পঞ্চদশ সংশোধনী-বাঙালি জাত্যভিমান ও উপেক্ষিত আদিবাসী by ইলিরা দেওয়ান
গত ৩০ জুন বহুল আলোচিত পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী বিলটি সব জল্পনা-কল্পনা ও তর্ক-বিতর্ককে ডিঙিয়ে অবশেষে প্রধান বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভোটে পাস হয়ে গেল। ২৯১ জন সাংসদের বিপরীতে সংসদের একমাত্র স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিম বিলটির বিরোধিতা করেছিলেন।
ফলে ২৯১-১ ভোটে বহুল আলোচিত বিলটি পাস হয়ে যায়। একমাত্র স্বতন্ত্র সদস্যের ক্ষীণ ‘না’ সূচক আওয়াজ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারি দলের সদস্যদের কণ্ঠভোটের অতলে মিলিয়ে গিয়েছিল। উল্লেখ্য, মহাজোটের শরিক বাম দলগুলো সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ বহাল রাখা, রাষ্ট্রধর্ম ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল থাকার বিষয়গুলোর ওপর আপত্তি তুলেছে ও দেশের অপরাপর জাতিগুলোকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সংশোধনী প্রস্তাব এনেছিল। কিন্তু তাদের সেই প্রস্তাবগুলোও সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভারে টিকতে পারেনি। এ সংশোধনী বিলটি পাস হওয়ার পরই সংসদের একমাত্র স্বতন্ত্র সদস্য সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন। যেমনটি ১৯৭২ সালে তৎকালীন গণপরিষদের একমাত্র স্বতন্ত্র সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা খসড়া সংবিধান বিল পাসের সময় প্রতিবাদস্বরূপ ওয়াকআউট করেছিলেন। চার দশক পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো।
১৯৭২ সালের গণপরিষদে প্রবল বাঙালি জাতীয়তাবাদের কাছে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগোষ্ঠীগুলোর জন্য সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিটি অগ্রাহ্য হয়েছিল। উগ্র বাঙালি জাত্যভিমানের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ দীর্ঘ দুই যুগ পর্যন্ত গভীর ক্ষত বহন করেছিল। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের পর ধারণা করা হয়েছিল, এই ক্ষত শুকানোর উপায় বুঝি বেরিয়েছে! কিন্তু এই ক্ষতের ওপর হরেক রকমের মলমের প্রলেপ পড়তে পড়তে তা আজ দগদগে ঘা-তে পরিণত হয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনী বিলে নাগরিকত্ব প্রশ্নে বলা হয়েছে, এখন থেকে বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে ‘বাঙালি’ বলে পরিচিত হবে। সুতরাং এখন থেকে দেশের অপরাপর জাতিগোষ্ঠীসমূহ জাতি হিসেবে ‘বাঙালি’ বলে গণ্য হবে! একই সঙ্গে তারা এখন দুই পরিচয় বহন করবে ‘বাঙালি জাতি’ ও ‘উপজাতি’! বাহাত্তরে একই ধারার (৬ নম্বর ধারা) ওপর আলোচনা করতে গিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাও এ ধারার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর দাবিকে পাশ কাটিয়ে সেদিনও এ ধারাটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এ ছাড়া সংশোধিত বিলের ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদের সঙ্গে ২৩ক একটি নতুন অনুচ্ছেদ সন্নিবেশ করা হয়েছে, যেখানে এ দেশের অপরাপর জাতিগুলোকে ‘উপজাতি’, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ ও ‘সম্প্রদায়’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ২০১০ সালে অসম্মানজনক ‘উপজাতি’ শব্দটিকে বিসর্জন দিয়ে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০’ সংসদে পাস করার মধ্য দিয়ে দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শব্দটি চালু করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর আবারও পরিত্যক্ত সেই ‘উপজাতি’ শব্দটিকে সংবিধানে পাকাপোক্তভাবে পুনঃ স্থাপনের মধ্য দিয়ে এটাই আরেকবার প্রমাণিত হলো—আদিবাসী বা পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে কোনো সরকারেরই দৃষ্টি উদার নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ সম্প্রদায় ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টান হয়ে যাচ্ছে, তাই অদূর ভবিষ্যতে পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে যে দীর্ঘদিন ধরে ইসলামীকরণ প্রক্রিয়া চলছে, সে বিষয়ে কখনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ‘উপজাতীয় মুসলিম কল্যাণ সংস্থা’র কথা উল্লেখ করতে পারি। এ সংস্থার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৮৮/০৪। এখনো এ সংস্থাটি লামা উপজেলা সদরে অফিস নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ সংস্থায় বর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন মো. রাশেদুল ইসলাম ত্রিপুরা। ‘প্রপার্টিজ প্রজেক্ট এরিয়া’ নামের এক প্রকল্পের মাধ্যমে বান্দরবানের লামায় ধর্মান্তরিত দরিদ্র ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকজনকে ৩০৬ নম্বর ফাইতং মৌজায় জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের তালিকায় দেখা যায়, মোহাম্মদ আলী ত্রিপুরা, পিতার নাম দুর্গারাই ত্রিপুরা, যার হোল্ডিং নম্বর ৪১৭, দাগ নম্বর ১৬/৮০০১। কাজেই এ পরিকল্পিত ইসলামীকরণ সম্পর্কেও আমাদের সমানভাবে সজাগ দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
