পুরান ঢাকায় ‘সেহরি পার্টি’ by মাসুম আলী
ইদানীং পুরান ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোতে শেষ রাতে অনেকেই সেহ্রি খেতে আসছেন নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে। ছবিটি মঙ্গলবার শেষ রাতে নর্থসাউথ রোডের একটি রেস্তোরাঁ থেকে তোলা l আবদুস সালাম |
রেস্তোরাঁয় ঢুকে দ্বিধায় পড়ে যেতে
পারেন যে কেউ। ইফতার পার্টি না কি সেহরি! রেস্তোরাঁর দেয়ালে টাঙানো ঘড়িতে
তখন রাত আড়াইটা। অথচ সন্ধ্যায় ইফতারের সময়ের যেমন জমজমাট অবস্থা থাকে,
তেমনই দেখা গেল পুরান ঢাকার ঠাটারিবাজারের হোটেল স্টারে। গত বৃহস্পতিবার
শেষ রাতে নানাবয়সী মানুষের উপস্থিতিতে রীতিমতো গমগম করছিল সুপরিসর
রেস্তোরাঁটি। পুরুষের পাশাপাশি নারীর উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। সমাগতদের
বেশির ভাগই বয়সে তরুণ।
পবিত্র রমজান মাসে আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের ডেকে একসঙ্গে ইফতার করার রীতিটা আবহমানকালের। হাল জামানায় নাম হয়েছে ‘ইফতার পার্টি’। সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে নতুন এক রেওয়াজ। গভীর রাতে পুরান ঢাকার অভিজাত রেস্তোরাঁয় দল বেঁধে সেহরি খাওয়া। যাকে বলা হচ্ছে ‘সেহরি পার্টি’। কয়েক বছর ধরে ঢাকার সচ্ছল শ্রেণির একটি অংশের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মধ্যরাতের এই সেহরি পার্টি।
শুধু ধর্মীয় কারণেই এই সেহরি নয়, নগরজীবনের ব্যস্ততা আর যানজটে হাঁপিয়ে ওঠা ঢাকায় একসঙ্গে সময় কাটাতে মধ্যরাতকেই আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছেন এই তরুণেরা। পাশাপাশি এটি হয়ে উঠেছে প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে পুরান ঢাকার মুখরোচক খাবারের স্বাদ নিতে নিতে আড্ডায় মেতে ওঠার আরেক উপলক্ষ।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের সেহরির সময়ে এই প্রতিবেদক সরেজমিনে ঘুরেছেন পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। বৃহস্পতিবার রাত তিনটায় ঠাটারিবাজারের হোটেল স্টারে যাওয়া লোকজনের ব্যক্তিগত গাড়ির সারি গিয়ে ঠেকেছে নবাবপুরে মূল সড়কে। বটতলার কাছাকাছি অবস্থিত এ হোটেলটিতে লোক ঢুকছেন দলে দলে। ভোজনরসিকদের আলাপচারিতায় গমগম করছে ভেতরটা।
ঠিক এমন চিত্রই দেখা গেল নর্থ সাউথ রোড ও রায় সাহেব বাজার এলাকার আরও কয়েকটি রেস্তোরাঁয়। মধ্য ও শেষ রাতের এই উৎসবমুখর পরিবেশ হয়তো শুধু পুরান ঢাকাতেই সম্ভব!
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক, বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাংবাদিক এমনকি কয়েকজন বিদেশিরও দেখা মিলল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান হোসনে আরা জলি পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছিলেন স্টার হোটেলে। তিনি বলেন, ‘আমার কর্মক্ষেত্র পুরান ঢাকায় হলেও থাকি ইস্কাটনে। দিনের বেলায় ব্যস্ত থাকি। এ কারণে এখানকার বিখ্যাত রেস্তোরাঁগুলোতে আসা হয় না। এখন রাস্তাঘাট খালি, পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে এসেছি সেহরি খেতে।’ পাশেই বসা ছেলে ইবন মজিদ জানান, গত বছর এসেছিলেন মা-বাবার ইচ্ছায়। কিন্তু এবার তিনি নিজেই মা-বাবাকে নিয়ে এসেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করা নাফিসা সারোয়ার বলেন, ‘বেইলি রোডসহ বিভিন্ন জায়গায় ইফতার করেছি। কিন্তু রাতে সেহরি করার কথা শুধু শুনেছি। বাস্তবে এ অভিজ্ঞতা নিতেই মধ্যরাতেই পরিবারের সঙ্গে এলাম। ভিড়, উৎসবমুখর পরিবেশ, বিশেষ করে যানজটমুক্ত রাতের ঢাকা শহর—সবই মুগ্ধ করার মতো।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সুজন মাহমুদ বলেন ‘আমি এমনিতে ভোজনরসিক। আর রসনার জন্য পুরান ঢাকার রেস্তোরাঁর তুলনা নেই। তাই বন্ধুরা যখন বলল একসঙ্গে সেহরি খাবে, আমি এই রেস্তোরাঁর প্রস্তাব দিলাম। সবাই চলে এলাম।’
