আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত-দেনমোহর পরিশোধ by স্বপন চৌধুরী
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা চরের ১৩৯ নারী বুঝে পেলেন দেনমোহর। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নে আয়োজিত এক মেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে দেনমোহর পরিশোধ করেন বিভিন্ন বয়সের স্বামীরা।
ইউনিয়নের দুর্গম চর পশ্চিম ইচলী বাগেরহাট আশ্রয়ণ মাঠে গতকাল সকাল ৯টা থেকেই চরাঞ্চলের বিভিন্ন বয়সের দম্পতিরা আসতে থাকেন। গরু-ছাগল, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ স্বামীরা আসেন তাঁদের স্ত্রীদের দেনমোহর পরিশোধ করতে।
চর ইশোরকোল এলাকার হাফেজ উদ্দিন (৫৫) আসেন স্ত্রী লাইলী বেগমকে সঙ্গে নিয়ে। ২২ বছর আগে পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা এলাকার লাইলীকে বিয়ে করেন হাফেজ উদ্দিন। এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছে তাঁদের। বিয়েতে দেনমোহর ধার্য করা ছিল ৫০ হাজার টাকা। ২০ হাজার টাকা আগেই পরিশোধ করেন হাফেজ উদ্দিন। বাকি ৩০ হাজার টাকার মধ্যে স্ত্রীকে ১৫ হাজার টাকার একটি ঘর দিয়েছেন এবং ১৫ হাজার টাকার একটি গরু গতকাল নিয়ে আসেন স্ত্রীকে দেওয়ার জন্য। জয়রামওঝা চরের আনোয়ারুল ইসলাম (৩৩) ১৫ বছর আগে বিয়ে করেন একই এলাকার ময়না বেগমকে। তাঁদের দুটি মেয়ে রয়েছে। বিয়েতে দেনমোহর ধার্য ছিল ২৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। আগেই তিনি ২০ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার দিয়েছেন স্ত্রীকে। গতকাল বাকি ৯ হাজার ৯৯৯ টাকা বুঝিয়ে দেন স্ত্রীর হাতে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী দেনমোহরের টাকা স্ত্রীর প্রাপ্য। ইচ্ছা থাকলেও এত দিন দিতে পারিনি। চর জীবিকায়ন প্রকল্পের লোকজনের সহায়তায় আজ তা পূর্ণ হলো।' পশ্চিম ইচলী গ্রামের করমত আলীর (৭০) সঙ্গে ৪৫ বছর আগে বিয়ে হয় একই এলাকার জুলেখা বেগমের। তখন দেনমোহর ছিল তিন হাজার ১০১ টাকা। বিয়ের সময় স্বর্ণালংকার (নাক ফুল) বাবদ দেওয়া হয় ১২৫ টাকা। বাকি দুই হাজার ৯৭৬ টাকা পরিশোধে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে করমত আলী দুটি ছাগল স্ত্রীর হাতে তুলে দেন। করমত আলী বলেন, 'আইজ-কাইল করি মরার সময় হইলো। স্ত্রীকে দেনমোহর পরিশোধ করি ঋণ মুক্ত হইলাম।' চর ইশোরকোলের আনোয়ারুল ইসলাম (২৬) পাঁচ বছর আগে নিয়ে করেন মহিষখোঁচা এলাকার আরজিনা বেগমকে। বিয়ের সময় দেনমোহর ধরা হয় ৩০ হাজার টাকা। স্বর্ণালংকার বাবদ আগেই ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন আনোয়ারুল। বাকি ২০ হাজার টাকা পরিশোধে গতকাল স্ত্রীর নামে সাড়ে ১৩ শতক জমি লিখে দেন তিনি। আনোয়ারুলের স্ত্রী আরজিনা বলেন, 'বাঁচি থাকতে ওমরা (স্বামী) মোক দেনমোহর পরিশোধ করি দেইল। ইয়ার চ্যায়া শান্তি আর কী আছে!' গতকাল ওই আয়োজনে তিস্তার চরের ১৩৯ জন নারীকে তাঁদের স্বামীরা দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করেন।
মেলার আয়োজকরা জানান, ১৩৯ জন নারীর মধ্যে তাঁদের স্বামীরা দেনমোহর বাবদ ৯৬ জনকে নগদ ১৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬ টাকা, ৩৪ জনকে গরু বাবদ তিন লাখ ৬৫ হাজার ৪২ টাকা, একজনকে ছাগল বাবদ দুই হাজার ৯৭৬ টাকা, স্বর্ণালংকার বাবদ দুজনকে ২৯ হাজার ৬৭০ টাকা এবং জমি বাবদ ছয়জনকে এক লাখ ২৪ হাজার ৪০০ টাকা প্রদান করেছেন। গতকালের ওই আয়োজনে সর্বমোট ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ১৪৪ টাকার দেনমোহর পরিশোধ করা হয়। নারীদের প্রাপ্য নিশ্চিত করতে এ ব্যাপারে কর্মসূচির আওতায় চরের সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে তোলা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়সাল হাসান। ইউপি সদস্য আবদুস ছামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন মেলার আয়োজনকারী সংস্থা 'আরডিআরএস বাংলাদেশ'-এর চর জীবিকায়ন কর্মসূচির সেলিম মোড়ল, ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া, আবদুল মোন্নাফ, পূর্ব ইচলী গ্রাম কমিটির সভাপতি আবুজার রহমান, আরডিআরএসের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা জীবন কুমার পোদ্দার, কারিগরি কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দাস প্রমুখ। দিনব্যাপী আয়োজিত মেলায় অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন স্টল স্থান পায়। পরে কর্মসূচির নিজস্ব শিল্পীদের সমন্বয়ে পরিবেশন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
