শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত আবদুর রাজ্জাক

লীয় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আবদুর রাজ্জাক। গতকাল সোমবার বিকেল পৌনে চারটায় তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। দুপুরের পর থেকে প্রিয় এই নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বনানী কবরস্থানে জড়ো হতে থাকেন দলীয় নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। বেলা সাড়ে তিনটায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর


থেকে রাজ্জাকের মরদেহ কবরস্থানের ফটকে পৌঁছায়। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় শেষ জানাজা। মেয়ের কবরের কয়েক গজ দূরে দাফন করা হয় এই নেতাকে। ১৯৮২ সালে মেয়ে তানিমা রাজ্জাককে এখানে দাফন করা হয়।
এই নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বনানী কবরস্থানে উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুল জলিল, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, আবদুল মতিন খসরু, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, হাছান মাহমুদ, শামসুল হকসহ তাঁর রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা।
দাফনের পর কবরস্থান ও এর আশপাশে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একে একে শ্রদ্ধা জানায় মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড, ঢাকা জেলা প্রশাসন, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন।
এর আগে এই নেতার মরদেহ ঢাকা থেকে বেলা ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে তাঁর নিজ জেলা শরীয়তপুরের ডামুড্যায় নেওয়া হয়। সঙ্গে যান রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ।
এই নেতার মরদেহ প্রথমে নেওয়া হয় ডামুড্যা পৌরসভার নিজ বাসভবনে। সেখানে তাঁর আত্মীয়স্বজন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ও সমর্থকেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর মরদেহ ডামুড্যা উপজেলা পরিষদ চত্বরে রাখা হয়। হাজার হাজার মানুষ তাঁদের এই প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘রাজ্জাক ভাইকে হারিয়ে আমরা দেশের একজন সুযোগ্য অভিভাবককে হারিয়েছি। তাঁর অভাব কোনো দিনও পূরণ করার মতো নয়।’
বেলা আড়াইটায় ডামুড্যা উপজেলা মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বীর এ মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর রাজ্জাকের মরদেহ হেলিকপ্টারে আবার ঢাকায় আনা হয়।
নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শরীয়তপুর ছাড়াও মাদারীপুর, চাঁদপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাট জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ডামুড্যায় উপস্থিত হন। তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে জেলা সদরের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বেলা ১১টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শোক: আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা। প্রয়াতের স্ত্রী ফরিদা রাজ্জাকের কাছে এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী রাজনীতি ও সরকারের কাজে তাঁর নেতৃৃত্বের জন্য দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
আরও শোক: আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে আরও শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, জনতা ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ, সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন, মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
আবদুর রাজ্জাক গত শুক্রবার লন্ডনের কিংস হাসপাতালে মারা যান।

No comments

Powered by Blogger.