হোটেল স্টার ছাড়াও হাটখোলার হোটেল সুপার, নর্থসাউথ রোডের হোটেল আল রাজ্জাকেও সেহরি করতে আসা লোকজনের ভিড় দেখা গেল। আল রাজ্জাকের সামনেই কথা হলো উত্তরার লতিফুল ইসলামের সঙ্গে। এ বছরই প্রথম এলেন। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে বন্ধুরা সেহরির ছবি আপলোড করে। তা দেখে নিজেরও সাধ জাগল। তাই পথে কয়েকজন বন্ধুকে উঠিয়ে নিয়ে এখানে চলে এলাম। ভালোই লাগছে।’
ঠিক কবে থেকে এমন সেহরি পার্টি আয়োজনের শুরু, সে তথ্য কেউ দিতে পারলেন না। হোটেল সুপারের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সুমন প্রথম আলোকে জানান, অতীতেও তাঁরা সেহরির সময় হোটেল খোলা রেখেছেন। পবিত্র রমাজানে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা রাত জেগে কাজ করেন। মূলত এই এলাকার ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও আবাসিক হোটেলের গ্রাহকদের জন্যই তাঁরা সেহরির আয়োজন করতেন। বছর তিনেক ধরে পরিবার-পরিজন, বন্ধুদের নিয়ে অনেকে সেহরি করতে আসা শুরু করেন। মূলত তখন থেকেই রীতিমতো জমজমাট এই সেহরি পার্টির প্রচলন। এখন তো সারা ঢাকা থেকেই লোকজন আসেন।
লোকজনের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় সেহরির মেন্যুতেও এখন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সব খাবারের রাখা হচ্ছে। সুমন আরও জানান, সেহরি জন্য সাদা ভাত, কাচ্চি, মোরগ পোলাও, মুরগি মাসাল্লাম, ঝাল ফ্রাই, খাসির গ্লাসি থাকে। মাছের মধ্যে বিভিন্ন রকম ছোট মাছ, রুই, সরষে ইলিশ, রুপচাঁদা, পাবদা প্রভৃতি। এ ছাড়া থাকে নানা পদের ভর্তা ও সবজির তরকারি। আর যাঁরা দুধ-দই-চিড়া-কলা খেতে চান— তাঁদের জন্যও ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রতিবছরই পুরান ঢাকায় এই শেষ রাতের সেহরি পার্টিতে লোকসমাগম বাড়ছে। সেই সঙ্গে এখানকার সব হোটেলেও সেহরির জন্যও যোগ হচ্ছে উপাদেয় সব খাদ্যসামগ্রী। এখন আল রাজ্জাক, সুপার স্টার ছাড়াও রায় সাহেব বাজারের ক্যাফে ইউসুফ, কালামস-এর মতো নামকরা সব রেস্তোরাঁ অনেক রাত অবধি খোলা থাকছে যেখানে ভোজনবিলাসীদের ভিড়ও দিন দিন বাড়ছে।
পবিত্র রমজান মাসে আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের ডেকে একসঙ্গে ইফতার করার রীতিটা আবহমানকালের। হাল জামানায় নাম হয়েছে ‘ইফতার পার্টি’। সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে নতুন এক রেওয়াজ। গভীর রাতে পুরান ঢাকার অভিজাত রেস্তোরাঁয় দল বেঁধে সেহরি খাওয়া। যাকে বলা হচ্ছে ‘সেহরি পার্টি’। কয়েক বছর ধরে ঢাকার সচ্ছল শ্রেণির একটি অংশের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মধ্যরাতের এই সেহরি পার্টি।
শুধু ধর্মীয় কারণেই এই সেহরি নয়, নগরজীবনের ব্যস্ততা আর যানজটে হাঁপিয়ে ওঠা ঢাকায় একসঙ্গে সময় কাটাতে মধ্যরাতকেই আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছেন এই তরুণেরা। পাশাপাশি এটি হয়ে উঠেছে প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে পুরান ঢাকার মুখরোচক খাবারের স্বাদ নিতে নিতে আড্ডায় মেতে ওঠার আরেক উপলক্ষ।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের সেহরির সময়ে এই প্রতিবেদক সরেজমিনে ঘুরেছেন পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। বৃহস্পতিবার রাত তিনটায় ঠাটারিবাজারের হোটেল স্টারে যাওয়া লোকজনের ব্যক্তিগত গাড়ির সারি গিয়ে ঠেকেছে নবাবপুরে মূল সড়কে। বটতলার কাছাকাছি অবস্থিত এ হোটেলটিতে লোক ঢুকছেন দলে দলে। ভোজনরসিকদের আলাপচারিতায় গমগম করছে ভেতরটা।
ঠিক এমন চিত্রই দেখা গেল নর্থ সাউথ রোড ও রায় সাহেব বাজার এলাকার আরও কয়েকটি রেস্তোরাঁয়। মধ্য ও শেষ রাতের এই উৎসবমুখর পরিবেশ হয়তো শুধু পুরান ঢাকাতেই সম্ভব!
