অদ্ভুত সব সড়ক
সড়কপথ, রাস্তা যা-ই বলি না কেন তা আসলে
সভ্যতার প্রতীক। আবিষ্কারের, আধুনিক সভ্যতার এক মেটাফর। সেই প্রাচীনকাল
থেকেই এভাবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। কেউ কেউ বলে থাকেন সড়ক তো আসলে জীবনেরই
নামান্তর।
পথ নেই তো পথচলাও নেই। সফর নেই। আছে স্থবিরতা,
মৃত্যু। এসব তো দর্শনের কথা। সাহিত্যের কথা। কিন্তু আমরা এখন এমন কিছু
সড়কের সঙ্গে পরিচিত হবো যাকে মৃত্যুফাঁদও বলা যেতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে
বিপজ্জনক আর অদ্ভুত কিছু সড়ক নিয়ে আজকের এই লেখা।
বলিভিয়ার রোড অব ডেথ
বলিভিয়ার আমাজন অঞ্চলের আঞ্চলিক রাজধানীর নাম হলো করোইকা। লাপাজ থেকে করোইকা পর্যন্ত যে রাস্তাটি তার নাম হলো ইউঙ্গাস। কিন্তু মানুষ রাস্তাটাকে ও-ই নামে একদমই ডাকে না। এটিকে ডেথ রোড বা মৃত্যুসড়ক বলে। কারণ দুর্ঘটনা হওয়া তো ওই রাস্তায় একেবারেই মামুলি ঘটনা।
এই রাস্তাটি প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ। ১৫,২৬০ ফুট উঁচু থেকে শুরু হয়ে সর্বনিম্ন প্রায় ৩,৯০০ ফুট পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকাবাঁকাভাবে এই রাস্তা এগিয়েছে। এর প্রতি পদে পদে রয়েছে মৃত্যুর হাতছানি। এক লেনের এই রাস্তা মাত্র দশ ফুট চওড়া, চিরুনির দাঁতের মতো তীক্ষষ্ট বাঁক। আতঙ্কের বিষয়, এই রাস্তায় কোনো রেলিং নেই এবং পাশেই গড়পড়তা প্রায় ১,৮০০ ফুটের গভীর খাদ। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে কিছুক্ষণ পর পর, ঘন মেঘ, কুয়াশা এবং ধুলা রাস্তার দৃষ্টি প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসে।
সড়কে গড়ে প্রতিসপ্তাহেই ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে এবং প্রতিবছর ২০০-৩০০ যাত্রী দুর্ঘটনায় মারা যায়। তারপরও ওই এলাকায় বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। তবে বিকল্প রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে বলিভিয়া সরকার। প্রায় ২০ বছর ধরে তৈরি করা বিকল্প রাস্তা সম্প্রতি খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে এই মৃত্যু-সড়কটার ব্যবহার অনেক কমে গেছে। তবু রাস্তাটি কিন্তু এখনও ব্যবহৃত হয়। তবে যারা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় তারা এই স্থানটিকে আদর্শ মানেন। ফলে বিশ্বজুড়ে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এটি একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রতিবছর প্রায় কয়েক হাজার ভ্রমণকারী এই পথ দেখতে আসেন।
চীনের গুয়োলিয়াং সুড়ঙ্গ সড়ক
চীনের হুনান প্রদেশে অবস্থিত তাইহাং পর্বত। এই এলাকায় রয়েছে অত্যন্ত বিপজ্জনক আরেকটি সড়ক। সড়কটি চালকের সামান্যতম কোনো ভুলকে পিছনে ফেরার সুযোগ দেয় না। রাস্তাটা লম্বায় প্রায় ১২০০ মিটার! আর সুড়ঙ্গটির উচ্চতা ৫ মিটার, পাশে ৪ মিটার। ১২ ফুট চওড়া সড়কটির ৩০টি বিপজ্জনক মোড় রয়েছে। এটি তৈরির কাহিনীও বেশ মজার। তাইহাং পর্বতের আশপাশের গ্রামের মানুষদের এই পর্বত ঘুরে যাওয়া-আসা করতে তো খুবই সমস্যা হতো। কী করা যায়? ওরা সবাই মিলে পর্বতের পেট চিরে একটা সুড়ঙ্গপথই বানিয়ে ফেলল। সুড়ঙ্গপথটি একেবারে পাহাড়ের পেটের মাঝ দিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে বেরিয়ে যায়নি। বরং কিনারা ঘেঁষে পেটের সেলাইয়ের মতো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে চলে গেছে। গ্রামের লোকেরা ৫ বছর পরিশ্রম করে বানিয়েছিলেন রাস্তাটা। আর তখনই দুর্ঘটনায় যে কত মানুষ মারা গেল!
