বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতি
বিয়ে মানেই নানা ধরনের প্রস্তুতি। আয়োজন চলতে থাকে দিনের পর দিন। এসব প্রস্তুতির তোড়জোরে হয়তো বর-কনের মনের খবর জানার অবকাশ হয় না। অনুষ্ঠান আয়োজন কিংবা আনুষঙ্গিক বিষয়ে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এসবের সঙ্গে যে বর-কনের মানসিক প্রস্তুতির দরকার হয়, তা অনেকেই জানেন না। ‘প্রয়োজনীয় অনেক বিষয়ে আমরা আগেভাগে প্রস্তুতি নিই। কিন্তু বিয়ের মতো বিষয়ে ছেলেমেয়ের আগাম কোনো মানসিক প্রস্তুতি থাকে না।
নানাভাবে বিয়ে হয়। পারিবারিকভাবে আয়োজিত, যেখানে হয়তো ছেলেমেয়ে পরস্পরকে জানার সুুযোগ হয় না। আবার প্রেমের বিয়ে পরবর্তী সময় সেটি হয়তো পরিবারের সম্মতিতেই হয়। এ ধরনের বিয়েতে অভিভাবকেরা মনে করেন, যেহেতু তারা পূর্বপরিচিত, তাই নতুন করে প্রস্তুতির দরকার কী। এ ধারণা ঠিক নয়।’ বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলরুবা আফরোজ।
‘যতই চেনাজানা হোক না কেন, বিয়ের পর বাস্তব জীবনের মুখোমুখি হতে হয়। তখন স্বপ্ন ভেঙে যায় কারও কারও। তাই বিয়ের আগে থেকে রোমান্টিকতার পাশাপাশি বাস্তবিক চিন্তাগুলোও করতে হবে। মেয়ে বা ছেলে আগে থেকেই বুঝবে না। তাই মা কিংবা কাছের অভিজ্ঞ কেউ তাকে ইতিবাচকভাবে জীবনের বাস্তবতা বুঝিয়ে বলতে পারে। ছেলেমেয়ে দুজনকেই পরস্পরের পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলার মানসিকতা থাকতে হবে। তা হলে দাম্পত্য জীবনে অনেক সমস্যা এড়িয়ে চলা যাবে। নিজের, পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববান হতে হবে। নিজের স্বভাবের কোনো নেতিবাচক দিক থাকলে সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। নিজের সব দিক বিয়ের আগে উভয়ের আলোচনা করলে বোঝাপড়ার শুরুটা ভালো হবে। এটিও ঠিক যে একেকজনের জীবনযাপন একেকভাবে নির্ধারিত হয়। পারিপার্শ্বিকতার ভিন্নতা থাকে। প্রতিটি পরিবারের আলাদা নিয়মকানুন, আচার-ব্যবহার থাকে। সেসব আগে থেকে একটু জানলে পরবর্তী সময় নতুন সদস্যের বুঝতে সহজ হয়। এসব ক্ষেত্রে শুধু মেয়েরাই মানিয়ে চলবে, তা নয়। ছেলেটিকেই বরং সহযোগিতাপরায়ণ হতে হবে। মেয়েটি সব ছেড়ে তাদের পরিবারে আসছে। ছেলেটির পরিবারকে এ বিষয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। ছেলেকে বোঝাতে হবে সামান্য বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া না করতে। যেকোনো সমস্যা হলে তারা যেন খোলাখুলি আলোচনা করে নেয়। শাশুড়ি নিয়ে অনেক মেয়ের মনে শঙ্কা থাকে। বিয়ের আগে সুযোগ থাকলে মেয়ের সঙ্গে ছেলের পরিবার কথা বলে নিতে পারে। তবে শুরুতেই মেয়েকে নেতিবাচক কোনো বিষয় বলা উচিত নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের মনোবিজ্ঞানী তামিমা তানজিন বলেন, আসলে মানসিক প্রস্তুতিটা নেওয়া দরকার বিয়ে-পরবর্তী জীবনে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। শুধু মানসিক নয়, শারীরিক প্রস্তুতিটাও নিতে হবে। দাম্পত্য জীবনে শারীরিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কাছের কেউ বা চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া যেতে পারে। ছেলের বিয়ের আগেই পরিবারের সদস্যদের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ছেলের স্ত্রীকে নিয়ে তাঁরা যেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী না হন। এমনকি ছেলেরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া উচিত নয়। অনেক সময় কল্পনা আর বাস্তবতা মিলে যায় না। তখন সমস্যার সৃষ্টি হয়। একটু সচেতন, সহযোগিতাপরায়ণ ও বোঝাপড়া ভালো হলে দাম্পত্য জীবন সুন্দর হতে বাধ্য। এটি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
No comments