কারসাজি রোধে ব্যবস্থা নিন-সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি
কোনো পণ্যের দাম বাড়লে চমকে উঠতে হয়, আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলানো আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এবার বাড়ল ভোজ্যতেলের দাম। এক সপ্তাহে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে প্রতি লিটারে ১০ থেকে ১৩ টাকা। এখন এক লিটার তেলের দাম ১২৬ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। বোতলজাত সয়াবিনের দামও বেড়েছে লিটারপ্রতি পাঁচ থেকে আট টাকা। পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে দাম আরও বেশি। এখন মূল্যবৃদ্ধির যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই, তা-ও বাড়ছে।
এই অসংগতি দূর করার জন্য বাজারের ওপর তীক্ষ� নজরদারি দরকার। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ কম থাকলে সাধারণত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আর পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে দাম স্থিতিশীল থাকে, এমনকি কমতেও পারে। এটা বাজার অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম। আমাদের নিকট অতীতের অভিজ্ঞতায়ও এভাবে দাম কমতে দেখা গেছে। চলতি বছরের ২০ জুলাই সরকার পরিবেশকদের জন্য প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল মিলগেটে ১০৫, খুচরা পর্যায়ে ১০৭ ও ভোক্তা পর্যায়ে ১০৯ টাকা দর নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় চাহিদা কম থাকায় মিল মালিকেরা দাম কমিয়ে এমনকি ৯৯ টাকা দরেও তেল বিক্রি করেন। খোলাবাজারেও দাম কমে আসে।
এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, সরকার যদি বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকে, তাহলে মূল্য স্থিতিশীল থাকার প্রধান শর্তটি পূরণ হয়। এর পরও যদি কোনো অসৎ ব্যবসায়ীর কারসাজিতে দাম বাড়ে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সহজেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমছে। গত ছয় মাসে টনপ্রতি দাম কমেছে অন্তত ১০৪ ডলার। তাহলে দেশের বাজারে কেন দাম বাড়বে? অন্যদিকে ট্যারিফ কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বরে যথেষ্ট পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। তাহলে সরবরাহে ঘাটতি থাকার কথা নয়। এ অবস্থায় দাম বাড়ার যুক্তিসংগত কারণ নেই। তার পরও কেন বাড়ছে, তা খুঁজে দেখা দরকার।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগেট থেকে যথেষ্ট পরিমাণ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ সরবরাহ করা হচ্ছে। এ রকম তো হওয়ার কথা নয়। মিল মালিকেরা ব্যাংকের তারল্যসংকটের কথা বলছেন। তাহলে নভেম্বরে এত আমদানি হলো কীভাবে? আর ডলারের দাম বাড়ার কারণে সয়াবিনের মূল্যবৃদ্ধির যে অজুহাত দেখানো হচ্ছে, তা-ও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, যে সময় ওই তেল আমদানি করা হয়েছে, তখন ডলারের দাম এত বেশি ছিল না।
সুতরাং, এখানে কোনো কারসাজি আছে। সরকারকে সেখানে হাত দিতে হবে। ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর আজ বৈঠক হওয়ার কথা। দাম বাড়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন জরুরি হয়ে উঠেছে।
No comments