আলাস্কার জেমস ডালটন মহাসড়ক
আলাস্কার এই রাস্তাটি যতটা না সুন্দর, তার চেয়ে ঢের বেশি ভয়ঙ্কর। এই রাস্তাটা এতটাই ভয়ঙ্কর যে, যে কোম্পানিগুলো গাড়ি ভাড়া দেয়, তারা পূর্বশর্ত দেয় যে, ওই গাড়ি নিয়ে কখনোই জেমস ডালটন মহসড়কে যাওয়া যাবে না। এই জেমস ডালটন হাইওয়ের দৈর্ঘ্য হলো ৪১৪ মাইল আর পুরো রাস্তায় কোনো পিচ নেই, পুরোটাই কাঁকর বিছানো। রাস্তাটি মূলত বানানো হয়েছে তেল খনির তেল আনা-নেওয়া করার জন্য। খনির তেলের ট্যাঙ্কারগুলো যখন যায়, তখন এমন ধুলা ওড়ায় যে, সামনের কিছুই দেখা যায় না। সঙ্গে কাঁকর-পাথরও উড়ে আসে_ গাড়ির কাচে ধুমধাম করে বাড়ি খেতে থাকে। আর এর মাঝে যদি ওপাশ থেকে আরেকটা গাড়ি আসে, তবেই হয়েছে! অবশ্য এ রাস্তায় একটা সেতু আছে যেটা খুবই সুন্দর। আলাস্কার ইউকোন নদীতে সেতু এই একটিই। নদীটার দৈর্ঘ্য ১৮৭৫ মাইল। শুধু তেল আনা-নেওয়ার সুবিধার জন্য প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে এই সেতু বানানো হয়েছে।
রাশিয়ার কাঁচা মহাসড়ক
এটি দ্য সাইবেরিয়ান রোড নামেও পরিচিত। স্থানীয় পর্যায়ে এই রোডটিকে হাইওয়ে ফ্রম হেল বলা হয়ে থাকে। এই রোডটি মূলত সাইবেরিয়ার একটি শহর যাকুতসকের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগের একটি মাত্র রাস্তা। সাইবেরিয়া থেকে ইয়াকুস্ক পর্যন্ত এই রাস্তাটি বছরের দশ মাসই বরফে ঢাকা থাকে। আর তাই পিচ ঢেলে এটিকে পাকা রাস্তা করা সম্ভব হয় না।
এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, যাকুতসক পৃথিবীর অন্যতম ঠাণ্ডা শহর। শীতকালে এখানকার গড় তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এই রাস্তাটির পাশেই রয়েছে লেনা নদী। বছরের বেশিরভাগ সময় নদীর ওপর বরফের কঠিন আস্তরণ থাকে। অনেক গাড়ি তখন ঝুঁকি নিয়ে নদীর ওপর দিয়েই যাতায়াত করে। যখন গরমের সময় আসতে থাকে তখন শুরু হয় বিপদ। পুরো পথটি ২-৩ ফুট গভীর কাদার নিচে চলে যায়। হাজার হাজার গাড়ি আটকা পড়ে। অনেক সময় গাড়ি আটকা পড়ে গেলে খাবার, পানি এবং তেল ইত্যাদি শেষ হয়ে যায়। অনেক মানুষ মারাও যায়। এখানে উদ্ধারকাজ অনেক কঠিন ব্যাপার। অনেক সময় ৫ থেকে ৭ দিন লেগে যায় এই পথটি পার হতে। এ সময়ই ঘটে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা।
চিলির রুট ৫
চিলির এই বিখ্যাত রাস্তাটি আরিকা থেকে ইকুইক পর্যন্ত চলে গেছে। এটি যেমন সুন্দর, তেমনি ভয়ঙ্কর। পাহাড়ের মাঝ দিয়ে রাস্তাটি এঁকেবেঁকে হঠাৎ হঠাৎ বাঁক ঘুরেছে। বাঁকগুলো এতটা হঠাৎ করে ঘুরেছে যে, বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি একেবারে কাছে না আসা পর্যন্ত এটি দেখতে পাওয়া অসম্ভব।
চীনের সিচুয়ান-তিব্বত মহাসড়ক
গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ মাটি ধসে পড়ে যাওয়ার মতো ভয়াবহ সড়ক এটি। সিচুয়ান রাজ্যের চেংর থেকে তিব্বত রাজ্যের রাজধানী লাসা পর্যন্ত এই রাস্তাটি প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ। আর এই লম্বা রাস্তার দু'পাশে আছে রাজ্যের যত পাহাড় আর নদী। গুনলে দেখা যাবে, পাহাড় আছে মোট ১৪টি। এগুলোর প্রত্যেকটিই চার-পাঁচ হাজার মিটার উঁচু। অদ্ভুত সুন্দর এই রাস্তাটি দিয়ে যেতে যেতে দেখা যাবে প্রায় এক ডজন নদী। এই সৌন্দর্য দেখতে গেলে অনেক সময় শিকার হতে হয় ভূমিধস আর পাথরধসের।
নরওয়ের ট্রলসটিগেন সড়ক
নরওয়ের এই রাস্তাটার নাম ট্রলসটিগেন হলেও সবাই কিন্তু রাস্তাটাকে অন্য একটি নামে চেনে। এই পাহাড়ি রাস্তা এতটাই খাড়া যে, সবাই জানে এর নাম দানবীয় সিঁড়ি। তবে এই রাস্তাটি কিন্তু পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় একটি জায়গা। অনেক পর্যটকই এই রাস্তাটি দেখতে যান। অনেক দুঃসাহসী অভিযাত্রী এই রাস্তায় গাড়ি নিয়ে ঘুরতে যান। এই রাস্তায় ১১টা খাড়া বাঁক আছে। বাঁকগুলো পেরিয়ে দেখা যায় ৩২০ মিটার উঁচু স্টিগফোসেন নামের এক জলপ্রপাত। এই খাড়া বাঁক পেরিয়ে খুব কমসংখ্যক পর্যটকই এই জলপ্রপাত দেখার সুযোগ পান।
গ্রিসের প্যাটিওপৌলো-পারদিকাকি সড়ক
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত ও নোংরা সড়ক বলা হয় এটিকে। রাস্তার মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট গর্ত। দু'ধারে কোনো রেলিং নেই। একেবারে খাড়া এবং সরু। কোনো ছোট দুর্ঘটনা হলেও পড়তে হবে হাজার ফুট নিচে। এই রাস্তাটিতে প্রতিবছরই প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে আর অসংখ্য মানুষ মারা যায়। এই রাস্তাটি আবার কোনো হাইওয়ে নয়। এই রাস্তায় গাড়ি যেমন চলে, তেমনি মানুষ হেঁটে হেঁটেও যাতায়াত করে। শুধু যে মানুষই হাঁটে তাই নয়, এই রাস্তা দিয়ে পোষা প্রাণীদের হাঁটিয়ে নিয়ে যায় রাখালেরা।
ইতালির স্টেলভিয়ো পাস রোড
ইতালির স্টেলভিয়ো পাস নামের এই রাস্তাটি অবশ্য অন্য রাস্তাগুলোর মতো তেমন ভয়ঙ্কর নয়। তবে এটি যতটা কম ভয়ঙ্কর, ততটাই আবার বেশি সুন্দর। ইতালিয়ান পর্বতমালার গা-ঘেঁষে, সুইস বর্ডারের পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে এগিয়ে গেছে রাস্তাটি। শুধু খাড়া বাঁকই আছে ৪৮টি।
পাকিস্তানের ফেয়ারি মিডোস রোড
পাকিস্তানের ফেয়ারি মিডোস রোড। পৃথিবীর নবম উঁচু পর্বত নানগায় অবস্থিত। এর উচ্চতা প্রায় ২৬,৬৬০ ফুট। এই পর্বতমালাটি এর সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। যদিও এটি বিখ্যাত একটি ভ্রমণস্থান, তবে ফেয়ারি মিডোস রোডে ভ্রমণ মোটেই আনন্দজনক কিছু নয়। প্রতি পদে পদে বিপদের হাতছানি। তবে সৌন্দর্য আর অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা এ সবের থোড়াই কেয়ার করেন। এই রাস্তাটি খুবই সরু এবং মোড়গুলো খুবই তীক্ষষ্ট। পাশের খাদগুলোর গড় গভীরতা প্রায় ২৫০০ মিটার থেকে ৩০০০ মিটার পযর্ন্ত! হ
ষ অনুসৃতি :আফসানা শাওন
বলিভিয়ার রোড অব ডেথ
