সুনামগঞ্জে বিএনপির রাজনীতি: মামলায় কাবু নেতারা, আন্দোলনে ফল না আসায় হতাশ কর্মীরা by খলিল রহমান
পুলিশের দেওয়া মামলায় কাবু হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জ বিএনপি। স্থবির হয়ে পড়েছে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম। স্থানীয় নেতাদের দাবি, গ্রেপ্তার এড়াতে নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগ আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া টানা আন্দোলনে ফল না আসায় দলের অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ফলে এ স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সাতজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা সবাই দলে স্থবিরতার কথা স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে এ-ও বলেছেন, টানা কয়েক মাসের আন্দোলনেও কোনো ফল না আসায় অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, ‘সহ্যের তো একটা সীমা আছে। পাঁচ মাস ধরে বাড়িঘর, পরিবার ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে।ছেলে-সন্তানের মুখ দেখতে পারিনি। এখন দেখি আন্দোলনের ফল জিরো।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সদস্য ও সাবেক সাংসদ কলিম উদ্দিন আহমদ বলেন, তিনিসহ দলের প্রায় এক হাজার নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মামলার আসামি করা হয়েছে। তিন শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার আছেন। অনেকে এখনো বাড়িঘরছাড়া। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে সাংগঠনিক কাজেও।
দলীয় সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ২০-দলীয় জোটের আন্দোলন কর্মসূচি শুরুর পর সুনামগঞ্জে বিএনপি বেশ সরব ছিল। তখন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির কয়েক দফা সংঘর্ষও বেধেছিল। এরপর বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা হয়। তাতে প্রায় এক হাজারজনকে আসামি করা হয়। আসামিদের বড় অংশই অজ্ঞাতনামা। এখন বিএনপির যাঁকেই ধরা হয়, এই ‘অজ্ঞাতনামা’ কোটায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তবে দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা বলেন, মামলা ও পুলিশের হয়রানির পাশাপাশি দলীয় নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও এই জেলায় বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করেছে। এখানে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিতে দুটি ধারা চলে আসছে। একটি ধারার নেতৃত্বে আছেন বর্তমান জেলা কমিটির আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরী। অপর ধারার নেতৃত্বে আছেন জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি ফজলুল হক আছপিয়া। আছপিয়ার সমর্থকেরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালন করেছেন। আর বিএনপির ব্যানারে কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে নাছির উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে।
দলের বিভেদ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাছির উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাউকে অসম্মান করছি না। আমাকে খালেদা জিয়া এখানে পাঠিয়েছেন। কেউ না মানলে সেটা তার ব্যাপার, আমার কিছু যায় আসে না। আমি দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা বিএনপির দুই পক্ষ শহরে একই দিন পৃথকভাবে জেলা সম্মেলন করে। এক পক্ষ ফজলুল হক আছপিয়াকে সভাপতি ও রফিক চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করে। আরেক পক্ষ নাছির উদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও দেওয়ান জয়নুল জাকেরীনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করে। পরে দলের কেন্দ্র থেকে ফজলুল হক আছপিয়াকে সভাপতি ও রফিক চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। অপর পক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে ২০১১ সালের এপ্রিলে দলের কেন্দ্র থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে ফজুলল হক আছপিয়াকে সভাপতি ও কলিম উদ্দিন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর নতুন একটি পক্ষ দাঁড়ায়, যারা এই কমিটি বাতিলের দাবি জানায়। গত বছর কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। তাতেও কাজ হয়নি। গত ১৬ এপ্রিল বিএনপির কেন্দ্র থেকে জেলার কমিটি ভেঙে দিয়ে নাছির উদ্দিন চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও সাবেক সাংসদ কলিম উদ্দিন আহমদকে প্রথম সদস্য করে ৮৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।
দলীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, এখানে জেলা বিএনপির কোনো কার্যালয় নেই। নাছির উদ্দিনের বাসাই জেলা বিএনপির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি শহরের ওয়াপদা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। নেতা-কর্মীদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় পাঁচ মাস আগে তাঁকে ওই বাসা থেকে বের করে দেয় পুলিশ। এরপর তিনি শহরের দক্ষিণ প্রান্তের জলিলপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। এখন এটাই বিএনপির অঘোষিত কার্যালয়। এখান থেকেও পুলিশ চলে যেতে বললে কী করবেন—জানতে চাইলে নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সুনামগঞ্জ শহরে যদি বাসা না পাই, দরকার হলে ছাতা মাথায় দিয়ে থাকব।’
