বিশেষ সাক্ষাৎকার-দীর্ঘদিনের সন্দেহ অবিশ্বাস কাটাতে সময় লাগছে by গওহর রিজভী
দীর্ঘ তিন দশকের পেশাগত জীবনে ড. গওহর রিজভী চারটি মহাদেশের খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেন। ২০০৯ সালের এপ্রিলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার পদে যোগ দেন। এর আগে তিনি ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী গওহর রিজভী অক্সফোর্ডের ট্রিনিটি কলেজ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। দীর্ঘ প্রায় দুই দশক তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক, সেন্ট এন্টোনিস কলেজসহ যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেন। এ ছাড়া তিনি কাজ করেছেন ফোর্ড ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লি ও নিউইয়র্ক এবং এশিয়া সোসাইটির হয়ে নিউইয়র্কে। গওহর রিজভী ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে জাতিসংঘ হাইকমিশনারের বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান ও রাহীদ এজাজ
প্রথম আলো ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে, ট্রানজিট মাশুল নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যথেষ্ট মাশুল না পেলে ট্রানজিট দিয়ে আমাদের লাভ কী?
গওহর রিজভী ট্রানজিট কি একতরফা হচ্ছে? ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটা ছোট অংশ ট্রানজিট। বিষয়টিকে আন্তসংযোগের প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। আজকের দিনে আন্তসংযোগ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত। আমরা যা করছি, সেটা হলো বাংলাদেশকে সারা পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত করা। আমরা কানেকটিভিটি শুধু ভারতের সঙ্গেই করছি না, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও করেছি। আশা করছি, মিয়ানমারের সঙ্গে করব। মিয়ানমারের মাধ্যমে চীনের কুনমিংয়ের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করব। রাস্তাঘাট, সমুদ্র, টেলিফোন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইটসহ নানা উপায়ে আমরা যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছি।
শুধু ভারতকে ট্রানজিট দিচ্ছি না, আমরাও তো পাচ্ছি। আর এটা দেওয়া-নেওয়ার বিষয় নয়। আমাদের সার্বিক উন্নয়নের যে স্বপ্ন, তারই অংশ। আমরা কেন বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকব? ট্রানজিট হলো দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয়ভাবে লাভবান হওয়ার একটি উপায়। আর ট্রানজিট মাশুলের বিষয়টি আপনি সংকীর্ণভাবে দেখতে পারেন, আবার সামগ্রিকভাবেও দেখতে পারেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি ও গণমাধ্যমগুলো হিসাব করছে, আমরা কত ট্রানজিট মাশুল পাব, আমাদের এ ট্রানজিট ব্যবস্থার উন্নয়নে কত খরচ হবে। আমি মনে করি, এটা সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ। এটাকেও যদি ভিত্তি ধরি, আমাদের লাভ বিরাট। অনেকে বলেছেন, ভারত ট্রানজিট মাশুল দেবে না। এটা ঠিক নয়।
প্রথম আলো এটা বোধহয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছিলেন?
গওহর রিজভী আমাদের সরকার থেকে এ কথাটি কেউই বলেননি। ভারত সরকার থেকেও এ কথাটি কেউ বলেনি। আমি এটুকুই বলতে পারি, ট্রানজিট মাশুল না দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা বলেছি, নিয়মানুযায়ী ট্যাক্স, কাস্টমস শুল্ক ট্রানজিট পণ্যের ওপর নেওয়া যায় না। পৃথিবীর কোথাও নেওয়া হয় না। তারা ভাড়া দিচ্ছে, ট্রানজিট মাশুল দিচ্ছে, ব্যবহারের মাশুল দিচ্ছে, অবকাঠামো উন্নয়নের বিনিয়োগে অবদান রাখছে।
ট্রানজিটের বিষয়টিকে ইউরোপ ও আমেরিকায় মাশুলের বিনিময়ে যেসব সড়কে যানবাহন চলে, তার প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। যত বেশি যানবাহন চলবে, তত বেশি ফি পাব। আমরা যে বিনিয়োগের কথা বলছি, এর তো মূল্যাপকর্ষণ (ডিপ্রেসিয়েশন) খরচও আছে। পরিবেশের ক্ষতির জন্য, পার্কিংয়ের জন্য মাশুল ধরতে হবে। এভাবে খুঁটিনাটি সবকিছুর হিসাব করেই মাশুলের একটি হার নির্ধারণ করা হবে। তবে যে মাশুল নির্ধারণ করব, সেটা পরিবর্তনযোগ্য। দুই বছর পর সেটা আবার বাড়তে পারে।
প্রথম আলো ভারত বলছে ট্রানজিটের যে মাশুল নির্ধারিত হবে, তা যেন যৌক্তিক হয়। তার মানে এ নিয়ে তাদের কোনো আশঙ্কা আছে?
