বলতে গেলে আমি লুকিয়ে বাস করছি -অনন্য আজাদ
বাংলাদেশের
বর্তমান পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত। কোন আইন নেই। বিচার নেই। আর সরকার
ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলোর পাশে দাঁড়ায় না। মনে হচ্ছে যেন তারাও ব্লগার
হত্যাকারীদের সঙ্গে চক্রান্তে লিপ্ত। দ্য ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনকে দেয়া এক
সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ
(২৫)। প্রাণনাশের হুমকির মুখে বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি তার সঙ্গে আলাপ করেছেন ডিপ্লোম্যাটের সঞ্জয় কুমার। এখানে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: দেশ কেন ছাড়ছেন?
অনন্য আজাদ: আমি দেশ ছাড়ছি, কারণ আমার জীবন হুমকির মুখে। স্বাভাবিক থাকাটা আমার জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। আমি মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখি। যুদ্ধাপরাধী আর ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লেখি। আমি তাদের বিরুদ্ধে লেখি যারা সমাজকে ভুল পথে চালিত করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে। ফলে, মানুষ মনে করে আমার লেখা তাদের জন্য ক্ষতিকর। এ কারণে তারা আমাকে হত্যা করতে চায়। কয়েক মাস ধরে আমি বলতে গেলে প্রায় লুকিয়ে বাস করছি; আমার চাকরি ছেড়েছি, লেখালেখি কমিয়ে এনেছি, আমার ওয়েবসাইট বন্ধ রেখেছি। আমার জন্য জীবনের স্বাভাবিকতা হারিয়ে গেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে থাকলে আপনি হত্যার শিকার হতে পারেন সেজন্য নিশ্চয়ই আপনি ভীত?
অনন্য আজাদ: বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত। যারা অযৌক্তিকতার বিরুদ্ধে লেখে বা ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের পক্ষে কথা বলে তাদের কারও জন্য কোন নিরাপত্তা নেই। মৌলবাদীরা ইতিমধ্যে নয়জন ব্লগারকে হত্যা করেছে, যারা মুক্তচিন্তার জন্য লড়াই করছিল। ইসলামী চরমপন্থার বিরুদ্ধে লেখার কারণে অনেক লেখক, ব্লগারের নাম মৌলবাদী শক্তিগুলোর হিট-লিস্টে রয়েছে। এসব ব্লগারের জীবন রক্ষার্থে সরকার কোন কিছুই করছে না। ব্লগাররা সার্বক্ষণিক আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। আর তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর কোন প্রচেষ্টাই নেই।
প্রশ্ন: সরকার আপনাকে বা অন্য ব্লগারদের রক্ষা করতে সক্ষম নয়- এমনটা কেন মনে করছেন?
অনন্য আজাদ: কোন আইন নেই। কোন বিচার নেই। আর সরকার ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলোর পাশে দাঁড়ায় না। মনে হচ্ছে যেন হত্যাকারীদের সঙ্গে তারাও চক্রান্তে লিপ্ত। লেখক আর ব্লগারদের প্রতি প্রকাশ্য হুমকি থাকা সত্ত্বেও সরকার মৌলবাদী দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। দেশের ভেতরের অবস্থা ভাল না। হয়তো মৌলবাদী শক্তি আর সরকার একসঙ্গে কাজ করছে। এ কারণেই পুলিশ এ যুক্তি মেনে নিচ্ছে যে ব্লগাররা নাস্তিক আর তাদের টার্গেট করা উচিত। ধর্ম বা রাজনীতি নিয়ে স্বতন্ত্র ধারণা থাকার কারণে কেন একজন হত্যার শিকার হবে? এটা ভাল রাজনীতির লক্ষণ নয়। আমি মনে করি দিন দিন এ দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। আর দেশের মৌলিক নীতিগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য হস্তক্ষেপ করার জরুরি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
প্রশ্ন: ব্লগারদের ওপর নিয়মতান্ত্রিক হামলার জন্য আপনি কাকে দায়ী করেন?
অনন্য আজাদ: এটা সত্যি, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করে পাকিস্তান। আর আমাদের দেশে আমরা যুদ্ধাপরাধী আর তাদের স্বাধীনতাবিরোধী মতাদর্শের বিরুদ্ধে। কাজেই, ব্লগারদের ওপর হামলা আর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলোর জন্য সমর্থনের মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। বাংলাদেশের একটি পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি সব সময়ই রয়েছে, যা তালেবান আর একই ধরনের জঙ্গি শক্তির উৎপত্তিস্থল।
প্রশ্ন: কট্টরপন্থিদের অভিযোগ, আপনি ইসলাম ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে লেখেন?
