মৃত্যুহীনা শাহীনার করুণ মৃত্যু by লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী ইফ্তেখার-উল-আলম
সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির সঙ্গে
মিশে আছে অন্যতম যে নামটি, সেটি শাহীনা। কালের আবর্তনে একসময় রানা প্লাজা
ধ্বংস এবং এর উদ্ধারকাজের স্মৃতি ধূসর হয়ে আসবে। আস্তে আস্তে আমরা ভুলেও
যাব সব কিছু।
কিন্তু যখনই এ ঘটনার কথা মনে হবে, তখনই
শাহীনার কথা আবেগতাড়িত করবে আমাদের। উদ্ধারপ্রক্রিয়ায় মিডিয়া ব্যবস্থাপনার
বিষয়টি সমন্বয় করতে সেনা সদরের প্রতিনিধি হিসেবে আইএসপিআর প্রতিনিধিসহ
আমাকে ঘটনাস্থলে যেতে হয়েছিল। এরই সুবাদে উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে আমার
নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ হয়। উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল ২০১৩ আনুমানিক
সকাল ৯টায় সাভারের রানা প্লাজা ভেঙে পড়ে। ওই দিন থেকে উদ্ধারকাজে
সেনাবাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, রেড
ক্রিসেন্ট, স্বেচ্ছাসেবক, স্থানীয় জনসাধারণ, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি,
বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়।
দিনটি ছিল ২৮ এপ্রিল ২০১৩। ঢাকা সেনানিবাস থেকে আইএসপিআর পরিদপ্তরের প্রতিনিধিরাসহ সকাল ৭টার আগেই সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় সেলে (রানা প্লাজার ঠিক বিপরীতে একটি ভবন) পৌঁছি। আগের দিন রাতেই নির্ধারণ করা হয় পরবর্তী দিনের (২৮ এপ্রিল) কর্মসূচি, যা ছিল নিম্নরূপ :
১. ২৮ এপ্রিল সকাল ৭টা পর্যন্ত চলমান প্রক্রিয়াতেই উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখা; অর্থাৎ ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার ব্যতিরেকে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া।
২. সকাল ৭টার পর উপস্থিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিদের জন্য ঘটনাস্থল উন্মুক্ত রাখা এবং তাঁদের পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা।
৩. সকাল ৮টায় কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে উদ্ধার অভিযান সম্পর্কিত সমন্বয় কমিটির সব প্রতিনিধির অংশগ্রহণে আয়োজিত সভায় পরবর্তী কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ ও মিডিয়ার মাধ্যমে তা সবাইকে অবহিত করা।
সভা চলাকালে আমি পাশের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলাম। সভার শেষ দিকে নবম পদাতিক ডিভিশনের একজন স্টাফ অফিসার আমাকে সভাকক্ষে নিয়ে গেলেন। সভায় উপস্থিত বেশির ভাগ সদস্যই জানালেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই উদ্ধারকাজ সংক্রান্ত একটা সংবাদ সম্মেলন করা হবে; যেখানে উদ্ধার কাজের পরবর্তী কর্মপন্থা সম্পর্কে মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে অবহিত করা হবে। আমরা সে অনুযায়ী মিডিয়া ব্রিফিংয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করি।
সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধার অভিযানের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয় এবং ওই দিনই দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্ধার অভিযান, অর্থাৎ ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বিষয়টি সবাইকে অবহিত করা হয়। প্রসঙ্গত, আগের দিন, অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল ধংসস্তূপের ভেতর শাহীনা নামের এক জীবিত নারী গার্মেন্ট কর্মীর সন্ধান পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধারের জন্য রাতভর সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়। উদ্ধারকর্মীরা সকাল ১০-১১টার মধ্যেই তাঁকে জীবিত উদ্ধারের আশ্বাস দেন। তাঁদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, শাহীনাকে উদ্ধারের চলমান কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরপরই ভারী যন্ত্রপাতির সাহায্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্ধারকাজ শুরু হবে।