সংবিধান সংশোধনের বিশেষ কমিটি সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করলেও কমিটির পক্ষ থেকে দেশের অপরাপর জাতিগুলোর কোনো দল, সংগঠন বা ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে বলে শোনা যায়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ও ক্ষমতা গ্রহণের পর পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন ও আদিবাসী অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে বারবার তাদের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটালেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বরাবরই গড়িমসি ভাব লক্ষণীয়। ‘আদিবাসী’ শব্দটিকে বাদ দিয়ে ‘উপজাতি’, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী,’ ‘সম্প্রদায়’ হিসেবে পুনর্বহাল করার মধ্য দিয়ে ৪০ বছর আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি এবং ভুল সংশোধনের সুযোগ আরেকবার হাতছাড়া হলো বলে অনেকে মনে করছেন।
১৯৭২ সালে সংবিধান রচনাকালে যদি সামান্যতম উদারতাও দেখানো হতো, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সব জাতিসত্তার সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থান আজ অন্যরূপে বিকশিত হতে পারত! বাহাত্তরের সেদিনের ভুলের জন্য দীর্ঘ দুই যুগের সশস্ত্র আন্দোলনের পরিণতিতে রাষ্ট্র ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলো যে ক্ষতির মাশুল গুনেছে, আজ ৪০ বছর পর সেই ভুল শোধরানোর সুযোগকে আবারও কেন অবজ্ঞা ও অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হলো, এ পরিস্থিতি তৈরির পশ্চাতে কারা বেশি উৎসাহিত ছিল—এসব প্রশ্নের উত্তর যত দিন উন্মোচিত হবে না, তত দিন দেশের অপরাপর জাতিগুলোর কাছে এ সংশোধিত বিলটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। অথচ এই পঞ্চদশ সংশোধনী বিলে যদি তাদের সম্মতি ও অংশগ্রহণ থাকত, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের যে প্রান্তে আদিবাসীরা রয়েছে, সেখানে আজ উৎসবের আমেজ বয়ে যেত!
বাংলার জনপদে কে আগে-পরে এসেছে, সেটি নিয়ে আর বিতর্কে না গিয়ে আমাদের মানসিকতাকে আরেকটু উদার করতে হবে। এখন যে কাজটি সুচারুভাবে করতে হবে তা হলো, প্রবল বাঙালি জাত্যভিমানকে এক পাশে সরিয়ে রেখে দেশের অপরাপর জাতিগুলোর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে তাদের স্বাতন্ত্র্যবোধকে যথাযথভাবে টিকিয়ে রাখতে সরকারকে আরও বেশি আন্তরিক ও উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে।
ইলিরা দেওয়ান: মানবাধিকারকর্মী।
ilira.dewan@gmail.com
১৯৭২ সালের গণপরিষদে প্রবল বাঙালি জাতীয়তাবাদের কাছে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগোষ্ঠীগুলোর জন্য সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিটি অগ্রাহ্য হয়েছিল। উগ্র বাঙালি জাত্যভিমানের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ দীর্ঘ দুই যুগ পর্যন্ত গভীর ক্ষত বহন করেছিল। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের পর ধারণা করা হয়েছিল, এই ক্ষত শুকানোর উপায় বুঝি বেরিয়েছে! কিন্তু এই ক্ষতের ওপর হরেক রকমের মলমের প্রলেপ পড়তে পড়তে তা আজ দগদগে ঘা-তে পরিণত হয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনী বিলে নাগরিকত্ব প্রশ্নে বলা হয়েছে, এখন থেকে বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে ‘বাঙালি’ বলে পরিচিত হবে। সুতরাং এখন থেকে দেশের অপরাপর জাতিগোষ্ঠীসমূহ জাতি হিসেবে ‘বাঙালি’ বলে গণ্য হবে! একই সঙ্গে তারা এখন দুই পরিচয় বহন করবে ‘বাঙালি জাতি’ ও ‘উপজাতি’! বাহাত্তরে একই ধারার (৬ নম্বর ধারা) ওপর আলোচনা করতে গিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাও এ ধারার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর দাবিকে পাশ কাটিয়ে সেদিনও এ ধারাটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এ ছাড়া সংশোধিত বিলের ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদের সঙ্গে ২৩ক একটি নতুন অনুচ্ছেদ সন্নিবেশ করা হয়েছে, যেখানে এ দেশের অপরাপর