অনন্য আজাদ: এটা সত্যি নয়। এটা একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত্র। ব্লগারদের নাস্তিক আর ইসলামবিরোধী বলা হয়। দেখুন, আমাদের একমাত্র এজেন্ডা হলো, পড়াশোনা করা, লেখা এবং সমাজে মৌলবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা, যারা কিনা ৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের সময় ব্যাপক ক্ষতি করেছে। আমরা ওই শক্তিগুলোর সমালোচনা করি যারা নিজস্ব রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের জন্য ইসলামকে ব্যবহার করে। যারা ইসলামের নামে হত্যা করে আমরা তাদের নিন্দা জানাই। এমন লেখাগুলোতে তাদের মুখোশ খুলে দেয়, ফলে আমরা স্বাভাবিক টার্গেটে পরিণত হই। বাংলাদেশ প্রধানত একটি মুসলিম দেশ। আর মৌলবাদীরা আমাদের নাস্তিক বা ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতি উসকে দেয়ার চেষ্টা করে। এভাবে তারা ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের হত্যার যথার্থতা নিরূপণ করছে। বাংলাদেশী সমাজ নিজেদের প্রথমে বাঙালি ও পরে মুসলিম হিসেবে চিহ্নিত করে। আর বাংলাদেশী এ সমাজে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দেয়ার একটি গভীরে প্রোথিত ষড়যন্ত্র রয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার পরিবার কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে?
অনন্য আজাদ: তারা অনেক বেশি সহযোগিতামূলক। অস্পষ্ট, গোপন এসব শক্তির বিরুদ্ধে আমার সংগ্রামে আমার পরিবার আমার পাশে আছে। তারা ভীত, কিন্তু যে আদর্শের জন্য আমাদের অবস্থান তাতে তাদের বিশ্বাস রয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার পিতা, হুমায়ুন আজাদ মৌলবাদী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার জীবন হারিয়েছিলেন?
অনন্য আজাদ: তিনি দেশের জন্য বিরাট এক অবদান রেখেছেন। নিজের জীবন দিয়ে তিনি বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা আর যৌক্তিকতার শিখা প্রজ্বলিত রেখেছেন। তিনি শুধু আমার জন্যই অনুপ্রেরণা নন, বরং তিনি তাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা যারা বাংলাদেশকে প্রগতিশীল একটি সমাজ হিসেবে দেখতে চায়।
প্রশ্ন: সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কী আপনি সমর্থন পান?
অনন্য আজাদ: নতুন প্রজন্ম ধর্মকে সম্মান করে। কিন্তু তারা ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত। তারা জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করে না, যারা ধর্মের নামে সব কিছু করতে পারে। নতুন প্রজন্ম ধর্মনিরপেক্ষতা পছন্দ করে। কিন্তু তারা উগ্রপন্থি শক্তিদের দ্বারা নাস্তিক আখ্যায়িত হতে চান না, যা নিশ্চিত এক মৃত্যুকে নিমন্ত্রণ দেয়। মানুষ ভীত।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের জন্য একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কেন?
অনন্য আজাদ: পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের পৃথক হওয়ার পুরো ভিত্তিই ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা পাকিস্তানকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম কারণ এটা ইসলামপন্থি দেশ ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশের গঠনও আজ পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের দেশ সত্যিকার অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ নয়। ইসলাম এখন আমাদের রাষ্ট্রধর্ম। এটা ভাল নয়। আমাদের জীবনধারা বেছে নেয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত। স্বার্থের কারণে ধর্ম ব্যবহৃত হলে তা নিয়ে সমালোচনা করার স্বাধীনতা থাকা উচিত।
প্রশ্ন: এখন আপনার পরিকল্পনা কী?
