প্রচ্ছদ রচনা : অস্থিতিশীলতার বছর ২০১১-প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ মহাজোট! by সফেদ সিরাজ

নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা, আশা-হতাশা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে কেটে গেল আরেকটি বছর। ২০১১ সাল পার করে মহাজোট সরকার তিন বছর পূর্ণ করবে। কিন্তু ভোটাররা যে আশায় বুক বেঁধে তাদের নির্বাচিত করেছিলেন, তার কতটুকুই বা পূরণ হয়েছে_তা বিচার-বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে অর্পিত দায়িত্বের কতটুকুই সততার সঙ্গে পালন করেছে বিএনপি? সরকারের ব্যর্থতার সঙ্গে কিছু সফলতাও আছে।


তবে সফলতার চেয়ে যদি ব্যর্থতার পাল্লাই সিংহভাগ ভারী হয় তাহলে? চলতি বছর বহুল প্রত্যাশিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলার বিচারকাজ শুরু করে আশার সঞ্চার করে। তবে এ নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্য জাতিকে হতাশার মধ্যে ঠেলে দেয়। সারা বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনসাধারযুগপৎ আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি!
সারা বছর যুগপৎ আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি বছরের শেষদিকে ১৮ ডিসেম্বর চোরাগোপ্তা হামলার আশ্রয় নেয়। এদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আয়োজন করে বিএনপি। ঢাকায় পুলিশের গুলিতে বিএনপির কর্মী নিহত হওয়ার গুজব এবং মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনায় বাধার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটায় দলটি। সিলেটে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দিলে ভেতরে আটকা পড়ে অগি্নদগ্ধ হয়ে একজন মারা যায়। আহত হয় অন্তত ১০ জন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আরো ৩০ জন আহত হয়। ওই দিন সিলেটেরই বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব হামলাকে আওয়ামী লীগ চোরাগোপ্তা হামলা বললেও বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। কারণ দেশের প্রধান প্রভাবশালী দৈনিকগুলোও কিন্তু এ ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছে। এ জন্য ঢাকার বাইরে থেকে বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে ঢাকায় জড়ো করার চেষ্টা ছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে এভাবে লোক সমাবেশ করার বিষয়টি প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি শীতের কনকনে সকালের এমন সময়ে লোক জড়ো করা হয়েছিল। অথচ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল বিকেলে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আল-শামসদের প্রকাশ্য পক্ষ নেওয়ায় সমালোচনার মধ্যে পড়েন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
সরকার হটাও স্লোগান নিয়ে বিএনপি দেশব্যাপী যে রোডমার্চ শুরু করেছিল, তা ধরে রাখতে পারেনি। সরকারের পতন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে দলটি সিলেট অভিমুখে ১০ অক্টোবর প্রথম রোডমার্চ, ২৫ ও ২৬ অক্টোবর উত্তরাঞ্চল অভিমুখে দ্বিতীয় রোডমার্চ এবং ২৭ ও ২৮ নভেম্বর খুলনা অভিমুখে তৃতীয় রোডমার্চ করে। দেশের মানুষ ধারণা করেছিল, বিএনপি হয়তো হরতাল আর জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি বাদ দিয়ে রোডমার্চের মতো আন্দোলন করবে। কিন্তু দলীয় কোন্দলের কারণে রোডমার্চের পালে তেমন হাওয়া লাগেনি বলেই মনে হয়েছে দেশবাসীর।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ও ডিসিসি ভাগের বছর!
বিদায়ী বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন। সংবিধানের এ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা। ৩০ অক্টোবর এটি পাস হয়। এরও আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ হয়ে যায়। তবে আদালত অভিমত দিয়েছিলেন, আগামী দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন এ ব্যবস্থার অধীনে হতে পারে।
আগামী দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চলতে পারে আদালত এ ধরনের মন্তব্য করলেও সরকার সেদিকে কর্ণপাত করেনি। এমনকি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া আগামীতে নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এর প্রতিবাদে বিএনপি মাঠে নামে। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে চরম বৈরিতা শুরু হয়। সংবিধানে ৫৫টি দফা যুক্ত করে বিলটি পাসের পক্ষে ২৯১টি এবং বিপক্ষে ১টি ভোট পড়ে। এ ছাড়া তিন যুগ পর সংবিধানে মুক্তিযুুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিকগুলোকে বৈধতা দেওয়া হয়। সংবিধানের ওই সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা পাঁচটি বৃদ্ধি করে ৫০ করা হয়। এ ছাড়া সংশোধিত সংবিধানে আদিবাসীদের 'উপজাতি' হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া চলতি বছরেই ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সংসদে এ-সংক্রান্ত বিল খুবই দ্রুততার সঙ্গে পাস করে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ নামে দুটি সিটি করপোরেশন করা হয়। মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি, উপদেষ্টাদের খবরদারি, শেয়ারবাজারের অস্থিরতায় জাতীয় সংসদ অধিবেশন প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে উঠত। এ ছাড়া সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রায়ই তোপের মুখে পড়তেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদে থাকলেই কেবল মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকতেন। তিনি না থাকলে মন্ত্রীদের সংসদে পাওয়া যায় না। সংসদের প্রশ্নোত্তরে একজন আরেকজনের 'প্রঙ্'ি দেওয়া লক্ষ করা গেছে।

