খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন সংস্থা ইফপ্রির জরিপ ৩৪% কৃষকই ধান চাষে লাভ পান না by ইফতেখার মাহমুদ
দেশের ৩৪ শতাংশ কৃষকই ধান চাষে লাভ পান
না। যাঁদের নিজের জমি নেই, তাঁদেরই লোকসান বেশি। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য
দেওয়ার জন্য সরকার ধান-চালের যে সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করে, তাতে বোরোতে
কিছু লাভ হলেও আমনে পুরোটাই লোকসান হয় তাঁদের।
খাদ্যনিরাপত্তাবিষয়ক
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ
ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) এক জরিপে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক
ইফপ্রির জরিপ অনুযায়ী, গত ছয় বছরে দেশে যে হারে আয় দারিদ্র্য কমেছে, খাদ্য
দারিদ্র্য সেই হারে কমেনি। একজন মানুষের দৈনিক খাদ্যশক্তি পাওয়ার
সামর্থ্যের হিসাবে অর্থাৎ ক্যালরি গ্রহণের সাপেক্ষে ২০০৫ থেকে ২০১১ সালের
মধ্যে ৪ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছে। আর
অতিদারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ।
অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠীর হার কমেছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
এই খাদ্য দারিদ্র্য পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে ইফপ্রি বলেছে, এখনো বাংলাদেশের ৩৬ শতাংশ শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে বেড়ে উঠছে। ৪১ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। ৯০ শতাংশ শিশুর রক্তশূন্যতা রয়েছে। এক-তৃতীয়াংশ গর্ভবতী নারী রক্তশূন্যতা ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডের সহায়তায় বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড হাউসহোল্ড সার্ভে বা সমন্বিত খানা জরিপ ২০১১-১২ শিরোনামে এই জরিপ করা হয়।
খাদ্য দারিদ্র্য পরিস্থিতি: ২০০৫ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা খানা জরিপে দেশে দুই হাজার ১২২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি গ্রহণ করার সামর্থ্য রাখে—এমন মানুষের সংখ্যা বলা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এক হাজার ৮০৫ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া মানুষদের হতদরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত করে এদের সংখ্যা বলা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১০ সালের সর্বশেষ খানা জরিপে দারিদ্র্য পরিমাপক হিসেবে খাদ্যশক্তি গ্রহণের বিষয়টিকে আমলে নেওয়া হয়নি। ওই জরিপে শুধু ন্যূনতম খাদ্য কেনার সামর্থ্যের বিষয়টিকে বা আয় বৃদ্ধির পরিমাণকে বিবেচনায় নেওয়া হয়।
কিন্তু ২০১১ সালে করা ইফপ্রির জরিপে খাদ্যশক্তি গ্রহণ করার সামর্থ্যকে দারিদ্র্য পরিমাপের সূচক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ওই জরিপে দেখা গেছে, খাদ্যদরিদ্রের সংখ্যা ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর হতদরিদ্রের সংখ্যা ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ইফপ্রির দেশীয় পরিচালক আখতার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওই খাদ্যদারিদ্র্যের সূচক ব্যবহার করেই জরিপটি চালিয়েছি। তাতে দেখা গেছে, বিবিএস যত বেশি হারে দারিদ্র্য হ্রাস হচ্ছে বলছে, বাস্তব অবস্থা তেমনটা নয়।’ খাদ্যশক্তির সূচকের বিবেচনায় দারিদ্র্য হ্রাসের পরিমাণ সরকারঘোষিত হারের অর্ধেকেরও কম বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ধান চাষে লাভ পান না কৃষক: এর কারণ ব্যাখ্যা করে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার ধানের যে সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করে, তাতে জমির ভাড়া, কৃষকের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের শ্রমকে সঠিকভাবে বিবেচনায় আনা হয় না। ওই ভাড়া ও শ্রমের মূল্য যোগ করলে সরকারঘোষিত ধানের সংগ্রহমূল্যের চেয়ে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশি হয়।
ইফপ্রির জরিপে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকেরা ধানের একরপ্রতি ও মোট উৎপাদন বেশি করেন। কিন্তু সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ ও ঋণসুবিধা বেশি পান বড় কৃষকেরা। এখনো দেশের এক-তৃতীয়াংশ কৃষকের নিজের কোনো জমিই নেই; অর্থাৎ তাঁরা ভূমিহীন। এই ভূমিহীনেরাসহ মোট ৪০ শতাংশ কৃষক অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন।
সামাজিক নিরাপত্তায় ২২ শতাংশ সচ্ছল: জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৪৫ শতাংশ মানুষ সরকারের কোনো না কোনো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পায়। যদিও সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ দরিদ্র মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পায়। মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া সহায়তার মতো কর্মসূচিকে ইফপ্রির জরিপে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে ইফপ্রির জরিপ বলছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২২ শতাংশই সচ্ছল। অথচ অসচ্ছলদের জন্যই এই কর্মসূচি।
