ক্ষমতাসীন হলে সাতখুন মাফ! by হায়দার আলী
শেয়ারবাজার, পদ্মা সেতু, হলমার্ক ও রেলের
অর্থ কেলেঙ্কারির মতো গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদদের
নাম শোনা গেলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানের চূড়ান্ত পর্যায়ে
গিয়ে শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির অভিযোগ থেকে তাঁরা রেহাই পেয়ে গেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক আলোচিত ঘটনায় দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধান পর্যায়ে
ক্ষমতাসীনদের অনেকের নাম থাকলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে তাঁদের নাম বাদ পড়ে
যেতে দেখা গেছে। ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন ঘটনায় দুদকের মামলায় আসামি হয়েছেন
সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুদকের তদন্ত শেষে দুর্নীতির মামলায় শেষ পর্যন্ত সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতাদের রেহাই দিয়ে আমলা-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করে মামলায় জড়ানো হচ্ছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেওয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগে দুদক যেসব মামলা করছে, এর ৭০ ভাগই সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে। গত বছর প্রায় ৪০০ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও হাতে গোনা কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধির নামে মামলা করতে দেখা গেছে দুদককে। আবার রাজনীতিবিদদের মধ্যে যাঁদের মামলায় জড়ানো হয়েছে, দেখা গেছে তাঁরা কেউই ক্ষমতাসীন দলের নেতা নন। আলোচিত কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলোয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তারা যোগসাজশে দুর্নীতি করলেও পার পেয়ে যাচ্ছেন শুধু রাজনীতিবিদরা। তবে বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে বিষয়টি একই রকম নয়। তাঁদের ব্যাপারে দুদকের অবস্থান বেশ কঠোর। গত বছরের শেষ দিকে দেখা যায়, বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা শতাধিক মামলা নিয়ে তারা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। এ মামলাগুলো বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এবং তাঁর পরিবারের সদস্যসহ দলের প্রায় ৪৫ জন কেন্দ্রীয় নেতার নামে। এসব মামলার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এবং বাকিগুলো বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দায়ের করা।
এদিকে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ থেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের রেহাই পেয়ে যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, দুদক কর্মকর্তারা অনুসন্ধান পর্যায়ে অনেক ব্যক্তিকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকেন। কিন্তু দালিলিক কিংবা সাক্ষীসাবুদ না পাওয়া গেলে মামলায় অনেকে বাদ পড়তে পারেন। তথ্য-উপাত্ত পাওয়া না গেলে তো মামলা করা যায় না। তবে দুদকের মামলায় সব ধরনের লোকই আসামি হিসেবে আছেন।
বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলা থেকে রেহাই পেয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, হুইপ নুরে আলম চৌধুরীর ভাই নিক্সন চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। এ ঘটনায় দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ড. মসিউর রহমান ও নিক্সন চৌধুরীর নাম ছিল না। তবে ওই প্রতিবেদনে মামলার সুপারিশ করা হয়েছিল সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল হাসানের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রভাবশালী সাবেক দুই মন্ত্রীকে বাদ দিয়েই দুদক মামলা করে। তিন কানাডিয়ান নাগরিকসহ সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করে সাতজনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় দুদক ওই মামলা করে।
একইভাবে আলোচিত রেলের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় অভিযোগের তীর ছিল তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধেও। বর্তমানে দপ্তরবিহীন এই মন্ত্রী ওই সময় ছিলেন রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। গত বছরের শুরুতে তাঁর এপিএস ওমর ফারুক চৌধুরী এবং পূর্বাঞ্চলীয় রেলের জিএম ইউসুফ আলী মৃধাকে নিয়ে ৭০ লাখ টাকাসহ গাড়িটি বিজিবির সদর দপ্তরের ফটকের ভেতরে ঢুকিয়ে দেন চালক। ঘটনার পর থেকে 'নিখোঁজ' চালক আজম পরে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ৭০ লাখ টাকাসহ গাড়িটি মন্ত্রীর বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ওই ঘটনার পর সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয় এবং সমালোচনার মুখে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করেন। পরে তাঁকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। দুদক ঘটনাটি অনুসন্ধান করে এবং সুরঞ্জিত সেনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে। এখানেও দুদকের মামলায় রেলের সাবেক জিএম মৃধা, কমান্ড্যান্ট এনামুল ও এপিএস ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা করে চার্জশিট দেওয়া হয়।
