চারুশিল্প নিরীক্ষা কথন by সৈয়দ গোলাম দস্তগীর
১০ বছর অতিক্রম করল গ্যালারি কায়া। আজ
থেকে ১০ বছর আগে শিল্পকলার বিকাশ ও বিপণনের অবদানের প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা
শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এই সময়ের মধ্যে গ্যালারিটি ধারাবাহিকভাবে ৭০টি
প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
এগুলোর প্রতিটিরই কিছু না কিছু
বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল এবং এই বৈশিষ্ট্যের নিরিখে প্রদর্শনীর আয়োজনই কায়ার
একটি বিশেষ সূত্র। এ ছাড়া দুটি ওয়ার্কশপ, চারটি ক্যাম্প ও ৭০টি প্রদর্শনী
প্রকাশনার পাশাপাশি তারা দুটি বই প্রকাশ করেছে শিল্পী মুর্তজা বশীর ও
শিল্পী মাসুদা কাজীকে নিয়ে। এত সব আয়োজনের সংখ্যাগত গুরুত্বের তুলনায় গুণগত
গুরুত্ব অনেক বেশি। এবারের প্রদর্শনীটি গত ১০ বছরে তাদের নানা আয়োজন থেকে
যে সংগ্রহ গড়ে উঠেছে তার বাছাই করা কাজ নিয়ে। এ প্রদর্শনীতে এমন কিছু কাজ
আছে, যা নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা ও কাজ করতে পারবেন শিল্পকলার গবেষকেরা। এমন
কিছু কাজের মধ্যে আছে আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বশীর ও কাইয়ুম চৌধুরীর আঁকা
লোকজ মাধ্যমের কাজ। লোকজ মাধ্যম বলতে কী বোঝাচ্ছি, তা একটু খুলেই বলি।
শম্ভুনাথ আচার্যকে আমরা অনেকেই চিনি পটচিত্রের রচয়িতা হিসেবে। তিনি কাজ
করেন দেশীয় উপাদান বা রং দিয়ে। কায়া এই শম্ভুনাথ আচার্যকে নিয়ে আয়োজন
করেছিল এক কর্মশালার, যেখানে আমাদের অনেক প্রধান শিল্পীও অংশ নিয়েছিলেন।
এই কর্মশালা আমাদের প্রধান শিল্পীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিল লোকজ মাধ্যমে। আমিনুল ইসলামের করা কাজটিতে আমরা দেখি, লোকজ মাধ্যমেও তিনি নানা বুনট তৈরি করেছেন, কাজের বিষয় নারীর প্রতি পুরুষের সম্মোহিত দৃষ্টি। বিষয় যা-ই হোক না কেন, এটা তাঁর কাজের ভিন্নতর একটি বর্ণনা। মুর্তজা বশীরের খ্যাতি নানা কারণে। শিল্পে বুদ্ধির চর্চা, করণকৌশলসহ নানা মাধ্যমে প্রভাবশালী বিচরণ তাঁকে করেছে ব্যাপকভাবে আলোচিত; কখনো কখনো সমালোচিতও। এই প্রদর্শনীতে তাঁর লোকজ মাধ্যমে করা যে কাজটি দেখা যাবে, এ ধরনের কাজ তিনি তেলরঙে করে যথেষ্ট আলোচিত হয়েছেন। ঠিক একই ধরনের কাজ তিনি ভিন্ন মাধ্যমে করলে যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়, তা অনেকেই উপলব্ধি করবেন। অনুরূপভাবে আমাদের শিল্পকলার প্রধান পুরুষদের অন্যতমজন কাইয়ুম চৌধুরীকেও দেখব অনুরূপ স্থানীয় উপাদানে কাজ করতে। বাংলার লোকজ আকার ও রূপ প্রকাশ করেছেন একটি লোকজ মাধ্যমেই। অনেকটা আলপনার ঢঙে এঁকেছেন গ্রামীণ ভূদৃশ্য। কাজটির মধ্যে মাধ্যমগত নিরীক্ষার প্রকাশ রয়েছে। সমরজিৎ রায় চৌধুরীর কাজে পাহাড়ের প্রকৃতি প্রকাশিত হয়েছে। বান্দরবানের আর্ট ক্যাম্পের কাজ এটি। যমুনা রিসোর্টের ক্যাম্পে এঁকেছেন হাশেম খান উড়ে চলা পাখি, মানুষ, প্রকৃতি ও জীবন নিয়ে ভিন্নতর এক গাথা। হামিদুজ্জামান খানের ক্যানভাসে বান্দরবান প্রকাশিত হয়েছে আলাদা এক রূপে, যেখানে চেনা বান্দরবান নতুন ও অচেনা এক মুগ্ধতা