খাদ্য গ্রহণে নতুন তথ্য: জরিপে দেখা গেছে, দেশের বেশির ভাগ মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির প্রধান উৎস এখনো চাল। ৭৭ শতাংশ জমিতে এখনো ধান চাষ হয়। আর একজন মানুষ গড়ে ৪৯৫ দশমিক ৫ গ্রাম চাল খায়।
দেশের খাদ্যবিষয়ক সরকারের নীতি ও গবেষণা সংস্থা এফপিএমইউ মাথাপিছু ৪৬৪ গ্রাম চাল-গম ভোগ দেখায়। আরেক সরকারি সংস্থা বিবিএস দৈনিক গড়ে ৪৯০ গ্রাম চাল-গম ভোগ হয় বলে তাদের জরিপে তথ্য দিয়েছে। বিআইডিএসের জরিপ অনুযায়ী, একজন মানুষের দৈনিক গড় ভোগের পরিমাণ ৪৬৩ গ্রাম।
আঞ্চলিক ও লিঙ্গবৈষম্য: ইফপ্রির জরিপে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠী ও সামাজিক সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও আঞ্চলিক বৈষম্য ধরা পড়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের সর্বনিম্ন ৩১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। অন্যদিকে রংপুর বিভাগের ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে।
বিদ্যুৎ-সংযোগের কথাই ধরা যাক। জরিপের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ৪৮ শতাংশ ঘরে বিদ্যুৎ-সংযোগ আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৬ শতাংশ ঘরে ও রংপুর বিভাগের ২৬ শতাংশ ঘরে বিদ্যুৎ-সংযোগ রয়েছে। ন্যূনতম সামাজিক সুবিধা পায় না—এমন মানুষের সংখ্যা চট্টগ্রামে ৩০ শতাংশ। আর রংপুর বিভাগে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাইরে (দেশের অন্য এলাকা ও বিদেশ থেকে) থেকে আয়প্রবাহের ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। চট্টগ্রাম বিভাগের ২৪ শতাংশ ও সিলেট বিভাগের ১৯ শতাংশ পরিবার বাইরে থেকে আয় গ্রহণ করে। কিন্তু রংপুর বিভাগে মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবার বাইরে থেকে আয় পায়।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ দশমিক ৯ শতাংশ গ্রামীণ পরিবারে বাইরের এ আয়প্রবাহ আছে। এর মধ্যে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবারে দেশের ভেতরের অন্য এলাকা থেকে আয় আসে। আর ৪ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারে বিদেশ থেকে আয় আসে।
২০১১ সালের প্রায় পুরো সময় জরিপটি হয়। ছয় হাজার ৫০০টি গৃহকে ৩২৫ ইউনিটে ভাগ করে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ নিয়ে জানতে চাইলে সরকারের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইফপ্রির জরিপটি পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে গভীরভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে। তাদের কাজের পদ্ধতি ও তথ্য সংগ্রহের ধরন দেখে ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে মূল্যায়ন করবেন বলে জানান তিনি। বিবিএসের তথ্য এখন পর্যন্ত দেশি ও বিদেশি সংস্থাগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠীর হার কমেছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
এই খাদ্য দারিদ্র্য পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে ইফপ্রি বলেছে, এখনো বাংলাদেশের ৩৬ শতাংশ শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে বেড়ে উঠছে। ৪১ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। ৯০ শতাংশ শিশুর রক্তশূন্যতা রয়েছে। এক-তৃতীয়াংশ গর্ভবতী নারী রক্তশূন্যতা ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডের সহায়তায় বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড হাউসহোল্ড সার্ভে বা সমন্বিত খানা জরিপ ২০১১-১২ শিরোনামে এই জরিপ করা হয়।
খাদ্য দারিদ্র্য পরিস্থিতি: ২০০৫ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা খানা জরিপে দেশে দুই হাজার ১২২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি গ্রহণ করার সামর্থ্য রাখে—এমন মানুষের সংখ্যা বলা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এক হাজার ৮০৫ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া মানুষদের হতদরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত করে এদের সংখ্যা বলা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১০ সালের সর্বশেষ খানা জরিপে দারিদ্র্য পরিমাপক হিসেবে খাদ্যশক্তি গ্রহণের বিষয়টিকে আমলে নেওয়া হয়নি। ওই জরিপে শুধু ন্যূনতম খাদ্য কেনার সামর্থ্যের বিষয়টিকে বা আয় বৃদ্ধির পরিমাণকে বিবেচনায় নেওয়া হয়।
