কীর্তিমতী নারী-নারীশক্তির জয়গান

যারা নিরন্তর কাজ করে চলেছেন, নিজের চিন্তা ও তৎপরতার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন পারিপার্শ্বকে, তাদের প্রেরণার উৎসস্থল কোথায়? সামাজিক প্রেক্ষাপট বিচার করলে স্পষ্ট যে, আত্মশক্তিই এখানে কৃতী মানুষের প্রথম প্রণোদনা। সমাজ যখন আত্মপরতা, লোভ, সম্পদ লাভের বাসনা, বিদ্বেষ, ঘৃণার মতো বিষয়ে পরিপূর্ণ; তখন ভেতরের শক্তি ছাড়া কে আর


মানুষকে প্রেরণা জোগাবে? ফলে আমাদের সমাজে যারা আলো ছড়াচ্ছেন, পরার্থপরতায় নিবেদিত হয়েছেন, সেবার আদর্শকে গ্রহণ করেছেন তারা প্রথমত নিজের শক্তিতেই বলীয়ান। শুধু অপরের মঙ্গল কামনায় নিবেদিত মানুষই নন, এ সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে যারা কাজ দিয়ে, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তাদের সবার অন্তর্গত প্রেরণা ভেতরের ওই আলো। কৃতীরা কাজ করে যান_ এটাই তাদের সাধনা। কিন্তু সমাজের কর্তব্য কী? একটি সমাজ যদি যথার্থ কৃতীদের সম্মান দিতে না পারে, অনুসরণীয় ব্যক্তিদের চিনতে না পারে, প্রকৃত বীরদের তুলে ধরতে না পারে পরের প্রজন্মের কাছে_ তবে সে সমাজে স্থবিরতা নেমে আসা খুব স্বাভাবিক। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজে সম্মান, পুরস্কার ও স্বীকৃতির আয়োজনগুলো পর্যাপ্ত নয়। অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো বিতর্কিতও। যোগ্য ব্যক্তিদের পাশে ফেলে অযোগ্যদের স্বীকৃতিদানের প্রবণতাও দেখা যায় বহু ক্ষেত্রে। তবু কিছু ক্ষেত্রে আশাপ্রদ উদ্যোগ আছে। সমাজের কীর্তিমান-কীর্তিমতীদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এখন অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। শ্রমসাধ্য তৎপরতা, প্রচার ও জনমত যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে কৃতী ব্যক্তিদের কথা। প্রতি বছরের এমন কয়েকটি আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি এমন অনেক উজ্জ্বল মানুষের কথা, যারা দেশের শিকড়ে জল ঢালছেন। তিল তিল করে গড়ে তুলছেন বাংলাদেশ। রচনা করে দিচ্ছেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি। সাদা মানুষ, সেরা মা, কীর্তিমতী নারী_ এমনই কিছু আয়োজন। এবারের নারী দিবসে দেওয়া হলো রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা-২০১১। রাজধানীর বাইরের তিনজন নারীর অবদান বিবেচনা করে এ সম্মান দেওয়া হলো। এভাবেই বছরের পর বছর এ সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। নানা সামাজিক বাধা পেরিয়ে রীতিমতো সংগ্রাম করে যারা কাজ করে চলেছেন, তারা নিশ্চয়ই কোনো স্বীকৃতির আশায় তা করেননি। পরহিতব্রত থেকেই মাঠ পর্যায়ে তারা নিবেদিত হয়েছেন নিজেদের কাজে। কিন্তু তাদের চিনে নিয়ে স্বীকৃতি দেওয়ার দায় সমাজের। দেশের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নিজেদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই স্বীকৃতির কাজে এগিয়ে আসে তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কৃতী মানুষদের কথা পেঁৗছাবে। বিশেষ করে সফল ও অনুসরণীয় নারীরা পরবর্তী প্রজন্মের নারীদের রোলমডেল হিসেবে বিবেচিত হবেন, তাদের অগ্রযাত্রার পথে সহায়ক হবেন। আমাদের সমাজে আজ নারীশক্তির নতুন উত্থান প্রয়োজন। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে নারীর স্বীকৃতি মিললে তবেই ভবিষ্যতে এমন একটি সময় আসতে পারে, যখন পুরুষের সঙ্গে সমতাভিত্তিক একটি প্রেক্ষাপটে নারীরা উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বড় একটি ভূমিকা রাখতে পারবে। ভবিষ্যতের সেই আলোকিত দিনই আমাদের প্রত্যাশা। ছোট-বড় উদ্যোগ নিয়ে সবার মিলিত শক্তি নিয়েই সে পথে এগোতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.