রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনদুর্ভোগ-এ অবস্থার নিরসন প্রয়োজন
একে তো রাজধানী ঢাকার যানজটে জনজীবন দুর্বিষহ, তার ওপর প্রায়ই থাকছে রাজনৈতিক কর্মসূচি। এই দিনগুলোয় এ শহর আক্ষরিক অর্থেই পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। বুধবার ছিল ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। এ দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজন করেছিল এক গণশোভাযাত্রার। এই শোভাযাত্রাকে ঘিরে ঢাকায় নেমেছিল মানুষের ঢল।
ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষের যে ঢল নামে তাতে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে রাজধানীর জনজীবন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাজার হাজার গাড়ি স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যানবাহনের অভাবে কর্মজীবী মানুষকে মাইলের পর মাইল হেঁটে ঘরে ফিরতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, দেশের অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে আসেন চিকিৎসা নিতে। এসব মানুষের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ রোগীও রয়েছে। অনেকেই রোগীর সেবা প্রদানের জন্য ঢাকার রাস্তায় যাতায়াত করে। এ মানুষগুলোর ভোগান্তি যেন সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। এসব নিয়ে সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়। ১২ মার্চ বিরোধী দল বিএনপি মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে। ১৪ মার্চ আওয়ামী লীগের পাল্টা মহাসমাবেশ রয়েছে। অনুমেয়, এ দুটি দিনেও ঢাকা আবার অচল হয়ে পড়বে। রাস্তাঘাট থাকবে অচল। অপরিমেয় শ্রমঘণ্টা রাস্তায় নষ্ট হবে।
নিশ্চয়ই একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকবে, গণসমাবেশের আয়োজন করবে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু যে জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি, সেই জনগণের স্বাভাবিক জীবন দুর্বিষহ করে নয়। দেশের কোনো রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় থেকে যানজটের মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। অথচ রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে মাঝে মাঝেই জনদুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের কাছে কাম্য নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং জনদুর্ভোগের কথা মাথায় রাখতে হবে। যে অঞ্চলগুলোয় সমাবেশ, মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়, সে অঞ্চল ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ফলে ঢাকার চারদিকে সমস্যা সৃষ্টি হয়। সুতরাং এখন যাঁরা গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেন, তাঁদের জন্য ভেবে দেখার সময় এসেছে_কী করে এ দুর্ভোগ থেকে জনগণকে রেহাই দেওয়া যায়। মহাসমাবেশের নামে এ ধরনের শোডাউনের পরিমাণ যতটা সম্ভব কমানো যায় কি না তা রাজনৈতিক দলগুলোকে ভেবে দেখতে হবে। দ্বিতীয়ত, বড় বড় সমাবেশের জন্য ঢাকার আশপাশে কোনো খোলা স্থান বেছে নেওয়াই শ্রেয়। সে ক্ষেত্রে অধিক লোকসমাগম যেমন সম্ভব, তেমনি ঢাকা শহরকে দুর্বিষহ যানজট সৃষ্টি থেকে বাঁচানো যেতে পারে। আমরা আশা করি, আগামী ১২ ও ১৪ মার্চ দুই রাজনৈতিক দলের যে কর্মসূচি রয়েছে তাতে দলগুলো সচেষ্ট থাকবে এ অচলাবস্থা নিরসনের জন্য। দুটি রাজনৈতিক দলই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এবং মানুষের জানমাল নিরাপদ রাখতে গভীরভাবে সচেতন থাকবে।
No comments