নিয়ে ধরা দিয়েছে। কালিদাশ কর্মকার নিরন্তর নিরীক্ষার এক প্রতিকৃতি, প্রতিমুহূর্তে কাজ করছেন, প্রতিটি রচনাই এক স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর রাখে। মনসুর-উল-করিম আমাদের অতিপরিচিত শিল্পীদের একজন, তবে এই প্রদর্শনীর কাজটি আমাদের বেশ অপরিচিতই মনে হবে। এত উজ্জ্বল রং, রেখা ও আকৃতির অনেক কিছু তাঁর সচরাচর দেখা কাজ থেকে বেশ স্বতন্ত্র। চন্দ্র শেখর দে যমুনা রিসোর্ট ক্যাম্পে পেন ওয়াশ পদ্ধতিতে এঁকেছেন। কাজটি একটি রঙিন স্কেচবিশেষ। তরুণ ঘোষের কাজের পরিমাণ ও নিরীক্ষার পরিমাণ প্রায় সমান। বর্ণলেপন, প্রকাশভঙ্গি থেকে করণকৌশল—সবকিছুতেই নতুন কিছু না করে স্থির থাকতে পারেন না তিনি আর ভিন্নতর পরিবেশে এই নিরীক্ষার বিষয়টি যেন আরও প্রকট হয়ে ওঠে। শম্ভু নাথ পুরাণের আখ্যান থেকে রচনা করেছেন। কাজী রকিব বান্দরবানের স্থানীয় উপকরণের সঙ্গে প্রথাগত উপকরণের মিশ্রণে কাজ করেছেন। কালিদাশ মানবচরিত্রের উপাখ্যান রচনা করেছেন। শিশির ভট্টাচার্য্যের সাম্প্রতিক এক প্রদর্শনী দাগ তামাসা থেকে বর্তমান প্রদর্শনীর কাজটি স্বতন্ত্র তো নয়ই, বরং বলা যেতে পারে এটি এই পর্বের প্রারম্ভিক পর্যায়ের একটি উল্লেখযোগ্য কাজ। নগরবাসী বর্মণ একজন ধ্যানী শিল্পী। আলো, আকার, রেখা—এসব তাঁর কাজের প্রধান উপাদান। মনিরুল ইসলাম কোরিওগ্রাফি মাধ্যমে কাজ করেছেন। এই কাজে তাঁর উপকরণের ব্যবহার একটি দর্শনীয় বিষয়। আশরাফুল মানুষ ও প্রকৃতিকে একাকার করে দেখেছেন, যেখানে বনভূমি আর মানুষ মিলে তৈরি করেছে ভিন্ন একটি সত্তা।
আজ প্রদর্শনীটি শুরু হয়ে চলবে আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত। আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বশীর, কাইয়ুম চৌধুরী, নিতুন কুন্ডু, সমরজিৎ রায়চৌধুরী, হাশেম খান, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, হামিদুজ্জামান খান, কালিদাশ কর্মকর, মনসুর-উল-করিম, চন্দ্র শেখর দে, তরুণ ঘোষ, শম্ভুনাথ আচার্য, কাজী রকিব, গোলাম ফারুক বেবুল, মাসুদা কাজী, শিশির ভট্টাচার্য্য, সমীরণ চৌধুরী, রফি হক, আনিসুজ্জামান, নগরবাসী বর্মণ, তরিকত ইসলাম, শেখ মো. রোকনুজ্জামান, আশরাফুল হাসান, কামাল উদ্দিন, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, সোহাগ পারভেজ প্রমুখ শিল্পী প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন।
এই কর্মশালা আমাদের প্রধান শিল্পীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিল লোকজ মাধ্যমে। আমিনুল ইসলামের করা কাজটিতে আমরা দেখি, লোকজ মাধ্যমেও তিনি নানা বুনট তৈরি করেছেন, কাজের বিষয় নারীর প্রতি পুরুষের সম্মোহিত দৃষ্টি। বিষয় যা-ই হোক না কেন, এটা তাঁর কাজের ভিন্নতর একটি বর্ণনা। মুর্তজা বশীরের খ্যাতি নানা কারণে। শিল্পে বুদ্ধির চর্চা, করণকৌশলসহ নানা মাধ্যমে প্রভাবশালী বিচরণ তাঁকে করেছে ব্যাপকভাবে আলোচিত; কখনো কখনো সমালোচিতও। এই প্রদর্শনীতে তাঁর লোকজ মাধ্যমে করা যে কাজটি দেখা যাবে, এ ধরনের কাজ তিনি তেলরঙে করে যথেষ্ট আলোচিত হয়েছেন। ঠিক একই ধরনের কাজ তিনি ভিন্ন মাধ্যমে করলে যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়, তা