গাছটিতে কোনো ফ্যান নেই by দন্ত্যস রওশন
ছেলেটার বয়স তিন বছর। আরও যোগ করতে হবে আট
মাস। তিন বছর আট মাসের এই ছেলের নাম সাধু। সে এত দুষ্টু, এত দুষ্টু যে
বাসার সবাই অতিষ্ঠ। সারাক্ষণই লাফাচ্ছে। বারান্দার গ্রিলে উঠছে। চেয়ারের
ওপর উঠে লাফ দিচ্ছে।
বিছানার বালিশ ছুড়ে মারছে। পরনের প্যান্ট খুলে সিলিং ফ্যানের দিকে ছুড়ে মারছে। না-ঘুমানো পর্যন্ত এসব চলছেই। চলবেই।
সাধু যখন কার্টুন দেখে, তখনো লাফায়। তবে টেলিভিশনের সামনে থেকে নড়ে না, এই যা। তার জন্য বাসার অন্যদেরও কার্টুন দেখতে হয়। বাসার লোকজন যখন ‘সাত পাকে বাঁধা’ ধারাবাহিকে থাকতে চায়, তখন সাধু ‘টম অ্যান্ড জেরি’ দেখবেই। চ্যানেল চেঞ্জ করা যাবে না। ‘বাবা, একটু খবর দেখি।’
‘না, না। খবর দেখতে হবে না। তুমি ঘুমাতে যাও।’ এ কথা বলে সাধু তার বাবার কাছ থেকে রিমোটটা নিয়ে নেয়।
রাত সাড়ে ১২টা।
বাবা সত্যিই ঘুমাতে যান। মা আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। বাসার অন্যরাও।
সাধু ‘ল’কে বলে ‘ন’।
টিভি দেখতে দেখতেই বলল, ‘গরম নাগছে।’ মানে গরম লাগছে। ‘জানানাটা খুনে দিই।’ মানে জানালাটা খুলে দিই।
সাধু জানালা খুলে দেয়।
সে ঘরের দরজাও খুলে দিল। ঘরের সামনে বড় স্পেস। ছয়তলায় সাধুরা থাকে। বিল্ডিংটা ১৫ তলা। মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি।
সাধু দৌড়ে যায় লিফটের কাছে। ডান হাতে রিমোট। বাঁ হাতে সে লিফটের সুইচে চাপ দেয়।
লিফট খুলতেই সাধু দেখে, লিফটে একটি বিড়াল মিটমিট করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘এই বিড়ান, তুমি কোথায় যাবা?’
বিড়াল বলে, ‘মিউ মিউ।’
‘তুমি এখনো কথা বনতে পারো না?’
বিড়াল বলে, ‘মিউ মিউ। না, এখনো কথা বলতে পারি না।’
সাধু বলে, ‘থ্যাঙ্ককু। এই তো পেনেছ।’ ও, বলা হয়নি, সাধু ‘র’কেও ‘ন’ বলে।
সাধু লিফটে নিচে নেমে যায়। পেছনে পেছনে হাঁটে বিড়াল। বাচ্চা বিড়াল। গায়ের রং সাদা-কালোতে মেশানো। লিফট থেকে নেমেই সাধু দেখে দারোয়ান ঘুমাচ্ছেন।
সাধু ডাকে, ‘দানোয়ান আঙ্কেন।’
দারোয়ান আঙ্কেল কিছুই শুনতে পান না। ঘুমাতেই থাকেন। সাধু মেইন গেটের কাছে যায়। মেইন গেট খোলা। সে পা টিপে টিপে বাইরে বের হয়। পেছনে পেছনে বিড়ালটাও যায়।
প্রচণ্ড গরম। বারবারই সাধুর মায়ের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎও চলে যায়। সাধুর মা চিৎকার করে ওঠেন। ‘হায় আল্লাহ, সাধু কই। আমার সাধু কই?’ বাবাও চমকে ওঠেন।
দুজনই ড্রয়িংরুমে আসেন। এসে তাঁদের চক্ষু ছানাবড়া। দরজা খোলা। সাধু গেল কই।
মা-বাবার চিৎকার-চেঁচামেচিতে আশপাশের ফ্ল্যাটের লোকজনেরও ঘুম ভেঙে যায়।
কোথায় গেল?
