পাঠ্যবই নিয়ে হ-য-ব-র-লঃ ক্লাস শুরু অনিশ্চিত
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণের সফলতা নিয়ে সরকার ও সরকারি দলের মহাধুমধাম শেষ হতে না হতেই দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। রাজধানীসহ সারাদেশের শহর ও গ্রামের বিভিন্ন স্কুলে সরকারি বই না পেয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিপাকে পড়েছেন। শিশু শিক্ষার্থীদের কান্নাকাটি থামাতে বাজারে গিয়েও বিপদ কাটছে না।
খোঁজ করে বই কিনে এনে দেখা যাচ্ছে গত বছরের বই মলাট পাল্টে গছিয়ে দেয়া হয়েছে। আর কিন্ডারগার্টেন, ইংরেজি মাধ্যম ও স্বীকৃতি না পাওয়া অসংখ্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কীভাবে বই পাবে, সেটা কেউই বলতে পারছেন না। শিক্ষা অফিসের তালিকায় নাম না থাকা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, শিক্ষার্থী ও প্রয়োজনীয় বইয়ের সংখ্যা কারও জানা নেই। সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে পাঠ্যবই ছাপা নিষিদ্ধ থাকায় এখন দেখা দিয়েছে মহাজটিলতা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মতে, তালিকাবহির্ভূত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য কমপক্ষে ৩৩ লাখ বই প্রয়োজন। তবে সংশ্লিষ্টরা এ সংখ্যা ৫০ লাখ বলে ধারণা করছেন। এসব বই ছাপানো ও সরবরাহ অনিশ্চিত থাকায় প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস শুরুও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শিক্ষা লাভজনক বাণিজ্যে পরিণত হওয়ায় সারাদেশের এখানে-ওখানে ব্যাঙের ছাতার মতো অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠেছে। সরকারি বা স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানসঙ্কুলান না হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। অথচ সরকার থেকে এদের কার্যক্রম তদারকির কোনো ব্যবস্থা নেই। শিক্ষাবাণিজ্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করা হয়ে উঠেছে সরকারি নীতি। ফলে এদের সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর রাখা হয়নি। তার ওপর আগের ব্যবস্থা বাতিল করে এবারে পাঠ্যপুস্তক ছাপা ও বিতরণের নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিকের মতো মাধ্যমিক পর্যায়ের বইও বিনামূল্যে বিতরণের ঘোষণা দিয়ে মহাজোট সরকার বাহবা কুড়ালেও এখন সৃষ্টি হয়েছে হ-য-র-ব-ল অবস্থা। এটা দেখা দিয়েছে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে। বছরের প্রথম দিন থেকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু করার উচ্ছ্বাস সপ্তাহ যেতে না যেতেই চুপসে যেতে বসেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় চাহিদা অনুযায়ী সারাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইংরেজি মাধ্যম ও স্বীকৃতি না পাওয়া বিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বিতরণ হওয়া বই নিয়েও দেখা দিয়েছে জটিলতা। বিভিন্ন স্থানে আংশিক বই এসেছে। মাধ্যমিকের এসেছে তো প্রাথমিকের আসেনি। আর শিক্ষা অফিসের তালিকায় যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম ওঠেনি, তাদের ক্ষেত্রে দেখা দেয়া বিশৃঙ্খলা দূর করা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা অবস্থা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর বৈঠক হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, এসব বই বিনামূল্যে না মূল্য নিয়ে বিতরণ করা হবে। আজকালের মধ্যে সিদ্ধান্ত হলেও ফেব্রুয়ারির আগে বই ছাপা শেষ হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। পুস্তক প্রকাশকদের মতে, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এখন নানা অজুহাত তোলা হচ্ছে। মুদ্রণকারীরা বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে দীর্ঘদিন যোগাযোগ করলেও কেউ তখন পাত্তা দেয়নি। ফলে এখন সবাইকে গ্যাঁড়াকলে পড়তে হয়েছে।
বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা মহাউত্সাহে স্কুলে গেলেও পড়াশোনা শুরু করতে পারছে না। সৃষ্টি হয়েছে মহা অনিশ্চয়তা। নতুন ক্লাসে বই না পেয়ে সৃষ্ট হতাশা কেমন হতে পারে, একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়। আর যারা পেয়েছে, তাদের কোনো বই নষ্ট হলে বা হারিয়ে গেলে সেটা কীভাবে সংগ্রহ করা হবে, সেটাও মাথায় আসে না। এ ধরনের জটিলতা থেকে মনে হয়, সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রচারণায় চমক সৃষ্টিতে যতটা গুরুত্ব দিয়েছে, বাস্তবায়নের ব্যাপারে ততটাই অবহেলা দেখিয়েছে। ক্ষমতাসীনরা এর সঙ্গে একমত না হলেও বাস্তবতা সেটাই প্রমাণ করে।
No comments