অনেকেই উপলব্ধি করবেন। অনুরূপভাবে আমাদের শিল্পকলার প্রধান পুরুষদের অন্যতমজন কাইয়ুম চৌধুরীকেও দেখব অনুরূপ স্থানীয় উপাদানে কাজ করতে। বাংলার লোকজ আকার ও রূপ প্রকাশ করেছেন একটি লোকজ মাধ্যমেই। অনেকটা আলপনার ঢঙে এঁকেছেন গ্রামীণ ভূদৃশ্য। কাজটির মধ্যে মাধ্যমগত নিরীক্ষার প্রকাশ রয়েছে। সমরজিৎ রায় চৌধুরীর কাজে পাহাড়ের প্রকৃতি প্রকাশিত হয়েছে। বান্দরবানের আর্ট ক্যাম্পের কাজ এটি। যমুনা রিসোর্টের ক্যাম্পে এঁকেছেন হাশেম খান উড়ে চলা পাখি, মানুষ, প্রকৃতি ও জীবন নিয়ে ভিন্নতর এক গাথা। হামিদুজ্জামান খানের ক্যানভাসে বান্দরবান প্রকাশিত হয়েছে আলাদা এক রূপে, যেখানে চেনা বান্দরবান নতুন ও অচেনা এক মুগ্ধতা নিয়ে ধরা দিয়েছে। কালিদাশ কর্মকার নিরন্তর নিরীক্ষার এক প্রতিকৃতি, প্রতিমুহূর্তে কাজ করছেন, প্রতিটি রচনাই এক স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর রাখে। মনসুর-উল-করিম আমাদের অতিপরিচিত শিল্পীদের একজন, তবে এই প্রদর্শনীর কাজটি আমাদের বেশ অপরিচিতই মনে হবে। এত উজ্জ্বল রং, রেখা ও আকৃতির অনেক কিছু তাঁর সচরাচর দেখা কাজ থেকে বেশ স্বতন্ত্র। চন্দ্র শেখর দে যমুনা রিসোর্ট ক্যাম্পে পেন ওয়াশ পদ্ধতিতে এঁকেছেন। কাজটি একটি রঙিন স্কেচবিশেষ। তরুণ ঘোষের কাজের পরিমাণ ও নিরীক্ষার পরিমাণ প্রায় সমান। বর্ণলেপন, প্রকাশভঙ্গি থেকে করণকৌশল—সবকিছুতেই নতুন কিছু না করে স্থির থাকতে পারেন না তিনি আর ভিন্নতর পরিবেশে এই নিরীক্ষার বিষয়টি যেন আরও প্রকট হয়ে ওঠে। শম্ভু নাথ পুরাণের আখ্যান থেকে রচনা করেছেন। কাজী রকিব বান্দরবানের স্থানীয় উপকরণের সঙ্গে প্রথাগত উপকরণের মিশ্রণে কাজ করেছেন। কালিদাশ মানবচরিত্রের উপাখ্যান রচনা করেছেন। শিশির ভট্টাচার্য্যের সাম্প্রতিক এক প্রদর্শনী দাগ তামাসা থেকে বর্তমান প্রদর্শনীর কাজটি স্বতন্ত্র তো নয়ই, বরং বলা যেতে পারে এটি এই পর্বের প্রারম্ভিক পর্যায়ের একটি উল্লেখযোগ্য কাজ। নগরবাসী বর্মণ একজন ধ্যানী শিল্পী। আলো, আকার, রেখা—এসব তাঁর কাজের প্রধান উপাদান। মনিরুল ইসলাম কোরিওগ্রাফি মাধ্যমে কাজ করেছেন। এই কাজে তাঁর উপকরণের ব্যবহার একটি দর্শনীয় বিষয়। আশরাফুল মানুষ ও প্রকৃতিকে একাকার করে দেখেছেন, যেখানে বনভূমি আর মানুষ মিলে তৈরি করেছে ভিন্ন একটি সত্তা।
আজ প্রদর্শনীটি শুরু হয়ে চলবে আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত। আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বশীর, কাইয়ুম চৌধুরী, নিতুন কুন্ডু, সমরজিৎ রায়চৌধুরী, হাশেম খান, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, হামিদুজ্জামান খান, কালিদাশ কর্মকর, মনসুর-উল-করিম, চন্দ্র শেখর দে, তরুণ ঘোষ, শম্ভুনাথ আচার্য, কাজী রকিব, গোলাম ফারুক বেবুল, মাসুদা কাজী, শিশির ভট্টাচার্য্য, সমীরণ চৌধুরী, রফি হক, আনিসুজ্জামান, নগরবাসী বর্মণ, তরিকত ইসলাম, শেখ মো. রোকনুজ্জামান, আশরাফুল হাসান, কামাল উদ্দিন, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, সোহাগ পারভেজ প্রমুখ শিল্পী প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন।
No comments