ড. মনমোহন ও সোনিয়ার বাংলাদেশ সফর!
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফর ছিল বিদায়ী বছরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি। তিনি ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসেন। এক যুগের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ঢাকা আসেন। এর আগে ২৪ জুলাই ভারতে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বাংলাদেশ সফরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে অটিজমবিষয়ক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য সফরের সময় তিনি শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে সম্মাননাও গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে এ সম্মাননা দেয়।
তবে ড. মনমোহনের সফরের সময় তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ যে আশা করেছিল, তাতে নাটকীয়ভাবে পানি ঢেলে দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনমোহনের সঙ্গে তাঁর বাংলাদেশ সফরে আসার কথা থাকলেও হঠাৎ নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং তিস্তা পানি চুক্তির বিরোধিতা করেন। ফলে শুধু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারই নয়, বাংলাদেশ সরকারও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়ায় অস্বস্তির কালো মেঘের স্পষ্ট ছায়া পড়ে শেখ হাসিনা-ড. মনমোহন শীর্ষ বৈঠকে। তিস্তার পানি চুক্তি না হওয়ায় বহুল আলোচিত ট্রানজিট সম্মতিপত্রেও স্বাক্ষর হয়নি। এমনকি চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য তৈরি করা প্রটোকলেও সই হলো না। তবে ভারতের সঙ্গে আটটি সমঝোতা স্মারক ও একটি চুক্তি সই হয়েছে। এসব চুক্তি ও স্মারক স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বলেছেন, 'তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে।'
সফরের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ঢাকা-দিলি্ল শীর্ষ বৈঠক শেষে শুরু হয় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায় বাংলাদেশের ৪৬টি পণ্য। এ ছাড়া তিনবিঘা করিডর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাক্ষরিত হয় স্থলসীমা নিয়ে একটি প্রটোকল। এতে স্বাক্ষর করেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকেও সই করেন। এ ছাড়া সুন্দরবনের সুরক্ষা, বাঘ সংরক্ষণ, মৎস্য উৎপাদন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও দিলি্লর জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা বিনিময়, ভারতের দূরদর্শন ও বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি ও ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজির মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় দুই পক্ষের মধ্যে। ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল-বাংলাদেশ ট্রানজিট প্রটোকলে নতুন একটি দফাও যোগ করা হয় দুই পক্ষের সম্মতিতে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিং। এক ঘণ্টা একান্তেও বৈঠক করেন তাঁরা। দু্ই দেশের চুক্তির মাধ্যমে উপমহাদেশ ভাগের ৬৪ বছর পর দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। ১৯ অক্টোবর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম।
এ ছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও তাঁর স্ত্রী ইউ সুন তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। বাংলাদেশে এটা বান কি মুনের দ্বিতীয় সফর ছিল। এর আগে ২০০৮ সালের নভেম্বরে দুই দিনের জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। বান কি মুনের আগে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে কুর্ট ওয়ার্ল্ডহেইম, জেভিয়ের পেরেজ ডি কুয়েলার ও কফি আনান বাংলাদেশ সফর করেন। নারী ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের উদ্যোগে শুরু হওয়া 'এভরি উইমেন এভরি চাইল্ড' কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে এসব দেশে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যে সেবার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ মি. বানের এ সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ সফরে বান কি মুন মৌলভীবাজারের একটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেন।