একইভাবে হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায়ও রাজনীতিবিদদের পার পেয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন ব্যাংকটির পরিচালক ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী জান্নাত আরা হেনরী, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাইমুম সারোয়ার কমলসহ আরো কিছু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। ওই সব ব্যক্তিকে দুদক কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কাউকেই মামলার আসামি করা হয়নি। ওই ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি এবং ডিএমডিসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। কোনো রাজনীতিবিদ তাতে নেই।
শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির ১০ জনের বেশি রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে কারসাজি করে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠলেও ওই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি দুদক। সেই অনুসন্ধান এখন থমকে আছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনে ১১ হাজার ৬৪৪টি অভিযোগ জমা পড়লেও যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয় এক হাজার ৯৬টি অভিযোগ। এর মধ্যে এক বছরে অনুসন্ধান শেষে দুদক মামলা করেছে ৫২১টি। আর ওই সব মামলায় আসামির সংখ্যা ৮৯৪। অভিযুক্তদের মধ্যে শুধু সরকারি কর্মকর্তাই রয়েছেন ৪১৯ জন। এ ছাড়া রাজনীতিবিদ চার, ব্যবসায়ী ১১০, বেসরকারি চাকরিজীবী ১২০, জনপ্রতিনিধি ২২ ও অন্যান্য ব্যক্তি ২২০ জন। একই বছরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক চার্জশিট দেয় ৬২৭টি এবং মামলার দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদন দেয় ৪০৮টি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে, অনুসন্ধান কিংবা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে একই মাপকাঠিতে বিবেচনায় এনে দুদকের অবস্থান নির্ণয় করা উচিত। কে প্রভাবশালী, কে দুর্বল তা বিবেচনায় আনা উচিত হবে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, দুর্নীতি যখন হয় তখন রাজনীতিবিদ, আমলারা মিলেমিশেই করেন। দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হলে সবার বিরুদ্ধেই করা উচিত। কোনো ক্ষমতার কাছে দুদক যেন মাথা নিচু না করে। দুদকের এ বিষয়ে আরো মনোযোগী হতে হবে; বিশেষ করে যে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে, তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পরও যেন তাঁরা বেরিয়ে যেতে না পারেন। ইতিমধ্যে দেখা গেছে, সরকারদলীয় রাজনীতিবিদরা মামলার আসামি না হলেও বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ঠিকই মামলা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুদকের তদন্ত শেষে দুর্নীতির মামলায় শেষ পর্যন্ত সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতাদের রেহাই দিয়ে আমলা-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করে মামলায় জড়ানো হচ্ছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেওয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগে দুদক যেসব মামলা করছে, এর ৭০ ভাগই সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে। গত বছর প্রায় ৪০০ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও হাতে গোনা কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধির নামে মামলা করতে দেখা গেছে দুদককে। আবার রাজনীতিবিদদের মধ্যে যাঁদের মামলায় জড়ানো হয়েছে, দেখা গেছে তাঁরা কেউই ক্ষমতাসীন দলের নেতা নন। আলোচিত কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলোয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তারা যোগসাজশে দুর্নীতি করলেও পার পেয়ে যাচ্ছেন শুধু রাজনীতিবিদরা। তবে বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে বিষয়টি একই রকম নয়। তাঁদের ব্যাপারে দুদকের অবস্থান বেশ কঠোর। গত বছরের শেষ দিকে দেখা যায়, বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা শতাধিক মামলা নিয়ে তারা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। এ মামলাগুলো বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এবং তাঁর পরিবারের সদস্যসহ দলের প্রায় ৪৫ জন কেন্দ্রীয় নেতার নামে। এসব মামলার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এবং বাকিগুলো বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দায়ের করা।
এদিকে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ থেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের রেহাই পেয়ে যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, দুদক কর্মকর্তারা অনুসন্ধান পর্যায়ে অনেক ব্যক্তিকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকেন। কিন্তু দালিলিক কিংবা সাক্ষীসাবুদ না পাওয়া গেলে মামলায় অনেকে বাদ পড়তে পারেন। তথ্য-উপাত্ত পাওয়া না গেলে তো মামলা করা যায় না। তবে দুদকের মামলায় সব ধরনের লোকই আসামি হিসেবে আছেন।
বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলা থেকে রেহাই পেয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, হুইপ নুরে আলম চৌধুরীর ভাই নিক্সন চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। এ ঘটনায় দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ড. মসিউর রহমান ও নিক্সন চৌধুরীর নাম ছিল না। তবে ওই প্রতিবেদনে মামলার সুপারিশ করা হয়েছিল সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল হাসানের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রভাবশালী সাবেক দুই মন্ত্রীকে বাদ দিয়েই দুদক মামলা করে। তিন কানাডিয়ান নাগরিকসহ সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করে সাতজনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় দুদক ওই মামলা করে।
একইভাবে আলোচিত রেলের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় অভিযোগের তীর ছিল তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধেও। বর্তমানে দপ্তরবিহীন এই মন্ত্রী ওই সময় ছিলেন রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। গত বছরের শুরুতে তাঁর এপিএস ওমর ফারুক চৌধুরী এবং পূর্বাঞ্চলীয় রেলের জিএম ইউসুফ আলী মৃধাকে নিয়ে ৭০ লাখ টাকাসহ গাড়িটি বিজিবির সদর দপ্তরের ফটকের ভেতরে ঢুকিয়ে দেন চালক। ঘটনার পর থেকে 'নিখোঁজ' চালক আজম পরে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ৭০ লাখ টাকাসহ গাড়িটি মন্ত্রীর বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ওই ঘটনার পর সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয় এবং সমালোচনার মুখে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করেন। পরে তাঁকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। দুদক ঘটনাটি অনুসন্ধান করে এবং সুরঞ্জিত সেনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে। এখানেও দুদকের মামলায় রেলের সাবেক জিএম মৃধা, কমান্ড্যান্ট এনামুল ও এপিএস ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা করে চার্জশিট দেওয়া হয়।
একইভাবে হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায়ও রাজনীতিবিদদের পার পেয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন ব্যাংকটির পরিচালক ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী জান্নাত আরা হেনরী, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাইমুম সারোয়ার কমলসহ আরো কিছু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। ওই সব ব্যক্তিকে দুদক কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কাউকেই মামলার আসামি করা হয়নি। ওই ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি এবং ডিএমডিসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। কোনো রাজনীতিবিদ তাতে নেই।
শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির ১০ জনের বেশি রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে কারসাজি করে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠলেও ওই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি দুদক। সেই অনুসন্ধান এখন থমকে আছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনে ১১ হাজার ৬৪৪টি অভিযোগ জমা পড়লেও যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয় এক হাজার ৯৬টি অভিযোগ। এর মধ্যে এক বছরে অনুসন্ধান শেষে দুদক মামলা করেছে ৫২১টি। আর ওই সব মামলায় আসামির সংখ্যা ৮৯৪। অভিযুক্তদের মধ্যে শুধু সরকারি কর্মকর্তাই রয়েছেন ৪১৯ জন। এ ছাড়া রাজনীতিবিদ চার, ব্যবসায়ী ১১০, বেসরকারি চাকরিজীবী ১২০, জনপ্রতিনিধি ২২ ও অন্যান্য ব্যক্তি ২২০ জন। একই বছরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক চার্জশিট দেয় ৬২৭টি এবং মামলার দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদন দেয় ৪০৮টি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে, অনুসন্ধান কিংবা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে একই মাপকাঠিতে বিবেচনায় এনে দুদকের অবস্থান নির্ণয় করা উচিত। কে প্রভাবশালী, কে দুর্বল তা বিবেচনায় আনা উচিত হবে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, দুর্নীতি যখন হয় তখন রাজনীতিবিদ, আমলারা মিলেমিশেই করেন। দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হলে সবার বিরুদ্ধেই করা উচিত। কোনো ক্ষমতার কাছে দুদক যেন মাথা নিচু না করে। দুদকের এ বিষয়ে আরো মনোযোগী হতে হবে; বিশেষ করে যে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে, তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পরও যেন তাঁরা বেরিয়ে যেতে না পারেন। ইতিমধ্যে দেখা গেছে, সরকারদলীয় রাজনীতিবিদরা মামলার আসামি না হলেও বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ঠিকই মামলা হচ্ছে।
No comments