হাসিনা সরকারের কড়া সমালোচনা আনন্দবাজারের
এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর
নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগের কড়া সমালোচনা করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের
প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে
ভরাডুবির কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশে বড়
পরিবর্তন
আসতে পারে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে। এ ছাড়া
প্রতিবেদনটিতে গত সাড়ে চার বছরে হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের জনপ্রিয়তা
তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবারের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত নয়াদিল্লি প্রতিবেদকের বিশ্লেষণমূলক এ প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, 'বাংলাদেশে কি বদল, প্রশ্ন তুলে দিল ৪ শহরের ভোট'। নিচে পুরো প্রতিবেদন তুলে দেওয়া হলো-
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি সে দেশের রাজনীতিতে একটি বড় প্রশ্ন তুলে দিল। এবার কি তাহলে বাংলাদেশেও পরিবর্তন?
সাম্প্রতিক ভোটের ফলাফলের পর আওয়ামী লীগের দাবি, বিরোধীদের সাম্প্রদায়িক প্রচারের মোকাবিলা ঐক্যবদ্ধভাবে করা যায়নি বলেই এই হার। অন্যদিকে বিএনপি শিবিরের বক্তব্য, সরকারের 'অপশাসনের' বিরুদ্ধে এটি জনতার রায়।
এই চাপান-উতোরের মধ্যেই মনে করা হচ্ছে, সাড়ে চার বছর ক্ষমতায় থাকার পর হাসিনা সরকারের জনপ্রিয়তা ক্রমশ তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। দুর্নীতি থেকে অপশাসন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি থেকে মূল্যবৃদ্ধি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শুধু বিরোধীরাই যে স্বর চড়িয়েছে তা নয়, দেশের মধ্যে সার্বিক জনরোষও তৈরি হয়েছে।
রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল এই চারটি শহরেই মুখথুবড়ে পড়ার পর হাসিনা সরকারের সামনে অগ্নিপরীক্ষা, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভোটের নির্ধারিত সময় এসে যাওয়া সত্ত্বেও এ দুটি নির্বাচন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নীরব বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোটের অভিযোগ, এই অবস্থায় ঢাকা সিটি করপোরেশনে ভোট করতে ভয় পাচ্ছে আওয়ামী লীগ। কারণ রাজধানীর করপোরেশন হাতছাড়া হলে এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হারার পর আওয়ামী নেতৃত্বের বক্তব্য, 'কট্টরপন্থীদের' বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করা যায়নি। বিরোধীরা যে সাম্প্রদায়িক প্রচার করেছে, তার মোকাবিলাও ঠিকমতো করা যায়নি। তাদের আশা, যে দুর্বলতাগুলো সামনে চলে এসেছে সেগুলো সাধারণ নির্বাচনে মুছে ফেলা সম্ভব হবে। অন্যদিকে বিএনপির বক্তব্য, ওই ফল আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, দলবাজি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের রায়। তাদের বিশ্বাস, নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন হলে বিএনপি জোটই ক্ষমতায় আসবে।
সরকারের সমালোচকদের কথায় পায়ের তলা থেকে মাটি আলগা হয়ে আসছে বুঝেই মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদের আবেগকে সামনে নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন আওয়ামী নেতারা। একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসির দাবিকে কেন্দ্র করে শাহবাগের উত্তাল আন্দোলনও যে দেশের মূল সমস্যাগুলো থেকে মানুষের মনকে সরিয়ে রাখতে পারেনি, চার শহরের নির্বাচনের ফলই প্রমাণ। তিস্তা বা স্থলসীমান্ত চুক্তি রূপায়ণে ভারতের অপারগতাকেও জনরোষের জন্য দায়ী করছে সরকারের একটা মহল। এ ব্যাপারে নয়াদিল্লির সাফ কথা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির খাত কোন দিকে বইবে, তা ভারতের বিদেশনীতির ওপর নির্ভর করে না। সাউথ ব্লকের পরামর্শ, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর নামমাত্র বা বিনা সুদে যে বিপুল ঋণ ও অনুদান বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া হয়েছিল, তার সদ্ব্যবহার করা হোক। সে দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রের হাল তাহলে অনেকটাই বদলে যাবে।