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা!
বিদায়ী বছর পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের সর্বস্ব হারানোর বছর। তবে শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সরকার। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ভয়াবহ ধসের মধ্য দিয়ে যে পতনের সূচনা হয়েছিল, এক বছরেও সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি পুঁজিবাজার। জুলাইয়ের ঊর্ধ্বগতি, আর দু-একবার সাময়িক মূল্যবৃদ্ধি বাদ দিলে বাজারে একটানা মন্দা বিরাজ করেছে। তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কম্পানির দর কমতে কমতে স্মরণকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক পড়েছে প্রায় তিন হাজার ৮৫০ পয়েন্ট। একই সময়ের মধ্যে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকা থেকে ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি নেমে এসেছে। এই সময়ের মধ্যে বাজারে আইপিওর মাধ্যমে নতুন আসা কম্পানি এবং পুরনো কম্পানিগুলোর রাইট ও বোনাস শেয়ার যোগ হওয়ার পরও ডিএসইর বাজার মূলধন (তালিকাভুক্ত সব শেয়ারের বাজার মূল্যের যোগফল) কমেছে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এসে পুঁজিবাজার আবার চাঙ্গা হতে শুরু করে। মূলত ওই সরকারের নানামুখী অভিযানের কারণে দেশের শিল্প ও বাণিজ্য খাতে বিনিয়োগের সুযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও সংকুচিত হয়ে পড়ে। ওই অবস্থায় অনেকেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকে লাভজনক মনে করতে শুরু করেন। তা ছাড়া ওই সময় কালো টাকার প্রশ্নহীন বিনিয়োগের সুযোগ শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর শেয়ারবাজারে লেনদেন ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে। বিপুল পরিমাণ নতুন বিনিয়োগ যুক্ত হওয়ায় বেড়ে যায় বেশির ভাগ শেয়ারের দর। ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য বেশ কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। বাজেট বক্তৃতায় শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করার বিষয়ে সরকারের বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রাও ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বাজেটে শেয়ারবাজারে কালো টাকার শর্তহীন বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি বৈধ অর্থ বিনিয়োগের জন্য কর রেয়াত সুবিধা অব্যাহত থাকে। এর বিপরীতে কমানো হয় ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার। শেয়ারবাজার থেকে অর্জিত মুনাফাকে রাখা হয় করমুক্ত। এসব কিছুই সাধারণ মানুষকে লাভজনক বিনিয়োগের একমাত্র ক্ষেত্র হিসেবে পুঁজিবাজারের দিকে তাকানোর ইঙ্গিত দেয়।
সে সময় গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের সুযোগ কমে যাওয়ায় শিল্পোদ্যোক্তারাও ঝুঁকে পড়েন পুঁজিবাজারের দিকে। একই কারণে ব্যাংকিং খাতের বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়। আইনগতভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট দায়ের (আমানত) সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও অনেক ব্যাংক এর চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করে।
২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি গোষ্ঠী শেয়ারবাজারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে শুরু করে। নামে-বেনামে বিপুলসংখ্যক বিও অ্যাকাউন্ট খুলে তারা বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনে মূল্যবৃদ্ধি ঘটায় এবং একপর্যায়ে মুনাফা নিয়ে সটকে পড়ে। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষের কিছু সিদ্ধান্তও শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করে। ১৯৯৬ ও ২০১১ সাল দু-বারই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। তাই ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ এ দুই কেলেঙ্কারির দায় আওয়ামী লীগের কাঁধে চাপাচ্ছে। শেয়ারবাজারে অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটি বাজার কারসাজির জন্য প্রায় ৬০ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে। তাঁদের মধ্যে বিশেষ করে দুজনের ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিল কমিটি। এ দুজন হলেন বেঙ্মিকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে প্রধান করে গঠিত ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার কোনো কাজ করেনি। বরং খোন্দকার ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে মামলা করা করা হয়। শেয়ারবাজার কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। কিন্তু মিডিয়াকে বললেন, প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে না। কারণ প্রতিবেদনে যাঁদের নাম আছে, তাঁরা মহাশক্তিশালী। শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের এভাবেই বর্তমান সরকার রক্ষা করে সাধারণ মানুষকে পথে বসিয়েছে।

ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় কেঁদেছে দেশ!
সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামে ছয় ছাত্রকে ডাকাত বানিয়ে হত্যার ঘটনায় কেঁদেছে সারা জাতি। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাঁদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। তাই নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকা পুলিশের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তাদের হত্যাকারী হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি ওঠে সর্বত্র। শবেবরাতের রাতে আমিনবাজারের বড়দেশী এলাকার কেবলার চরে গিয়েছিলেন সাতজন। তাঁদের মধ্যে ইব্রাহিম খলিল, শহিদুর রহমান পলাশ, কামরুজ্জামান কান্ত, টিপু সুলতান, শামস রহিম শাম্মাম ও মনির হোসেন ছিলেন ছাত্র। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আল-আমিন নামের আরো এক যুবক। শবেবরাতের রাতে ওই ছয় ছাত্র ঢাকা থেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন বড়দেশী গ্রামে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীরা তাঁদের র‌্যাবের সোর্স ভেবে ডাকাত বলে পিটিয়ে হত্যা করে। ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে নিষ্পাপ ছয়টি প্রাণ শীতের পাতার মতো ঝরে যায়।

লোকমান হত্যা এবং গুপ্তহত্যা!
নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন (৪২) হত্যাকাণ্ড এ বছরের আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি। গত ১ নভেম্বর রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকায় হাসপাতালে মারা যান আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হোসেন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ভাই সালাউদ্দিন ওরফে বাচ্চুর নাম আসায় সরকারও বিব্রত হয়ে পড়ে। লোকমানের ভাই কামরুজ্জামান এ ঘটনায় ১৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন, যাঁদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। এমনকি প্রধান আসামি করা হয় মন্ত্রীর ভাইকে। পৌর মেয়র লোকমান গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরে বিক্ষুব্ধ জনতা রাত ৯টা থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। তারা শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়। এমনকি নরসিংদীতে ৭২ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেয় ছাত্রলীগ।
এ ছাড়া বিদায়ী বছরটির শেষদিকে গুপ্তহত্যার ঘটনা বেড়ে যায়। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সাধারণ নাগরিক। বিরোধী দল দাবি করে, গুপ্তহত্যা রাষ্ট্র সমর্থিত। আবার অনেকেই মনে করে, ক্রসফায়ারের আরেক নাম গুপ্তহত্যা। ক্রসফায়ারের ঘটনাটি বহুল আলোচিত হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন গুপ্তহত্যার আশ্রয় নিচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় এটি অস্বীকার করে আসছে। একজন নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

শুধু লিমন নয়, মানবতাকে পঙ্গু করেছে র‌্যাব!
র‌্যাবের গুলিতে দরিদ্র কলেজছাত্র লিমনের পা হারানোর ঘটনায় শুধু তিনি নন, মানবতাকেও পঙ্গু করা হয়। বছরজুড়েই র‌্যাবের বিরুদ্ধে ক্রয়ফায়ারের অভিযোগ ছিল। লিমনের ঘটনায় সেটি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঝালকাঠির রাজাপুরে গত ২৩ মার্চ গুলিবিদ্ধ হন লিমন। বাড়ির পাশের মাঠ থেকে গরু আনতে গেলে র‌্যাবের সদস্যরা তাঁকে ধরে নিয়ে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। পরে গ্রামবাসী চাঁদা তুলে দরিদ্র পরিবারের সন্তান লিমনের চিকিৎসার খরচ জোগায়। তাঁকে প্রথমে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা লিমনের জীবন বাঁচাতে তাঁর বাম পা ঊরুর নিচ থেকে কেটে ফেলেন। তবে র‌্যাব ওই সময় বলেছিল, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধের' সময় লিমন গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার দিনই র‌্যাব বাদী হয়ে অস্ত্র ও সরকারি কাজে বাধা, হত্যাচেষ্টা ও র‌্যাব সদস্যদের আহত করার অভিযোগে লিমনের বিরুদ্ধে রাজাপুর থানায় দুটি মামলা করে। পুলিশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সরকারকে সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়েছে সারা বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আবদুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করে তাঁর বিরুদ্ধে 'একতাবদ্ধ হয়ে ডাকাতিচেষ্টা ও অস্ত্র আইনে' পৃথক দুটি মামলা করার পর এখন এই ছাত্রকে ডাকাত প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজধানীর খিলগাঁও থানার পুলিশ। ১৫ জুলাই রাতে কাদেরকে খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক আলম বাদশা গ্রেপ্তার করে অমানবিক নির্যাতন চালান। অবশ্য পরে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।