উদ্ধারকর্মীরা এরপর বারবার দ্বিতীয় পর্বের উদ্ধারকাজ শুরুর সময় বাড়িয়ে নিতে থাকেন। একপর্যায়ে বিকেলের দিকে সবাইকে ধ্বংসস্তূপ এলাকা থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হলো। চারদিকে, বিশেষ করে উদ্ধারকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশার ছাপ লক্ষ করলাম। যেন প্রায় হাতের মুঠোয় এসে ধরা দেওয়া সাফল্য অর্জন করতে না পারার হতাশা। নিবেদিতপ্রাণ উদ্ধারকর্মীরা কোনোভাবেই শাহীনাকে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে রেখে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন না। তাঁরা নিশ্চিত, আর কিছুটা সময় পেলেই শাহীনাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে আমি কয়েকবার ঘটনাস্থল ও শাহীনাকে যে সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে বের করা হবে, সেখানে গিয়ে উদ্ধারকর্মীদের কাজের অগ্রগতি দেখে আসি। সন্ধ্যার পর উদ্ধারকর্মীদের পীড়াপীড়িতে আবার শাহীনাকে উদ্ধারের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়। মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা, সহানুভূতি, মমত্ববোধ যেন সব কিছুরই উর্ধ্বে। অজানা-অচেনা শাহীনাকে বাঁচানোর জন্য সবাই তাঁদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দোয়া, শুভকামনা করাসহ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে ওই উদ্ধারকাজে নিয়োজিতদের একজন, ক্যাপ্টেন হাসান আমার কাছে এসে অনুরোধ জানান, যেন তাঁদের আর ঘণ্টাখানেক সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই এগোতে থাকে শাহীনাকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা। উদ্ধারকর্মীরা পালাক্রমে শাহীনাকে উদ্ধারের আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের প্রাণান্ত প্রয়াস দেখে বারবার ভিজে উঠছিল আমাদের দুচোখ। একপর্যায়ে আমাদের জানানো হলো, শাহীনার গলা পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়েছে। ওই অবস্থায়ও তিনি বিনীতভাবে বলেছেন, 'আমি নিজে বিপদে পড়ে আপনাদের সবাইকে বিপদে ফেলেছি।'
রাত ৯টার কিছু আগে জানতে পারি, আর তিনটি রড কাটলেই ধংসস্তূপের ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন শাহীনা। পরবর্তী ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যেই ইতিহাসে সংযোজিত হবে শাহীনা উদ্ধারের বিষয়টি। এ ধরনের একটি বিরল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতে আইএসপিআর পরিদপ্তরের পরিচালকসহ যে সুড়ঙ্গ দিয়ে শাহীনাকে বের করার আয়োজন চলছে, সেখানে গিয়ে উপস্থিত হই। জানতে পারি, শাহীনা নিজেও তাঁকে উদ্ধারে বাধা হওয়া একটি রড কাটছেন। এরই মধ্যে তাঁকে টেনে বের করার প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অক্ষতভাবেই বের হয়ে আসতে চান। ওই সময় তাঁকে খাবার দেওয়া হলে তিনি জানান, সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে তিনি খাবার গ্রহণ করবেন। তাঁকে উদ্ধার প্রচেষ্টার অকুতোভয় উদ্ধারকর্মী ইজাজ আহমেদ কায়কোবাদ কিছুটা জোর করেই তাঁর পূর্ববর্তী উদ্ধারকর্মীকে বিশ্রামে পাঠিয়ে নিজেই রড কাটার কাজে লেগে যান। হঠাৎ করেই সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হয়ে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে থাকা উদ্ধারকর্মীদের "আগুন-আগুন' বলে চিৎকারধ্বনি। চোখের নিমেষেই টারজানের মতো রশি বেয়ে একে একে উদ্ধারকর্মীরা সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে থাকেন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন উদ্ধারকর্মী আহতও হন। কায়কোবাদ নিজে আগুনে ঝলসানো শরীর নিয়ে বের হয়ে এসে পাশে রাখা স্ট্রেচারে শুয়ে পড়েন। তাঁকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আকস্মিক এ ঘটনার পরপরই স্থবির হয়ে পড়ে উদ্ধারকাজ। শাহীনাকে পরাজয় মেনে নিতে হয় নিষ্ঠুর নিয়তির কাছে। মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়ে কায়কোবাদ আর শাহীনা সবাইকে কাঁদিয়ে না-ফেরার দেশে চলে গেছেন। তবে বিজয়ী করে গেছেন মানবতাকে।
