বিদ্যুৎ-পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে অনির্ধারিত আলোচনা-উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীকে দুষলেন সাংসদেরা

দেশের বিদ্যুৎ-পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হকের কঠোর সমালোচনা করেছেন সাংসদেরা। তাঁরা বিদ্যুৎ-পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে সরকারের বিবৃতি দাবি করেন।


হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংসদেরা বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতে প্রতিবছর ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কারণে দেশের পুরো অর্থনীতি চাপের মুখে। কিন্তু বিদ্যুৎ-পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার অনির্ধারিত আলোচনায় সাংসদেরা এ অভিযোগ করেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভোলায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। কিন্তু সরকারের তিন বছর পার হয়ে গেছে। এখনো কাজ শুরু হয়নি। সরকারি দল করি, এ জন্য কিছু বলতে পারি না। কিন্তু এলাকায় গেলে বিদ্যুৎ-গ্যাসের সমস্যা নিয়ে জনগণ জানতে চায়। এ বিষয়ে এলাকার মানুষের প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘আমি ভারাক্রান্ত হূদয় নিয়ে আজ ভোলায় যাব। গিয়ে এলাকার মানুষকে আবারও বলব, হবে।’
সরকারি দলের এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় কে চালায়? ৪৭ জন মন্ত্রী আছেন। আরও আছেন উপদেষ্টা। এ মুহূর্তে সংসদে আছেন স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা এবং ভূমিমন্ত্রী। আর আছেন চারজন প্রতিমন্ত্রী। কার কাছে কথা বলব। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নেই। উপদেষ্টাকে তো কৈফিয়ত দিতে হয় না। অথচ তাঁর কথার বাইরে কিছুই হয় না।’
উপদেষ্টা এবং প্রতিমন্ত্রীকে সতর্ক করে জাসদের সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে প্রতিবছর ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এই পরিমাণ টাকা ভর্তুকি দেওয়ার পর আমরা আর কোনো অজুহাত শুনব না। আপনাদের কারণে দেশের পুরো অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী, উপদেষ্টা, উপদেষ্টার পেছনের উপদেষ্টাদের বলতে চাই, আপনাদের কাজ করে দেখাতে হবে। অন্যথা হলে সংসদ সদস্যরা আপনাদের আরও জোরালোভাবে ধরবে।’
বুধবার সকালে বিদ্যুৎ না থাকায় নিজের দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন সরকারি দলের সাংসদ ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি বলেন, ‘সকালে বিদ্যুৎ ছিল না। পানি তুলতে না পেরে বাথরুম ব্যবহার করতে পারিনি, গোসল করতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করেছেন। এত বিদ্যুৎ যাচ্ছে কোথায়? বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার পরও এত লোডশেডিং হচ্ছে কেন?’
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কাছে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করে ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘কৃষকদের ছয় ঘণ্টার জায়গায় তিন ঘণ্টা বা দেড় ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ হতে হচ্ছে। আমরা মানুষের কাছে আর প্রশ্নবিদ্ধ হতে চাই না। তাই বিদ্যুতের অবস্থা কী, তা জানতে চাই।’
ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার সমস্যা অন্য এলাকার চেয়ে এক ডিগ্রি বেশি। বরেন্দ্র প্রকল্পে সাত মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। দেওয়া হচ্ছে মাত্র দুই মেগাওয়াট করে। এ অবস্থা চলতে থাকলে তিন হাজার একর জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে যাবে। এটা হলে জনগণের কাছে যাওয়ার নৈতিক অবস্থান থাকবে না।’
এ কে এম আনোয়ারুল হক বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ার কারণে শহরের অবস্থার উন্নতি হলেও গ্রামের অবস্থা আগের মতোই রয়ে গেছে। বিদ্যুতের অভাবে গ্রামের কৃষকেরা সেচ দিতে পারছেন না। বিদ্যুতের অভাবে গত বোরো মৌসুমে কৃষকেরা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর করতে গেলে আমি নিজে থেকে তা রক্ষা করি। কিন্তু এবার যেটা শুরু হয়েছে তাতে কৃষকেরা যেকোনো সময়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যুৎ অফিসে আক্রমণ করে বসতে পারে।’
সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকার ও সাধন চন্দ্র মজুমদার সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ না পেয়ে কৃষকের ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরেন।
এ আলোচনার সময় সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী। সদস্যদের বক্তব্যের পর তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনাদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন।
সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খুন: ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খুনের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক। তিনি বলেন, সৌদি কূটনীতিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে খালিজ টাইমসসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিরূপ প্রচারণা চলছে। এ প্রচারণা থেকে রেহাই পেতে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন।
ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা: গতকাল সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ-সম্পর্কিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন মতিউর রহমান, দবিরুল ইসলাম, সোহরাব আলী, শেখ মুজিবুর রহমান, ইকবালুর রহিম, গোলাম সবুর প্রমুখ।
এরপর সংসদের অধিবেশন ১১ মার্চ রোববার বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.