বলিভিয়ার আমাজন অঞ্চলের আঞ্চলিক রাজধানীর নাম হলো করোইকা। লাপাজ থেকে করোইকা পর্যন্ত যে রাস্তাটি তার নাম হলো ইউঙ্গাস। কিন্তু মানুষ রাস্তাটাকে ও-ই নামে একদমই ডাকে না। এটিকে ডেথ রোড বা মৃত্যুসড়ক বলে। কারণ দুর্ঘটনা হওয়া তো ওই রাস্তায় একেবারেই মামুলি ঘটনা।
এই রাস্তাটি প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ। ১৫,২৬০ ফুট উঁচু থেকে শুরু হয়ে সর্বনিম্ন প্রায় ৩,৯০০ ফুট পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকাবাঁকাভাবে এই রাস্তা এগিয়েছে। এর প্রতি পদে পদে রয়েছে মৃত্যুর হাতছানি। এক লেনের এই রাস্তা মাত্র দশ ফুট চওড়া, চিরুনির দাঁতের মতো তীক্ষষ্ট বাঁক। আতঙ্কের বিষয়, এই রাস্তায় কোনো রেলিং নেই এবং পাশেই গড়পড়তা প্রায় ১,৮০০ ফুটের গভীর খাদ। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে কিছুক্ষণ পর পর, ঘন মেঘ, কুয়াশা এবং ধুলা রাস্তার দৃষ্টি প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসে।
সড়কে গড়ে প্রতিসপ্তাহেই ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে এবং প্রতিবছর ২০০-৩০০ যাত্রী দুর্ঘটনায় মারা যায়। তারপরও ওই এলাকায় বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। তবে বিকল্প রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে বলিভিয়া সরকার। প্রায় ২০ বছর ধরে তৈরি করা বিকল্প রাস্তা সম্প্রতি খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে এই মৃত্যু-সড়কটার ব্যবহার অনেক কমে গেছে। তবু রাস্তাটি কিন্তু এখনও ব্যবহৃত হয়। তবে যারা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় তারা এই স্থানটিকে আদর্শ মানেন। ফলে বিশ্বজুড়ে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এটি একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রতিবছর প্রায় কয়েক হাজার ভ্রমণকারী এই পথ দেখতে আসেন।
চীনের গুয়োলিয়াং সুড়ঙ্গ সড়ক
চীনের হুনান প্রদেশে অবস্থিত তাইহাং পর্বত। এই এলাকায় রয়েছে অত্যন্ত বিপজ্জনক আরেকটি সড়ক। সড়কটি চালকের সামান্যতম কোনো ভুলকে পিছনে ফেরার সুযোগ দেয় না। রাস্তাটা লম্বায় প্রায় ১২০০ মিটার! আর সুড়ঙ্গটির উচ্চতা ৫ মিটার, পাশে ৪ মিটার। ১২ ফুট চওড়া সড়কটির ৩০টি বিপজ্জনক মোড় রয়েছে। এটি তৈরির কাহিনীও বেশ মজার। তাইহাং পর্বতের আশপাশের গ্রামের মানুষদের এই পর্বত ঘুরে যাওয়া-আসা করতে তো খুবই সমস্যা হতো। কী করা যায়? ওরা সবাই মিলে পর্বতের পেট চিরে একটা সুড়ঙ্গপথই বানিয়ে ফেলল। সুড়ঙ্গপথটি একেবারে পাহাড়ের পেটের মাঝ দিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে বেরিয়ে যায়নি। বরং কিনারা ঘেঁষে পেটের সেলাইয়ের মতো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে চলে গেছে। গ্রামের লোকেরা ৫ বছর পরিশ্রম করে বানিয়েছিলেন রাস্তাটা। আর তখনই দুর্ঘটনায় যে কত মানুষ মারা গেল!
