টাঙ্গাইলে তামাক চাষ-সুফলা মাটি শস্যেই হোক শ্যামল
টাঙ্গাইল জেলায় তামাক চাষ বৃদ্ধিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। গোড়াতে রংপুর, কুষ্টিয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো কয়েকটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। সেই বিস্তৃতিও এত ব্যাপক যে, নিছক উদ্বেগ প্রকাশই এর জন্য যথেষ্ট নয়।
স্থানীয়ভাবে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখে গেছে, ২০০৭-০৯ সালে ৬৮ শতাংশ হারে তামাক চাষ বেড়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন এক সময় যে বিপজ্জনক পর্যায়ে নেমে যেতে পারে, সেই হুশিয়ারি আমরা উচ্চারণ করতে চাই। বুধবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে স্পষ্ট যে, বেশি মুনাফাই কৃষককে তামাক চাষে আগ্রহী করে তুলছে। কিন্তু কেবল সাময়িক মুনাফার কারণে খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশ ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে দেওয়া যায় না। তামাক চাষের ফলে কীভাবে আমাদের ভূমি, অন্যান্য ফসল, উপকারী পোকা-মাকড় এমনকি মানুষের জীবন বিষিয়ে উঠছে তা কৃষকদের জানাতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, আন্তরিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিলে আমাদের কৃষক সমাজ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষায় মুনাফার মায়া ত্যাগ করবে। এটাও ভুলে গেলে চলবে না, তামাক কোম্পানিগুলো নানা চটকদার কর্মসূচি নিয়ে হাজির হয়। ফলে সহজ-সরল কৃষকের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। টাঙ্গাইলে চাষিদের তামাক উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দায়িত্বে অবহেলা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ আছে কি-না খতিয়ে দেখা জরুরি। তামাক চাষে ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নও জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা জানি, বিশ্বের অনেক দেশেই তামাক চাষ নিষিদ্ধ। এখানে সুলভ হলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক তামাক উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে। চাষের হার দ্রুত বৃদ্ধিতে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ পরিণত হতে পারে বিষাক্ত ভূমিতে। আমরা তা কোনোমতে হতে দিতে পারি না। আমাদের সুফলা মাটি শস্যেই শ্যামল হোক, তামাকের সবুজ মুখোশে নয়।
No comments