১৫ তলার ছাদ বন্ধ। সেখানে যাওয়ার কথা নয়।
দারোয়ান বলেন, ‘আমি তো জেগেই আছি। লিফটে নামলে তো আমি দেখতামই।’
সাধুর মা-বাবার সঙ্গে আরও দু-চারজন লোক সাধুকে খুঁজতে শুরু করে। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। বাবা বললেন, ‘বাইরে যাই। বাইরে যদি গিয়ে থাকে।’
মেইন গেট থেকে বের হয়ে বাবা আইল্যান্ডের ওপর দাঁড়ালেন। তিনি তখন কোথায় যাবেন? তাঁর হাত-পা কাঁপছে। আইল্যান্ডের ওপর সারি সারি বেশ কয়েকটি গাছ। একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় তিনি ভাবতে শুরু করলেন, কী করা যায়।
হঠাৎ তাঁর মাথায় ঠাস শব্দ করে কিছু একটা পড়ল। তিনি নিচে তাকিয়ে দেখলেন রিমোট কন্ট্রোল। এ যে তাঁদেরই রিমোট। বাবা ধীরে ধীরে ওপরের দিকে তাকালেন।
অবিশ্বাস্য! সাধু গাছের ডালে বসে আছে। পাশে একটি বিড়াল। বাবার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। সাধু মুখটা বেজার করে বলল, ‘সনি (সরি), বাবা। নিমোটটা তোমার মাথায় পড়ে গেন।’
বাবা হাঁ করে আছেন। সাধু বলে, ‘জানো বাবা, বিড়ানটা কথা বনতে পানে। ও আমার বন্ধু হয়েছে।’
দৌড়ে ছুটে আসেন সাধুর মা।
ওপর থেকেই সাধু বলে, ‘বাবা, খুব গনম পনেছে। গাছটাতে কোনো ফ্যান নেই। গাছটাকে একটা ফ্যান কিনে দিয়ো।’
সাধু যখন কার্টুন দেখে, তখনো লাফায়। তবে টেলিভিশনের সামনে থেকে নড়ে না, এই যা। তার জন্য বাসার অন্যদেরও কার্টুন দেখতে হয়। বাসার লোকজন যখন ‘সাত পাকে বাঁধা’ ধারাবাহিকে থাকতে চায়, তখন সাধু ‘টম অ্যান্ড জেরি’ দেখবেই। চ্যানেল চেঞ্জ করা যাবে না। ‘বাবা, একটু খবর দেখি।’
‘না, না। খবর দেখতে হবে না। তুমি ঘুমাতে যাও।’ এ কথা বলে সাধু তার বাবার কাছ থেকে রিমোটটা নিয়ে নেয়।
রাত সাড়ে ১২টা।
বাবা সত্যিই ঘুমাতে যান। মা আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। বাসার অন্যরাও।
সাধু ‘ল’কে বলে ‘ন’।
টিভি দেখতে দেখতেই বলল, ‘গরম নাগছে।’ মানে গরম লাগছে। ‘জানানাটা খুনে দিই।’ মানে জানালাটা খুলে দিই।
সাধু জানালা খুলে দেয়।
সে ঘরের দরজাও খুলে দিল। ঘরের সামনে বড় স্পেস। ছয়তলায় সাধুরা থাকে। বিল্ডিংটা ১৫ তলা। মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি।
সাধু দৌড়ে যায় লিফটের কাছে। ডান হাতে রিমোট। বাঁ হাতে সে লিফটের সুইচে চাপ দেয়।
লিফট খুলতেই সাধু দেখে, লিফটে একটি বিড়াল মিটমিট করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘এই বিড়ান, তুমি কোথায় যাবা?’