অন্ধকার পথ থেকে আলোর মিছিলে সাহসী আইভী!
অনেক রাজনৈতিক বৈরিতা, শঙ্কা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পঙ্কিল মাঠ পেরিয়ে অবশেষে সবুজ শীতল ছায়ার দেখা পেয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিনি দেশের প্রথম নারী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ৩০ অক্টোবর জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন, জনতার জয় অবধারিত। শান্তিপূর্ণ এ নির্বাচনে আলোচিত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
বিভিন্ন কারণেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দেশবাসীর আলোচানার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। প্রথমত, নারায়ণগঞ্জ একটি সন্ত্রাসপ্রবণ নগরী। দ্বিতীয়ত, ওই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শামীম ওসমানকে সমর্থন দিয়েছিল। আইভী আওয়ামী লীগের নেতা হলেও তাঁকে সমর্থন দেয়নি দল। নির্বাচনী প্রচারের সময় আইভী বলেছিলেন, তিনি আরেক চুয়াত্তরের আশা করেন। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৭৪ সালে। সেই নির্বাচনে জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা আলী আহম্মদ চুনকা চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পান খোকা মহিউদ্দীন। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন আইভীর বাবা চুনকা। ৩৭ বছর পর আবার সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলো। চুনকার মেয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়েছিলেন। কিন্তু অনেক টানাপড়েনের পর আওয়ামী লীগ সমর্থন দেয় শামীম ওসমানকে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মানুষ চুনকার মেয়েকেই ভোট দিয়ে ইতিহাস ফিরিয়ে আনল। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থাকাকালে ২০০৩ সালে সর্বশেষ নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। টানা আট বছর তিনি এই পদে ছিলেন। মেয়র পদে মোট ছয়জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিলেও কার্যত প্রার্থী ছিলেন তিনজন। এই তিনজনের মধ্যে বিএনপি সমর্থিত তৈমূর আলম খন্দকার সেনাবাহিনী মোতায়েন না করায় ভোটের সাত ঘণ্টা আগে সরে দাঁড়ান। এই নির্বাচনে আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা হলো, নির্বাচন কমিশন সেনা মোনায়েতের নির্দেশ দিলেও সরকার তা করেনি। এ কারণে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আইভী নির্বাচিত হওয়ায় গণভবনে তাঁকে দেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'বাপের বেটি'। এ সময় তিনি আইভীকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেন এবং সব ধরনের সহায়তারও আশ্বাস দেন। গণভবনে আইভির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া এ বছর আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ১২ জানুয়ারি রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে ৭২টি পৌরসভার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী পৌর নির্বাচন শুরু হয়। এসব নির্বাচনের প্রায় সবই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে
অপসারণ ড. মুহাম্মদ ইউনূস!
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ২০১১ সালের ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক আদেশ জারি করা হয়। এর কপি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। তবে ব্যাংক দাবি করে, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যথারীতি তাঁর পদে বহাল আছেন। পরে ড. ইউনূস উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিলেও আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশ বৈধ ঘোষণা দেন। সরকারের সঙ্গে ড. ইউনূসের টানাপড়েন বছরজুড়েই ছিল আলোচিত বিষয়। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের দায়িত্ব পালন আইনগতভাবে বৈধ ছিল না। গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরি বিধিমালা অনুসারে অবসরগ্রহণের বয়স ৬০ বছর। কিন্তু ৬০ বছর উত্তীর্ণ হওয়ার পরও অনির্দিষ্ট মেয়াদে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে বহাল আছেন। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে বহাল থাকা আইনগতভাবে বৈধ নয়। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে বলা হয়েছে, 'যেহেতু অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর ১৪(১) ধারা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পুনঃ নিয়োগ দেওয়া হয়, সেহেতু ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তাও দায়িত্ব পালন বৈধ নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।' এরপর ইউনূস রিট করলে শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পদে থাকা অবৈধ ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেও হেরে যান তিনি। ইউনূসকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া বিষয়টিকে অনেকেই রাজনৈতিক বলেও মন্তব্য করেন। বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ইউনূসের ভূমিকার কারণে সরকার ক্ষিপ্ত ছিল বলে জল্পনা-কল্পনা দানা বাঁধতে থাকে। তাঁকে পদে বহাল রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর নরওয়ের টেলিভিশনে প্রফেসর ইউনূস সম্পর্কে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। যেখানে ইউরোপের দেওয়া কোটি কোটি ডলার গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানোর অভিযোগ ওঠে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে। দারিদ্র্য দূর করার জন্য ভর্তুকি হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯৯৬ সালে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয় ইউরোপের কয়েকটি দেশ। নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির দেওয়া অর্থ থেকে ১০ কোটি ডলারেরও বেশি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নিজের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণে সরিয়ে নেন অধ্যাপক ইউনূস। তখন থেকে শুরু হয় ড. ইউনূস সম্পর্কে আলোচনা-সমালোচনা। আর সেই আলোচনার কিছুটা সমাপ্তি ঘটে আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর।