গওহর রিজভী ভারত কী বলছে তা আমি জানি না। ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দেওয়ার জন্য আমাদের একটা মাশুল নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু টোল রাস্তা খুলে বসে থাকলে তো চলবে না, ওটা তো ব্যবহার করতে হবে। একটা মার্কেট ফোর্সও এখানে কাজ করে। ওরা তখনই আমাদের রাস্তা ব্যবহার করবে, যখন আমরা ভালো সার্ভিস দেব, ভালো অবকাঠামোগত সুবিধা দেব। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তাদের পণ্য পরিবহনের সুযোগ করে দেব। এসবের পর যদি তারা দেখে যে সুবিধা পাচ্ছে, তবেই তো আমাদের রাস্তাগুলো ওরা ব্যবহার করবে। এ জন্য সব দিক থেকেই আমাদের প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে। বাজারের চাহিদা, বাস্তবতা সব মিলিয়ে আমাদের নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে হবে।
আরেকটা কথা এই যে, আমরা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন করছি, এটা কি শুধু ভারত, নেপাল ও ভুটানের জন্য করছি? এই অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যও তো প্রচুর বাড়বে। ট্রানজিটের কারণে বাণিজ্য বাড়বে। আমাদের রপ্তানি বাড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।
প্রথম আলো আমরা সারা বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা বলছি, কিন্তু এত দিনেও ট্রানজিট নীতিমালা ও রূপরেখা চুক্তি কেন করতে পারলাম না?
গওহর রিজভী ট্রানজিট নীতিমালা কী হবে, সেটা ঠিক করতে কোর কমিটি নামে একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। তবে মনে রাখতে হবে, গত ৩৭/৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বেশ খারাপ গিয়েছে। মাঝেমধ্যে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখন যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন, ১৫ মাসে সবকিছু হলো না কেন, সেটি সমীচীন হবে না। একটু সময় লাগবে।
গত বছরের জানুয়ারিতে দুই প্রধানমন্ত্রী যখন যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করেন, তখন দুই দেশের ভবিষ্যতের জন্য তাঁরা একটি স্বপ্ন তুলে ধরেছিলেন। সংঘাতের ফলে কেউই লাভবান হচ্ছে না। কাজেই সংঘাতের পথ ছেড়ে সহযোগিতার পথে হাঁটতে হবে। বিগত বছরগুলোতে যে টানাপোড়েন গেছে, তার দায় দুই পক্ষেরই। আমাদের কাজের নতুন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হচ্ছে। আমাদের মাঝে অনেক সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে। এসব সন্দেহ আর সংশয়কে আস্তে আস্তে কাটাতে হবে।
আমরা এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ পেয়ে গেলাম। পাওয়ার পর তো আমরা প্রকল্প ঠিক করব। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নিয়ে প্রকল্প তৈরি করতে পরিকল্পনা কমিশনেরও সময় লেগেছে। আমরা যে ২০টি প্রকল্প চূড়ান্ত করেছি, এখানে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের কাছে যেমন ব্যাখ্যা চেয়েছি, ভারতও আমাদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। টাকাটা দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। কাজেই আমরা যখন প্রকল্পগুলো ভারতের কাছে পাঠালাম, তারপর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এক্সিম ব্যাংকে পাঠাল। ভারতের পক্ষ থেকে এরপর টাকা দিতে বলা হলো। কাজেই প্রক্রিয়াগত এ বিষয়গুলো বুঝতে হবে।
প্রথম আলো বলা হচ্ছে, ট্রানজিটের এই প্রক্রিয়ায় আসামকে যুক্ত করা না হলে তেমন সুফল আমরা পাব না।
