যত্ন যত বেশি ফল তত ভালো by শরিফুজ্জামান
প্রাথমিকের সব ধারায় মোটামুটি একই ধরনের বই পড়ানো হয়। কিন্তু শিক্ষক-অভিভাবকদের যত্ন এবং শিক্ষার পরিবেশের কারণে একেক ধরনের বিদ্যালয়ের ফল হয়েছে একেক রকম। অর্থাৎ, যেখানে শিক্ষার্থীর যত্ন বেশি, সেখানে ফল ভালো হয়েছে। ১৩ রকমের প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়িসহ মোট ১৪ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। এর মধ্যে গতকাল প্রকাশিত ১৪ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফলাফলে গুণগত মান ও সংখ্যাগত পার্থক্য
বেরিয়ে এসেছে। কওমি মাদ্রাসাশিক্ষা এই স্তরের বাইরে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট পরীক্ষার্থীর অর্ধেকেরও বেশি ছিল মূলধারার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। মূলধারায় বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ রয়েছে, শিক্ষকদের মান প্রায় একই রকম, সরকারি উদ্যোগে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ করে দেওয়া হয়।
কিন্তু এ ধরনের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যত্ন তুলনামূলক কম। বেশির ভাগ অসচ্ছল ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং সব ধরনের মেধার শিক্ষার্থী সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। এসব শিশু কোচিং সেন্টার বা গৃহশিক্ষকের কাছে যেতে পারে না বললেই চলে। তার পরও ৯৮ শতাংশ শিশু পাস করেছে। পাসের সংখ্যা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট। তবে মানের বিবেচনায়, বিশেষ করে, শতভাগ পাস এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হিসাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফল অন্য বিদ্যালয়গুলোর তুলনায় ভালো নয়।
ফলের গুণমান সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, শ্রেণীকক্ষের পঠন-পাঠন যেখানে ভালো, শিক্ষার্থীর জন্য বিনিয়োগ যেখানে বেশি, সেখানে ভালো ফল হয়েছে। তিনি বলেন, এই পরীক্ষা চালু হওয়ার পর কোচিং ও টিউশনি খরচ বেড়ে গেছে, এটা খারাপ দিক। তবে তিনি মনে করেন, সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষায় অগ্রগতি হয়েছে। এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শ্রেণীকক্ষ তৈরি, ভালো পাঠ্যবইসহ প্রাথমিক শিক্ষায় আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
যত্ন বেশি, গুণমান ভালো: যেসব বিদ্যালয়ে শিশুদের যত্ন নেওয়া হয়, সেখানে লেখাপড়ার গুণগত মান ভালো। দেশে ৫৫টি সরকারি পরীক্ষণ বিদ্যালয় আছে, এগুলোর মধ্যে ৫৩টি বিদ্যালয়ে পাসের হার শতভাগ, আর গড় পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ হয়। শিক্ষার্থীদের যত্ন হয় অন্যান্য বিদ্যালয়ের তুলনায় বেশি।
ব্র্যাক পরিচালিত স্কুলগুলোর ফলাফল ভালো। ব্র্যাকের ছয় হাজার ৪৮৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শতভাগ পাস করা বিদ্যালয় ছয় হাজার ২১০টি, আর গড় পাসের হার ৯৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৩১৩ জন শিশু। এ ধরনের বিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কঠোরভাবে মানা হয়, শ্রেণীকক্ষে সম্পন্ন হয় পড়াশোনা।
কিন্ডারগার্টেনে যত্ন বেশি, শিক্ষার্থীদের বেতনও বেশি। অভিভাবকেরা সচ্ছল ও সচেতন। তাই পাসের হার ৯৮ শতাংশ। মোট ১১ হাজার ২২৯টি কিন্ডারগার্টেন থেকে এক লাখ ৬১ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। শতভাগ পাস করা কিন্ডারগার্টেনের হার ৮৯ শতাংশ।
মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম শুনলে মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে সারা দেশে এ ধরনের বিদ্যালয় রয়েছে মাত্র ৪৯৮টি। পাসের হার ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮০ ভাগ, জিপিএ-৫ পেয়েছে পাঁচ হাজার ৯২৮ জন।
উচ্চবিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফল ভালো। কারণ, ভালো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকের যোগ্যতা, শিক্ষার্থীর মান ও পরিবেশ ভালো থাকে। এ ধরনের এক হাজার ৭৭০টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার, পাসের হার ৯৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭ হাজার ১০৫ শিক্ষার্থী।
যত্ন কম, ফল খারাপ: ঝরে পড়া শিশুকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্প নেওয়া হয় ২০০৪ সালে। নাম রাখা হয় আনন্দ স্কুল। এ স্কুলের শিশুদের বছরে এক হাজার টাকারও কম দেওয়া হয়। যত শিক্ষার্থী ও শ্রেণী থাকুক, শিক্ষক একজন, বেতন এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। ছিন্নমূল শিশুদের সামান্য টাকায় প্রলুব্ধ করে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। স্থানীয় পর্যায়ে বেসরকারি সংস্থা স্কুলগুলো চালাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক আরও সাড়ে আট হাজার আনন্দ স্কুল স্থাপন করবে।