সম্পদ রক্ষায় জাতীয় কমিটির লংমার্চ!
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি গত ১৮ জুন বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কনোকো-ফিলিপসের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিলসহ জাতীয় কমিটির সাত দফা দাবিতে ৩ জুলাই ঢাকায় অর্ধদিবস (সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত) হরতাল পালন করে। বছরজুড়েই ছিল তাদের সরকারের জনস্বার্থবিরোধী জাতীয় সম্পদকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি। গত ২৮ অক্টোবর থেকে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির চার দিনব্যাপী লংমার্চ শুরুর ঘটনা বিদায়ী বছরের একটি আলোচিত ঘটনা ছিল। জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে যাত্রা শুরু করে গাজীপুর-ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা হয়ে ৩১ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলার সুনেত্র গ্যাস ক্ষেত্র এলাকার বাদশাগঞ্জে মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই লংমার্চ। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লা খনি করার চক্রান্ত বন্ধসহ সাত দফা দাবি সামনে রেখে এ লংমার্চ করা হয়। জাতীয় কমিটির লংমার্চের সাত দফা দাবির অন্যতম ছিল অবিলম্বে জাতীয় সংস্থার মাধ্যমে 'সুনেত্র' ও রশিদপুর গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন, কনোকো-ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল, 'পিএসসি ২০১১' প্রক্রিয়া বন্ধ ও ফুলবাড়ী চুক্তি বাস্তবায়ন। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিপি) গুলি চালালে তিনজন নিহত হয়। এতে গণ-অসন্তোষ তীব্র হয়ে উঠলে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আন্দোলনের নেতৃত্বাদানকারী তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সঙ্গে ফুলবাড়ী নামে একটি চুক্তি করে। সাত দফা মেনে নেওয়ার চুক্তির অন্যতম ধারার মধ্যে ছিল উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হবে না, জাতীয় প্রতিষ্ঠান দিয়েই কয়লা উত্তোলন করা হবে। তৎকালীন সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় কমিটির সাত দফা দাবির পক্ষে থাকলেও বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষতায় আসার পর আবার উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের পক্ষে মত দেন তিনি।

পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি!
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকের জন্য পরামর্শক ও সেতু তৈরির জন্য ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক যোগাযোগ ও বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে নিয়ে আলোচনা ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির দায়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মন্ত্রীর পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সেতুর কাজে প্রভাব বিস্তার ও 'মন্ত্রীর দুর্নীতির ইচ্ছা পোষণের' বিষয়ে দুদক কর্মকর্তারা তাঁকে জেরা করেন।
অন্যদিকে বহুল আলোচিত মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ ফারুক খান সারা বছরই ছিলেন আলোচনায়। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ও শেয়ারবাজারসহ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সমালোচিত হলেও নিজ দায়িত্বে বহাল রয়েছেন তাঁরা। তবে রেলমন্ত্রী হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে ওবায়দুর কাদের মন্ত্রিসভার নতুন মুখ হিসেবে আবির্ভূত হন। আর ড. হাছান মাহমুদ প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী পদমর্যাদা পান।