বিড়াল বলে, ‘মিউ মিউ।’
‘তুমি এখনো কথা বনতে পারো না?’
বিড়াল বলে, ‘মিউ মিউ। না, এখনো কথা বলতে পারি না।’
সাধু বলে, ‘থ্যাঙ্ককু। এই তো পেনেছ।’ ও, বলা হয়নি, সাধু ‘র’কেও ‘ন’ বলে।
সাধু লিফটে নিচে নেমে যায়। পেছনে পেছনে হাঁটে বিড়াল। বাচ্চা বিড়াল। গায়ের রং সাদা-কালোতে মেশানো। লিফট থেকে নেমেই সাধু দেখে দারোয়ান ঘুমাচ্ছেন।
সাধু ডাকে, ‘দানোয়ান আঙ্কেন।’
দারোয়ান আঙ্কেল কিছুই শুনতে পান না। ঘুমাতেই থাকেন। সাধু মেইন গেটের কাছে যায়। মেইন গেট খোলা। সে পা টিপে টিপে বাইরে বের হয়। পেছনে পেছনে বিড়ালটাও যায়।
প্রচণ্ড গরম। বারবারই সাধুর মায়ের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎও চলে যায়। সাধুর মা চিৎকার করে ওঠেন। ‘হায় আল্লাহ, সাধু কই। আমার সাধু কই?’ বাবাও চমকে ওঠেন।
দুজনই ড্রয়িংরুমে আসেন। এসে তাঁদের চক্ষু ছানাবড়া। দরজা খোলা। সাধু গেল কই।
মা-বাবার চিৎকার-চেঁচামেচিতে আশপাশের ফ্ল্যাটের লোকজনেরও ঘুম ভেঙে যায়।
কোথায় গেল?
১৫ তলার ছাদ বন্ধ। সেখানে যাওয়ার কথা নয়।
দারোয়ান বলেন, ‘আমি তো জেগেই আছি। লিফটে নামলে তো আমি দেখতামই।’
সাধুর মা-বাবার সঙ্গে আরও দু-চারজন লোক সাধুকে খুঁজতে শুরু করে। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। বাবা বললেন, ‘বাইরে যাই। বাইরে যদি গিয়ে থাকে।’
মেইন গেট থেকে বের হয়ে বাবা আইল্যান্ডের ওপর দাঁড়ালেন। তিনি তখন কোথায় যাবেন? তাঁর হাত-পা কাঁপছে। আইল্যান্ডের ওপর সারি সারি বেশ কয়েকটি গাছ। একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় তিনি ভাবতে শুরু করলেন, কী করা যায়।
হঠাৎ তাঁর মাথায় ঠাস শব্দ করে কিছু একটা পড়ল। তিনি নিচে তাকিয়ে দেখলেন রিমোট কন্ট্রোল। এ যে তাঁদেরই রিমোট। বাবা ধীরে ধীরে ওপরের দিকে তাকালেন।
অবিশ্বাস্য! সাধু গাছের ডালে বসে আছে। পাশে একটি বিড়াল। বাবার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। সাধু মুখটা বেজার করে বলল, ‘সনি (সরি), বাবা। নিমোটটা তোমার মাথায় পড়ে গেন।’
বাবা হাঁ করে আছেন। সাধু বলে, ‘জানো বাবা, বিড়ানটা কথা বনতে পানে। ও আমার বন্ধু হয়েছে।’
দৌড়ে ছুটে আসেন সাধুর মা।
ওপর থেকেই সাধু বলে, ‘বাবা, খুব গনম পনেছে। গাছটাতে কোনো ফ্যান নেই। গাছটাকে একটা ফ্যান কিনে দিয়ো।’
No comments