আলাস্কার জেমস ডালটন মহাসড়ক
আলাস্কার এই রাস্তাটি যতটা না সুন্দর, তার চেয়ে ঢের বেশি ভয়ঙ্কর। এই রাস্তাটা এতটাই ভয়ঙ্কর যে, যে কোম্পানিগুলো গাড়ি ভাড়া দেয়, তারা পূর্বশর্ত দেয় যে, ওই গাড়ি নিয়ে কখনোই জেমস ডালটন মহসড়কে যাওয়া যাবে না। এই জেমস ডালটন হাইওয়ের দৈর্ঘ্য হলো ৪১৪ মাইল আর পুরো রাস্তায় কোনো পিচ নেই, পুরোটাই কাঁকর বিছানো। রাস্তাটি মূলত বানানো হয়েছে তেল খনির তেল আনা-নেওয়া করার জন্য। খনির তেলের ট্যাঙ্কারগুলো যখন যায়, তখন এমন ধুলা ওড়ায় যে, সামনের কিছুই দেখা যায় না। সঙ্গে কাঁকর-পাথরও উড়ে আসে_ গাড়ির কাচে ধুমধাম করে বাড়ি খেতে থাকে। আর এর মাঝে যদি ওপাশ থেকে আরেকটা গাড়ি আসে, তবেই হয়েছে! অবশ্য এ রাস্তায় একটা সেতু আছে যেটা খুবই সুন্দর। আলাস্কার ইউকোন নদীতে সেতু এই একটিই। নদীটার দৈর্ঘ্য ১৮৭৫ মাইল। শুধু তেল আনা-নেওয়ার সুবিধার জন্য প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে এই সেতু বানানো হয়েছে।
রাশিয়ার কাঁচা মহাসড়ক
এটি দ্য সাইবেরিয়ান রোড নামেও পরিচিত। স্থানীয় পর্যায়ে এই রোডটিকে হাইওয়ে ফ্রম হেল বলা হয়ে থাকে। এই রোডটি মূলত সাইবেরিয়ার একটি শহর যাকুতসকের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগের একটি মাত্র রাস্তা। সাইবেরিয়া থেকে ইয়াকুস্ক পর্যন্ত এই রাস্তাটি বছরের দশ মাসই বরফে ঢাকা থাকে। আর তাই পিচ ঢেলে এটিকে পাকা রাস্তা করা সম্ভব হয় না।
এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, যাকুতসক পৃথিবীর অন্যতম ঠাণ্ডা শহর। শীতকালে এখানকার গড় তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এই রাস্তাটির পাশেই রয়েছে লেনা নদী। বছরের বেশিরভাগ সময় নদীর ওপর বরফের কঠিন আস্তরণ থাকে। অনেক গাড়ি তখন ঝুঁকি নিয়ে নদীর ওপর দিয়েই যাতায়াত করে। যখন গরমের সময় আসতে থাকে তখন শুরু হয় বিপদ। পুরো পথটি ২-৩ ফুট গভীর কাদার নিচে চলে যায়। হাজার হাজার গাড়ি আটকা পড়ে। অনেক সময় গাড়ি আটকা পড়ে গেলে খাবার, পানি এবং তেল ইত্যাদি শেষ হয়ে যায়। অনেক মানুষ মারাও যায়। এখানে উদ্ধারকাজ অনেক কঠিন ব্যাপার। অনেক সময় ৫ থেকে ৭ দিন লেগে যায় এই পথটি পার হতে। এ সময়ই ঘটে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা।
চিলির রুট ৫
চিলির এই বিখ্যাত রাস্তাটি আরিকা থেকে ইকুইক পর্যন্ত চলে গেছে। এটি যেমন সুন্দর, তেমনি ভয়ঙ্কর। পাহাড়ের মাঝ দিয়ে রাস্তাটি এঁকেবেঁকে হঠাৎ হঠাৎ বাঁক ঘুরেছে। বাঁকগুলো এতটা হঠাৎ করে ঘুরেছে যে, বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি একেবারে কাছে না আসা পর্যন্ত এটি দেখতে পাওয়া অসম্ভব।
চীনের সিচুয়ান-তিব্বত মহাসড়ক
গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ মাটি ধসে পড়ে যাওয়ার মতো ভয়াবহ সড়ক এটি। সিচুয়ান রাজ্যের চেংর থেকে তিব্বত রাজ্যের রাজধানী লাসা পর্যন্ত এই রাস্তাটি প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ। আর এই লম্বা রাস্তার দু'পাশে আছে রাজ্যের যত পাহাড় আর নদী। গুনলে দেখা যাবে, পাহাড় আছে মোট ১৪টি। এগুলোর প্রত্যেকটিই চার-পাঁচ হাজার মিটার উঁচু। অদ্ভুত সুন্দর এই রাস্তাটি দিয়ে যেতে যেতে দেখা যাবে প্রায় এক ডজন নদী। এই সৌন্দর্য দেখতে গেলে অনেক সময় শিকার হতে হয় ভূমিধস আর পাথরধসের।
নরওয়ের ট্রলসটিগেন সড়ক
নরওয়ের এই রাস্তাটার নাম ট্রলসটিগেন হলেও সবাই কিন্তু রাস্তাটাকে অন্য একটি নামে চেনে। এই পাহাড়ি রাস্তা এতটাই খাড়া যে, সবাই জানে এর নাম দানবীয় সিঁড়ি। তবে এই রাস্তাটি কিন্তু পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় একটি জায়গা। অনেক পর্যটকই এই রাস্তাটি দেখতে যান। অনেক দুঃসাহসী অভিযাত্রী এই রাস্তায় গাড়ি নিয়ে ঘুরতে যান। এই রাস্তায় ১১টা খাড়া বাঁক আছে। বাঁকগুলো পেরিয়ে দেখা যায় ৩২০ মিটার উঁচু স্টিগফোসেন নামের এক জলপ্রপাত। এই খাড়া বাঁক পেরিয়ে খুব কমসংখ্যক পর্যটকই এই জলপ্রপাত দেখার সুযোগ পান।
গ্রিসের প্যাটিওপৌলো-পারদিকাকি সড়ক
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত ও নোংরা সড়ক বলা হয় এটিকে। রাস্তার মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট গর্ত। দু'ধারে কোনো রেলিং নেই। একেবারে খাড়া এবং সরু। কোনো ছোট দুর্ঘটনা হলেও পড়তে হবে হাজার ফুট নিচে। এই রাস্তাটিতে প্রতিবছরই প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে আর অসংখ্য মানুষ মারা যায়। এই রাস্তাটি আবার কোনো হাইওয়ে নয়। এই রাস্তায় গাড়ি যেমন চলে, তেমনি মানুষ হেঁটে হেঁটেও যাতায়াত করে। শুধু যে মানুষই হাঁটে তাই নয়, এই রাস্তা দিয়ে পোষা প্রাণীদের হাঁটিয়ে নিয়ে যায় রাখালেরা।
ইতালির স্টেলভিয়ো পাস রোড
ইতালির স্টেলভিয়ো পাস নামের এই রাস্তাটি অবশ্য অন্য রাস্তাগুলোর মতো তেমন ভয়ঙ্কর নয়। তবে এটি যতটা কম ভয়ঙ্কর, ততটাই আবার বেশি সুন্দর। ইতালিয়ান পর্বতমালার গা-ঘেঁষে, সুইস বর্ডারের পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে এগিয়ে গেছে রাস্তাটি। শুধু খাড়া বাঁকই আছে ৪৮টি।
পাকিস্তানের ফেয়ারি মিডোস রোড
পাকিস্তানের ফেয়ারি মিডোস রোড। পৃথিবীর নবম উঁচু পর্বত নানগায় অবস্থিত। এর উচ্চতা প্রায় ২৬,৬৬০ ফুট। এই পর্বতমালাটি এর সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। যদিও এটি বিখ্যাত একটি ভ্রমণস্থান, তবে ফেয়ারি মিডোস রোডে ভ্রমণ মোটেই আনন্দজনক কিছু নয়। প্রতি পদে পদে বিপদের হাতছানি। তবে সৌন্দর্য আর অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা এ সবের থোড়াই কেয়ার করেন। এই রাস্তাটি খুবই সরু এবং মোড়গুলো খুবই তীক্ষষ্ট। পাশের খাদগুলোর গড় গভীরতা প্রায় ২৫০০ মিটার থেকে ৩০০০ মিটার পযর্ন্ত! হ
ষ অনুসৃতি :আফসানা শাওন
No comments