পঙ্গু যোগাযোগব্যবস্থার বিপাকে!
মহাজোট সরকারের শাসনামলে মহাসড়কে দেখা দেয় মহাবিপর্যয়। জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনের প্রথম দিনে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় গণবিস্ফোরণের আশঙ্কা ব্যক্ত করে খোদ মহাজোটের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যরা চরম ব্যর্থতার অভিযোগ এনে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ চান। শেষতক প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিতে বাধ্য হন সাত দিনের মধ্যে সড়কের বেহালদশা নিরসনের জন্য। স্বল্প সময়ে এত বেশি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার করা প্রশ্নসাপেক্ষ ব্যাপার হলেও যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, সাত দিনেই সড়ক সংস্কার হবে। মহাজোটের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যরা যোগাযোগমন্ত্রীকে তুলোধুনা করছেন ব্যর্থতার অভিযোগে। যোগাযোগমন্ত্রী দায় চাপিয়েছেন অর্থমন্ত্রীর ওপর। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, টাকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি। মানুষ এসব নিয়ে বিরক্ত হয়ে পড়ে, পঙ্গু যোগযোগব্যবস্থার কারণে ঈদুল ফিতরের সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া সার দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ ভেঙে পড়ে। ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়েন যোগাযোগমন্ত্রী। আবুল হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে জাতীয় শহীদ মিনারে সমাবেশও হয়। কিন্তু সরকার কোনোমতেই তাঁকে তাঁর পদ থেকে সরায়নি। অবশেষে তাঁকে সরিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী করা হয়। এরপর মহাসড়কের মহাজটের মতোই মহাজোট সরকারের পরিকল্পিত বাজেটের অদূরদর্শিতায় বিপাকে পড়ে রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক প্রায় সব কর্মকাণ্ডই!

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলার বিচার শুরু
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় ৭ ডিসেম্বর। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে করা মামলায় দুজনের সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে এই সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হলো। ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষ্য দেন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাঈদীর বিরুদ্ধে করা মামলার প্রথম সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহাবুবুল আলম হাওলাদার (৬০)। সাক্ষ্যে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুরে সাঈদীর নেতৃত্বে ও নির্দেশে হত্যা, লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী নানা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তিনি এ ধরনের অপরাধের পাঁচটি ঘটনাও তুলে ধরেন। একই মামলায় এর পর সাক্ষ্য দেন রুহুল আমিন নবীন (৬১)।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গত বছর তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেল ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের ঘোষণা দিলে এই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ বছর ২৫ মার্চ সরকার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট, ১৯৭৩-এর বিধান অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। গত ২৬ জুলাই ট্রাইব্যুনাল চিফ প্রসিকিউটরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চারজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এই চারজন হচ্ছেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এবং সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সময় এ চারজনই অন্যান্য মামলায় আটক ছিলেন। এ ছাড়া বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আবদুল আলীমের বিচার চলছে। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলেও এখনো তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
২০০৯ সালের ৯ জুলাই জাতীয় সংসদ যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য প্রণীত ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট, ১৯৭৩-এ কিছু সংশোধনী সংযোজন করে। এরপর ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু বিতর্কের ঝড় ওঠে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা পদে আবদুল মতিনের নিয়োগ নিয়ে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন তাঁর অতীত নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন আহমেদ প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, আবদুল মতিন একসময় জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতির পদে মনোনীত হয়েছিলেন। এদিকে তদন্তকাজের অগ্রগতিও খুব ধীরে এগোতে থাকে। অবশেষে বিতর্ক আর সমালোচনার মুখে আবদুল মতিন গত ৫ মে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেন। এ পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষক মহল এবং গোটা জাতি সন্দিগ্ধ এবং উদ্বিগ্ন_আসলে কোন পথে এগোচ্ছে সরকার, আর যথাযথ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিচার সম্পন্ন করতে সরকারের সদিচ্ছাই বা কতটুকু?
ণের প্রাণ ছিল বিষিয়ে। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল, শেয়ারবাজার ধস, আইনবহির্ভূত নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, ভেঙেপড়া যোগযোগ ব্যবস্থাসহ সর্বশেষ ডিসিসি ভাগ ও যুদ্ধাপরাধ কেন্দ্রিক তোড়জোড় ও বিএনপির তালকানা আন্দোলনসহ সারা বছরই ছিল এক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জ্বরে ভোগা বাংলাদেশ_এসবেরই মোটা দাগে ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনার বিচার-বিশ্লেষণ করে ফিরে দেখা ২০১১।

No comments

Powered by Blogger.