এ বছর দুই হাজার ১৩৪টি আনন্দ স্কুলে পরীক্ষার্থী ছিল ৪৫ হাজার ১১৮ জন। নিবন্ধন করেও পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ১৬ হাজার ৬৫৯ জন। পাসের হার সর্বনিম্ন ৭৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ২৫ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া শতভাগ শিশু পাস করা আনন্দ স্কুলের সংখ্যা ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ।
আনন্দ স্কুলের মতোই অনেকটা অবহেলার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয় কমিউনিটি বিদ্যালয়। এ ধরনের বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সামান্য বেতন দেওয়া হয়। ভালো নয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থাও। এই সংখ্যা দুই হাজার ৩৬০। পরীক্ষার্থী ছিল ৩৩ হাজার, তিন হাজার অংশ নেয়নি। পাসের গড় হার ৯৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। কিন্তু শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৬ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪০৯ জন শিক্ষার্থী।
ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্র্যাক স্কুলে পাসের হার ৯৯ দশমিক ৭৩ হলেও এনজিও পরিচালিত অন্যান্য স্কুলে এই হার ৯১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আবার শতভাগ পাসের দিক থেকে ব্র্যাক স্কুলের অবস্থান যেখানে ৯৫ দশমিক ৭২ শতাংশ, সেখানে এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ে শতভাগ পাসের হার ৬৫ দশমিক ২২ শতাংশ।
নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত বিদ্যালয়ের অবস্থা: নিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতার সিংহভাগ সরকার দেয়। এ ধরনের বিদ্যালয়ে পাসের হার ৯৬ শতাংশ, যা সরকারি বিদ্যালয়ের তুলনায় মাত্র ২ শতাংশ কম। আবার অনিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাসের হার নিবন্ধিতদের চেয়ে কম, ৯৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
সরকারি বিদ্যালয় সংখ্যায় এগিয়ে: দেশের ১৪ ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর চেয়ে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করলে সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক (২৯ হাজার ২৮৩টি)। কিন্তু শতকরা হিসাবে এই হার ৭৮ দশমিক ৮১ শতাংশ।
দেশে ৩৭ হাজার ১৫৩টি সরকারি বিদ্যালয় আছে। পরীক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। পাসের গড় হার ৯৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সরকারি বিদ্যালয়ে বেশির ভাগ নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাই পড়াশোনা করে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় ভালোমন্দ এবং গ্রাম-শহরের বৈষম্য তো রয়েছেই। এই বৈষম্য ও ব্যবধান হয়তো নির্মূল করা যাবে না। কিন্তু আরও কমিয়ে আনতে হবে এবং সেই চেষ্টা চলছে।
মহাপরিচালক বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে দায়বদ্ধতার জায়গা তৈরি হয়েছে। এখন শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বলা যাবে, কেন ফল খারাপ হচ্ছে। তাঁর মতে, শিক্ষক ছাড়াও অভিভাবকদের লেখাপড়া ও আর্থিক সামর্থ্য ভালো ফল করার অন্যতম উপায়।
কিন্তু এ ধরনের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যত্ন তুলনামূলক কম। বেশির ভাগ অসচ্ছল ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং সব ধরনের মেধার শিক্ষার্থী সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। এসব শিশু কোচিং সেন্টার বা গৃহশিক্ষকের কাছে যেতে পারে না বললেই চলে। তার পরও ৯৮ শতাংশ শিশু পাস করেছে। পাসের সংখ্যা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট। তবে মানের বিবেচনায়, বিশেষ করে, শতভাগ পাস এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হিসাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফল অন্য বিদ্যালয়গুলোর তুলনায় ভালো নয়।
ফলের গুণমান সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, শ্রেণীকক্ষের পঠন-পাঠন যেখানে ভালো, শিক্ষার্থীর জন্য বিনিয়োগ যেখানে বেশি, সেখানে ভালো ফল হয়েছে। তিনি বলেন, এই পরীক্ষা চালু হওয়ার পর কোচিং ও টিউশনি খরচ বেড়ে গেছে, এটা খারাপ দিক। তবে তিনি মনে করেন, সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষায় অগ্রগতি হয়েছে। এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শ্রেণীকক্ষ তৈরি, ভালো পাঠ্যবইসহ প্রাথমিক শিক্ষায় আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
যত্ন বেশি, গুণমান ভালো: যেসব বিদ্যালয়ে শিশুদের যত্ন নেওয়া হয়, সেখানে লেখাপড়ার গুণগত মান ভালো। দেশে ৫৫টি সরকারি পরীক্ষণ বিদ্যালয় আছে, এগুলোর মধ্যে ৫৩টি বিদ্যালয়ে পাসের হার শতভাগ, আর গড় পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ হয়। শিক্ষার্থীদের যত্ন হয় অন্যান্য বিদ্যালয়ের তুলনায় বেশি।
ব্র্যাক পরিচালিত স্কুলগুলোর ফলাফল ভালো। ব্র্যাকের ছয় হাজার ৪৮৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শতভাগ পাস করা বিদ্যালয় ছয় হাজার ২১০টি, আর গড় পাসের হার ৯৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৩১৩ জন শিশু। এ ধরনের বিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কঠোরভাবে মানা হয়, শ্রেণীকক্ষে সম্পন্ন হয় পড়াশোনা।
