‘ছিনতাই পছন্দ করি জেলে ভয় করি না’ by ওয়েছ খছরু
সিলেটে মার্কেট থেকে আটক মহিলা ছিনতাইকারী মলি আক্তার ১৮ |
‘কাজ
করব কিভাবে। ছেলেরা লোভ করে ফেলে। এ জন্য কাজ করি না। ছিনতাই করতে পছন্দ
করি। জেলে ভয় করি না।’-পুলিশের কাছে সিলেটে গ্রেপ্তার হওয়া মহিলা
ছিনতাইকারী মলি মানবজমিনের কাছে এ কথাগুলো বলে। প্রশ্ন করা হয়, তোমরা কাজ
করো না কেন? জবাবে ১৮ বছর বয়সী মলি আক্তার সাংবাদিকদের এসব কথা বলে জানায়,
‘জেলে যেতে ভয় লাগে না। এজন্য ছিনতাই করি।’ সিলেটের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক
শুকরিয়া মার্কেট থেকে বন্দরবাজার ফাঁড়ির মহিলা পুলিশ দল মলিকে গ্রেপ্তার
করে। এ সময় পুলিশ মলি ছাড়াও তার দুই সহযোগী সুমি বেগম ও ফাতেমা আক্তারকে
গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটের
বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। আর সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা হয় মলির। রাত ১০টা।
সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের শুকরিয়া মার্কেট। সবেমাত্র শেষ হয়েছে বায়তুল
আমান মসজিদের তারাবিহ’র নামাজ। ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত মার্কেট প্রাঙ্গণ।
মার্কেটের প্রতিটি তলায় তলায় গিজগিজ করছে ক্রেতারা। এমন সময় মার্কেটে আসেন
নগরীর মিরাবাজার ৩২ নম্বর বাসার আবদুল মান্নানের মেয়ে ইতি আক্তার। সঙ্গে
তার পরিবারের সদস্যরা। শুকরিয়া মার্কেটের বিভিন্ন ফ্লোরে ঘুরে ঘুরে তারা
ঈদের কেনাকাটা করছিলেন। ইতি আক্তার জানান, ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ করে তার
‘সাইটব্যাগ’-এ টান পড়ে। চেয়ে দেখেন ‘সাইটব্যাগ’ নিয়ে যাচ্ছে এক মহিলা। তিনি
চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকারে সম্বিত ফিরে উপস্থিত ক্রেতাদের। তারা ধাওয়া
করেন ছিনতাইকারী ওই মহিলাকে। প্রথমে একজন মনে করা হলেও শেষে দেখা যায় তারা
তিনজন। ৩ জনকেই আটক করে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। এরপর নিয়ে রাখা হয় একটি
দোকানে। মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছিলো মহিলা পুলিশ। তাদের
কানে যায় বিষয়টি। খবর পেয়ে তারা ছুটে এসে ওদের গ্রেপ্তার করে বন্দরবাজার
ফাঁড়িতে নিয়ে যান। বন্দরবাজার ফাঁড়িতে থাকা নারী ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য
সুমি বেগম (২৫), একই কলোনির ফাতেমা আক্তার (৪৫) ও মলি আক্তার (১৮) দক্ষিণ
সুরমার ধরাধরপুরের ফুল মিয়ার কলোনির ভাড়াটে। তারা ওই কলোনির একটি কক্ষে
ভাড়া থাকেন। তাদের মূল বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। তারা দীর্ঘ দিন ধরে
দক্ষিণ সুরমা এলাকায় বসবাস করছিলো। পুলিশ জানায়, সুমির নেতৃত্বে কয়েকজন
মহিলা ছিনতাইকারী দল রয়েছে। রমজানের শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই সব মহিলা
ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা নগরীতে নামে। এরপর বিভিন্ন মার্কেটে টার্গেট করে
তারা ছিনতাই শুরু করে। শুক্রবার রাতে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এসব
কথা জানিয়েছে মহিলা ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা। তবে, শুকরিয়া মার্কেটের
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ এলেই মার্কেটের ভেতরে মহিলা চোর চক্রের সদস্যদের
তৎপরতা বেড়ে যায়। প্রতি বছরই এরকম উৎপাত সহ্য করতে হয়। কিন্তু এবার দেখা
গেলো মহিলা ছিনতাইকারী। যারা ভিড়ের মধ্যে ব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছিলো।
এরপর স্থানীয় দোকানিরা তাদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের সঙ্গে একজন পুরুষ
ছিলো। ঘটনার পর সেও পালানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার
করে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এদিকে, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা
জানান, ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে রমজানের শুরু থেকেই নগরীর নিরাপত্তা
জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সিলেটের সবক’টি মার্কেটে পুুরুষ পুলিশের
পাশাপাশি নারী পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্রেতাবেশে মহিলা পুলিশ
রয়েছে মাঠে।
No comments