চরাচর-ভাসমান খাঁচায় মাছের চাষ by বনরূপা

খবরটি আকার ও আঙ্গিকে ছোট হলেও বড় আশা-জাগানিয়া। মানুষ বসে নেই। অর্থনৈতিক শক্তি সঞ্চয় ও সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিতকল্পে মানুষ নতুন নতুন পথের সন্ধান করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য মানুষ নানা রকম চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এসব ক্ষেত্রে দরকার ব্যাপক সরকারি সহযোগিতা ও নানা রকম প্রণোদনা।


কিন্তু সে রকম কিছু এখনো যথেষ্ট পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মানুষ নিজ চেষ্টায়ই আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র খুঁজে নিচ্ছে। এর ইতিবাচক প্রভাব সমাজ ও অর্থনীতিতে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। সিলেটের ভাটি অঞ্চলে নদীতে ভাসমান খাঁচা বানিয়ে মাছের চাষ করে দরিদ্রতার বৃত্ত ভেঙে অনেকেই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলেও এমন উদ্যোগ চোখে পড়ে। ফিলিপাইনে অনেক আগেই এমন কার্যক্রম শুরু হয় এবং তা ব্যাপকভাবে সফলও হয়েছে। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য এমন কর্মকাণ্ডের জন্য খুব সহায়ক। যদিও দেশের সিংহভাগ নদনদীর চিত্র বিপন্ন, তবু সিলেটের ভাটি অঞ্চল কিংবা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জনপদে এমন কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটানোর এখনো অবকাশ আছে এবং এর বিস্তার ঘটালে দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয় হয়ে উঠবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাসমান খাঁচায় মাছচাষের সুবিধা অনেক। প্রথমত, খরচ কম; দ্বিতীয়ত, মাছের জন্য যে খাদ্য সরবরাহ করা হবে, এর অপচয়ও অনেক কম হবে। নদনদীর গতিপথে বাধা সৃষ্টি না করে পরিকল্পিত উপায়ে এই উদ্যোগের সম্প্রসারণ জরুরি। তা ছাড়া বড় বড় হাওর কিংবা বিলেও এমন কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। তাতে দুই স্তরবিশিষ্ট মাছচাষের উপযোগী ক্ষেত্র তৈরি করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ কাজে মানুষকে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করা গেলে এর সুফল নিশ্চয়ই উল্লেখযোগ্য হিসেবে ধরা দেবে। এ দেশের মানুষ কর্মপাগল। চাই শুধু সঠিক পরিকল্পনা, যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা আর দিকনির্দেশনা। মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে আশু একটি কর্মশালার আয়োজন করে এর সম্ভাবনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিতে পারে। দেশে মাছের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ ক্রমেই বিলুপ্ত হচ্ছে নানা কারণে। মাছও হতে পারে আমাদের রপ্তানিযোগ্য অন্যতম একটি সম্পদ। রপ্তানি করতে হলে ব্যাপক হারে বাড়াতে হবে উৎপাদন। আর উৎপাদন বাড়াতে হলে বিকল্প পথের সন্ধান করতেই হবে। ভাসমান খাঁচায় মাছের চাষ হতে পারে এ ক্ষেত্রে অনন্য উদ্যোগ। তবে এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগের তরফে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। দারিদ্র্য ও কর্মহীনের এ দেশে এমন উদ্যোগ নেওয়া অবশ্যই জরুরি।
বনরূপা

No comments

Powered by Blogger.