গওহর রিজভী ভারতের সঙ্গে যখন আমরা আলোচনা করছিলাম, পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর কথা বলছিলাম। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বললেন, শুধু উত্তর-পূর্বাঞ্চল কেন, আপনারা ভারতজুড়েই বাণিজ্য করুন। দেখুন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি রাজ্যের অবস্থান আমাদের সীমান্ত ঘেঁষেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের তুলনামূলক কিছু সুবিধা আছে। এসব রাজ্যের সঙ্গে দূরত্ব খুব কম। কাজেই এসব অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ যত বাড়বে, আমাদের রপ্তানি বাড়বে, সস্তায় জিনিস কিনে আনতে পারব। লাভবান হবেন ভোক্তারা। এতে দুই পক্ষের লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। এর চেয়ে বড় সম্ভাবনা আর কিছু হতে পারে না।
প্রথম আলো রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন আমলাতন্ত্রের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কি না?
গওহর রিজভী আমরা সব সময় অভিযোগ করি, আমলারা এটা করে না, সেটা আটকে রাখে ইত্যাদি। আমরা আমলাদের ওপর খেপে আছি। কিন্তু মনে রাখবেন, আমলারা যেকোনো কাজ একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে করে থাকেন। দেশের যাতে ভালো হয়, কোনো ভুলভ্রান্তি যাতে না হয়, সে বিষয়ে তাঁরা লক্ষ রাখেন। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে বিধি ও আইন মেনে তাঁরা কাজ করেন। এসব প্রক্রিয়ায় কিছুটা দীর্ঘসূত্রতা আছে বৈকি। এটাও সত্যি, ৩৭/৩৮ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে একটা অসহযোগিতামূলক আচরণ ছিল। এমনকি রাজনৈতিক নেতৃত্বের পর্যায়েও সম্পর্কের শৈথিল্য ছিল। কাজেই এক দিনেই সব পাল্টে দিতে পারব না। কাজ করার মাধ্যমেই একজন আরেকজনকে চিনতে পারব। এর ফলে পারস্পরিক আস্থা তৈরি হয়। এটা ঠিক যে, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি ধীরে হচ্ছে।
প্রথম আলো সীমান্তের অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে আসন্ন শীর্ষ বৈঠকে কতটা অগ্রগতি হবে?
গওহর রিজভী ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি আমাদের সংসদে ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে অনুসমর্থন করা হয়। ভারত এখনো করেনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ওই চুক্তি হিমাগারে পাঠানো হয়। ওই চুক্তিতে সীমান্তের অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনা, জরিপ করার কথা ছিল। এসব কিছু হয়নি। কাজেই এক পক্ষকে দায়ী করলে চলবে না। দুই পক্ষেরই দায় আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেখানে বঙ্গবন্ধু আর ইন্দিরা গান্ধী রেখে গেছেন, সেখান থেকেই আমরা শুরু করব।
আশা করি, তিন বিঘার বিষয়টিও সুরাহা হয়ে যাবে। যখন দুই প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আলোচনায় বসবেন, এ সমস্যার সমাধান হবে। দহগ্রাম অঙ্গরপোতায় বিদ্যুৎ ছিল না। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী গিয়ে এটা উদ্বোধন করবেন।
অপদখলীয় জমির ব্যাপারে বলতে পারি, ’৪৭ সালে রেডক্লিফ লাইন অনুযায়ী পাক-ভারত সীমান্ত ভাগ হয়। আমরা এমনভাবে বিষয়টির সমাধান চাইছি, যাতে করে যারা চাষবাস করছে তাদের যেন ক্ষতি না হয়, জীবিকা, বাসস্থানের কোনো ক্ষতি না হয়। এটা নিয়ে দুই পক্ষ বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করছে। আমি খুবই আশাবাদী, যখন ঢাকায় দুই প্রধানমন্ত্রী বসবেন, এ বিষয়ে একটা সমাধান হবে।
ছিটমহল একটা ঐতিহাসিক প্রহসন। দুই পক্ষই রাজি হয়েছি, আমরা এ সমস্যাটি যেভাবেই হোক না কেন, সমাধান করব।
সীমানা চিহ্নিত করার বিষয়ে বলতে পারি, আমাদের সীমানা কয়েকটি জায়গায় চিহ্নিত ছিল না। আমরা চাই ন্যায্যতার ভিত্তিতে যাতে বিষয়টির সুরাহা হয়। ওরা কথা দিয়েছে, আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সমাধান হবে।
প্রথম আলো সম্প্রতি সিলেটে সীমান্ত জরিপ নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। মানুষের মাঝে সংশয় তৈরি হয়েছে। আসলে সেখানে কী হচ্ছে?