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক, বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাংবাদিক এমনকি কয়েকজন বিদেশিরও দেখা মিলল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান হোসনে আরা জলি পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছিলেন স্টার হোটেলে। তিনি বলেন, ‘আমার কর্মক্ষেত্র পুরান ঢাকায় হলেও থাকি ইস্কাটনে। দিনের বেলায় ব্যস্ত থাকি। এ কারণে এখানকার বিখ্যাত রেস্তোরাঁগুলোতে আসা হয় না। এখন রাস্তাঘাট খালি, পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে এসেছি সেহরি খেতে।’ পাশেই বসা ছেলে ইবন মজিদ জানান, গত বছর এসেছিলেন মা-বাবার ইচ্ছায়। কিন্তু এবার তিনি নিজেই মা-বাবাকে নিয়ে এসেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করা নাফিসা সারোয়ার বলেন, ‘বেইলি রোডসহ বিভিন্ন জায়গায় ইফতার করেছি। কিন্তু রাতে সেহরি করার কথা শুধু শুনেছি। বাস্তবে এ অভিজ্ঞতা নিতেই মধ্যরাতেই পরিবারের সঙ্গে এলাম। ভিড়, উৎসবমুখর পরিবেশ, বিশেষ করে যানজটমুক্ত রাতের ঢাকা শহর—সবই মুগ্ধ করার মতো।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সুজন মাহমুদ বলেন ‘আমি এমনিতে ভোজনরসিক। আর রসনার জন্য পুরান ঢাকার রেস্তোরাঁর তুলনা নেই। তাই বন্ধুরা যখন বলল একসঙ্গে সেহরি খাবে, আমি এই রেস্তোরাঁর প্রস্তাব দিলাম। সবাই চলে এলাম।’
হোটেল স্টার ছাড়াও হাটখোলার হোটেল সুপার, নর্থসাউথ রোডের হোটেল আল রাজ্জাকেও সেহরি করতে আসা লোকজনের ভিড় দেখা গেল। আল রাজ্জাকের সামনেই কথা হলো উত্তরার লতিফুল ইসলামের সঙ্গে। এ বছরই প্রথম এলেন। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে বন্ধুরা সেহরির ছবি আপলোড করে। তা দেখে নিজেরও সাধ জাগল। তাই পথে কয়েকজন বন্ধুকে উঠিয়ে নিয়ে এখানে চলে এলাম। ভালোই লাগছে।’
ঠিক কবে থেকে এমন সেহরি পার্টি আয়োজনের শুরু, সে তথ্য কেউ দিতে পারলেন না। হোটেল সুপারের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সুমন প্রথম আলোকে জানান, অতীতেও তাঁরা সেহরির সময় হোটেল খোলা রেখেছেন। পবিত্র রমাজানে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা রাত জেগে কাজ করেন। মূলত এই এলাকার ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও আবাসিক হোটেলের গ্রাহকদের জন্যই তাঁরা সেহরির আয়োজন করতেন। বছর তিনেক ধরে পরিবার-পরিজন, বন্ধুদের নিয়ে অনেকে সেহরি করতে আসা শুরু করেন। মূলত তখন থেকেই রীতিমতো জমজমাট এই সেহরি পার্টির প্রচলন। এখন তো সারা ঢাকা থেকেই লোকজন আসেন।
লোকজনের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় সেহরির মেন্যুতেও এখন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সব খাবারের রাখা হচ্ছে। সুমন আরও জানান, সেহরি জন্য সাদা ভাত, কাচ্চি, মোরগ পোলাও, মুরগি মাসাল্লাম, ঝাল ফ্রাই, খাসির গ্লাসি থাকে। মাছের মধ্যে বিভিন্ন রকম ছোট মাছ, রুই, সরষে ইলিশ, রুপচাঁদা, পাবদা প্রভৃতি। এ ছাড়া থাকে নানা পদের ভর্তা ও সবজির তরকারি। আর যাঁরা দুধ-দই-চিড়া-কলা খেতে চান— তাঁদের জন্যও ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রতিবছরই পুরান ঢাকায় এই শেষ রাতের সেহরি পার্টিতে লোকসমাগম বাড়ছে। সেই সঙ্গে এখানকার সব হোটেলেও সেহরির জন্যও যোগ হচ্ছে উপাদেয় সব খাদ্যসামগ্রী। এখন আল রাজ্জাক, সুপার স্টার ছাড়াও রায় সাহেব বাজারের ক্যাফে ইউসুফ, কালামস-এর মতো নামকরা সব রেস্তোরাঁ অনেক রাত অবধি খোলা থাকছে যেখানে ভোজনবিলাসীদের ভিড়ও দিন দিন বাড়ছে।
No comments