জাতিগুলোকে ‘উপজাতি’, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ ও ‘সম্প্রদায়’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ২০১০ সালে অসম্মানজনক ‘উপজাতি’ শব্দটিকে বিসর্জন দিয়ে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০’ সংসদে পাস করার মধ্য দিয়ে দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শব্দটি চালু করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর আবারও পরিত্যক্ত সেই ‘উপজাতি’ শব্দটিকে সংবিধানে পাকাপোক্তভাবে পুনঃ স্থাপনের মধ্য দিয়ে এটাই আরেকবার প্রমাণিত হলো—আদিবাসী বা পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে কোনো সরকারেরই দৃষ্টি উদার নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ সম্প্রদায় ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টান হয়ে যাচ্ছে, তাই অদূর ভবিষ্যতে পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে যে দীর্ঘদিন ধরে ইসলামীকরণ প্রক্রিয়া চলছে, সে বিষয়ে কখনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ‘উপজাতীয় মুসলিম কল্যাণ সংস্থা’র কথা উল্লেখ করতে পারি। এ সংস্থার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৮৮/০৪। এখনো এ সংস্থাটি লামা উপজেলা সদরে অফিস নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ সংস্থায় বর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন মো. রাশেদুল ইসলাম ত্রিপুরা। ‘প্রপার্টিজ প্রজেক্ট এরিয়া’ নামের এক প্রকল্পের মাধ্যমে বান্দরবানের লামায় ধর্মান্তরিত দরিদ্র ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকজনকে ৩০৬ নম্বর ফাইতং মৌজায় জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের তালিকায় দেখা যায়, মোহাম্মদ আলী ত্রিপুরা, পিতার নাম দুর্গারাই ত্রিপুরা, যার হোল্ডিং নম্বর ৪১৭, দাগ নম্বর ১৬/৮০০১। কাজেই এ পরিকল্পিত ইসলামীকরণ সম্পর্কেও আমাদের সমানভাবে সজাগ দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
সংবিধান সংশোধনের বিশেষ কমিটি সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করলেও কমিটির পক্ষ থেকে দেশের অপরাপর জাতিগুলোর কোনো দল, সংগঠন বা ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে বলে শোনা যায়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ও ক্ষমতা গ্রহণের পর পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন ও আদিবাসী অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে বারবার তাদের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটালেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বরাবরই গড়িমসি ভাব লক্ষণীয়। ‘আদিবাসী’ শব্দটিকে বাদ দিয়ে ‘উপজাতি’, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী,’ ‘সম্প্রদায়’ হিসেবে পুনর্বহাল করার মধ্য দিয়ে ৪০ বছর আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি এবং ভুল সংশোধনের সুযোগ আরেকবার হাতছাড়া হলো বলে অনেকে মনে করছেন।
১৯৭২ সালে সংবিধান রচনাকালে যদি সামান্যতম উদারতাও দেখানো হতো, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সব জাতিসত্তার সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থান আজ অন্যরূপে বিকশিত হতে পারত! বাহাত্তরের সেদিনের ভুলের জন্য দীর্ঘ দুই যুগের সশস্ত্র আন্দোলনের পরিণতিতে রাষ্ট্র ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলো যে ক্ষতির মাশুল গুনেছে, আজ ৪০ বছর পর সেই ভুল শোধরানোর সুযোগকে আবারও কেন অবজ্ঞা ও অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হলো, এ পরিস্থিতি তৈরির পশ্চাতে কারা বেশি উৎসাহিত ছিল—এসব প্রশ্নের উত্তর যত দিন উন্মোচিত হবে না, তত দিন দেশের অপরাপর জাতিগুলোর কাছে এ সংশোধিত বিলটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। অথচ এই পঞ্চদশ সংশোধনী বিলে যদি তাদের সম্মতি ও অংশগ্রহণ থাকত, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের যে প্রান্তে আদিবাসীরা রয়েছে, সেখানে আজ উৎসবের আমেজ বয়ে যেত!
বাংলার জনপদে কে আগে-পরে এসেছে, সেটি নিয়ে আর বিতর্কে না গিয়ে আমাদের মানসিকতাকে আরেকটু উদার করতে হবে। এখন যে কাজটি সুচারুভাবে করতে হবে তা হলো, প্রবল বাঙালি জাত্যভিমানকে এক পাশে সরিয়ে রেখে দেশের অপরাপর জাতিগুলোর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে তাদের স্বাতন্ত্র্যবোধকে যথাযথভাবে টিকিয়ে রাখতে সরকারকে আরও বেশি আন্তরিক ও উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে।
ইলিরা দেওয়ান: মানবাধিকারকর্মী।
ilira.dewan@gmail.com
No comments