গওহর রিজভী হঠাৎ গুজব ছড়ানো হলো, ভারতকে জমি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। জমি ছেড়ে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। অপদখলীয় জমিগুলো কী অবস্থায় আছে, সেটা সরেজমিনে দেখা হচ্ছে। এরপর একটা প্রতিবেদন দেওয়া হবে, যা নিয়ে পরে বৈঠক হবে। আর বৈঠকে বসতে হলে বাস্তব পরিস্থিতি ও মানচিত্র এসব নিয়েই তো আপনাকে বসতে হবে। অথচ ওখানকার সাবেক এক সাংসদ কমিটি করে বসে আছেন। বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আসলে সেখানে কোনো জমি হস্তান্তর হচ্ছে না।
প্রথম আলো সীমান্ত সংঘাত বন্ধে ভারতের আশ্বাস সত্ত্বেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। বিএসএফের গুলিতে মানুষ মারা যাচ্ছে।
গওহর রিজভী এটা মানবেন যে, প্রাণহানি আগের চেয়ে অনেক কমেছে, গত এক বছরের হিসাব দেখুন। সীমান্তে গুলি হবে না বলে ভারত আমাদের কথা দিয়েছে। তা কার্যকর করতে কিছুটা সময় লাগলেও প্রাণহানির সংখ্যা আমরা শূন্যে নিয়ে আসতে পারব।
প্রথম আলো প্রধানমন্ত্রীদের বৈঠকে কি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হতে যাচ্ছে?
গওহর রিজভী এ মুহূর্তে বিস্তারিত জানি না। আমাদের দিক থেকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে ইতিমধ্যে সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। আগস্টের শেষ দিকে ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী ঢাকায় আসবেন। বিশেষজ্ঞরা যেসব তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন মন্ত্রীদের বৈঠকে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর তাঁরা প্রধানমন্ত্রীদের বৈঠকের জন্য প্রস্তাব করবেন। তারপর যদি কোনো সমস্যা থাকে, দুই প্রধানমন্ত্রী সেটির সুরাহা করবেন।
প্রথম আলো ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অসম বাণিজ্য চলছে বহুদিন ধরে। এ বৈষম্য কমানোর কোনো উদ্যোগ আছে কী?
গওহর রিজভী আমাদের বাণিজ্যবৈষম্য শুধু ভারতের সঙ্গে নয়, চীনের সঙ্গেও আছে। বাণিজ্য সম্পর্ক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণের ওপর পুরো মনোযোগ দেওয়াটা সমীচীন নয়। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যবৈষম্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। গত এক বছরে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ৫২ শতাংশ বেড়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ভারতীয় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। এটি হলে সব দিক থেকেই লাভ। আমাদের রপ্তানি বাড়বে। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। গত এক বছরে বেশ নিয়মিতভাবেই ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাণিজ্য প্রতিনিধিদল আসছে। আমরা তাদের বলেছি বিনিয়োগ করতে।
সাত-আট বছর আগে ভারত আমাদের আট লাখ পিস তৈরি পোশাক নিতে আগ্রহ দেখালেও বাস্তবায়নে অনেক সময় লেগেছে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় এ নিয়ে নানান অভিযোগ তুলেছিলেন। অথচ গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ওই আট লাখ পিস সরবরাহ হলো। এর ফলে ভারত ওই সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ লাখ করেছে। কাজেই বাণিজ্য নিয়ে যখন আলোচনায় বসব, তখন নেতিবাচক তালিকা কমানোর পাশাপাশি বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ জানাব।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
গওহর রিজভী ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান ও রাহীদ এজাজ
প্রথম আলো ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে, ট্রানজিট মাশুল নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যথেষ্ট মাশুল না পেলে ট্রানজিট দিয়ে আমাদের লাভ কী?
