপরদিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ সমপ্রসারণের ভয়াবহ অভিযোগ আনে ভারত। এমন পরিবেশে, সংযোগের বিষয়টি কেবলমাত্র বিদ্যমান পরিস্থিতির জিম্মিতে পরিণত হতে বাধ্য। ভূ-রাজনৈতিক কারণে আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব হ্রাস পেতে চলেছে। আফগান প্রেসিডেন্ট আফগান গনি ভারতের সঙ্গে একটি অস্ত্র চুক্তি বাতিল করেছেন। তিনি বরং পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন বেশি। এছাড়াও, মনে হচ্ছে পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টিলিজেন্স (আইএসআই) ও আফগান ন্যাশনাল ডিরেক্টরেট ব্যাপক ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
উপ-আঞ্চলিকতা উদযাপন করা খুবই ভাল। আঞ্চলিক সংগঠন সার্কের বিরুদ্ধে গিয়ে বিবিআইএন চুক্তি উপ-আঞ্চলিকতারই প্রতিনিধিত্ব করে। উদযাপন সাজানো হচ্ছে ‘সার্ক মাইনাস ওয়ান’ প্রতিষ্ঠার কৌশলের মাধ্যমে। এমনভাবে কৌশল করা হচ্ছে, যাতে করে পাকিস্তান ত্যাগ করতে বাকি সার্কভুক্ত দেশগুলোকে এক করা যায়। এ প্রচেষ্টার পক্ষের অনেকে আবার পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সঙ্গে সংযোগ বিষয়ে সুসমপর্ক স্থাপনের বিরুদ্ধে। তাদের বিশ্বাস, এর ফলে ভারতে সন্ত্রাসীদের প্রবেশ বেড়ে যেতে পারে।
প্রার্থনার মতো কূটনীতিও অলৌকিক কিছুর জন্ম দিতে পারে। ভারত, পাকিস্তান ও সার্কের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র চীনের কাছে ঝুঁকি নেয়ার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। যদি তারা বাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য পরসপরের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে চায়, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই এক টেবিলে বসতে হবে। ভয় দূর করতে হবে। পরসপরকে দিতে হবে ভাল আচরণের লৌহের ন্যায় প্রতিশ্রুতি।
(লেখক: এস.এন.এম আবদি ভারতের একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। এ লেখাটি আরব নিউজে প্রকাশিত তার নিবন্ধের অনুবাদ)
সিকিম হয়ে তিব্বতের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের বিরোধী ভারত। এ ছাড়া ভারত নিরাপত্তাগত কারণ তুলে ধরে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডরের বিরোধিতা করছে। কিন্তু বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতাও বিবেচনা করা উচিত। সর্বশেষ প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ সালে, ভারতে প্রায় ৫১০৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে চীন। অপরদিকে ভারত থেকে চীন আমদানি করেছে ১২৮৩ কোটি ডলারের পণ্য। ভারতের ভয়, সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলে এ ঘাটটি আরও বড় হতে পারে।
ভাল কথা। ভারত চায় না, তার বাজার চীনা পণ্যে সয়লাব হয়ে উঠুক। কিন্তু যদি বিবিআইএন চুক্তি কার্যকর হয়, তাহলে কি ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালে নিজেদের পণ্যের বন্যা বইয়ে দেবে না? নিরাপত্তাগত দিক যদি বিবেচনা করা হয়, পাকিস্তান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে নিয়ে উদ্বিগ্ন, ঠিক যেমন ভারত চীনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই ভারতের কার, বাস ও ট্রাকের বহরের জন্য নিজের দরজা খুলে দেবার বেলায় পাকিস্তান সতর্ক। সত্যিকার অর্থে, আমি মনে করি না, নিজেদের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে সংযোগ স্থাপনে ভারতকে অনুমতি দেবে পাকিস্তান। বিশেষ করে যখন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পররাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ ভারতের বিরুদ্ধে ‘আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে হামলা’র অভিযোগ উত্থাপন অব্যাহত রেখেছেন।
অপরদিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ সমপ্রসারণের ভয়াবহ অভিযোগ আনে ভারত। এমন পরিবেশে, সংযোগের বিষয়টি কেবলমাত্র বিদ্যমান পরিস্থিতির জিম্মিতে পরিণত হতে বাধ্য। ভূ-রাজনৈতিক কারণে আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব হ্রাস পেতে চলেছে। আফগান প্রেসিডেন্ট আফগান গনি ভারতের সঙ্গে একটি অস্ত্র চুক্তি বাতিল করেছেন। তিনি বরং পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন বেশি। এছাড়াও, মনে হচ্ছে পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টিলিজেন্স (আইএসআই) ও আফগান ন্যাশনাল ডিরেক্টরেট ব্যাপক ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
উপ-আঞ্চলিকতা উদযাপন করা খুবই ভাল। আঞ্চলিক সংগঠন সার্কের বিরুদ্ধে গিয়ে বিবিআইএন চুক্তি উপ-আঞ্চলিকতারই প্রতিনিধিত্ব করে। উদযাপন সাজানো হচ্ছে ‘সার্ক মাইনাস ওয়ান’ প্রতিষ্ঠার কৌশলের মাধ্যমে। এমনভাবে কৌশল করা হচ্ছে, যাতে করে পাকিস্তান ত্যাগ করতে বাকি সার্কভুক্ত দেশগুলোকে এক করা যায়। এ প্রচেষ্টার পক্ষের অনেকে আবার পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সঙ্গে সংযোগ বিষয়ে সুসমপর্ক স্থাপনের বিরুদ্ধে। তাদের বিশ্বাস, এর ফলে ভারতে সন্ত্রাসীদের প্রবেশ বেড়ে যেতে পারে।
প্রার্থনার মতো কূটনীতিও অলৌকিক কিছুর জন্ম দিতে পারে। ভারত, পাকিস্তান ও সার্কের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র চীনের কাছে ঝুঁকি নেয়ার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। যদি তারা বাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য পরসপরের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে চায়, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই এক টেবিলে বসতে হবে। ভয় দূর করতে হবে। পরসপরকে দিতে হবে ভাল আচরণের লৌহের ন্যায় প্রতিশ্রুতি।
(লেখক: এস.এন.এম আবদি ভারতের একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। এ লেখাটি আরব নিউজে প্রকাশিত তার নিবন্ধের অনুবাদ)
No comments