লেখক : সেনা সদরে কর্মরত। সাভারে ধসে পড়া ভবনের উদ্ধারকাজ সংক্রান্ত মিডিয়া ব্যবস্থাপনার কাজে সেনা সদরের প্রতিনিধি হিসেবে সমন্বয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
দিনটি ছিল ২৮ এপ্রিল ২০১৩। ঢাকা সেনানিবাস থেকে আইএসপিআর পরিদপ্তরের প্রতিনিধিরাসহ সকাল ৭টার আগেই সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় সেলে (রানা প্লাজার ঠিক বিপরীতে একটি ভবন) পৌঁছি। আগের দিন রাতেই নির্ধারণ করা হয় পরবর্তী দিনের (২৮ এপ্রিল) কর্মসূচি, যা ছিল নিম্নরূপ :
১. ২৮ এপ্রিল সকাল ৭টা পর্যন্ত চলমান প্রক্রিয়াতেই উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখা; অর্থাৎ ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার ব্যতিরেকে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া।
২. সকাল ৭টার পর উপস্থিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিদের জন্য ঘটনাস্থল উন্মুক্ত রাখা এবং তাঁদের পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা।
৩. সকাল ৮টায় কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে উদ্ধার অভিযান সম্পর্কিত সমন্বয় কমিটির সব প্রতিনিধির অংশগ্রহণে আয়োজিত সভায় পরবর্তী কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ ও মিডিয়ার মাধ্যমে তা সবাইকে অবহিত করা।
সভা চলাকালে আমি পাশের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলাম। সভার শেষ দিকে নবম পদাতিক ডিভিশনের একজন স্টাফ অফিসার আমাকে সভাকক্ষে নিয়ে গেলেন। সভায় উপস্থিত বেশির ভাগ সদস্যই জানালেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই উদ্ধারকাজ সংক্রান্ত একটা সংবাদ সম্মেলন করা হবে; যেখানে উদ্ধার কাজের পরবর্তী কর্মপন্থা সম্পর্কে মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে অবহিত করা হবে। আমরা সে অনুযায়ী মিডিয়া ব্রিফিংয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করি।
সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধার অভিযানের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয় এবং ওই দিনই দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্ধার অভিযান, অর্থাৎ ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বিষয়টি সবাইকে অবহিত করা হয়। প্রসঙ্গত, আগের দিন, অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল ধংসস্তূপের ভেতর শাহীনা নামের এক জীবিত নারী গার্মেন্ট কর্মীর সন্ধান পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধারের জন্য রাতভর সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়। উদ্ধারকর্মীরা সকাল ১০-১১টার মধ্যেই তাঁকে জীবিত উদ্ধারের আশ্বাস দেন। তাঁদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, শাহীনাকে উদ্ধারের চলমান কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরপরই ভারী যন্ত্রপাতির সাহায্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্ধারকাজ শুরু হবে।