গওহর রিজভী ট্রানজিট কি একতরফা হচ্ছে? ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটা ছোট অংশ ট্রানজিট। বিষয়টিকে আন্তসংযোগের প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। আজকের দিনে আন্তসংযোগ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত। আমরা যা করছি, সেটা হলো বাংলাদেশকে সারা পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত করা। আমরা কানেকটিভিটি শুধু ভারতের সঙ্গেই করছি না, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও করেছি। আশা করছি, মিয়ানমারের সঙ্গে করব। মিয়ানমারের মাধ্যমে চীনের কুনমিংয়ের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করব। রাস্তাঘাট, সমুদ্র, টেলিফোন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইটসহ নানা উপায়ে আমরা যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছি।
শুধু ভারতকে ট্রানজিট দিচ্ছি না, আমরাও তো পাচ্ছি। আর এটা দেওয়া-নেওয়ার বিষয় নয়। আমাদের সার্বিক উন্নয়নের যে স্বপ্ন, তারই অংশ। আমরা কেন বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকব? ট্রানজিট হলো দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয়ভাবে লাভবান হওয়ার একটি উপায়। আর ট্রানজিট মাশুলের বিষয়টি আপনি সংকীর্ণভাবে দেখতে পারেন, আবার সামগ্রিকভাবেও দেখতে পারেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি ও গণমাধ্যমগুলো হিসাব করছে, আমরা কত ট্রানজিট মাশুল পাব, আমাদের এ ট্রানজিট ব্যবস্থার উন্নয়নে কত খরচ হবে। আমি মনে করি, এটা সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ। এটাকেও যদি ভিত্তি ধরি, আমাদের লাভ বিরাট। অনেকে বলেছেন, ভারত ট্রানজিট মাশুল দেবে না। এটা ঠিক নয়।
প্রথম আলো এটা বোধহয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছিলেন?
গওহর রিজভী আমাদের সরকার থেকে এ কথাটি কেউই বলেননি। ভারত সরকার থেকেও এ কথাটি কেউ বলেনি। আমি এটুকুই বলতে পারি, ট্রানজিট মাশুল না দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা বলেছি, নিয়মানুযায়ী ট্যাক্স, কাস্টমস শুল্ক ট্রানজিট পণ্যের ওপর নেওয়া যায় না। পৃথিবীর কোথাও নেওয়া হয় না। তারা ভাড়া দিচ্ছে, ট্রানজিট মাশুল দিচ্ছে, ব্যবহারের মাশুল দিচ্ছে, অবকাঠামো উন্নয়নের বিনিয়োগে অবদান রাখছে।
ট্রানজিটের বিষয়টিকে ইউরোপ ও আমেরিকায় মাশুলের বিনিময়ে যেসব সড়কে যানবাহন চলে, তার প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। যত বেশি যানবাহন চলবে, তত বেশি ফি পাব। আমরা যে বিনিয়োগের কথা বলছি, এর তো মূল্যাপকর্ষণ (ডিপ্রেসিয়েশন) খরচও আছে। পরিবেশের ক্ষতির জন্য, পার্কিংয়ের জন্য মাশুল ধরতে হবে। এভাবে খুঁটিনাটি সবকিছুর হিসাব করেই মাশুলের একটি হার নির্ধারণ করা হবে। তবে যে মাশুল নির্ধারণ করব, সেটা পরিবর্তনযোগ্য। দুই বছর পর সেটা আবার বাড়তে পারে।
প্রথম আলো ভারত বলছে ট্রানজিটের যে মাশুল নির্ধারিত হবে, তা যেন যৌক্তিক হয়। তার মানে এ নিয়ে তাদের কোনো আশঙ্কা আছে?