অনন্য আজাদ: এটা আমি এখন আপনাকে বলতে পারবো না। আমি যদি আমার পরিকল্পনা প্রকশ করি, তাহলে সেটা আমার জন্য সমস্যার সৃষ্টি করবে। কিন্তু যেটা নিশ্চিত তা হলো আমি লেখা বন্ধ করতে পারবো না। আমি আমার পরবর্তী বই প্রকাশ করবো। আমি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং যুক্তিবাদী চিন্তাধারার একজন শক্ত সমর্থক। আর আমি এসব ইস্যুতে লেখা অব্যাহত রাখবো।
প্রশ্ন: দেশ কেন ছাড়ছেন?
অনন্য আজাদ: আমি দেশ ছাড়ছি, কারণ আমার জীবন হুমকির মুখে। স্বাভাবিক থাকাটা আমার জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। আমি মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখি। যুদ্ধাপরাধী আর ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লেখি। আমি তাদের বিরুদ্ধে লেখি যারা সমাজকে ভুল পথে চালিত করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে। ফলে, মানুষ মনে করে আমার লেখা তাদের জন্য ক্ষতিকর। এ কারণে তারা আমাকে হত্যা করতে চায়। কয়েক মাস ধরে আমি বলতে গেলে প্রায় লুকিয়ে বাস করছি; আমার চাকরি ছেড়েছি, লেখালেখি কমিয়ে এনেছি, আমার ওয়েবসাইট বন্ধ রেখেছি। আমার জন্য জীবনের স্বাভাবিকতা হারিয়ে গেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে থাকলে আপনি হত্যার শিকার হতে পারেন সেজন্য নিশ্চয়ই আপনি ভীত?
অনন্য আজাদ: বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত। যারা অযৌক্তিকতার বিরুদ্ধে লেখে বা ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের পক্ষে কথা বলে তাদের কারও জন্য কোন নিরাপত্তা নেই। মৌলবাদীরা ইতিমধ্যে নয়জন ব্লগারকে হত্যা করেছে, যারা মুক্তচিন্তার জন্য লড়াই করছিল। ইসলামী চরমপন্থার বিরুদ্ধে লেখার কারণে অনেক লেখক, ব্লগারের নাম মৌলবাদী শক্তিগুলোর হিট-লিস্টে রয়েছে। এসব ব্লগারের জীবন রক্ষার্থে সরকার কোন কিছুই করছে না। ব্লগাররা সার্বক্ষণিক আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। আর তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর কোন প্রচেষ্টাই নেই।
প্রশ্ন: সরকার আপনাকে বা অন্য ব্লগারদের রক্ষা করতে সক্ষম নয়- এমনটা কেন মনে করছেন?
অনন্য আজাদ: কোন আইন নেই। কোন বিচার নেই। আর সরকার ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলোর পাশে দাঁড়ায় না। মনে হচ্ছে যেন হত্যাকারীদের সঙ্গে তারাও চক্রান্তে লিপ্ত। লেখক আর ব্লগারদের প্রতি প্রকাশ্য হুমকি থাকা সত্ত্বেও সরকার মৌলবাদী দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। দেশের ভেতরের অবস্থা ভাল না। হয়তো মৌলবাদী শক্তি আর সরকার একসঙ্গে কাজ করছে। এ কারণেই পুলিশ এ যুক্তি মেনে নিচ্ছে যে ব্লগাররা নাস্তিক আর তাদের টার্গেট করা উচিত। ধর্ম বা রাজনীতি নিয়ে স্বতন্ত্র ধারণা থাকার কারণে কেন একজন হত্যার শিকার হবে? এটা ভাল রাজনীতির লক্ষণ নয়। আমি মনে করি দিন দিন এ দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। আর দেশের মৌলিক নীতিগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য হস্তক্ষেপ করার জরুরি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
প্রশ্ন: ব্লগারদের ওপর নিয়মতান্ত্রিক হামলার জন্য আপনি কাকে দায়ী করেন?
অনন্য আজাদ: এটা সত্যি, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করে পাকিস্তান। আর আমাদের দেশে আমরা যুদ্ধাপরাধী আর তাদের স্বাধীনতাবিরোধী মতাদর্শের বিরুদ্ধে। কাজেই, ব্লগারদের ওপর হামলা আর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলোর জন্য সমর্থনের মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। বাংলাদেশের একটি পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি সব সময়ই রয়েছে, যা তালেবান আর একই ধরনের জঙ্গি শক্তির উৎপত্তিস্থল।
প্রশ্ন: কট্টরপন্থিদের অভিযোগ, আপনি ইসলাম ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে লেখেন?