কিন্ডারগার্টেনে যত্ন বেশি, শিক্ষার্থীদের বেতনও বেশি। অভিভাবকেরা সচ্ছল ও সচেতন। তাই পাসের হার ৯৮ শতাংশ। মোট ১১ হাজার ২২৯টি কিন্ডারগার্টেন থেকে এক লাখ ৬১ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। শতভাগ পাস করা কিন্ডারগার্টেনের হার ৮৯ শতাংশ।
মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম শুনলে মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে সারা দেশে এ ধরনের বিদ্যালয় রয়েছে মাত্র ৪৯৮টি। পাসের হার ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮০ ভাগ, জিপিএ-৫ পেয়েছে পাঁচ হাজার ৯২৮ জন।
উচ্চবিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফল ভালো। কারণ, ভালো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকের যোগ্যতা, শিক্ষার্থীর মান ও পরিবেশ ভালো থাকে। এ ধরনের এক হাজার ৭৭০টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার, পাসের হার ৯৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭ হাজার ১০৫ শিক্ষার্থী।
যত্ন কম, ফল খারাপ: ঝরে পড়া শিশুকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্প নেওয়া হয় ২০০৪ সালে। নাম রাখা হয় আনন্দ স্কুল। এ স্কুলের শিশুদের বছরে এক হাজার টাকারও কম দেওয়া হয়। যত শিক্ষার্থী ও শ্রেণী থাকুক, শিক্ষক একজন, বেতন এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। ছিন্নমূল শিশুদের সামান্য টাকায় প্রলুব্ধ করে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। স্থানীয় পর্যায়ে বেসরকারি সংস্থা স্কুলগুলো চালাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক আরও সাড়ে আট হাজার আনন্দ স্কুল স্থাপন করবে।
এ বছর দুই হাজার ১৩৪টি আনন্দ স্কুলে পরীক্ষার্থী ছিল ৪৫ হাজার ১১৮ জন। নিবন্ধন করেও পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ১৬ হাজার ৬৫৯ জন। পাসের হার সর্বনিম্ন ৭৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ২৫ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া শতভাগ শিশু পাস করা আনন্দ স্কুলের সংখ্যা ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ।
আনন্দ স্কুলের মতোই অনেকটা অবহেলার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয় কমিউনিটি বিদ্যালয়। এ ধরনের বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সামান্য বেতন দেওয়া হয়। ভালো নয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থাও। এই সংখ্যা দুই হাজার ৩৬০। পরীক্ষার্থী ছিল ৩৩ হাজার, তিন হাজার অংশ নেয়নি। পাসের গড় হার ৯৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। কিন্তু শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৬ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪০৯ জন শিক্ষার্থী।
ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্র্যাক স্কুলে পাসের হার ৯৯ দশমিক ৭৩ হলেও এনজিও পরিচালিত অন্যান্য স্কুলে এই হার ৯১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আবার শতভাগ পাসের দিক থেকে ব্র্যাক স্কুলের অবস্থান যেখানে ৯৫ দশমিক ৭২ শতাংশ, সেখানে এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ে শতভাগ পাসের হার ৬৫ দশমিক ২২ শতাংশ।
নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত বিদ্যালয়ের অবস্থা: নিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতার সিংহভাগ সরকার দেয়। এ ধরনের বিদ্যালয়ে পাসের হার ৯৬ শতাংশ, যা সরকারি বিদ্যালয়ের তুলনায় মাত্র ২ শতাংশ কম। আবার অনিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাসের হার নিবন্ধিতদের চেয়ে কম, ৯৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
সরকারি বিদ্যালয় সংখ্যায় এগিয়ে: দেশের ১৪ ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর চেয়ে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করলে সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক (২৯ হাজার ২৮৩টি)। কিন্তু শতকরা হিসাবে এই হার ৭৮ দশমিক ৮১ শতাংশ।
দেশে ৩৭ হাজার ১৫৩টি সরকারি বিদ্যালয় আছে। পরীক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। পাসের গড় হার ৯৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সরকারি বিদ্যালয়ে বেশির ভাগ নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাই পড়াশোনা করে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় ভালোমন্দ এবং গ্রাম-শহরের বৈষম্য তো রয়েছেই। এই বৈষম্য ও ব্যবধান হয়তো নির্মূল করা যাবে না। কিন্তু আরও কমিয়ে আনতে হবে এবং সেই চেষ্টা চলছে।
মহাপরিচালক বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে দায়বদ্ধতার জায়গা তৈরি হয়েছে। এখন শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বলা যাবে, কেন ফল খারাপ হচ্ছে। তাঁর মতে, শিক্ষক ছাড়াও অভিভাবকদের লেখাপড়া ও আর্থিক সামর্থ্য ভালো ফল করার অন্যতম উপায়।
No comments