গওহর রিজভী ভারত কী বলছে তা আমি জানি না। ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দেওয়ার জন্য আমাদের একটা মাশুল নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু টোল রাস্তা খুলে বসে থাকলে তো চলবে না, ওটা তো ব্যবহার করতে হবে। একটা মার্কেট ফোর্সও এখানে কাজ করে। ওরা তখনই আমাদের রাস্তা ব্যবহার করবে, যখন আমরা ভালো সার্ভিস দেব, ভালো অবকাঠামোগত সুবিধা দেব। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তাদের পণ্য পরিবহনের সুযোগ করে দেব। এসবের পর যদি তারা দেখে যে সুবিধা পাচ্ছে, তবেই তো আমাদের রাস্তাগুলো ওরা ব্যবহার করবে। এ জন্য সব দিক থেকেই আমাদের প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে। বাজারের চাহিদা, বাস্তবতা সব মিলিয়ে আমাদের নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে হবে।
আরেকটা কথা এই যে, আমরা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন করছি, এটা কি শুধু ভারত, নেপাল ও ভুটানের জন্য করছি? এই অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যও তো প্রচুর বাড়বে। ট্রানজিটের কারণে বাণিজ্য বাড়বে। আমাদের রপ্তানি বাড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।
প্রথম আলো আমরা সারা বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা বলছি, কিন্তু এত দিনেও ট্রানজিট নীতিমালা ও রূপরেখা চুক্তি কেন করতে পারলাম না?
গওহর রিজভী ট্রানজিট নীতিমালা কী হবে, সেটা ঠিক করতে কোর কমিটি নামে একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। তবে মনে রাখতে হবে, গত ৩৭/৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বেশ খারাপ গিয়েছে। মাঝেমধ্যে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখন যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন, ১৫ মাসে সবকিছু হলো না কেন, সেটি সমীচীন হবে না। একটু সময় লাগবে।
গত বছরের জানুয়ারিতে দুই প্রধানমন্ত্রী যখন যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করেন, তখন দুই দেশের ভবিষ্যতের জন্য তাঁরা একটি স্বপ্ন তুলে ধরেছিলেন। সংঘাতের ফলে কেউই লাভবান হচ্ছে না। কাজেই সংঘাতের পথ ছেড়ে সহযোগিতার পথে হাঁটতে হবে। বিগত বছরগুলোতে যে টানাপোড়েন গেছে, তার দায় দুই পক্ষেরই। আমাদের কাজের নতুন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হচ্ছে। আমাদের মাঝে অনেক সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে। এসব সন্দেহ আর সংশয়কে আস্তে আস্তে কাটাতে হবে।
আমরা এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ পেয়ে গেলাম। পাওয়ার পর তো আমরা প্রকল্প ঠিক করব। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নিয়ে প্রকল্প তৈরি করতে পরিকল্পনা কমিশনেরও সময় লেগেছে। আমরা যে ২০টি প্রকল্প চূড়ান্ত করেছি, এখানে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের কাছে যেমন ব্যাখ্যা চেয়েছি, ভারতও আমাদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। টাকাটা দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। কাজেই আমরা যখন প্রকল্পগুলো ভারতের কাছে পাঠালাম, তারপর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এক্সিম ব্যাংকে পাঠাল। ভারতের পক্ষ থেকে এরপর টাকা দিতে বলা হলো। কাজেই প্রক্রিয়াগত এ বিষয়গুলো বুঝতে হবে।
প্রথম আলো বলা হচ্ছে, ট্রানজিটের এই প্রক্রিয়ায় আসামকে যুক্ত করা না হলে তেমন সুফল আমরা পাব না।
গওহর রিজভী ভারতের সঙ্গে যখন আমরা আলোচনা করছিলাম, পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর কথা বলছিলাম। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বললেন, শুধু উত্তর-পূর্বাঞ্চল কেন, আপনারা ভারতজুড়েই বাণিজ্য করুন। দেখুন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি রাজ্যের অবস্থান আমাদের সীমান্ত ঘেঁষেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের তুলনামূলক কিছু সুবিধা আছে। এসব রাজ্যের সঙ্গে দূরত্ব খুব কম। কাজেই এসব অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ যত বাড়বে, আমাদের রপ্তানি বাড়বে, সস্তায় জিনিস কিনে আনতে পারব। লাভবান হবেন ভোক্তারা। এতে দুই পক্ষের লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। এর চেয়ে বড় সম্ভাবনা আর কিছু হতে পারে না।
প্রথম আলো রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন আমলাতন্ত্রের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কি না?