চর ইশোরকোল এলাকার হাফেজ উদ্দিন (৫৫) আসেন স্ত্রী লাইলী বেগমকে সঙ্গে নিয়ে। ২২ বছর আগে পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা এলাকার লাইলীকে বিয়ে করেন হাফেজ উদ্দিন। এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছে তাঁদের। বিয়েতে দেনমোহর ধার্য করা ছিল ৫০ হাজার টাকা। ২০ হাজার টাকা আগেই পরিশোধ করেন হাফেজ উদ্দিন। বাকি ৩০ হাজার টাকার মধ্যে স্ত্রীকে ১৫ হাজার টাকার একটি ঘর দিয়েছেন এবং ১৫ হাজার টাকার একটি গরু গতকাল নিয়ে আসেন স্ত্রীকে দেওয়ার জন্য। জয়রামওঝা চরের আনোয়ারুল ইসলাম (৩৩) ১৫ বছর আগে বিয়ে করেন একই এলাকার ময়না বেগমকে। তাঁদের দুটি মেয়ে রয়েছে। বিয়েতে দেনমোহর ধার্য ছিল ২৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। আগেই তিনি ২০ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার দিয়েছেন স্ত্রীকে। গতকাল বাকি ৯ হাজার ৯৯৯ টাকা বুঝিয়ে দেন স্ত্রীর হাতে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী দেনমোহরের টাকা স্ত্রীর প্রাপ্য। ইচ্ছা থাকলেও এত দিন দিতে পারিনি। চর জীবিকায়ন প্রকল্পের লোকজনের সহায়তায় আজ তা পূর্ণ হলো।' পশ্চিম ইচলী গ্রামের করমত আলীর (৭০) সঙ্গে ৪৫ বছর আগে বিয়ে হয় একই এলাকার জুলেখা বেগমের। তখন দেনমোহর ছিল তিন হাজার ১০১ টাকা। বিয়ের সময় স্বর্ণালংকার (নাক ফুল) বাবদ দেওয়া হয় ১২৫ টাকা। বাকি দুই হাজার ৯৭৬ টাকা পরিশোধে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে করমত আলী দুটি ছাগল স্ত্রীর হাতে তুলে দেন। করমত আলী বলেন, 'আইজ-কাইল করি মরার সময় হইলো। স্ত্রীকে দেনমোহর পরিশোধ করি ঋণ মুক্ত হইলাম।' চর ইশোরকোলের আনোয়ারুল ইসলাম (২৬) পাঁচ বছর আগে নিয়ে করেন মহিষখোঁচা এলাকার আরজিনা বেগমকে। বিয়ের সময় দেনমোহর ধরা হয় ৩০ হাজার টাকা। স্বর্ণালংকার বাবদ আগেই ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন আনোয়ারুল। বাকি ২০ হাজার টাকা পরিশোধে গতকাল স্ত্রীর নামে সাড়ে ১৩ শতক জমি লিখে দেন তিনি। আনোয়ারুলের স্ত্রী আরজিনা বলেন, 'বাঁচি থাকতে ওমরা (স্বামী) মোক দেনমোহর পরিশোধ করি দেইল। ইয়ার চ্যায়া শান্তি আর কী আছে!' গতকাল ওই আয়োজনে তিস্তার চরের ১৩৯ জন নারীকে তাঁদের স্বামীরা দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করেন।
মেলার আয়োজকরা জানান, ১৩৯ জন নারীর মধ্যে তাঁদের স্বামীরা দেনমোহর বাবদ ৯৬ জনকে নগদ ১৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬ টাকা, ৩৪ জনকে গরু বাবদ তিন লাখ ৬৫ হাজার ৪২ টাকা, একজনকে ছাগল বাবদ দুই হাজার ৯৭৬ টাকা, স্বর্ণালংকার বাবদ দুজনকে ২৯ হাজার ৬৭০ টাকা এবং জমি বাবদ ছয়জনকে এক লাখ ২৪ হাজার ৪০০ টাকা প্রদান করেছেন। গতকালের ওই আয়োজনে সর্বমোট ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ১৪৪ টাকার দেনমোহর পরিশোধ করা হয়। নারীদের প্রাপ্য নিশ্চিত করতে এ ব্যাপারে কর্মসূচির আওতায় চরের সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে তোলা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়সাল হাসান। ইউপি সদস্য আবদুস ছামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন মেলার আয়োজনকারী সংস্থা 'আরডিআরএস বাংলাদেশ'-এর চর জীবিকায়ন কর্মসূচির সেলিম মোড়ল, ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া, আবদুল মোন্নাফ, পূর্ব ইচলী গ্রাম কমিটির সভাপতি আবুজার রহমান, আরডিআরএসের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা জীবন কুমার পোদ্দার, কারিগরি কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দাস প্রমুখ। দিনব্যাপী আয়োজিত মেলায় অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন স্টল স্থান পায়। পরে কর্মসূচির নিজস্ব শিল্পীদের সমন্বয়ে পরিবেশন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
No comments