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সাতজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা সবাই দলে স্থবিরতার কথা স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে এ-ও বলেছেন, টানা কয়েক মাসের আন্দোলনেও কোনো ফল না আসায় অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, ‘সহ্যের তো একটা সীমা আছে। পাঁচ মাস ধরে বাড়িঘর, পরিবার ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে।ছেলে-সন্তানের মুখ দেখতে পারিনি। এখন দেখি আন্দোলনের ফল জিরো।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সদস্য ও সাবেক সাংসদ কলিম উদ্দিন আহমদ বলেন, তিনিসহ দলের প্রায় এক হাজার নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মামলার আসামি করা হয়েছে। তিন শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার আছেন। অনেকে এখনো বাড়িঘরছাড়া। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে সাংগঠনিক কাজেও।
দলীয় সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ২০-দলীয় জোটের আন্দোলন কর্মসূচি শুরুর পর সুনামগঞ্জে বিএনপি বেশ সরব ছিল। তখন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির কয়েক দফা সংঘর্ষও বেধেছিল। এরপর বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা হয়। তাতে প্রায় এক হাজারজনকে আসামি করা হয়। আসামিদের বড় অংশই অজ্ঞাতনামা। এখন বিএনপির যাঁকেই ধরা হয়, এই ‘অজ্ঞাতনামা’ কোটায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তবে দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা বলেন, মামলা ও পুলিশের হয়রানির পাশাপাশি দলীয় নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও এই জেলায় বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করেছে। এখানে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিতে দুটি ধারা চলে আসছে। একটি ধারার নেতৃত্বে আছেন বর্তমান জেলা কমিটির আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরী। অপর ধারার নেতৃত্বে আছেন জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি ফজলুল হক আছপিয়া। আছপিয়ার সমর্থকেরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালন করেছেন। আর বিএনপির ব্যানারে কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে নাছির উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে।
দলের বিভেদ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাছির উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাউকে অসম্মান করছি না। আমাকে খালেদা জিয়া এখানে পাঠিয়েছেন। কেউ না মানলে সেটা তার ব্যাপার, আমার কিছু যায় আসে না। আমি দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা বিএনপির দুই পক্ষ শহরে একই দিন পৃথকভাবে জেলা সম্মেলন করে। এক পক্ষ ফজলুল হক আছপিয়াকে সভাপতি ও রফিক চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করে। আরেক পক্ষ নাছির উদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও দেওয়ান জয়নুল জাকেরীনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করে। পরে দলের কেন্দ্র থেকে ফজলুল হক আছপিয়াকে সভাপতি ও রফিক চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। অপর পক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে ২০১১ সালের এপ্রিলে দলের কেন্দ্র থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে ফজুলল হক আছপিয়াকে সভাপতি ও কলিম উদ্দিন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর নতুন একটি পক্ষ দাঁড়ায়, যারা এই কমিটি বাতিলের দাবি জানায়। গত বছর কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। তাতেও কাজ হয়নি। গত ১৬ এপ্রিল বিএনপির কেন্দ্র থেকে জেলার কমিটি ভেঙে দিয়ে নাছির উদ্দিন চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও সাবেক সাংসদ কলিম উদ্দিন আহমদকে প্রথম সদস্য করে ৮৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।
দলীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, এখানে জেলা বিএনপির কোনো কার্যালয় নেই। নাছির উদ্দিনের বাসাই জেলা বিএনপির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি শহরের ওয়াপদা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। নেতা-কর্মীদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় পাঁচ মাস আগে তাঁকে ওই বাসা থেকে বের করে দেয় পুলিশ। এরপর তিনি শহরের দক্ষিণ প্রান্তের জলিলপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। এখন এটাই বিএনপির অঘোষিত কার্যালয়। এখান থেকেও পুলিশ চলে যেতে বললে কী করবেন—জানতে চাইলে নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সুনামগঞ্জ শহরে যদি বাসা না পাই, দরকার হলে ছাতা মাথায় দিয়ে থাকব।’
No comments