গওহর রিজভী আমরা সব সময় অভিযোগ করি, আমলারা এটা করে না, সেটা আটকে রাখে ইত্যাদি। আমরা আমলাদের ওপর খেপে আছি। কিন্তু মনে রাখবেন, আমলারা যেকোনো কাজ একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে করে থাকেন। দেশের যাতে ভালো হয়, কোনো ভুলভ্রান্তি যাতে না হয়, সে বিষয়ে তাঁরা লক্ষ রাখেন। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে বিধি ও আইন মেনে তাঁরা কাজ করেন। এসব প্রক্রিয়ায় কিছুটা দীর্ঘসূত্রতা আছে বৈকি। এটাও সত্যি, ৩৭/৩৮ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে একটা অসহযোগিতামূলক আচরণ ছিল। এমনকি রাজনৈতিক নেতৃত্বের পর্যায়েও সম্পর্কের শৈথিল্য ছিল। কাজেই এক দিনেই সব পাল্টে দিতে পারব না। কাজ করার মাধ্যমেই একজন আরেকজনকে চিনতে পারব। এর ফলে পারস্পরিক আস্থা তৈরি হয়। এটা ঠিক যে, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি ধীরে হচ্ছে।
প্রথম আলো সীমান্তের অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে আসন্ন শীর্ষ বৈঠকে কতটা অগ্রগতি হবে?
গওহর রিজভী ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি আমাদের সংসদে ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে অনুসমর্থন করা হয়। ভারত এখনো করেনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ওই চুক্তি হিমাগারে পাঠানো হয়। ওই চুক্তিতে সীমান্তের অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনা, জরিপ করার কথা ছিল। এসব কিছু হয়নি। কাজেই এক পক্ষকে দায়ী করলে চলবে না। দুই পক্ষেরই দায় আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেখানে বঙ্গবন্ধু আর ইন্দিরা গান্ধী রেখে গেছেন, সেখান থেকেই আমরা শুরু করব।
আশা করি, তিন বিঘার বিষয়টিও সুরাহা হয়ে যাবে। যখন দুই প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আলোচনায় বসবেন, এ সমস্যার সমাধান হবে। দহগ্রাম অঙ্গরপোতায় বিদ্যুৎ ছিল না। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী গিয়ে এটা উদ্বোধন করবেন।
অপদখলীয় জমির ব্যাপারে বলতে পারি, ’৪৭ সালে রেডক্লিফ লাইন অনুযায়ী পাক-ভারত সীমান্ত ভাগ হয়। আমরা এমনভাবে বিষয়টির সমাধান চাইছি, যাতে করে যারা চাষবাস করছে তাদের যেন ক্ষতি না হয়, জীবিকা, বাসস্থানের কোনো ক্ষতি না হয়। এটা নিয়ে দুই পক্ষ বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করছে। আমি খুবই আশাবাদী, যখন ঢাকায় দুই প্রধানমন্ত্রী বসবেন, এ বিষয়ে একটা সমাধান হবে।
ছিটমহল একটা ঐতিহাসিক প্রহসন। দুই পক্ষই রাজি হয়েছি, আমরা এ সমস্যাটি যেভাবেই হোক না কেন, সমাধান করব।
সীমানা চিহ্নিত করার বিষয়ে বলতে পারি, আমাদের সীমানা কয়েকটি জায়গায় চিহ্নিত ছিল না। আমরা চাই ন্যায্যতার ভিত্তিতে যাতে বিষয়টির সুরাহা হয়। ওরা কথা দিয়েছে, আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সমাধান হবে।
প্রথম আলো সম্প্রতি সিলেটে সীমান্ত জরিপ নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। মানুষের মাঝে সংশয় তৈরি হয়েছে। আসলে সেখানে কী হচ্ছে?