উদ্ধারকর্মীরা এরপর বারবার দ্বিতীয় পর্বের উদ্ধারকাজ শুরুর সময় বাড়িয়ে নিতে থাকেন। একপর্যায়ে বিকেলের দিকে সবাইকে ধ্বংসস্তূপ এলাকা থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হলো। চারদিকে, বিশেষ করে উদ্ধারকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশার ছাপ লক্ষ করলাম। যেন প্রায় হাতের মুঠোয় এসে ধরা দেওয়া সাফল্য অর্জন করতে না পারার হতাশা। নিবেদিতপ্রাণ উদ্ধারকর্মীরা কোনোভাবেই শাহীনাকে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে রেখে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন না। তাঁরা নিশ্চিত, আর কিছুটা সময় পেলেই শাহীনাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে আমি কয়েকবার ঘটনাস্থল ও শাহীনাকে যে সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে বের করা হবে, সেখানে গিয়ে উদ্ধারকর্মীদের কাজের অগ্রগতি দেখে আসি। সন্ধ্যার পর উদ্ধারকর্মীদের পীড়াপীড়িতে আবার শাহীনাকে উদ্ধারের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়। মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা, সহানুভূতি, মমত্ববোধ যেন সব কিছুরই উর্ধ্বে। অজানা-অচেনা শাহীনাকে বাঁচানোর জন্য সবাই তাঁদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দোয়া, শুভকামনা করাসহ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে ওই উদ্ধারকাজে নিয়োজিতদের একজন, ক্যাপ্টেন হাসান আমার কাছে এসে অনুরোধ জানান, যেন তাঁদের আর ঘণ্টাখানেক সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই এগোতে থাকে শাহীনাকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা। উদ্ধারকর্মীরা পালাক্রমে শাহীনাকে উদ্ধারের আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের প্রাণান্ত প্রয়াস দেখে বারবার ভিজে উঠছিল আমাদের দুচোখ। একপর্যায়ে আমাদের জানানো হলো, শাহীনার গলা পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়েছে। ওই অবস্থায়ও তিনি বিনীতভাবে বলেছেন, 'আমি নিজে বিপদে পড়ে আপনাদের সবাইকে বিপদে ফেলেছি।'
রাত ৯টার কিছু আগে জানতে পারি, আর তিনটি রড কাটলেই ধংসস্তূপের ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন শাহীনা। পরবর্তী ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যেই ইতিহাসে সংযোজিত হবে শাহীনা উদ্ধারের বিষয়টি। এ ধরনের একটি বিরল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতে আইএসপিআর পরিদপ্তরের পরিচালকসহ যে সুড়ঙ্গ দিয়ে শাহীনাকে বের করার আয়োজন চলছে, সেখানে গিয়ে উপস্থিত হই। জানতে পারি, শাহীনা নিজেও তাঁকে উদ্ধারে বাধা হওয়া একটি রড কাটছেন। এরই মধ্যে তাঁকে টেনে বের করার প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অক্ষতভাবেই বের হয়ে আসতে চান। ওই সময় তাঁকে খাবার দেওয়া হলে তিনি জানান, সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে তিনি খাবার গ্রহণ করবেন। তাঁকে উদ্ধার প্রচেষ্টার অকুতোভয় উদ্ধারকর্মী ইজাজ আহমেদ কায়কোবাদ কিছুটা জোর করেই তাঁর পূর্ববর্তী উদ্ধারকর্মীকে বিশ্রামে পাঠিয়ে নিজেই রড কাটার কাজে লেগে যান। হঠাৎ করেই সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হয়ে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে থাকা উদ্ধারকর্মীদের "আগুন-আগুন' বলে চিৎকারধ্বনি। চোখের নিমেষেই টারজানের মতো রশি বেয়ে একে একে উদ্ধারকর্মীরা সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে থাকেন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন উদ্ধারকর্মী আহতও হন। কায়কোবাদ নিজে আগুনে ঝলসানো শরীর নিয়ে বের হয়ে এসে পাশে রাখা স্ট্রেচারে শুয়ে পড়েন। তাঁকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আকস্মিক এ ঘটনার পরপরই স্থবির হয়ে পড়ে উদ্ধারকাজ। শাহীনাকে পরাজয় মেনে নিতে হয় নিষ্ঠুর নিয়তির কাছে। মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়ে কায়কোবাদ আর শাহীনা সবাইকে কাঁদিয়ে না-ফেরার দেশে চলে গেছেন। তবে বিজয়ী করে গেছেন মানবতাকে।
লেখক : সেনা সদরে কর্মরত। সাভারে ধসে পড়া ভবনের উদ্ধারকাজ সংক্রান্ত মিডিয়া ব্যবস্থাপনার কাজে সেনা সদরের প্রতিনিধি হিসেবে সমন্বয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
No comments