কিন্তু ২০১১ সালে করা ইফপ্রির জরিপে খাদ্যশক্তি গ্রহণ করার সামর্থ্যকে দারিদ্র্য পরিমাপের সূচক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ওই জরিপে দেখা গেছে, খাদ্যদরিদ্রের সংখ্যা ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর হতদরিদ্রের সংখ্যা ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ইফপ্রির দেশীয় পরিচালক আখতার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওই খাদ্যদারিদ্র্যের সূচক ব্যবহার করেই জরিপটি চালিয়েছি। তাতে দেখা গেছে, বিবিএস যত বেশি হারে দারিদ্র্য হ্রাস হচ্ছে বলছে, বাস্তব অবস্থা তেমনটা নয়।’ খাদ্যশক্তির সূচকের বিবেচনায় দারিদ্র্য হ্রাসের পরিমাণ সরকারঘোষিত হারের অর্ধেকেরও কম বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ধান চাষে লাভ পান না কৃষক: এর কারণ ব্যাখ্যা করে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার ধানের যে সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করে, তাতে জমির ভাড়া, কৃষকের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের শ্রমকে সঠিকভাবে বিবেচনায় আনা হয় না। ওই ভাড়া ও শ্রমের মূল্য যোগ করলে সরকারঘোষিত ধানের সংগ্রহমূল্যের চেয়ে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশি হয়।
ইফপ্রির জরিপে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকেরা ধানের একরপ্রতি ও মোট উৎপাদন বেশি করেন। কিন্তু সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ ও ঋণসুবিধা বেশি পান বড় কৃষকেরা। এখনো দেশের এক-তৃতীয়াংশ কৃষকের নিজের কোনো জমিই নেই; অর্থাৎ তাঁরা ভূমিহীন। এই ভূমিহীনেরাসহ মোট ৪০ শতাংশ কৃষক অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন।
সামাজিক নিরাপত্তায় ২২ শতাংশ সচ্ছল: জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৪৫ শতাংশ মানুষ সরকারের কোনো না কোনো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পায়। যদিও সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ দরিদ্র মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পায়। মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া সহায়তার মতো কর্মসূচিকে ইফপ্রির জরিপে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে ইফপ্রির জরিপ বলছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২২ শতাংশই সচ্ছল। অথচ অসচ্ছলদের জন্যই এই কর্মসূচি।
খাদ্য গ্রহণে নতুন তথ্য: জরিপে দেখা গেছে, দেশের বেশির ভাগ মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির প্রধান উৎস এখনো চাল। ৭৭ শতাংশ জমিতে এখনো ধান চাষ হয়। আর একজন মানুষ গড়ে ৪৯৫ দশমিক ৫ গ্রাম চাল খায়।
দেশের খাদ্যবিষয়ক সরকারের নীতি ও গবেষণা সংস্থা এফপিএমইউ মাথাপিছু ৪৬৪ গ্রাম চাল-গম ভোগ দেখায়। আরেক সরকারি সংস্থা বিবিএস দৈনিক গড়ে ৪৯০ গ্রাম চাল-গম ভোগ হয় বলে তাদের জরিপে তথ্য দিয়েছে। বিআইডিএসের জরিপ অনুযায়ী, একজন মানুষের দৈনিক গড় ভোগের পরিমাণ ৪৬৩ গ্রাম।
আঞ্চলিক ও লিঙ্গবৈষম্য: ইফপ্রির জরিপে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠী ও সামাজিক সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও আঞ্চলিক বৈষম্য ধরা পড়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের সর্বনিম্ন ৩১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। অন্যদিকে রংপুর বিভাগের ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে।
বিদ্যুৎ-সংযোগের কথাই ধরা যাক। জরিপের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ৪৮ শতাংশ ঘরে বিদ্যুৎ-সংযোগ আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৬ শতাংশ ঘরে ও রংপুর বিভাগের ২৬ শতাংশ ঘরে বিদ্যুৎ-সংযোগ রয়েছে। ন্যূনতম সামাজিক সুবিধা পায় না—এমন মানুষের সংখ্যা চট্টগ্রামে ৩০ শতাংশ। আর রংপুর বিভাগে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাইরে (দেশের অন্য এলাকা ও বিদেশ থেকে) থেকে আয়প্রবাহের ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। চট্টগ্রাম বিভাগের ২৪ শতাংশ ও সিলেট বিভাগের ১৯ শতাংশ পরিবার বাইরে থেকে আয় গ্রহণ করে। কিন্তু রংপুর বিভাগে মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবার বাইরে থেকে আয় পায়।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ দশমিক ৯ শতাংশ গ্রামীণ পরিবারে বাইরের এ আয়প্রবাহ আছে। এর মধ্যে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবারে দেশের ভেতরের অন্য এলাকা থেকে আয় আসে। আর ৪ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারে বিদেশ থেকে আয় আসে।
২০১১ সালের প্রায় পুরো সময় জরিপটি হয়। ছয় হাজার ৫০০টি গৃহকে ৩২৫ ইউনিটে ভাগ করে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ নিয়ে জানতে চাইলে সরকারের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইফপ্রির জরিপটি পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে গভীরভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে। তাদের কাজের পদ্ধতি ও তথ্য সংগ্রহের ধরন দেখে ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে মূল্যায়ন করবেন বলে জানান তিনি। বিবিএসের তথ্য এখন পর্যন্ত দেশি ও বিদেশি সংস্থাগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
No comments