গওহর রিজভী হঠাৎ গুজব ছড়ানো হলো, ভারতকে জমি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। জমি ছেড়ে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। অপদখলীয় জমিগুলো কী অবস্থায় আছে, সেটা সরেজমিনে দেখা হচ্ছে। এরপর একটা প্রতিবেদন দেওয়া হবে, যা নিয়ে পরে বৈঠক হবে। আর বৈঠকে বসতে হলে বাস্তব পরিস্থিতি ও মানচিত্র এসব নিয়েই তো আপনাকে বসতে হবে। অথচ ওখানকার সাবেক এক সাংসদ কমিটি করে বসে আছেন। বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আসলে সেখানে কোনো জমি হস্তান্তর হচ্ছে না।
প্রথম আলো সীমান্ত সংঘাত বন্ধে ভারতের আশ্বাস সত্ত্বেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। বিএসএফের গুলিতে মানুষ মারা যাচ্ছে।
গওহর রিজভী এটা মানবেন যে, প্রাণহানি আগের চেয়ে অনেক কমেছে, গত এক বছরের হিসাব দেখুন। সীমান্তে গুলি হবে না বলে ভারত আমাদের কথা দিয়েছে। তা কার্যকর করতে কিছুটা সময় লাগলেও প্রাণহানির সংখ্যা আমরা শূন্যে নিয়ে আসতে পারব।
প্রথম আলো প্রধানমন্ত্রীদের বৈঠকে কি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হতে যাচ্ছে?
গওহর রিজভী এ মুহূর্তে বিস্তারিত জানি না। আমাদের দিক থেকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে ইতিমধ্যে সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। আগস্টের শেষ দিকে ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী ঢাকায় আসবেন। বিশেষজ্ঞরা যেসব তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন মন্ত্রীদের বৈঠকে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর তাঁরা প্রধানমন্ত্রীদের বৈঠকের জন্য প্রস্তাব করবেন। তারপর যদি কোনো সমস্যা থাকে, দুই প্রধানমন্ত্রী সেটির সুরাহা করবেন।
প্রথম আলো ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অসম বাণিজ্য চলছে বহুদিন ধরে। এ বৈষম্য কমানোর কোনো উদ্যোগ আছে কী?
গওহর রিজভী আমাদের বাণিজ্যবৈষম্য শুধু ভারতের সঙ্গে নয়, চীনের সঙ্গেও আছে। বাণিজ্য সম্পর্ক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণের ওপর পুরো মনোযোগ দেওয়াটা সমীচীন নয়। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যবৈষম্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। গত এক বছরে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ৫২ শতাংশ বেড়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ভারতীয় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। এটি হলে সব দিক থেকেই লাভ। আমাদের রপ্তানি বাড়বে। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। গত এক বছরে বেশ নিয়মিতভাবেই ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাণিজ্য প্রতিনিধিদল আসছে। আমরা তাদের বলেছি বিনিয়োগ করতে।
সাত-আট বছর আগে ভারত আমাদের আট লাখ পিস তৈরি পোশাক নিতে আগ্রহ দেখালেও বাস্তবায়নে অনেক সময় লেগেছে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় এ নিয়ে নানান অভিযোগ তুলেছিলেন। অথচ গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ওই আট লাখ পিস সরবরাহ হলো। এর ফলে ভারত ওই সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ লাখ করেছে। কাজেই বাণিজ্য নিয়ে যখন আলোচনায় বসব, তখন নেতিবাচক তালিকা কমানোর পাশাপাশি বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ জানাব।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
গওহর রিজভী ধন্যবাদ।
No comments