কিন্তু পরিকাঠামো উন্নয়ন দূরস্থান, গোটা বাংলাদেশ জুড়ে চলছে প্রবল বিদ্যুৎ সমস্যা। বিএনপির পক্ষ থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সরাসরি হাসিনার পরিবার এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের দিকে। শুধু বিরোধীরাই নন, খোদ বিশ্বব্যাংক এই দুর্নীতি নিয়ে তাদের ওয়েবসাইটে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে ২০১১ এবং ২০১২ পর পর দুই বছর দুইবার বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে এই দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করার অনুরোধ জানানো হয়। চুক্তি বাতিল না করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হাসিনা সরকারকে অনুরোধও করা হয়। কিন্তু সরকার কিছুই করেনি।
এ অবস্থায় ভোটের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নন শেখ হাসিনা। তাঁর কথায়, ২০০১-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেভাবে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ক্ষমতা দখল করে গেড়ে বসেছিল, তার পরে আর কোনো অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসানো যায় না। আমেরিকা বা ভারতের মতো ধারাবাহিক গণতন্ত্রের দেশেও শাসকদলকে ক্ষমতায় রেখেই নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও তাই হবে। অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন হবে। সংসদে হাসিনা বলেন, 'এবার বসলে ওরা আর নামবে না।'
অন্যদিকে বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। বিএনপি তা হতে দেবে না। নির্বাচনের জন্য তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে অনড়। এ পরিস্থিতিতে দেশবাসীর একটাই প্রার্থনা, বরফ গলাতে দুই পক্ষ আলোচনায় বসুক। কিন্তু বাংলাদেশে সরকার ও বিরোধীপক্ষের আলোচনায় বসা এতটাই দুর্লভ ঘটনা, যে সহসা তা হওয়ার আশা কেউই করছে না।
কিন্তু সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়ায় হারের মধ্যেও হাতে অস্ত্র পেয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের যুক্তি, নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন ভোট যে সম্ভব, এটাই তার প্রমাণ।
গতকাল বৃহস্পতিবারের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত নয়াদিল্লি প্রতিবেদকের বিশ্লেষণমূলক এ প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, 'বাংলাদেশে কি বদল, প্রশ্ন তুলে দিল ৪ শহরের ভোট'। নিচে পুরো প্রতিবেদন তুলে দেওয়া হলো-
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি সে দেশের রাজনীতিতে একটি বড় প্রশ্ন তুলে দিল। এবার কি তাহলে বাংলাদেশেও পরিবর্তন?
সাম্প্রতিক ভোটের ফলাফলের পর আওয়ামী লীগের দাবি, বিরোধীদের সাম্প্রদায়িক প্রচারের মোকাবিলা ঐক্যবদ্ধভাবে করা যায়নি বলেই এই হার। অন্যদিকে বিএনপি শিবিরের বক্তব্য, সরকারের 'অপশাসনের' বিরুদ্ধে এটি জনতার রায়।
এই চাপান-উতোরের মধ্যেই মনে করা হচ্ছে, সাড়ে চার বছর ক্ষমতায় থাকার পর হাসিনা সরকারের জনপ্রিয়তা ক্রমশ তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। দুর্নীতি থেকে অপশাসন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি থেকে মূল্যবৃদ্ধি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শুধু বিরোধীরাই যে স্বর চড়িয়েছে তা নয়, দেশের মধ্যে সার্বিক জনরোষও তৈরি হয়েছে।
রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল এই চারটি শহরেই মুখথুবড়ে পড়ার পর হাসিনা সরকারের সামনে অগ্নিপরীক্ষা, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভোটের নির্ধারিত সময় এসে যাওয়া সত্ত্বেও এ দুটি নির্বাচন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নীরব বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোটের অভিযোগ, এই অবস্থায় ঢাকা সিটি করপোরেশনে ভোট করতে ভয় পাচ্ছে আওয়ামী লীগ। কারণ রাজধানীর করপোরেশন হাতছাড়া হলে এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হারার পর আওয়ামী নেতৃত্বের বক্তব্য, 'কট্টরপন্থীদের' বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করা যায়নি। বিরোধীরা যে সাম্প্রদায়িক প্রচার করেছে, তার মোকাবিলাও ঠিকমতো করা যায়নি। তাদের আশা, যে দুর্বলতাগুলো সামনে চলে এসেছে সেগুলো সাধারণ নির্বাচনে মুছে ফেলা সম্ভব হবে। অন্যদিকে বিএনপির বক্তব্য, ওই ফল আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, দলবাজি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের রায়। তাদের বিশ্বাস, নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন হলে বিএনপি জোটই ক্ষমতায় আসবে।
সরকারের সমালোচকদের কথায় পায়ের তলা থেকে মাটি আলগা হয়ে আসছে বুঝেই মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদের আবেগকে সামনে নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন আওয়ামী নেতারা। একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসির দাবিকে কেন্দ্র করে শাহবাগের উত্তাল আন্দোলনও যে দেশের মূল সমস্যাগুলো থেকে মানুষের মনকে সরিয়ে রাখতে পারেনি, চার শহরের নির্বাচনের ফলই প্রমাণ। তিস্তা বা স্থলসীমান্ত চুক্তি রূপায়ণে ভারতের অপারগতাকেও জনরোষের জন্য দায়ী করছে সরকারের একটা মহল। এ ব্যাপারে নয়াদিল্লির সাফ কথা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির খাত কোন দিকে বইবে, তা ভারতের বিদেশনীতির ওপর নির্ভর করে না। সাউথ ব্লকের পরামর্শ, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর নামমাত্র বা বিনা সুদে যে বিপুল ঋণ ও অনুদান বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া হয়েছিল, তার সদ্ব্যবহার করা হোক। সে দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রের হাল তাহলে অনেকটাই বদলে যাবে।
কিন্তু পরিকাঠামো উন্নয়ন দূরস্থান, গোটা বাংলাদেশ জুড়ে চলছে প্রবল বিদ্যুৎ সমস্যা। বিএনপির পক্ষ থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সরাসরি হাসিনার পরিবার এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের দিকে। শুধু বিরোধীরাই নন, খোদ বিশ্বব্যাংক এই দুর্নীতি নিয়ে তাদের ওয়েবসাইটে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে ২০১১ এবং ২০১২ পর পর দুই বছর দুইবার বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে এই দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করার অনুরোধ জানানো হয়। চুক্তি বাতিল না করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হাসিনা সরকারকে অনুরোধও করা হয়। কিন্তু সরকার কিছুই করেনি।
এ অবস্থায় ভোটের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নন শেখ হাসিনা। তাঁর কথায়, ২০০১-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেভাবে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ক্ষমতা দখল করে গেড়ে বসেছিল, তার পরে আর কোনো অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসানো যায় না। আমেরিকা বা ভারতের মতো ধারাবাহিক গণতন্ত্রের দেশেও শাসকদলকে ক্ষমতায় রেখেই নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও তাই হবে। অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন হবে। সংসদে হাসিনা বলেন, 'এবার বসলে ওরা আর নামবে না।'
অন্যদিকে বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। বিএনপি তা হতে দেবে না। নির্বাচনের জন্য তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে অনড়। এ পরিস্থিতিতে দেশবাসীর একটাই প্রার্থনা, বরফ গলাতে দুই পক্ষ আলোচনায় বসুক। কিন্তু বাংলাদেশে সরকার ও বিরোধীপক্ষের আলোচনায় বসা এতটাই দুর্লভ ঘটনা, যে সহসা তা হওয়ার আশা কেউই করছে না।
কিন্তু সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়ায় হারের মধ্যেও হাতে অস্ত্র পেয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের যুক্তি, নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন ভোট যে সম্ভব, এটাই তার প্রমাণ।
No comments