বাংলার 'অভিন্ন রূপ' by আসিফ আহমেদ

ছাত্রদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতার কারণ হলো রাজনীতি_ এমন একটি রায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। বাংলাদেশের হাইকোর্ট থেকে সাম্প্রতিক সময়ে জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যুতে রায় মিলেছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মধ্যে যে রেষারেষি-হানাহানি দেখা যায়, সে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাখলে এমন রায় আসতেই পারে।


কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রায়টি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার আদালত বলেছেন, কলেজের ভোটে অংশগ্রহণ করাই যেতে পারে; কিন্তু দেখতে হবে, সংসদ যেন শিক্ষা ও শিক্ষালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করে।
আদালত এখানেই থেমে থাকেননি। তারা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন পরিচালনার ভার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের ওপর ন্যস্ত হবে। মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের সুপারিশমতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ ভোটে পুলিশি ব্যবস্থা করতে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি তপেন সেন।
কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশকে রাজ্য সরকারের ওপর আস্থার অভাব হিসেবেই দেখছেন রাজনীতি ও প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তদের একাংশ। তাদের মতে, ছাত্র সংসদ ভোটে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাজ্য প্রশাসনের 'ব্যর্থতা'র কারণেই এমন নির্দেশ দেওয়া হলো। আনন্দবাজার লিখেছে, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থগিত থাকা সংসদ নির্বাচন এখন করা যাবে। নির্বাচনের দিন নির্ধারণ থেকে ফল ঘোষণা, যাবতীয় কাজ করবে রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতর। সংশিল্গষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ প্রশাসনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দিনে নির্বাচন আয়োজনে সমস্যা হলে প্রয়োজনে ওই দফতরই তা স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করবে, পরবর্তী দিনও ঠিক করবে।
পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে হিংসার সূত্রপাত নভেম্বরের শেষে। বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার সময় সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই প্রতিপক্ষকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিতে নানাভাবে প্রতিবন্ধক গড়ে তুলত। দেখা গেছে, ভোটার তালিকায় বিরোধীদের নাম নেই কিংবা প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের ভয়ভীতি দেখানো হয়। এভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার রেওয়াজও চালু হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের বিষয়টি পছন্দ ছিল না। তারা চাইছিল ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। কিন্তু উপায় যে ছিল না। তবে এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ জনগণ রাজ্য ক্ষমতা থেকে বিদায় করে দিল বামফ্রন্টকে। পরিবর্তনের ঝড় তুলে ক্ষমতায় এলেন মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু কোথায় পরিবর্তন? মানুষ স্বল্প সময়েই দেখছে_ যে লঙ্কায় যায়, সে-ই রাবণ হয়। প্রকৃতপক্ষে ভালোর দিকে তেমন কিছুই ঘটছে না।
বাংলাদেশের চিত্র তো ভিন্ন কিছু নয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রতিপক্ষকে ছাত্র সংসদে ভোটে প্রার্থী হতে দিত না। এমনকি এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দিতেই আপত্তি করত। এখন সময় ছাত্রলীগের। তাদের দল ক্ষমতায়। প্রতিপক্ষ ছাত্রদল বিতাড়িত সব ক্যাম্পাস থেকে। একক আধিপত্যে চলছে সবকিছু। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষও ছাত্রলীগকে সমীহ করে চলে। তাদের চটাতে গেলে নিজের আসন টলমল করে উঠবে, সে বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। অনেক প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একাধিক ভাগে বিভক্ত। বিরোধের কারণ সুযোগ-সুবিধার ভাগ-বাটোয়ারা। ছাত্র সংগঠন কাজ করবে শিক্ষার উন্নয়নের স্বার্থে_ এ চিন্তা তাদের নেই। মূল লক্ষ্য হচ্ছে দল যখন ক্ষমতায় তখন যেভাবে পারা যায় কিছু কামিয়ে নিতে হবে। ছাত্রদল যা যা করেছে, সেটা এখন করছে ছাত্রলীগ। দল ক্ষমতায় না থাকলে তারাও বিদায় নেবে একের পর এক ক্যাম্পাস থেকে তাতে সন্দেহ নেই। পশ্চিমবঙ্গে আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলাদেশেও এমনটি কি করা হবে? সেটা হলে দায়িত্ব কি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হবে, নাকি অন্য কোনো সংস্থাকে? পশ্চিমবঙ্গে পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার। বাংলাদেশের পুলিশকে এমন নির্দেশ দেওয়া হলে তারা কি সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে যায়, এমন কিছু করবে?

No comments

Powered by Blogger.