অনন্য আজাদ: এটা সত্যি নয়। এটা একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত্র। ব্লগারদের নাস্তিক আর ইসলামবিরোধী বলা হয়। দেখুন, আমাদের একমাত্র এজেন্ডা হলো, পড়াশোনা করা, লেখা এবং সমাজে মৌলবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা, যারা কিনা ৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের সময় ব্যাপক ক্ষতি করেছে। আমরা ওই শক্তিগুলোর সমালোচনা করি যারা নিজস্ব রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের জন্য ইসলামকে ব্যবহার করে। যারা ইসলামের নামে হত্যা করে আমরা তাদের নিন্দা জানাই। এমন লেখাগুলোতে তাদের মুখোশ খুলে দেয়, ফলে আমরা স্বাভাবিক টার্গেটে পরিণত হই। বাংলাদেশ প্রধানত একটি মুসলিম দেশ। আর মৌলবাদীরা আমাদের নাস্তিক বা ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতি উসকে দেয়ার চেষ্টা করে। এভাবে তারা ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের হত্যার যথার্থতা নিরূপণ করছে। বাংলাদেশী সমাজ নিজেদের প্রথমে বাঙালি ও পরে মুসলিম হিসেবে চিহ্নিত করে। আর বাংলাদেশী এ সমাজে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দেয়ার একটি গভীরে প্রোথিত ষড়যন্ত্র রয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার পরিবার কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে?
অনন্য আজাদ: তারা অনেক বেশি সহযোগিতামূলক। অস্পষ্ট, গোপন এসব শক্তির বিরুদ্ধে আমার সংগ্রামে আমার পরিবার আমার পাশে আছে। তারা ভীত, কিন্তু যে আদর্শের জন্য আমাদের অবস্থান তাতে তাদের বিশ্বাস রয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার পিতা, হুমায়ুন আজাদ মৌলবাদী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার জীবন হারিয়েছিলেন?
অনন্য আজাদ: তিনি দেশের জন্য বিরাট এক অবদান রেখেছেন। নিজের জীবন দিয়ে তিনি বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা আর যৌক্তিকতার শিখা প্রজ্বলিত রেখেছেন। তিনি শুধু আমার জন্যই অনুপ্রেরণা নন, বরং তিনি তাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা যারা বাংলাদেশকে প্রগতিশীল একটি সমাজ হিসেবে দেখতে চায়।
প্রশ্ন: সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কী আপনি সমর্থন পান?
অনন্য আজাদ: নতুন প্রজন্ম ধর্মকে সম্মান করে। কিন্তু তারা ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত। তারা জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করে না, যারা ধর্মের নামে সব কিছু করতে পারে। নতুন প্রজন্ম ধর্মনিরপেক্ষতা পছন্দ করে। কিন্তু তারা উগ্রপন্থি শক্তিদের দ্বারা নাস্তিক আখ্যায়িত হতে চান না, যা নিশ্চিত এক মৃত্যুকে নিমন্ত্রণ দেয়। মানুষ ভীত।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের জন্য একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কেন?
অনন্য আজাদ: পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের পৃথক হওয়ার পুরো ভিত্তিই ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা পাকিস্তানকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম কারণ এটা ইসলামপন্থি দেশ ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশের গঠনও আজ পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের দেশ সত্যিকার অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ নয়। ইসলাম এখন আমাদের রাষ্ট্রধর্ম। এটা ভাল নয়। আমাদের জীবনধারা বেছে নেয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত। স্বার্থের কারণে ধর্ম ব্যবহৃত হলে তা নিয়ে সমালোচনা করার স্বাধীনতা থাকা উচিত।
প্রশ্ন: এখন আপনার পরিকল্পনা কী?
অনন্য আজাদ: এটা আমি এখন আপনাকে বলতে পারবো না। আমি যদি আমার পরিকল্পনা প্রকশ করি, তাহলে সেটা আমার জন্য সমস্যার সৃষ্টি করবে। কিন্তু যেটা নিশ্চিত তা হলো আমি লেখা বন্ধ করতে পারবো না। আমি আমার পরবর্তী বই প্রকাশ করবো। আমি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং যুক্তিবাদী চিন্তাধারার একজন শক্ত সমর্থক। আর আমি এসব ইস্যুতে লেখা অব্যাহত রাখবো।
No comments